অনিমেষ মণ্ডল
শূন্যতার এক গভীরতর বোধ অনেক ছোটবেলা থেকেই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল নব্বইয়ের অন্যতম কবি তৈমুর খানকে।সেখান থেকে তিনি কোনদিন বেরিয়ে আসতে পারেননি। হয়ত চানওনি।কারণ কৃত্রিমতার দাসত্ব করা তাঁর মতো স্বাধীনচেতা সাহিত্যিকের পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না।তাই যে পথ যন্ত্রণার সেই গভীরতম পথের তিনি চিরপথিক।অনেক অপমান, তিরস্কার, লাঞ্ছনা সহ্য করেও তিনি এক দীর্ঘ চরাচর জুড়ে হেঁটে যান।আর পথের প্রান্তে খুঁজে পান আলোর দিশা।সেই আলো মুক্তির,গৌরবের,মানব হৈতষণার।
এক সংযত জীবনবোধ নিয়ে তিনি অকাতরে বাংলা সাহিত্যের সেবা করে গেলেন।হয়ত দিনমজুরের ছেলে হিসেবে এ তার গভীরতম স্পর্ধা।কিন্তু সেই স্পর্ধাই হয়ে উঠল এক দুঃসাহসিক অভিযান।নব্বইয়ের একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠিত কবি হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করাতে বাধ্য করলেন বাংলা সাহিত্যের তাবড় ব্যক্তিত্ববর্গকে।এ জয় মানবতার জয়,গ্রাম বাংলার বুকে চিরজাগরুক হীন দীন মনুষ্যত্বের জয়, যে মনুষ্যত্ব প্রতিদিন পথেঘাটে অপমানিত হতে থাকে।তৈমুর যেন তাঁদেরই প্রতিনিধিত্ব করলেন।মানবতার প্রতি আজীবনের বিশ্বাসবোধ থেকে মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন জয়ধ্বজা।যেখানে দেখেছেন সভ্যতার ইতিহাসে মালিন্যের করাল ছায়া সেইখানে মানবতার জয়গান গাইতে ধরেছেন শব্দের মতো শাণিত অস্ত্র যা যে কোনো ভন্ডামির বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।কবি তৈমুর খান সেই আলোর পথের যাত্রী।ভন্ডামির সমস্ত মুখোশ খুলে তিনি উত্তীর্ণ হয়ে ওঠেন প্রজ্ঞাময় এক যাপনের দিকে যা একদিকে যেমন সরল,ঋজু অপরদিকে তেমনি ভয়ঙ্কর।
সে বহুদিন আগের কথা।সম্ভবত ১৯৮৮-৮৯ হবে।সেই সময় রামপুরহাট থেকে একটি পত্রিকা নিয়মিত বেরুত যার নাম বিকল্প।সেই বিকল্প পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বাহারুল ইসলাম।রামপুরহাটের সানঘাটা পাড়ায় সম্ভবত বাহারুলদার একটা দোকান ছিল।সেখানেই তৈমুর দার সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ।আমি তখন ক্লাস নাইন ।সেদিন বিকল্প পত্রিকার সম্পাদক আমাকে বলেছিলেন “যেদিন তৈমুরের মতো কবিতা লিখতে পারবে সেদিন তোমার কবিতা ছাপা হবে”।বলার অপেক্ষা রাখে না সেদিনের সেই কবি যশোপ্রার্থী এই আমি কয়েকটি কাঁচা কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছিলাম বিকল্পের দপ্তরে।এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে তৈমুরদার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ঐ বিকল্প পত্রিকাতেই এবং পরবর্তীকালে দুই বাংলার অগ্রগণ্য প্রায় সব পত্রিকায়।সেই সময় থেকেই তৈমুরদা আমার কাছে একটা দিকচিহ্ন ।পরবর্তীতে আমি নিজে অনেক ভাঙন আর উত্থানের মধ্য দিয়ে গেলেও প্রথম কৈশোরের সেই মাইলফলক আমি আর ভুলতে পারিনি কোনদিন।অবচেতনেই তা হয়ত খানিকটা জায়গা করে নিয়েছে আমার মনে।
একদিন এক বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে গোচারণ করতেন বলে হয়ত খুব কাছে থেকে দেখেছেন জীবনকে।মানব অস্তিত্বের যে কত বাঁক থাকে তা এই কবির পরিচয় না জানলে বোঝা যায় না।বাবা দিনমজুর।অনেকগুলো ভাইবোন।তাই পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তাকেও করতে হয়েছে দিনমজুরের কাজ।এর জন্য কোনও দৈন্যতা নেই তাঁর মনে বরং সেখান থেকে সংগ্রহ করেছেন উত্তাপ।মানবিকতার উদ্ভাসনের দিকে এক দীর্ঘ যাত্রাপথের সূচনালগ্নেই অঙ্কুরিত হতে শুরু করে তাঁর শিল্পসত্তা।এক চিরন্তন সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেন এক গভীর অথচ করুণ পরিণতির আলো।
দুবেলাই ঘাস কাটি মজুরের ছেলে
কাঠখড়ের উষ্ণতায় রাত্রি করি পার
তবুও পার্টির লোক আমার দরজায়
না বাপু, কামাই হ’লে আমিই উপোস
কী খাই কী খাই সারাদিন …..
মিছিলের লাল ধুলো, ঘুরবে আকাশ
আর একটু দাঁড়াও কার্ল মার্কস
কয়েক শতাব্দী আরো কেটে নিই ঘাস।
এই রকম সব সুগভীর তত্ত্ব কবি তৈমুরের কবিতাকে ছাপিয়ে জনারণ্যে মিশে যায়।তখন সেটি আর তার কবিতা থাকে না একটা প্রবাদের মতো ঘুরতে থাকে মানুষের মুখে মুখে।হাওয়ার ঘূর্ণি হয়ে ভেসে বেড়ায় আর জীবনের মানে খোঁজে।এইখানে কবি তৈমুরের উত্তীর্ণতা।
তাঁর কবিতার শব্দেরা নিঃশব্দে ফুটে থাকে রাতের জেগে থাকা তৃণের শীর্ষে।শিশিরে শিশিরে ধুয়ে যেতে যেতে তারা দেখতে পায় নক্ষত্রের মায়ালোক।তখন অবলীলায় ভুলে যায় একজীবনের সব যন্ত্রণার কথা,সমস্ত অপমানের কথা।ভুলতে পারে বলে উত্তীর্ণ হয় নিরাসক্ত বোধির কেন্দ্রে।তখন কবি ফিরে পায় বিশ্বাস।এক স্বপ্নের জগত ফুটে ওঠে তাঁর চেতনায়।গভীর নীরবতার ভিতর দিয়ে অনিঃশেষ নীলিমায় সে খুঁজে পায় এক অনির্ণেয় গন্তব্য।এই অনির্ণেয় গন্তব্যই তো আবহমানের কবিতা।
নিজেকে তিনি বারবার নির্বাসিত করেছেন নির্জনতায়।দূরে দিনাতিপাতের অশ্রু ঝরে পড়েছে সবার অলক্ষ্যে।এই স্বার্থপর সভ্যতার করাল অট্টহাস তাকে একেবারে ভেঙেচুরে দিয়েছে।কিন্তু তিনি তো আর দশজনের মত সাধারণ নন তাই নিজেকে নিঃস্ব করতে করতে সেই দুঃসহ ক্ষয় আর দহনের ভিতর থেকে খুঁজে নিয়েছেন জীবনের ভাষা।সারাজীবন ধরে একটাই সত্য খুঁজে ফেরেন কবি তৈমুর খান সেই সত্য অপরাজিত জীবনের, অকৃত্রিম ভালোবাসার, প্রেমময় মানবতার।
