spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাকবিতাগুচ্ছ : রফিক উল ইসলাম 

কবিতাগুচ্ছ : রফিক উল ইসলাম 

রফিক উল ইসলাম 

চতুর্থ পাথর

শেষ পর্যন্ত অন্তত চারটি পাথর হাতে থাকবে 

আমার। তিনটির ব্যবহার আগেই জানা আছে,

অন্যটি নিয়ে কী করব ভাবতে ভাবতে দিন কেটে যায়!

একসঙ্গে এত দিকে পাথর ছুঁড়তে হবে, কল্পনা করিনি

কখনো। তাহলে তো অনেক জমাতে পারতুম। বিদ্যার বদলে

পাথর, নারীর বদলে পাথর, স্বর্ণমুদ্রার বদলে পাথর,

অজস্র জমিয়ে ফেলতুম। এখন এই পরিণত কালে

চতুর্থ পাথরটিকে নিয়ে কী প্রাণান্ত লড়াই, 

তেমন কোনো জাদুমন্ত্র হাতে থাকলে এই একটিই ভেঙে

দশদিকে ছুঁড়তে পারতুম।

পাথর ছোঁড়াই ধর্ম আমাদের। নির্দেশ আছে, অন্তত তিনটি

পাথর ছোঁড়ার কথা, তাও একদিকে। সে তো

সামান্য কাজ। এখন এই আধোঘুম কিংবা জাগরণে

চরাচর জুড়ে ভেসে উঠছে অজস্র ভূতুড়ে চোখ আর

আগুন। চতুর্থ পাথরটিকে আমি কোন দিকে ছুঁড়ব?

গ্রিল 

বারান্দায় স্থাপিত হওয়ার আগে নীল শিখা আর

গলিত ধাতুর বন্ধু ছিলুম আমি। ওরা দুজন, দুরন্ত দুপুর

আর নির্মম হাতুড়িরা কত যে শিল্পরূপ শিখিয়েছে,

ভাবতে ভাবতে স্তব্ধ হয়ে গেছি! এই স্তব্ধতা ভাঙার নয়

কখনো। সমুদ্র পেরিয়ে, মাঠের পর মাঠ পেরিয়ে

বাতাস ছুটতে ছুটতে আমাকে স্পর্শ করার আগে

পথ হারিয়ে ফেলে। উত্তাপ জমাট বেঁধে যায়।

কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে তুমি এখন

বাথরুমে। সেখান থেকেই চেঁচিয়ে উঠবে: মা,

খেতে দাও। এরপর আধভেজা ব্রা, শায়া আর ছোট্ট হাতরুমালটি

মেলে দিতে দিতে অল্প একটুক্ষণ আমাকে ধরে

দাঁড়াবে। নানারঙের উত্তাপে ঝলমলে হয়ে আছে

শরীর। সেসব দিয়ে তোমাদের যাবতীয় জলছাপ মুছিয়ে দিতে দিতে

আমি কি কখনো আর ফেরার কথা

ভেবে উঠতে চেয়েছি?

স্নান

মা-বর্ণের আলো এই আশ্চর্য পৃথিবীর 

গা ধুইয়ে দিচ্ছে। দূর থেকে দেখি:

কলুষতাগুলি খলবল করতে করতে ভেসে যাচ্ছে

                     উন্মুক্ত নর্দমার দিকে।

আবার ঝলমলে হয়ে উঠছে বাজে-পোড়া তালগাছ, 

তার মর্মরধ্বনি ঘরে ফেরার ডাক দিচ্ছে গৃহহারাদের…

হাত-ধরাধরি করে হেঁটে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের,

সে যুদ্ধক্ষেত্র হোক, কিংবা উত্তুঙ্গ শিখর

কিংবা শ্মশান। আগ্রাসন এসে খসিয়ে দিয়েছে মায়া।

দূর থেকে দেখি: রক্তাক্ত, ক্ষতবিদ্ধ আর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন 

                সব হাতগুলি

আজ ভিজে উঠছে, ভীষণ ভিজে উঠছে মা-বর্ণের আলোয়।

হাত আবার খুঁজে পাচ্ছে হাতের অপার মহিমা!

একদিন এইসব স্নান সত্যি হবে বলে

দুঃখী মায়েদের মৃত্যু হয়না কখনো,

জেগে থাকেন, ভেসে থাকেন নির্ভুল আকাশপথে…

গুহাজীবন

আমি আমার পাথরখণ্ড সেদিকে ছুঁড়িনি, যেদিক দিয়ে

তোমরা আমার গুহায় আসতে পারো। অতিসতর্ক চোখের পাতা

বিছিয়ে রেখেছি, যাতে তোমাদের ছায়ারাও চুক্তিশিবির থেকে

অক্ষত ফিরে আসে। এত করেও রক্তাক্ত সেই পায়ে পায়ে

পথ ঠেলে, ঘর হারিয়ে, ছায়া হারিয়ে নিঃস্ব সমাগমে

কেন এলে আমাকে আবার ভুল প্রমাণের ছলে!

আমার কিছু বর্শা আছে, মাটির নীচে হাঁড়ির ভিতর

জমানো কিছু মাংস। এটুকু নিয়ে দিব্যি আমার

কেটেই যেত অরণ্যকাল। যদি চাও তো এসব নাও,

আমার কোনো পরোয়া নেই। শুধু তোমাদের পায়ে মাথায়

পাথরের যেন দাগ না থাকে। যেন তোমাদের ছায়ারাও

ঠিক তোমাদের সঙ্গী এবং স্বাধীন হয়ে ওঠে…

রফিক উল ইসলাম

জন্ম ২ আগস্ট ১৯৫৪, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হুগলি তীরবর্তী ডায়মন্ড হারবার-এর বসন্তপুর গ্রামে।  চরকায় সুতো কাটা, তাঁতবোনা, গোধূলিলগ্নে মিশনের ঠাকুরঘরের মাটির দাওয়ায় বসে সমবেত “রামধুন” গাওয়া, ফলশ্রুতিতে সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া— এসব মিলিয়েই তাঁর ছাত্রজীবন সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনে। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক।  আটের দশক থেকে পরিপূর্ণ কবিতাযাপন। দু-বাংলায় সমানভাবে আদৃত এই কবির কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বেশিরভাগ অগ্রণী পত্র-পত্রিকাতেই। ১৩ টি কবিতাগ্রন্থ, শ্রেষ্ঠ কবিতা, কবিতা সংগ্রহ (বাংলাদেশ থেকে), একটি ইংরেজি এবং একটি কিশোর কবিতাগ্রন্থ ছাড়াও নির্জনতাপ্রিয় এই কবির ২০ টিরও অধিক সম্পাদিত ও গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কবিতাগ্রন্থগুলির মধ্যে কয়েকটির শিরোনাম: ‘জলের মতো সুখে আছি’, ‘মৈত্রেয় রাত্রির পথে’, ‘সোনালি শিবির’, ‘জিয়ারত’, ভিন গাঁয়ের কথাটি’, ‘অঘোরে ঘুমিয়ে চন্দ্রকণা’, ‘নবীনগরের রাখাল’ ইত্যাদি। দেশ-বিদেশের ১০০ টিরও অধিক সংকলনগ্রন্থে স্থান পেয়েছে তাঁর কবিতা। ইংরেজি এবং হিন্দিতে অনূদিত হয়েছে কবির বেশ কিছু কবিতা। জাতীয় কবিতা উৎসব (ঢাকা), টাঙ্গাইল এবং দরিয়ানগর কবিতা উৎসবে আমন্ত্রিত কবি হিসেবে বহুবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সম্মাননা ও পুরস্কারে সম্মানিত বিশিষ্ট এই কবি ও গবেষক। ভ্রমণ ও বন্ধুত্বস্থাপন তাঁর একান্ত অভিলাষ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা