spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যঅক্ষয় কীর্তি : দুই

ধারাবাহিক জীবনী। লিখেছেন : আবু তাহের সরফরাজ

অক্ষয় কীর্তি : দুই

আবু তাহের সরফরাজ

কয়েক মাস পেরিয়ে গেল।
একদিন মোহন জিগেশ করল, হ্যাঁ রে অক্ষয়, তোর পড়াশোনা ক্যামন চলছে বল দিকিনি। পড়া ঠিকঠাক বুঝিস তো?
অক্ষয় জবাব দিল, মাস্টার মশাই যা পড়ান তা বুঝতে চেষ্টা করি। কিন্তু কেন যেন ঠিক বুঝতে পারি না। আরেকটু সহজভাবে উনি যদি বুঝিয়ে দিতেন…
দেখি, বই নিয়ে আয় তো।
ভাইয়ের পরীক্ষা নিতে বসে মোহন। এতদিন কি ইংরেজি শিখল, সেটা দ্যাখা যাক। ইংরেজি বই খুলে অক্ষয়কে পড়তে বলে মোহনের মনে হলো, ইংরেজিটা অক্ষয় এই কয়েক মাসেও ঠিকঠাক শিখে উঠতে পারেনি। এই গলদটা অক্ষয়ের নাকি জয়কৃষ্ণ সরকারের, তা ভাবনায় এলো মোহনের। তার মনে হলো, অক্ষয়ের তো খোলা মাথা। যা পড়ে সহজেই বুঝে যায়। এই এইটুকুন ছেলে, সে এখনই ফারসি ও সংস্কৃতির মতো দুটো ভাষা শিখে নিয়েছে। তাহলে ইংরেজিটা কেন সে বুঝে উঠতে পারছে না? নিশ্চয়ই জয়কৃষ্ণ সরকার ঠিকঠাক বোঝাতে পারেন না। অথচ খিদিরপুরে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে তার খ্যাতি সবার মুখে মুখে। তাহলে কি এটাই সত্য যে, খ্যাতি হলেই তাকে গুণী বলা চলে না? হয়তো তাই। গুণ না থাকলেও আমাদের সমাজে অনেকে নানাভাবে খ্যাতি পেয়ে যেতে পারে। সে যার যা খুশি পাক, কিন্তু অক্ষয়ের ইংরেজি শেখার কি হবে?
সে রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবনাটা মোহনকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ালো। জেঠা-জেঠিমাকে কতই না বড় গলায় সে বলেছিল, অক্ষয়ের লেখাপড়া নিয়ে না ভাবতে। এখন যে তার বড় গলা আর বড় থাকছে না। গলার সাথে সাথে সে নিজেও জেঠা-জেঠিমার কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মোহন নিজেকেই নিজে ঝাড়া দিল। ভাবল, আচ্ছা দ্যাখাই যাক, কী দাঁড়ায়! ব্যবস্থা তো একটা হবেই। এখনই এত ভাবার কিছু নেই। কাল কোর্টে গিয়ে খোঁজ-খবর করতে হবে। নিশ্চয়ই ভালো ইংরেজি শিক্ষক পাওয়া যাবে। এমন তো নয় যে, কেউ আর ইংরেজি শিখছে না।
পরদিন কোর্ট চত্তরে দাঁড়িয়ে এক ইংরেজি সাহেবের সঙ্গে কথা বলছিল মোহন। তার কাছ থেকেই সে জানতে পারে পাদরি জোসেফের নাম। তিনি নাকি গির্জায় বসে কয়েকজন ছাত্রকে ইংরেজি শেখান। সেদিনই বাড়ি ফেরার পথে মোহন গির্জায় গিয়ে দ্যাখা করল পাদরির সঙ্গে। কথা বলল। মানুষটাকে পছন্দ হলো তার। ভারি ধীর-স্থির। কথা বলেন মেপে মেপে। বাড়তি কোনো কথা বলা যেন তার নিষেধ।
পাদরির কাছে যাতায়াত শুরু হলো অক্ষয়ের। কয়েকদিন পর অক্ষয়ের হাবভাব দেখে মোহনের মনে হলো, তিনি ভুল করলেন না তো! অক্ষয়ের কথাবার্তায় একটু কেমন খ্রিস্টধর্মের প্রতি আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভারি ভাবনায় পড়ল মোহন। পাদরির পাল্লায় পড়ে অক্ষয় আবার খ্রিস্টান হয়ে না যায়। এরকম তো চারদিকে আকছার হচ্ছে। পাদরিরা খুব কৌশলে খ্রিস্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছে হিন্দুদের। ভয় পেল মোহন। এরকম কিছু একটা ঘটে গেলে কী জবাব সে দেবে জেঠুকে? মুখ থাকবে তার? কিন্তু এভাবে সরসারি পাদরির কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনাটা একটু দৃষ্টিকটু। মোহন তাই ঠিক করল, প্রতিদিন বসতে হবে অক্ষয়কে নিয়ে। খোঁজ-খবর রাখতে হবে পড়াশোনার।
সন্ধের পর বাড়ি ফিরে অক্ষয়কে ডাক দিয়ে কাছে বসান মোহন। পড়াশোনার খোঁজ-খবর করেন। পড়া দেন। খাতায় সেসব পড়ার পরীক্ষা নেন। কিন্তু খুব বেশিদিন এভাবে চালানো সম্ভব হলো না। সময় করে উঠতে পারে না মোহন। মাঝে-মধ্যে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। তখন আর অক্ষয়কে নিয়ে বসা হয়ে ওঠে না। মোহন যে অফিসে চাকরি করতো সেই অফিসের কেরানি হরিহর মুখোপাধ্যায়। ইংরেজিটা ভালোই জানেন। একদিন কথায় কথায় অক্ষয়ের কথা তাকে বলে ফেললেন। বললেন যে, তিনি অক্ষয়কে একটু ইংরেজিটা দেখিয়ে দেন তো বিশেষ উপকার হয়। অবশ্যি এজন্য আপনাকে কিছু হাতখড়চাও আমি দেব।
হরিহর বাবু বললেন, সে আর এমন কী! কিন্তু আমার তো বাড়তি কোনো সময় নেই। আপনি বরং অক্ষয়কে প্রতিদিন সাথে করে অফিসে নিয়ে আসবেন। সারা দিনে একটু একটু ওকে দেখিয়ে দিলাম। অফিস ছুটির পর ওকে নিয়ে আপনি বাড়ি চলে গেলেন।
হাঁফ ছাড়ল মোহন। যাক বাবা, একটা গতি তো হলো!
অক্ষয়কে নিয়ে অফিসে আসতে শুরু করল মোহন। হরিহর বাবু কাঁজের ফাঁকে ফাঁকে মোহনকে পড়া দেখিয়ে দিতেন, বুঝিয়ে দিতেন। অফিস কক্ষের কোণার দিকে একটা বেে বসে মোহন সেই পড়া করতো।
এক রাত্রে ভাত খেতে খেতে অক্ষয় বলল, মোহনদা, আমি আরও ভালো ইংরেজি শিখতে চাই। হরিহর বাবু মোটামুটি কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জানেন। সেটুকু আমি এই ক’দিনে শিখে ফেলেছি।
মোহন বলল, তাহলে তো বেশ ভালো। কিন্তু ভালো ইংরেজি জানা কাউকে হাতের কাছে পাওয়া তো মুশকিল। দেখি কী করা যায়!
অফিসে একদিন মোহন শুনতে পেল, গৌরমোহন আঢ্য নামের একজন শিক্ষানুরাগী একটি স্কুল দিয়েছেন। নাম ওরিঅ্যান্টাল সেমিনারি। এখানে কেবলমাত্র হিন্দু ছেলেরাই পড়ার সুযোগ পায়। ইংরেজি শেখার জন্য ছেলেদেরকে যেতে হয় মিশনারি ইস্কুলে। কিন্তু সেখানে খ্রিস্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করা হয় তাদেরকে। এই চিন্তা থেকেই গৌরবাবুর স্কুলের উদ্যোগ। এই স্কুলে ছেলেরা মিশনারি স্কুলের মতোই নির্ভুল ইংরেজি