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান তৈমুর ছোট থেকেই দারিদ্রতার সম্মুখীন হলেও সারস্বত সাধনা থেকে কোনওদিন বিচ্যুত হননি।এ-ও কি একপ্রকার সংগ্রাম নয়!1985 সালে কলেজ ম্যাগাজিনে কবিতা প্রকাশ দিয়ে যে কবিজীবনের সূত্রপাত তা পরবর্তীতে এক নিজস্ব গন্তব্যের দিকে উচ্চতায় দৃঢ় হয়ে আছে।রামপুরহাট কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক সহ বি এ উত্তীর্ণ হয়ে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ও সেখান থেকেই 2001এ প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ।এই সংগ্রামের দীর্ঘ যাত্রাপথ একদিন দিন মজুর জিকির খানের ছেলেকে দিয়েছিল অন্য এক কক্ষপথের পরিচয়।তাই পথ যত উচ্চতাতেই আরোহণ করুক না কেন বহুদূরে জনান্তিকে ফেলে আসা আবাল্যের গ্রাম আর তার মানবযাত্রার সকরুণ পদচিহ্ন কবি কোনদিন ভুলতে পারেননি।
দূরের কাছের বন্ধু এসেছে সবাই।
আমি কারও কেউ নই সঙ্কোচে জানাই।
সবাইয়ের তাড়া আছে।তাড়া থাকা ভালো।
আমার কোনও তাড়া নেই।তারা নিভে গেল।
কত কান্না ঝরল চোখে।ছুটল কত নদী।
নদীকে বন্দনা করি আজও নিরবধি।
দুঃসময় ছুঁয়ে যায় অন্ধ পাখির গানে ।
সেই স্বরলিপিতেই পাই জীবনের মানে ।
একেবারে নিজস্ব স্বরলিপি লিখতে চেয়েছেন কবি তৈমুর।সেই স্বরলিপি জীবনের,আকাশের ,নদীর, তারার,আর ব্যর্থ মানুষের ।কারণ তাদের সঙ্গেই তো কবির আত্মীয়তা।আর আছে দূরের বন্ধু, কাছের বন্ধু সবাই।কবির কোনও তাড়া নেই।সবার সঙ্গে উদযাপনের এইতো প্রকৃষ্ট সময়।কর্মে ও কথায় যা অর্জন করেছে আত্মীয়তা।এ কোনও সৌখিন মজদুরি নয়।প্রতিটি কথায় তার ফুটে উঠছে বিশ্বাস।যে বিশ্বাস ফিরে পেলে মানুষ গান গাইতে পারে। চিরদিনের গান।নীরবতার ভিতর দিয়ে অনেকটা পথ পেরোনোর পর যে নীরবতার অন্য এক মানে খুঁজে পায়, তৈমুর সেই নীরবতার কবি,তৈমুর সেই মুখরতার কবি।
এই কবির আর এক অস্ত্র হলো ভালোবাসা।ভালোবেসে তিনি বিপন্নতাকে জয় করতে চান।মানবতার ধ্বজা উচ্চে তুলে রাখেন বলে মানুষের উপর বিশ্বাস হারাতে পারেন না।মানবতার অপমান তাঁকে অস্থির করে তোলে।সেই অবস্থায় তিনি খুঁজতে থাকেন মায়ের স্নেহের কোমলস্পর্শ,প্রিয়ার বিনিদ্র উৎকণ্ঠা।এসবের জন্য কবি ভিক্ষুক হতেও রাজি।কারণ তিনি জানেন প্রেম আর ভালোবাসাই সমস্ত বিদ্বেষ দূরে সরিয়ে মানবমহিমার উদযাপন করতে পারে।একমাত্র মানুষের পরিচয় নিয়ে তিনি বেঁচে থাকতে চান বলে মানবতা বিপন্ন হলে যারপরনাই ব্যথিত ও বিরক্ত বোধ করেন।ধর্ম ও সম্প্রদায় থেকে তার কাছে মানুষের পরিচয় অনেক অনেক বড়।সেই পরিচয় যে বা যারাই ক্ষুণ্ণ করে তিনি তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন স্বাভাবিকভাবেই।
