খোরশেদ মুকুল
উত্তর আধুনিক চেতনায়-উত্তর উপনিবেশিক জমিনে সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার যে আয়োজন নব্বই দশকে শুরু হয়েছিল তা পূণরায় শুরু হয় গত দুই বছর আগে। অর্থাৎ নতুন পর্যায়ে শুরু হওয়ার দুই বছর পূর্ণ করলো এই আন্দোলন। রাজধানী ঢাকার কাঁটাবনস্থ ‘কবিতা ক্যাফে’তে যে আড্ডা দিয়ে উত্তর আধুনিক সাহিত্য বৈঠক শুরু হয় তা মূলত নব্বই দশকের টরেন্ট চত্বরে শুরু হওয়া বৈঠকের উত্তরাধিকার বহন করে। এরপর ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এই চেতনা। এর ফলে দেশব্যাপী একটা নতুন জাগরণ তৈরি হয়। বুদ্ধিবৃত্তিক এই চেতনা চিন্তাশীল মানুষকে পূনরুজ্জীবিত হতে সহায়তা করে। দেশ-কাল-ঐতিহ্য ও ধর্মভিত্তিক স্থানিক উত্তর আধুনিকতা নিয়ে মানুষের আগ্রহ জন্মায়৷ তৈরি হয় উত্তর আধুনিকতা চর্চা গ্রুপ।
ড. মাহবুব হাসান সম্পাদিত উত্তর আধুনিক-উত্তর ঔপনিবেশিক চিন্তার কাগজ “অনন্য” সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রয়াসকে দুই বছর চলমান আন্দোলনের ফসল বললে অত্যুক্তি হবে না বলেই মনে হয়। চিন্তাজগতে এই কাগজের আলাদা একটা প্রভাব বিস্তার করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ উত্তর আধুনিকতা নিয়ে একটা সামগ্রিক ধারণা দেয়ার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা এটি। সম্পাদকীয়টা এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ত্ব বহন করে। উত্তর আধুনিকতা নিয়ে তাত্ত্বিক আলাপের বাইরে গিয়েও কবিতা-গল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে কাগজটি। সাথে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের প্রাসঙ্গিক আলোচনা। যেগুলো প্রায়োগিক উত্তর আধুনিকতার চিহ্ন বহন করে। সম্পাদিত পত্রিকার পাশাপাশি তাঁর লিখিত “বাংলাদেশের কবিতায় লোকজ উপাদান” বইটিও উত্তর আধুনিক সাহিত্য আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাই বইটি নিয়ে সম্প্রতি উত্তর আধুনিক চিন্তকরা লেখালেখির পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক আলোচনারও আয়োজন করে। এক্ষেত্রে উত্তর আধুনিকতা বিষয়ক গবেষক ও কবি আজিজ রাজ্জাকের আলোচনাটা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং সঙ্গত কারণেই তাই “অনন্য” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আমি নিজেও গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া তিনি গত দুই বছর অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্রোগ্রাম করেছেন। যা উত্তর আধুনিক সাহিত্য আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে সহায়তা করেছে। সম্প্রতি উত্তর আধুনিকতা নিয়ে যারা লিখছেন তাদের নিয়েও আলাপ তুলবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। সম্মানিত সম্পাদকের এমন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই এবং কাগজটির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।
এতে উত্তর আধুনিকতা নিয়ে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। যথাক্রমে- ‘উত্তর আধুনিকতার স্বরূপ সন্ধানে’ লিখেছেন কবি শান্তা মারিয়া, ‘প্রসঙ্গ আধুনিক উত্তরাধুনিক’ শিরোনামে লিখেছেন মুজতাহিদ ফারুকী, কবি আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ লিখেছেন ‘উত্তর আধুনিকতাবাদ চর্চা: একটা বোঝাপড়া’, পল্লল ভট্টাচার্যের কলমে ‘উত্তর আধুনিক, বলছে কবিতা’, মাহবুব হাসান এর লেখা ‘আল মাহমুদ: তর্ক থেকে তর্কাতীতের দিকে’ এবং আজিজ রাজ্জাক লিখেছেন ‘বাংলাদেশের কবিতায় লোকজ উপাদান: উত্তর আধুনিক চোখে লোক ঐতিহ্য অনুসন্ধান’। দেশ-কাল-ঐতিহ্য ভিত্তিক ‘স্থানীয় উত্তর আধুনিকতা’ বুঝতে পাঠক ও সমকালীন কবি-লেখকদের জন্য সংখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ। ১৫৬ পৃষ্ঠার এই সূচনা সংখ্যার বিনিময় মূল্য রাখা হয়েছে ২০০ টাকা।
অসাধারণ একটি সংখ্যা। হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রচেষ্টা দেশবোধ ও ঔপনিবেশিক উত্তর মুক্তজীবন ও জাতীয়তা বিকাশে সুদূর উজ্জ্বল আলো হয়ে উঠবে। ❤️