ভাষা শিখবে। তার আগে পুরোপুরি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর কেউ এমন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেননি। এসব শুনে মোহন বেশ আগ্রহী হলো। খোঁজ নিলো ওই স্কুলে গিয়ে। কয়েক দিন চেষ্টাচরিত করে মোহন অক্ষয়কে ভর্তির সব ব্যবস্থা করে এলেন। সেদিন রাতে আর বাড়ি ফিরল না। থেকে গেল কলকাতার দর্জিপাড়ায় পিশতুতো ভাই রামধন বসুর বাড়ি। এদিকটায় তেমন একটা আসা হয় না মোহনের। সেই কত বছর আগে শেষবার দেখা হয়েছিল! তাকে দেখতে পেয়ে ভারি খুশি হলেন রামধন বসু। তার স্ত্রী সেই রাত্রে আবার খাবার চড়িয়ে দিলেন। কাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে বসলো মোহন। রামধন বারবার পুরনো দিনগুলোর কথাই বলে যাচ্ছে। খেতে বসে মোহন বলল, বুঝলে দাদা, অক্ষয়কে তুমি চেনো। পীতম্বর জেঠুর ছেলে।
ভাতের লোকটা চিবোতে চিবোতে রামধন বললেন, হ্যাঁ, চিনি তো। কেমন আছেন ওরা? সব কুশল তো?
হ্যাঁ-হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। অক্ষয়কে আমার কাছে রেখে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। সেই জন্যই তো কলকাতায় আসা। অরিঅ্যান্টাল সেমিনারিতে অক্ষয়কে ভর্তির ব্যবস্থা করতে এলাম। আশা করছি, হয়ে যাবে।
বাহ, বেশ ভালো খবর দিলি মোহন। পীতম্বর জেঠুর প্রতি তোর ঋণ হলেও শোধ হবে।
জানো দাদা, এই স্কুলটা খুব জরুরি ছিল। রাষ্ট্রীয় ভাষা এখন আর ফারসি নেই। সবখানেই ইংরেজির রাজত্ব। সাহেবদের এই ভাষাটা না শিখলে সরকারি কাজেও সুযোগ পাওয়া যাবে না। ভারি মেধাবী ছেলে অক্ষয়। মাথাভর্তি বুদ্ধি। অক্ষয় এর আগে সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শিখেছে। ইংরেজিও শিখিয়েছি, কিন্তু এবার আরও ভালো ইংরেজি শিখতেই কলকাতায় আসা।
রামধন বললেন, যাক, ভালোই হয়েছে। কতকাল দেখা নেই, বল তো!
মোহন বলল, আমি ভাবছিলাম, খিদিরপুর থেকে অক্ষয় প্রতিদিন কলকাতায় যাতায়াত করবে কিভাবে? কম তো পথ নয়! যানবাহন তেমন কিছু নেই। ভাগ্যে থাকলে গরুগাড়ি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু না-পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
রামধন ববলেন, আরে, এটা নিয়ে এত ভাবছিস কেন! আমার এখানে থাকবে।
হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছিলাম। যা খরচ পড়ে আমি না-হয় মাসে মাসে পাঠিয়ে দিলাম।
রামধন গামছায় হাত মুছতে মুছতে বললেন, সে দ্যাখা যাবে। ওসব তুই ভাবিস না। আগে ভালোয় ভালোয় ভর্তি হোক।
অক্ষয় ভালোই ভালোই ভর্তি হয়ে গেল। খিদিরপুর ছেড়ে বাকসো-পেটরা নিয়ে আবাস গড়ল রামধনের বাড়িতে। রামধন সময় পেলেই অক্ষয়ের খোঁজ-খবর করতেন। কয়েক দিনেই স্কুলে মন বসে গেল অক্ষয়ের।

