spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধআল মাহমুদের 'হাওয়া বিবির জাগরণ ' : আলোচনা -সমালোচনা ও বিতর্ক

লিখেছেন : নাজমুস সায়াদাত

আল মাহমুদের ‘হাওয়া বিবির জাগরণ ‘ : আলোচনা -সমালোচনা ও বিতর্ক

নাজমুস সায়াদাত

আল মাহমুদের ‘হাওয়া বিবির জাগরণ’ কবিতাটি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০২ যায়যায়দিন ম্যাগাজিনে ৬ ও ৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। কবিতাটি প্রকাশের সাথে সাথেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেয়। কেউ কেউ ইসলামের মৌলিক একটি বিষয়কে আঘাত করার অভিযোগে কবিতাটিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। ফলে তখন একটা গোষ্ঠী আল মাহমুদকে মানসিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে। হয়তো বা বিতর্ক এড়াতে কিংবা সমালোচনা হতে দূরে থাকতে কবিতাটি কবি তাঁর জীবদ্দশায় অগ্রন্থিত রেখে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। যদিও কবিতাটি পত্রিকায় প্রকাশিত: 

নড়ে উঠল সেই ছিন্ন মাংসের স্তুপ।

প্রভুর ইশারায় তার ওপর দিয়ে বইতে লাগল উদ্বেলিত বাতাসের তরঙ্গ।

আদন বাগানের পুষ্পের রেণুতে আকীর্ণ। গন্ধময়। সতেজ।

হ্যাঁ, নিঃশ্বাসবায়ুতে তার বুক হাপরের মত হাওয়ায় ভরে উঠল।

প্রথম ভেসে উঠল স্তনশোভা। আকাশের দিকে কম্পমান

পর্বতের মত। কিংবা

দৃষ্টিহীন বালকের চোখের মতোই অন্ধ কিছু বোটা দুটি

চৈতন্যের বিদ্যুতে সজাগ ও সচেতন। কোটি কোটি

আলোকবর্ষের দিকে উদ্যত, অপরিসীম সম্ভাবনার দিকে

স্ফারিত, স্তম্ভিত ও বিকশিত নির্জ্ঞান পুষ্পসদৃশ।

দ্বিতীয়বার নিঃশ্বাস টানার আগেই চেতনার ঢেউবালি

বইতে লাগল তার ঊরুসন্ধির অন্ধকার গুল্মের

ভেতর দিয়ে। ছিন্ন মাংসের বেদনা যেন উপচে

পড়ল তার অধরোষ্ঠে। ঠোঁট দুটি কুঞ্চিত হল

ডিমের মত মুখাবয়বের ভেতর স্ত্রী পুষ্পক

আলগা হওয়ার তৃপ্তির গোঙানির মত

উচ্চারিত হল ভাষা। এক ধরণের আ-আ-আ

শব্দ। হাওয়া কি চৈতন্যের প্রারম্ভেই উচ্চারণ

করেছিলেন আদমের নাম? না আদমের চির দ্বিখণ্ডকারী

আল্লাহর নাম? যার ইঙ্গিতে সুগঠিত কেশরাশি বদন

ও বক্ষস্থল থেকে পেছনে, পৃষ্ঠদেশে ঠেলে দিয়ে

চোখ মেলে তার পাশে এক চেতনাহীন বিপুলাতন

পুরুষকে দেখে তার বুকে হাত রাখল। আর

সাথে সাথেই কম্পন শুরু আদন বাগানের মাটি।

পত্রপল্লবের ভিতর দিয়ে ইঙ্গিতময় শিহরণ বয়ে গেল।

জ্ঞানবৃক্ষের সবগুলো স্ত্রী কেশর আঠাযুক্ত হয়ে

সবগুলো পাপড়ি মেলে বাতাসে দুলতে থাকল।

মাদক গন্ধে স্ফারিত হল পুংকেশর রেণু ছড়িয়ে।

প্রজাপতির মাতাল স্রোত বইতে লাগল

উদ্যান জুড়ে।

বৃক্ষটির সর্বোচ্চ শাখায় সর্পরূপী শয়তান তার

নকশাকাটা শরীরের

একটি মাত্র প্যাঁচ খুলল। তাকেও অপেক্ষা করতে

হচ্ছে বৃক্ষ ও বিবিটির বিকাশের জন্য। মেয়েটি আড়মোড়া

ভাঙছে। আর গাছটিও কয়েক গুচ্ছ ফুলের বেশি এগোয়নি। তাকে

অপেক্ষা করতে হবে বৈকি!

অপেক্ষা পূর্ণতার জন্য

পেকে ওঠার জন্য। কারণ সে জানে জ্ঞানই পতন।

জ্ঞানই দুর্ভেদ্য আদমের নিবাসহীন, উদ্বাস্তু,

বেপথুমান এবং বিতাড়ণের একমাত্র উপায় হবে।

সাপটি তার সম্পূর্ণ ফণা মেলে দিয়ে জিব

বের করে হাওয়া বিবির আড়মোড়া ভাঙা এবং

নিঃশ্বাসের শব্দ শুনল। ভাবল এর আকার

আদমের কিন্তু প্রকৃতি প্রসারণমুখী।

যেন এক মায়াবৃক্ষ দুটিমাত্র কুসুমে তার পরাক্রম ব্যক্ত

করে নিঃশ্বাস টানছে। তার ঊরুর প্রসারণ বেলা

অবাধ্য, সন্ধিস্থল গুল্মময় এবং

অন্ধকারাচ্ছন্ন। সে তো নিরন্ধ্র নয়!

শয়তান আশান্বিত হয়ে জ্ঞানবৃক্ষের শাখা থেকে

তার শরীরের প্যাঁচ শিথিল করে গাছের নিচে

নামতে লাগল।

কিন্তু চেতনা সম্ভবত তার প্রভুর ইঙ্গিতেই আদমকে

নিঃশেষে ছেড়ে যায়নি। এমনকি শরীর থেকে বাম

পাজরের খানিকটা মাংসমজ্জা খুলে

নেয়ার সময়েও। শুধু

চোখ দুটি দৈব অবসাদগ্রস্তের মত নিমিলিত

করে দিয়েছিলেন বিধাতা।

এখন চোখ মেলেই সে তার অবশিষ্টাংশের পূর্ণ

কাঠামোতে বিস্ময় বিহ্বল হয়ে বাহু প্রসারিত করে

বলে উঠল, আমার। এতো আমি। আমারই

মাংসমজ্জা। মেয়েটি ঠোঁট উল্টে হাসল। আমি

হাওয়া। আমার নাম আমি নিজে রেখেছি স্বতন্ত্র।

আমার উদ্ভব আমাকে এখনো জানানো হয়নি, তাই

স্বাধীন। হতে পারে আমাকে টেনে বের করা

হয়েছে তোমা থেকে। কিন্তু আমি কি

সেখানেও পরিকল্পিতভাবেই ছিন্ন হওয়ার মত

আলাদা অস্তিত্বে ছিলাম না। হাত বাড়িও না।

সাপটি আশান্বিত হয়ে আদন বেহেস্তের

ধূলিতে মুখ লুকোতে চাইল। তার ফণা মুহূর্তের

মধ্যে সঙ্কোচিত হয়ে ক্যামোফ্লাজ তৈরি করল।

আদমের পাঁজরে ছিঁড়ে নেয়ার জ্বালা

অসহনীয় হয়ে উঠলে তিনি তার মহাবাহু

যুগল প্রসারিত করে হাওয়াকে স্পর্শ

করলেন। চেপে ধরলেন বুকে, বাহুতে, পাঁজরে।

তোমার সব প্রয়াস ব্যর্থ কারণ ছিন্ন মাংস জোড়া

দেয়ার দৈব কৌশল তোমার অনায়ত্ত। আমিও

জানি না বলে আমি সুন্দর ও

স্বস্তিকর। আমিও

চাই কিন্তু উপায় অপরিজ্ঞাত। আমরা

একটি মাত্র শব্দ উচ্চারণ করি, ভালোবাসি

কিন্তু পুনর্বার যুক্ত হওয়ার দৈব কৌশল জানি না

বলে আমরা প্রেমে, প্রতীক্ষায় পারস্পরিক অজ্ঞতায়

যন্ত্রণাকাতর। ভালোবাস কি তা আমরা

জানব। কিন্তু তার কাছ থেকে যুক্ত হওয়ার

কথা আমরা শিখব?

জ্ঞানবৃক্ষের কাণ্ডের এক ফাটল থেকে সাপটি

জিব বের করে আবার ফণা মেলে নিঃশব্দে

বলল, আমি সব জানি। আমার চেয়ে বেশি

জানে ঐ বৃক্ষটি।

পরবর্তীতে এনটিভি অনলাইনেকবিরা কখনোই কারো একার নয়’ শিরোনামে বিধান রিবেরুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আল মাহমুদ তাঁর এই কবিতাটি নিয়ে একটি মন্তব্য করেন:

প্রশ্ন : দেশে আপনাকে অনেকেই মৌলবাদী বলে মন্তব্য করে। এ ব্যাপারে আপনার কিছু বলার আছে?

আল মাহমুদ : দাড়ি রাখলে আর ধর্মভীরু হলেই যদি মৌলবাদী হয়, তবে অবশ্যই আমি মৌলবাদী। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের সভায় যাই বলে আমাকে যদি মৌলবাদী বলা হয়, তাহলে অবশ্যই অন্যায় হবে। এই তো কিছুদিন আগেই যায়যায়দিনে ‘হাওয়া বিবির জাগরণ’ নামে একটি কবিতা লেখার কারণে তথাকথিত মোল্লারা বেশ চটে যায় আমার ওপর। তাহলে এ থেকে কী প্রমাণিত হয়? সত্যি বলতে কি, আমি একজন কবি। আর কবিরা কখনোই কারো একার নয়, সে সবার– সবার জন্য তার সমান ভালোবাসা। 

ঠিক সেই সময় আল মাহমুদকে নিয়ে নতুন করে ব্যাপক তর্ক-বিতর্কের সূচনা হয়। তাঁর আশপাশেরই কিছু মানুষ তাঁকে দারুনভাবে অপমানিত ও নিগৃহীত করার চেষ্টা করেন বলে কবি পরবর্তীতে উল্লেখ করেছেন। 

মাসুদ মজুমদারের লেখায় এ ঘটনার একটা বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি ‘স্মরণে বরণে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান’ শিরোনামের  রচনার এক স্থানে উল্লেখ করেছেন: 

একটা স্মৃতিচারণ না করলেই নয়। কবি আল মাহমুদ এই সময়ের শীর্ষ কবি। শক্তিমান বিশ্বাসী কবি। ‘হাওয়া বিবির জাগরণ’ নামে একটা কবিতা লিখলেন। যথারীতি কবিতাটি প্রকাশিত হলো। মাওলানা ভোরেই টেলিফোন করলেন। আমাকে নাশতার টেবিলে চান। পুরানা পল্টনে তার দফতরে গিয়ে দেখি শত শত ব্যানার প্রস্তুত। দুপুরে মিছিল বের করবেন। প্রতিবাদ করবেন, আল মাহমুদ বিশ্বাসী মানুষ হয়েও ইহুদি মিথ নিয়ে কবিতা লিখতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের উপস্থাপনাকে এড়িয়ে গেছেন। আমরা জানি হজরত আদম–হাওয়া আলাইহিস সালাম প্রথম মানুষ। হযরত আদম আলাইহিস সালাম প্রথম নবিও। ইহুদি-খ্রিস্টানও তা মানে, তবে ওল্ড টেস্টামেন্টের বরাতে ‘আদি পাপের’ একটা জুড়ে দেয়, যা পবিত্র কুরআনসম্মত নয়। মাওলানাকে কাছে থেকে জানি। প্রতিবাদ তিনি করবেনই। ততক্ষণে প্রীতিভাজন কবি মতিউর রহমান মল্লিক জানালেন, আমি যেন মাওলানাকে ঠেকাই। আমার অনুরোধ তিনি শুনবেন। ঠাণ্ডা মাথায় মাওলানাকে বললাম, মাওলানা ব্যতিক্রম ছাড়া সব কবি ভাবের রাজ্যে সাঁতার কেটে বিভ্রান্তির উপত্যকায় ঘুরে বেড়ান। আল মাহমুদ ব্যতিক্রম নন। উপকার করতে গিয়ে ক্ষতি করে ফেলেছেন। আমি দায়িত্ব নিলাম, আল্লাহ হজরত আদম–হাওয়ার জন্য ক্ষমার শর্ত হিসেবে একটা দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। আমি সন্ধ্যার আগেই আল মাহমুদ ভাইকে নিয়ে দোয়াটা [ রাব্বানা জোয়ালামনা…] পড়িয়ে নেব। মাওলানা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, সত্যিই তাই করবেন। কথা দিলাম। মাওলানা বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আপনি আমাকে এবং আল মাহমুদ দুজনকেই দায়মুক্ত করলেন। তাৎক্ষণিক সবাইকে বলে দিলেন আল মাহমুদের বিরুদ্ধে মিছিল হবে না। তার হেদায়েত ও কল্যাণ কামনা করে মুনাজাত হবে। মাওলানার কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি সেদিন সন্ধ্যায় বিসিআইসি মিলনায়তনের সেমিনার শেষে প্রিয় কবিকে অর্থসহ পড়িয়ে দিয়েছিলাম।  

কবিতাটি প্রকাশের পর কবি আল মাহমুদ কেমনভাবে নিগৃহীত হয়েছিলেন তা তার লেখা ‘কবিশিল্পীদের মাতৃভূমি প্যারিস’ ভ্রমণকাহিনীতে বিবৃত হয়েছে। কবির ভাষায়:

অনেকে আমাকে স্পেনে মাদ্রিদে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করে থাকে। আমি তাদের কি জবাব দেব? আমি তাদের স্বাস্থ্যগত অক্ষমতার কথা বলে এতদিন এড়িয়ে গেছি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, কয়েকটি ব্যক্তিগত কারণে আমি স্পেনে যাইনি। এর মধ্যে একটি প্রধানতম বিষয় হলো, আমার একটি কবিতা নিয়ে ঢাকায় যে ধরণের সমালোচনার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়েছে, তাতে আমি হতভম্ব হয়ে যাই। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্যেই আমি ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যারা আমার অনিষ্ট করতে চায় এবং আমার বিশ্বাসের দৃঢ়তাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে চায়, তারা আমাকে পিছু ধাওয়া ছাড়েনি। তারা ফ্রান্সেও আমার মনোবল দুর্বল করার জন্য এবং আমার আমন্ত্রণদাতাদের হতবিহ্বল করার জন্য নানা কারসাজি করেছে। 

প্যারিসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মেলনে আমার সাফল্যের পর আমি যখন স্পেনে যাওয়ার তোড়জোড় করছি, তখন আমার ঐ কবিতাটিকে নিয়ে এবং আমার তীব্র সমালোচনা করে একটি ফ্যাক্স পাঠায়। ফ্যাক্সের প্রতিলিপি আমার হাতেও এসে যায়। যদিও আমার আমন্ত্রণকারীরা ঐ ফ্যাক্সটিকে কোনো পাত্তা দেয়নি। কিন্তু আমার নিজের লোকদের এই ধরণের আচরণে আমার মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়ে। আমি আর নতুন কোনো শহরে কবিতা পাঠ বা নতুন কোন ভাষণ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। 

… আমি মাদাম নুয়েলের টিভি প্রোগ্রামটিও করতে উদ্যম হারিয়ে ফেলি। ঢাকা এসে এখন মনে প্রশ্ন জেগেছে, যারা আমার বিরুদ্ধে নানান কুৎসাপূর্ণ কথা লিখে প্যারিসে এবং লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন, তারা কারা? আমাকে হতোদ্যম করে তাদের কি লাভ হয়েছে? তারা কি শুধু আমার একটি কবিতাই পড়েছেন? 

আমি গত বিশ-পঁচিশ বছর যাবৎ ইসলামের পক্ষে ইসলামী ঐতিহ্য এবং পবিত্র কোরআনের নানা সূত্র ও কাহিনী অবলম্বন করে এত কবিতা লিখেছি– যা আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন মহিমা দিয়েছে। তারা কি এর একটিও পড়েননি? তারা তো আমাকে অভিযুক্ত কবিতাটি পরিমার্জনের সুযোগ দিতে পারতেন। 

যা হোক, আমাদের জাতীয় সাহিত্য-সংস্কৃতিতে আমি আমার বিশ্বাস এবং সঞ্চিত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমার বিশ্বাস, আমার প্রভূ পরম দয়ালু আল্লাহ আমার সহায় আছেন। তা না হলে একদল ঈর্ষাকাতর ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে যে বৈরী ঝড় তুলতে চেয়েছিল, তাতে আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে সক্ষম হতাম না। এখন বুঝছি আমার ওপর আমার পীর-মুর্শিদ, আলেম-ওলামা এবং অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের দোয়া আছে। আর আছে কয়েক লক্ষ মুসলিম তরুণ-তরুণীর দৃঢ় সমর্থন।  

‘হাওয়া বিবির জাগরণ’ মূলত আল মাহমুদের ‘এ গল্পের শেষ নেই শুরুও ছিল না’ শিরোনামে অসমাপ্ত মহাকাব্যের একটি পটভূমি। এ প্রসঙ্গে জাকির আবু জাফর তার  ‘আল মাহমুদ যেমন দেখেছি তাঁকে’ স্মৃতিগদ্যে উল্লেখ করেছেন যে:

মহাকাব্যের এ কাহিনীটি তিনি বেশ ক’বছর আগে অন্যভাবে শুরু করেছিলেন। লিখেছিলেন তার মুখবন্ধ মতোন একটি কবিতা। নাম– ‘হাওয়া বিবির জাগরণ’। 

কবিতাটি শফিক রেহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ছাপা হয়। কবিতাটি প্রকাশ হওয়ার পর পাঠকমহলে এক ধরনের ঝিলিক খেলে যায়, যা কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি করে। অভিনন্দনের পাশাপাশি কিছু পাঠক আপত্তি তোলে। ফলে কবিতাটিকে ঘিরে খানিকটা চাঞ্চল্য, সেই সাথে উত্তেজনাও। কিছু স্বল্পবোধসম্পন্ন পাঠকের আচরণে কষ্ট পেলেন আল মাহমুদ। কবিতাটি কোনো বইয়ে নেননি তিনি। তিনি আমাকে খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এই কবিতাকে একটি মহাকাব্যে রূপ দেয়ার ইচ্ছে ছিল আমার। তা আর হলো না। যদি সে সময় বিতর্কের সৃষ্টি না হতো হয়তো বাংলা কবিতা একটি আধুনিক মহাকাব্য পেত। 

হাওয়া বিবির জাগরণ আধুনিক কাব্যভাষায় শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর এ মহাকাব্য হতো আাধুনিক কবিতার একটি দীর্ঘ উচ্চারণ। হতো একটি নতুন বাঁক। পরে তিনি সেই কাহিনীকেই নতুন করে মহাকাব্যে রূপ দিলেন– ‘এ গল্পের শেষ নেই, শুরুও ছিল না। তবে ভাষা দিলেন বাংলা কবিতার বহমান প্রাচীণ ধারায়। আধুনিক কবিতারা ভাষা চিত্রিত করলেন না এখানে। উপমা চিত্রকল্প অন্ত্যমিল সবই আধুনিক। কিন্তু ছন্দের ধরন, টোন ও বহমানতা প্রচলিত পয়ার ছন্দের। আধুনিক ভাষায় মহাকাব্য পেল না আর বাংলা ভাষা। 

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. এই গ্রন্থণাটা অসাধারণ হয়েছে। লেখককে ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা