spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যঈদের স্মৃতি

অগ্রন্থিত আল মাহমুদ । লিখেছেন : আল মাহমুদ

ঈদের স্মৃতি

আল মাহমুদ

একটা পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি মাত্র একুশ বছর বয়সে ঢাকায় আসি। এর আগের জীবন মফস্বলে কেটে গেছে। সে জীবন নিয়ে বইপত্র লিখেছি বলে এ নিয়ে আর বলতে চাই না। তারুণ্য বলেন আর যৌবনই বলেন আমাদের জীবন কেটে গেছে ঢাকায়। আমি ও আমার স্ত্রী ঢাকাকেই জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্র হিসেবে ভালোবেসে এসেছি। ঈদুল আজহার একটি অতীত স্মৃতির কথা আমরা দু’জনই কোনোদিন ভুলতে পারিনি। স্মৃতিটা হল আমরা বহুকাল আগে নারিন্দায় বসবাস করতাম। কোন এক ঈদুল আজহায় আমাদের কোরবাণী করার মত সাধ্য ছিল না। ভাবলাম এবার না হয় কোরবাণী না-ই করলাম। চারদিকে এত বন্ধু বান্ধব আত্মীয়স্বজন যখন আছে, কোরবাণীর গোশতের নিশ্চয় অভাব হবে না। এই ভেবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয় সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ আমাদের এক টুকরো কোরবাণীর মাংস পর্যন্ত পাঠালো না’। আমরাও তেমন কোনো আয়োজন করিনি। এ সময় সহসা আমার কবিবন্ধু শহীদ কাদরী এসে হাজির। এখন কি করা যায়? শহীদকে তো আর ঈদের দিন না খাইয়ে বিদেয় করা যায় না। আমি ও আমার স্ত্রী নাদিরা যখন দারুন দুশ্চিন্তায় রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে পরামর্শ করছি যে দ্রুত বাজারে গিয়ে একটা মুর্গী কিনে নিয়ে আসব। ঠিক তখনই দরজায় কড়ানাড়ার শব্দ পেলাম। দুয়ার খোলে দেখি একটি মেয়ে হাসিমুখে একটি মাংসের বাটি এগিয়ে দিয়ে বলল, আব্বা পাঠিয়েছেন।
মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম তোহা ভাই পাঠিয়েছেন। আমি ও মোহাম্মদ তোহা খান তখন ইত্তেফাকের মফস্বল বিভাগে কাজ করি। আমরা একই পাড়ার বাসিন্দা। আমি বাটিটা এনে নাদিরার হাতে দিলাম। সে তো খুশীতে হেসে ফেলল। প্রায় হাফ কেজি মাংস তৎক্ষণাত রান্নার ব্যবস্থা করতে আমার স্ত্রী দ্রুত তৎপর হল। আর আমি গিয়ে শহীদ কাদরীর সাথে কাব্যালাপ জুড়ে দিলাম। যথাসময়ে রান্না শেষ হলে শহীদকে নিয়ে খেতে বসলাম। আমার স্ত্রী রান্না করা পুরো মাংসটিই একটা বাটি ভর্তি করে পরিবেশন করেছে। আমি বাটি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম আর এক টুকরাও আমার স্ত্রী বা পুত্রের জন্য অবশিষ্ট নেই।
শহীদ বেশ পরিতৃপ্তি সহকারেই কোরবাণীর গোস্ত দিয়ে ভাত খেলো। আমিও এক আধ টুকরো নিলাম। খাওয়ার শুরুতেই আমি আমার কবিবন্ধুকে জানিয়ে দিলাম এ দিয়েই আজ খেতে হবে, বাইরে থেকে পাওয়া মাংস, আমরা এবার কোরবাণী করতে পারিনি। খেয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে শহীদ চলে যাওয়ার পর আমার স্ত্রী ও আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এর পরই আমরা প্রতিজ্ঞা নিলাম, ভবিষ্যতে কোরবাণীর সময় আমরা যদি ঢাকায় থাকি তাহলে কোনো অবস্থাতেই কোরবাণী দেয়া থেকে দূরে থাকব না। গরু না পারি একটা ছাগল হলেও আল্লাহর নামে কোরবাণী করব। আল্লাহর অসীম রহমতে এরপর আর কোন কোরবাণীর ঈদই আমাদের বাদ যায়নি। এখন অবশ্য ঈদের সকালে আমাদের অনুভূতিটা ধর্মীয় আবেগেই পূর্ণ থাকে। এখন তো ছেলেমেয়েরাও অনেক বড় হয়েছে, তারাই ঈদের সমস্ত কর্তব্য নিজেরাই সমাধা করে।
আমি কোরবাণী না হওয়া পর্যন্ত কিছু মুখে দিতে চাই না। ঈদের জামাত থেকে এসে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কোরবাণী করি এবং আমাদের কোরবাণী কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে মিনতি করি। আমার স্ত্রী, কন্যা ও ছেলের বৌয়েরা গোশতো সামলায়, বিলি বিতরণ করে এবং রাঁধে। যাতে শহরে আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজনও কোরবাণীর গোশতো থেকে বাদ না পড়ে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি থাকে সতর্ক। আমরা নারিন্দার সেই অতীত ঈদের দিনের স্মৃতি একেবারেই বিস্মৃতি হই না। বরং শহীদ কাদরীর মত কোনো একজন কবি বন্ধুও এই ঢাকায় আর অবশিষ্ট নেই বলে আমাদেরও আফসোসের সীমা থাকে না।

[ কবি আল মাহমুদ এর এ অগ্রন্থিত লেখাটি কবি তৌফিক জহুর কর্তৃক ০৯.০৩.২০০০ এ গৃহীত। বলা বাহুল্য, লেখাটি তাঁর-ই সৌজন্যে প্রাপ্ত। তবে, শিরোনামটি সম্পাদকের দেয়া। সম্পাদক : বাংলা রিভিউ ]

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা