ফরিদুর রহমান
আমার প্রথম ছড়ার বই ‘উল্টো গাধার পিঠে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। চৌদ্দ পনের বছর বয়সে ছড়া লিখতে শুরু করে প্রায় ত্রিশ বছরে এসে ছড়ার প্রথম সংকলন বই আকারে ছেপে বের হবার ব্যাপারটা এখন একটু অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। আজকাল কোনোরকমে মোটামুটি তিন ফর্মার লেখা জমা হয়ে গেলেই যেকোনো লেখকের বই প্রকাশিত হয়ে যায়। আমাদের সময়টা ছিলো অন্যরকম। সেই কারণে তুলনাহীন তীক্ষ ব্যঙ্গ বিদ্রূপ, অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত প্রকাশ এবং চমৎকার অন্তমিলে সমৃদ্ধ অসংখ্য ছড়ার লেখক সত্তুর দশকের অন্যতম প্রধান ছড়াকার আলতাফ আলী হাসুর একমাত্র ছড়া গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তিনি লোকন্তরিত হবার পরে।
কয়েকজন গ্রন্থপ্রেমিক উদ্যোগী তরুণ তিরাশি সালের শেষ দিকে প্রায় আকস্মিকভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘আগামী অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় আমরা নিজেরাই কিছু বই প্রকাশ করবো। সিদ্ধান্ত অনেকটা হঠাৎ করে হলেও আমাদের ভেতরের সম্পর্ক কয়েক বছরের। আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাথে যুক্ত ছিলাম। কবি কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী অনুষ্ঠান অধ্যক্ষ, মাহবুব আলম এবং আমি অনুষ্ঠান প্রযোজক। খায়রুল আলম সবুজ অভিনেতা এবং টেলিভিশনের ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘টিভি গাইড’ এর প্রকাশক। এ ছাড়াও ছিলেন টেলিভিশনের সাথে নানা কাজে যুক্ত স্থিরচিত্রগ্রাহক ইউসুফ সাদ এবং অনুষ্ঠান সহকারী মোহন আবেদীন।
১৯৮৪ সালে একুশের বইমেলা শুরু হবার আগেই ছাপা হয়ে বেরিয়ে এসেছিল তিনটি বই। কাজী আবু জাফর সিদ্দিকীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নগদ কবিতা মূল্যে’ খায়রুল আলম সবুজের প্রথম গল্পের বই ‘স্বর্ণলতার বৃক্ষ চাই’ এবং আমার ছড়া সংকলন ‘উল্টো গাধার পিঠে’। এই ছড়া গ্রন্থে ১৯৬৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত লেখা মোট ত্রিশটি ছড়া স্থান পেয়েছে।
আমার কিশোর কবিতা লেখার শুরুটা ১৯৬৮ সালের দিকে। কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাকের কচিকাঁচার আসর, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত এখলাস উদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘টাপুর টুপুর’ এবং রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক ‘কচি ও কাঁচা’য়। কিছুদিন পরে লিখতে শুরু করেছিলাম দৈনিক সংবাদের ‘খেলাঘর’ এর পাতায়। ঊনসত্তুর সালে গণ আন্দোলনের পরপরই এসএসসি পরীক্ষা শেষে আমি প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছিলাম। সঙ্গে ছিল ছড়াকার বন্ধু আলতাফ আলী হাসু। ঊনসত্তুরের জুলাই মাসেই শুরু হয়েছিল কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের পাক্ষিক সাহিত্য সভা। সেখানে দ্বিতীয় সাহিত্য সভায় পরিচয় ঘটেছিল সে সময়ের খ্যাতিমান ছড়াকারদের সাথে। লেখালিখির ব্যাপারে আমাকে সেই কিশোর বয়সে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিলেন ছড়াকার আখতার হুসেন, সুকুমার বড়ুয়া এবং আবু সালেহ। প্রথমবারের মতো সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা দেখে এসে আখতার ভাইয়ের ৩৬ নারিন্দার বাসায় সম্ভবত সেদিন রাতেই লিখেছিলাম, ‘কাপড় কাচা দেখবে যদি আজব রকম ধোপার/সময় করে যাও না তবে বুড়িগঙ্গার ওপার/; ঝাঁক যেনো ঠিক নয়কো কাপড়/ সংগ্রাম ওরা করছে সবাই বাঁচার! ছড়াটি পরে খেলাঘরের পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। যতোদূর মনে পড়ে, সাধরণ মানুষের জীবন ভাবনা থেকে লেখা সেটিই ছিল আমার প্রথম ছড়া।
‘উল্টো গাধার পিঠে’র ত্রিশটি ছড়ার বেশিরভাগই সমাকালীন রাজনীতির পটভূমিতে, নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, ষড়যন্ত্র ও পট পরিবর্তননের প্রেক্ষিতে লেখা। বইয়ের প্রথম ছড়াটি ১৯৬৯ সালে লেখা। ছড়া লিখতে শুরু করার প্রথম দিকের দিনগুলোতে দেশে আইয়ুব খান–মোনায়েম খানের রাজত্ব। এই দুই মহারথী ছাড়াও তখন মুসলিম লীগ এবং জামায়াতে খান সাহেবদের ছড়াছড়ি। সেই কিশোর বয়সে ছড়া লিখেই যতটা সম্ভব ক্ষোভ প্রকাশ করেছি। ‘খান সাহেবের নাতি/ভয়ের চোটে ঘুম আসে না/ নিভিয়ে দিলে বাতি। মুখের জোরেই মারেন তিনি বাঘ ভাল্লুক হাতি’।
একটি বিশেষ সময়ের রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থা খুব সহজেই যাতে বুঝতে পারা যায়, সে জন্যে গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি ছাড়ার সাথে রচনাকাল উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ঠিক পরপরই লেখা হয়েছিল, ‘টাটকা খবর টাটকা/ নিজেই নিজের খুঁড়লো কবর/মাতবর!/ তারপর হায় ঘটলো কি যে/ নিজের শোকে কাঁদলো নিজে/ রাতভর!’ লেখাটি দৈনিক পাকিস্তানের ছোটদের পাতা ‘সাত ভাই চম্পা’য় প্রকাশিত হয়েছিল। যে ভাবনা থেকে এটি লেখা হয়েছিল তা ছোটদের জন্য ছিল কি না এবং ছড়াটির অন্তর্নিহিত কোনো অর্থও হয়তো কেউ তখন ভেবে দেখেননি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন লেখা, ‘বাদশাহী জোশ বজায় রাখুন অটুট থাকুন ধর্মে/ ঘটছে যা তা ঘটতে থাকুক আপকা আপন ঘরমে/বলতে হুজুর পাচ্ছে হাসি/ আপনারা সব খোদার খাসি/ সবুর করুন ঢাক বাজাবো আপনাদেরই চর্মে।’ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লেখা দুই একটি ছাড়া পশ্চিম বাংলা থেকে প্রকাশিত পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও এই ছড়াটি কোথাও ছাপা হয়নি।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশে যে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছিল, তা ভাবিয়ে তুলেছিল সকলকেই। হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই রাহাজনির মতো ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। সে সময় আমাদের চারপাশে অবক্ষয় ও অস্থিরতা যে ভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছিল, একজন সচেতন মানুষ হিসাবে ছড়ার ভেতর দিয়ে তা উল্লেখ না করার কোনো কারণ ছিল না। ১৯৭৩ সালে লেখা ছড়া ‘রাজার চোখে ঘুম আসে না মন্ত্রী টানেন নস্যি যখন তখন রাত বিরেতে গুল্লি চলে ফুটফাট/দিনকে দিনই চলছে বেড়ে চোর বদমাশ দস্যি/গঞ্জে গ্রামে দিন দুপুরে হচ্ছে নাকি লুটপাট/হাজার রকম মিটিং ডেকে বিশেষ গোপন কক্ষে/সর্বশেষে বের হলো এক জবর কড়া বুদ্ধি/এই নীতিটাই সবচেয়ে’ ভালো দেশের লোকের পক্ষে/ দেশটা জুড়ে চালিয়ে যাও ব্যাপক তারো শুদ্ধি/শেষটাতে হায় সার হলে যে ভাবনা এবং চিন্তাই/শুদ্ধি করার লোক মেলা ভার সবাই করে ছিনতাই।’
দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে ১৯৭৪ সালে লেখা, আমরা আজও বেচে আছি হদ্দ মরণ দশায়/ বাজার দরের উঠতি কখন প্রাণটা হঠাৎ খসায়!/ কোনটা ভেজাল কোনটা নকল/সইতে পারি হাজার ধকল/বানের জলের ধার ধারি না পথেও যদি বসায়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যা করার পরে জাময়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, রাজাকার আল বদরসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান পুনর্বাসন ও সুষমতার অংশীদারিত্ব দেয়ার মধ্য দিয়ে যে অশুভ পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল, ছড়াকার হিসাবে সেই সমকালীন পরিস্থিতিও তুলে ধরার চেষ্টা করেছি দুই একটি ছড়ায়। ১৯৭৬ সালে লেখা থেকে একটা উদাহরণ দেয়া যায়। ‘হঠাৎ বুঝি পাল্টে গেল আজব দেশের দশাই/কাল যে দিতেন চাক্কুতে ধার, আস্ত ছিলেন কসাই/আজকে তিনি হাত ধুয়ে কন ‘জরুর’/ রক্ষাকারী আমিই হবো, সব ছাগল আর গরুর/ব্যাপার কিন্তু খুব ভালো নয় মশাই!’
দেশের পরিমণ্ডল ছেড়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধেও একটি দুটি ছড়া এই বইতে স্থান পেয়েছে। যেমন : স্কন্ধে যিনি বসেন চেপে তিনিই পুরুষ ঠিক কৃতী/সিন্দাবাদের দত্যি বুড়োরও যায় পেয়ে যায় স্বীকৃতি/বুদ্ধমানে সখ্য পাতায়/কীর্তি ছাপে লক্ষ পাতায়/ তারাই শুধু ঘাপলা বাধায় মাথায় যাদের বিকৃতি/কিন্তু কথা সত্যি ভীষণ/ হোক না যতোই দত্যি ভীষণ/ঘাড়টি ধরে নামিয়ে দেয়াই সর্বকালে ঠিক রীতি।
বেশ কয়েকটি ছড়া সমাজ ভাবনা থেকে লেখা হলেও এককেবারেই ছড়ার জন্যে ছড়া কিংবা শব্দের কারুকাজ এবং অন্তমিলের প্ররোচণা থেকেও কয়েকটি এককেবারেই ‘নির্দোষ’ ছড়া হয়তো বলা যাবে না। যেমন ‘মাছ কাটে বটি পেতে কাচ কাটে হীরাতে/ঘুড়ি কেটে গেলে কেউ পারে না তা ফিরাতে।’ এভাবে শুরু হলেও ছড়াটি শেষ হয়েছে, ‘দিনে যারা ধান কাটে কাস্তের কায়দায়/রাত কাটে অনাহারে অন্যেরা খায়দায়।’ এ ভাবে। ‘উল্টো গাধার পিঠে’র উৎসর্গ পত্রেও প্রকাশিত ছড়াগুলোর মেজাজ ধরে রাখার চেষ্টা ছিল। উৎসর্গের পাতায় লেখা হয়েছিল, ‘মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি! খুকু রেনু মিনা, আমার তিন খালাকে।”
‘উল্টো গাধার পিঠে’র প্রচ্ছদ এবং এর অলংকরণ করেছিলেন জহুরুল আলম মণি। তিনি কোনো প্রতিষ্ঠিত বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত শিল্পী না হয়েও ব্যাঙ্গাত্মক ছবি আকাঁয় যথেষ্ট পারদর্শি ছিলেন। তারচেয়ে বড় কথা তিনি নিজেও ছিলেন ছড়াকার। সত্তুর দশকের মাঝামাঝি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ‘বুমেরাং’ নামে আমরা যে ছড়া পত্রিকা প্রকাশ করেছিলাম সেটিতেও তিনি ছিলেন অন্যতম সম্পাদক। ‘বুমেরাং’ এর প্রচ্ছদ এবং অলঙ্করণ করা ছাড়াও প্রতিটি সংখ্যায় তাঁর লেখা একাধিক ছড়া এতে প্রকাশিত হয়েছে। ‘হুজুর হলেন দেশের রাজা/হস্তে ধরে খড়গ/উৎপাদনের বাপরে কি তোড়/বয়েই গেল ঝড়া গো!’ এই ছড়ার ইলাস্ট্রেশনে তিনি হুজুরের চশমা পরা যে ছবিটি এঁকেছিলেন, তা সহজেই তৎকালীন সামরিক শাসকের চেহারা মনে করিয়ে দেয়।
আমরা পাকিস্তানের তেইশ বছরে এবং বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সামরিক শাসন আমলে দেখেছি ক্ষমতায় এসেই তাঁরা জন সাধারণের জীবন মান উন্নয়নের দোহাই দিয়ে নানা ধরনের কর্মতৎপরতা শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের কোনো কর্মকাণ্ডই মানুষের কল্যাণের কাজে লাগে না, বরং এক সময় নিয়তি নির্ধারিত পরিণতির মতোই তাঁদের শাসনের অবসান এমন কি জীবনাবসানও ঘটে যায়। বিষয়টি ধরতে চেষ্টা করেছি ‘উল্টো গাধার পিঠে’র শেষ ছড়াটিতে। ‘বানর কখনো যদি খোঁজ পায় খন্তার’কতো কিছু ভালো কাজে ঢেলে দেয় মন তার/খন্তাটা নাড়ে চাড়ে খালি খালি কড়াইয়ে/ আলোতে ছায়ার সাথে নেমে যায় লড়াইয়ে/কত করে ছোটাছুটি ঘোরে কত ধান্দায়/ চাটগাঁয় চাটি মেরে আসে গাইবান্ধায়/সব কিছু ঠিকঠাক যেখানে সে দেয় হাত/শেষটায় দেখা যায় কপিবর চিৎপাত!
আশির দশকের শুরুতে মুদ্রণ শিল্প এখনকার মতো সমৃদ্ধ এবং সহজলভ্য ছিল না। বিশেষ করে ছবিসহ কোনো কিছু প্রকাশ করা ছিল রীতিমতো ঝামেলাপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল। শব্দাবলী প্রকাশনা সংস্থার সাথে যুক্ত প্রত্যেকেই তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা দিয়ে এই প্রকাশনা সম্ভব করে তুলেছিলেন। ‘পল্টন প্রেস’ নামে বন্ধু শাজাহান হাফিজ মুকুলের লেটার প্রেসে অক্ষর সাজিয়েছেন বিশু বাবু। ছড়াগুলোর সেই ম্যাটার ট্রেডল মেশিনে কয়েক কপি ছেপে বের করা হয়েছে আর্টপুল। আর্টপুল এবং ইলাস্ট্রেশনের পজিটিভ করে এক সাথে বসিয়ে পাতা মেকআপ এর কাজটি ধৈর্য্যের সাথে যিনি সম্পন্ন করেছিলেন সেই শশ্রুমণ্ডিত পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া তরুণের নামটি ভুলে গেছি। কিন্তু তিনি যে আন্তরিকতা দিয়ে উৎসাহের সাথে কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন তা ভুলবার নয়। তরুণ প্রকাশকদের অনভিজ্ঞতার কারণে বইয়ের বাধাই খুব একটা মান সম্পন্ন হয়নি, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ফলে প্রকাশনার বছর খানেক পরেই বেশ কিছু বইয়ের বাঁধাই খুলে গিয়েছিল।
‘বুমেরাং’ ছড়া পত্রিকার প্রকাশনার শুরুতেই ঘোষণাপত্র হিসাবে একটি ছড়া লেখা হয়েছিল, যেটি অতি আবশ্যক হিসাবেই এই বইতে স্থান পেয়েছে। জীবের সেরা মুণ্ডুজীবী মাথায় যাদের গব্য ঘৃত/আমলা চেটে প্রভুর চরণ কান মলাতে হচ্ছে প্রীত/মুখের বুলি আল্লা রসুল– মাথায় ঘোরে ফন্দি ফিকির/উল্টো চালের বিপ্লবীরা–খোঁজ মেলে না যাদের টিকির/ অধ্যাপনার গবেট শুরু বোলচালে যে ফেলছে ধোকায়/শব্দ খোঁজা ছাগল কবি কাটছে যাদের কাব্য পোকায়/গুপ্ত ঘাতক পোশাকধারী– যার টেঁসে যে কদিন টিকে/বাম পকেটে লুকিয়ে খবর ওঁৎ পাতে যে সাংবাদিকে/স্বদেশ প্রেমের বাকল পরা ভণ্ড নেতা লুটছে মজা/সর্বকালেই মহান তারা গণতন্ত্রের উড়ায় ধ্বজা!
প্রায় ৪৫ বছর আগে লেখা হলেও আমার মনে হয় এই ছড়াটি এখন পর্যন্ত ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। ছড়া যদি নিজের সময়কে অতিক্রম করে আরও কিছুদিন সমসাময়িক বলে মনে না হয় অথবা ছড়া পাঠের ভেতর দিয়ে অন্তত একটি নির্দিষ্ট সমাজ বা কালকে কোনোভাবে চিহ্নিত না করা যায়, তাহলে ছড়া লেখায় কোনো সার্থকতা আছে বলে মনে হয় না। আমার প্রথম ছড়ার বই ‘উল্টো গাধার পিঠে’র হয়তো সেই বিবেচনা বোধ থেকে খানিকটা হলেও উৎরে গেছে।