| মাহমুদ নোমান |
ড. মুকিদ চৌধুরীর লেখার মধ্যে একটা টান আছে, একদম নিজস্ব টান, মায়া ভরা মমত্বে বোধের আলোয় ছড়িয়ে দেন ভাবের চাদরে; সহজ সরল বয়ানে ভাবিত কল্পজগত বাঁধাই হয় সৌন্দর্য সাধনে দৃশ্য থেকে দৃশ্যে দর্পিত হতে হতে একেকটি চরিত্র সহজাত সাধারণে অসাধারণত্বে প্রস্ফুটিত বনফুল যেন; ড. মুকিদ চৌধুরীর ভাষা গীতল স্পর্শে জাগানিয়া মৃদু ঝাঁকুনি স্মার্ট শব্দগুচ্ছে অদ্ভুত অনুশীলন কোনও নড়বড়ে দেখি না, মনে হয় ড. মুকিদ চৌধুরীর লেখার মধ্যে প্রত্যেকটা চরিত্রের ভাষা এক, থ্রোয়িংও এক তবে একেক চরিত্রের একেকটা জীবন উদযাপিত হচ্ছে অবিরল ঝর্ণাধারায়; এটি দারুণ দক্ষতা ড. মুকিদ চৌধুরীর…আরেকটু এগিয়ে বললে হয়- ড. মুকিদ চৌধুরীর চরিত্রগুলোর পারিপার্শ্বিক অবস্থার নান্দনিক উপস্থাপনে এমনই সত্যি ও অকৃত্রিম যেন চোখের সামনে ঘটছে ইদানিং এমন কথাসাহিত্যিকের সন্ধান মেলে না…
সম্প্রতি কয়েক ধাপে ড. মুকিদ চৌধুরীর নাট্যোপন্যাস পাঠ করার সুবাদে আমার মধ্যে বিস্ময়াবহে ঘোর তৈরি হয়েছে। ড. মুকিদ চৌধুরী একজন অন্যতম সুসাহিত্যিক এটা ভাববার অনেক হেতু আছে শুধু নয় এরকম স্বরের ও বোধের কৌমার্যে সহজাত শক্তিসম্পন্ন লেখকের পরিচিতি ও অভূতপূর্ব সৃজনকর্ম তুলে ধরলে বাংলা সাহিত্যেরও মঙ্গল বটে; এই মুহূর্তে নাট্যোপন্যাস ‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ পাঠ পরবর্তী উপরোক্ত কথাসব বলা; নাট্যোপন্যাসটি একজন নিঃসন্তান নারীর জীবনবোধ জিজ্ঞাসা আর চতুর্দিক থেকে সন্তান না হওয়ার প্রেক্ষিতে সব কটুকথা- খোঁচা শুধু যে নারীর দিকে ধাবিত হয় এটিই তুলে ধরেছেন সুনির্মিত বাক্যের পর বাক্যে; সব দোষ যেন একজন নারীর অথচ একপেশে ভাবনার সমাজ ভাবেই না একজন সন্তান আসার প্রথম পক্ষ একজন পুরুষ; অভ্যাস বলুন স্বভাবে বলুন ‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ নাট্যোপন্যাসটির মূল চরিত্র স্মৃতির সন্তান না- হওয়ার অথবা সন্তান না- থাকাতে কটুকথা শুধু নয় এই প্রেক্ষিতে অন্তর্দহন, কুসংস্কারের পীড়নের সমূহ দলিল যেন;
০২.
‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ নাট্যোপন্যাসের মূল চরিত্র স্মৃতির স্বামী রূপাই একজন কৃষক,ক্ষেত খামার এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষ। কৃষক বলে আবার রূপাই হতদরিদ্র নয়, সম্ভ্রান্ত কৃষক যাকে বলে, অর্থকড়ি জমিজমা এসব বেশ জমিয়ে সোনায় সোহাগায় রেখেছেন স্মৃতিকে। চর্মচক্ষুতে অভাব বলে কিছু নেই, তবে কীসের যেন হাহাকার এই উপন্যাসের আগাগোড়ায় দাগ টেনে দিয়েছে। আর সেটি হল বন্ধ্যা নারীর খোঁটা! অথচ স্মৃতির শরীরের মধ্যে সন্তান না-হওয়ার কোনও আলামত নেই। বরঞ্চ রূপাই সন্তান না- নেওয়ার পক্ষে সাফাই দিয়ে গেছে। সন্তান থাকলে কতিপয় সমস্যাগুলো বারবার সামনে আনতে চেয়েছে, যুক্তি পর্যন্ত দিয়ে গেছে সুযোগ পেলেই! বিপত্তির চরমে পৌঁছায় একই ঘরে স্মৃতির দেবর মানে রূপাইয়ের ছোটভাই অলক যখন সন্তানের জনক হতে যাচ্ছে অর্থাৎ পদ্মশ্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে; সেসময়কার হাহাকার ঠেলে দেয় চরমে, স্মৃতি যতই এই হাহাকার আড়ালে রাখতে চায়, আড়ালের দুর্গ ভেঙেচুরে মাসীমা অণিমার একরকম প্ররোচণায় সাধুবাবার কাছে সন্তান লাভে আসা যাওয়া শুরু করে। এখানেই উপন্যাসটির মোচড়ানি, রূপাইয়ের বন্ধু মানবের সাথে পরকীয়ার উঁকিঝুঁকি বলুন হালকা মিষ্টি ছড়ানো প্রেম বলুন মানব আতিথ্য গ্রহণ করে স্মৃতির সুবাতাস শুঁকে, এখানেই দমবন্ধ মুগ্ধতায় ডুবে দিয়েছে ড. মুকিদ চৌধুরী; প্রেম প্রেমই তবে কিছু প্রেম আরেকজনের মন ভাঙা এসবের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ পরিবেশিত হচ্ছে হচ্ছে করেও ‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ নাট্যোপন্যাসটির শেষে রূপাই বুকে টেনে নিয়েছে স্মৃতিকে; হয়তো আমরা পাঠকজন জানতে পারবো না স্মৃতি সন্তানসম্ভবা হয়েছে কীনা তবে স্ত্রীকে সময় না-দেওয়া বিশেষ অনুভূতিতে স্ত্রীকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ না-করা, সম গমে মিলনের পরিবেশ আশা করেই প্রত্যেক মানুষের হৃদয়, এটিই বেশ উপলব্ধিতে উপভোগ্য বৈচিত্র্যময় আয়োজনে তুলে ধরলেন ঔপন্যাসিক- নাট্যকার ড. মুকিদ চৌধুরী…
০৩.
‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ নাট্যোপন্যাসটিতে অপ্রাকৃতিক কার্যকলাপের স্থায়ীত্ব ক্ষণিকের সেটির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। পরিবেশ পরিস্থিতি কৃষকের আর মাটি ঘেঁষা হলেও ভাষা ড.মুকিদ চৌধুরীর নিজস্ব ঘরণার; এখানেই খটকা তো লাগলোই না বরঞ্চ উপন্যাসটিকে উপভোগ্য বেগবান এমনকি কখনও আলগা মনে হয়নি। এজন্যই ড. মুকিদ চৌধুরীর নিজস্ব জগতের জন্য অনেক শুভকামনা…