সহপাঠীদের বেশিরভাগই তারই মতো, কলকাতার বাইরের। সকলেই পরিজন ছেড়ে এখানে একা একা থাকে। প্রথম কয়েক দিন কারো সাথে তেমন মিশতে পারেনি অক্ষয়। দেখতে দেখতে সে বুঝে গেল, সকলের ভেতরই পরিবার ছেড়ে আসার একটা বেদনা রয়েই গেছে। এই বেদনা থেকেই একসাথে পড়তে আসা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আপন হয়ে উঠল।
এই স্কুলেই একজন সাহেব থাকতেন। তার নাম হার্ডম্যান জেফ্রয়। স্কুলের কর্তৃপক্ষের একজন তিনি। থাকতেন স্কুলের পূবদিকে একটি ঘর নিয়ে। অক্ষয়ের মনে হতো, আর দশটা মানুষ থেকে এই মানুষটা আলাদা। ক্লাশে খুব শান্তভাবে বারবার বলে, বুঝিয়ে তিনি ছাত্রদের পাঠ শেখাতেন। এরপর নিজের ঘরে। সারা দিন বাইরে খুব একটা বের হন না, খুব জরুরি না-হলে। সন্ধের পর তিনি নিজের ঘরে ছাত্রদের বসিয়ে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। গুরু- শিষ্যের এই সম্পর্ক ছিল খুবই মধুর। শিক্ষার মতো পবিত্র একটি বিষয় গুরু ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। সেই শিক্ষা যে যতটু ধারণ করতে পারে। দেখা গেল, আরসব ছাত্রের চেয়ে অক্ষয় সহজেই পাঠ বুঝতে পারে। হার্ডম্যান জেফ্রয় পাঠ ধরলে অক্ষয় গড়গড় করে বলে ফেলতে পারে। শিক্ষকের উৎসাহে ও আন্তরিকতায় অক্ষয় এসময় পড়তে থাকে: পদার্থবিদ্যা, ভূগোল, জ্যামিতি, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, পাটিগণিত, মনোবিজ্ঞানসহ ইংরেজি সাহিত্যের নামি বইগুলো। ইলিয়াড ও ভার্জিলও অক্ষয় পড়ে শেষ করে ফেলে। মজার বিষয়, এসব বইগুলো পড়ে বুঝতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি তাকে। মাঝে মাঝে যে বিষয়ে বুঝতো সে বিষয় সন্ধের পর সাহেবের কাছ থেকে জেনে নিত। এই সময় থেকে আরও একটি বিষয় প্রকাশ পেতে শুরু করলো অক্ষয়ের ভেতর থেকে। সনাতনী হিন্দু ধর্ম থেকে সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে লাগলো। তার আগ্রহ গিয়ে পড়ল বিজ্ঞানের ওপর। তার সামনে সীমাহীন এই যে বিশ্বপ্রকৃতি, এর সবকিছুই যে রহস্যময়, এই সত্য বুঝতে পারল। বুঝতে পারলো বলেই রহস্যগুলোর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে অক্ষয়ের আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। এই আগ্রহই আসলে জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণা। জগতে জ্ঞানই মানুষকে পশু থেকে আর পশুকে মানুষ থেকে আলাদা করেছে। জ্ঞান আছে বলেই মানুষ, জ্ঞান নেই বলেই পশু। জীবন ও জগৎ নিয়ে জানার আগ্রহ পশুপাখির নেই। তারা প্রকৃতির নিয়মেই খাচ্ছে-দাচ্ছে আর ঘুমাচ্ছে। কিন্তু মানুষের তো জ্ঞান আছে। প্রকৃতির রহস্যগুলো জানার আগ্রহ আছে। যার ভেতর এই আগ্রহ জন্ম নেয়, সে বিজ্ঞানীর মতো করে জগৎকে দেখতে থাকে।

মাসে একদিন এসে মোহন ভাইকে দেখে যেত। ওইদিন রাতটাও থেকে যেত রামধনের বাড়িতে। সে সময় একটু-আধটু পড়াশোনার খোঁজ-খবর নিতেন। বিজ্ঞানের প্রতি অক্ষয়ের এই আগ্রহ তাকে বেশ আরাম দিল। কারণ মোহন বুঝতে পারলো, তার ভাইটি প্রকৃতির পথে হাঁটছে। মোহন কিন্তু বুঝতে পারেনি হিন্দু ধর্মের প্রতি অক্ষয়ের আগ্রহ এখন নেই। এসব বিষয়ে অক্ষয় নিজের থেকেও কিছু বলেনি। মোহন যদি এসব জানতো তাহলে হয়তো কষ্টই পেত। হার্ডম্যান জেফ্রয় ছেলেদের ইংরেজি শেখানোর ফাঁকে ফাঁকে খ্রিস্টবাদও প্রচার করছে!

এক বিকেলে, সন্ধের আগদিয়ে মোহন এলো। অক্ষয় হাত-মুখ ধুয়ে কেবল পড়তে বসবে। দাদাকে দেখে এগিয়ে এলো।
কিরে অক্ষয়, ক্যামন চলছে তোর?
অক্ষয় হাসলো, এই তো দাদা। আসো, ভেতরে আসো।
কে রে? মোহন নাকি রে? ডাকতে ডাকতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন রামধন। হাঁক দিলেন, কই গো, শুনছ? কেতলিতে একটু চায়ের জল চড়িয়ে দাও দিকি।
চা খেতে খেতে রামধন বললেন, তোকে একটা কথা বলব ভাবছি। এসেছিস, ভালোই করেছিস। এই হপ্তা দেড়েক আগে মিত্তির মশাই বলছিল অক্ষয়ের বিয়ের কথা। হাতে নাকি ভালো কন্যা আছে।
মোহন জিগেশ করল, কোন মিত্তির?
আরে ওই যে, গনেশ মিত্তির। আমাদের ওই সামনের গলিতে কাপড়- চোপড়ের দোকান আছে। তিনি বলছিলেন, আগডপাড়ার রামমোহন ঘোষের মেয়ে শ্যামামণির কথা। ভারি নাকি সুশ্রি দেখতে। যাবে নাকি দেখতে? রামমোহন বাবু অবশ্য বছরখানেক আগে মারা গেছেন। মেয়েটি এখন অনাথ।
চা শেষ করে মোহন বলল, আমি আর কী বলবো! যা বলার জ্যাঠা মশাই বলবেন। আমি তাকে চিঠি লিখে আসতে বলে দিচ্ছি। মেয়েকে দেখেশুনে যা বলার, উনিই বলবেন। আমরা কেবল একটা সম্বন্ধ নিয়ে এসেছি। এর বেশি তো আমরা করতে পারি না।
মাথা নাড়লেন রামধন। বললেন, দ্যাখ তাহলে। জ্যাঠাকে চিঠি লিখে আসতে বলে দে।
পরদিন খিদিরপুর ফিরেই পীতম্বরকে চিঠি লিখল মোহন।

শ্রী চরণেষু জ্যাঠা,
আশা করি, আপনারা কুশলেই আছেন। জেঠিমাকে আমার প্রণাম জানাবেন। পর সমাচার এই যে, আমাদের অক্ষয়ের জন্য একটি সুলক্ষণা ও সর্বগুণে গুণান্বিত পাত্রীর খোঁজ পেয়েছি। খোঁজ দিয়েছেন আমার পিশতুতো ভাই রামধন বসু। তাকে তো আপনি চেনেন। পাত্রীর অবশ্যি বাবা নেই। বছরখানেক আগে তিনি পরলোক গমন করেছেন। কলকাতায় অক্ষয়ের পড়াশোনা ভালোই চলছে। গতকালই আমি ওর সঙ্গে দেখা করেছি। আশা করছি, দু’চারদিনের মধ্যে আপনি খিদিরপুর আসবেন। এরপর আমরা একসঙ্গে কলকাতা রওনা দেব।

নমস্কারান্তে
আপনার স্নেহের
মোহন

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