রাষ্ট্র যদিও অরণ্য, অহরহ গর্জন শুনি
কখনও শিকার হই,কখনও খেচর হয়ে উড়ি
বিপন্নতা আসে আর মুখোশ পরে হাসে
আতঙ্ক খুঁটে খুঁটে রোজ নিরিবিলি খোঁজ করি
তার কবিতা ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে।বর্তমান ভারতবর্ষের ভীরু ও দুর্বল মানুষের যাপনচিত্র তুলে ধরে।সময়কে ধ্বনিত করে প্রবলভাবেই।তার কবিতা যতটা না শিল্পসচেতন তার চেয়ে অনেক বেশি সময় সচেতন।এবং আমার মনে হয় তার মতো কবিতাবোদ্ধা এটা সচেতন ভাবেই করেন।সময়ের ভ্রূকুটিকে ধরতে গিয়ে তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেও পিছপা হন না।কারণ তাঁর দায় মানবতার কাছে।যেখানে মানবতার অপমান সেখানে তিনিও অপমানিত বোধ করেন।ঘৃণা করেন অশুভ শক্তিকে।তাই তিনি যতখানি না কবি তার চেয়ে অনেক বেশি একজন হৃদয়বান মানুষ।
নক্ষত্রমণ্ডল হাসিতেছে
রাত্রির নশ্বরেরা যাতায়াত করিতেছে
বাতাস তাহার বাতাসীকে ডাকিতেছে
সভ্যতা অসভ্যতাকে দেহ সমর্পণ করিতেছে
ধর্ম উলঙ্গ হইয়া অধর্মের ঘর করিতেছে
অধর্ম যখন ধর্মের টুঁটি চেপে ধরে তখন অসহায়তার বিবর্ণতায় ছটফট করতে থাকে তৈমুরের কবিসত্তা।কিন্তু তার লড়াই কোনও অসহায়ের আস্ফালন নয়।আবার সম্মুখ সমরে শাণিত অস্ত্রের ঝনঝনানিও নয়।কারণ রক্তপাত তিনি কোনোভাবেই চান না।তাই ভিতরে ভিতরে এক রক্তক্ষরণ ঘটে চলে ফল্গুর মতো।তার কাব্যে বা সাহিত্যে যে বেদনার ঘনঘটা আছে তা কোনও উদযাপনের বিষয় নয় অথবা কোনো উদযাপন থেকেও তা জারিত হচ্ছে না। বরং তা কবিকে দীক্ষিত করেছে।যে হতাশা আছে তা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়নি বরং উত্তীর্ণ করেছে।ব্যর্থতার যে গ্লানি তার সারাজীবন জুড়ে আছে তা কখনও কবি তৈমুরকে অভিশপ্ত করেনি বরং তা তাকে চিনিয়ে দিয়েছে মুক্তির উদ্বেল আকাশ।তাই তার লেখনীর ধারা নিরন্তর পাঠকের সঙ্গে এক গভীর যোগসূত্র স্থাপন করে চলেছে আজও।
জন্ম ২৮শে জানুয়ারি, ১৯৬৭, বীরভূম জেলার পানিসাইল গ্রামে।পিতা জিকির খান ও মায়ের নাম নওরাতুন বিবি।বর্তমানে স্থায়ী বসবাস রামপুরহাট শহরে।১৯৮৪-তে কলেজ ম্যাগাজিনে কবিতা প্রকাশ দিয়ে একদিন যে যাত্রাপথের সূচনা হয়েছিল তা আজ নিরন্তর সাধনের ভিতর দিয়ে দুই বাংলার মাটিকে স্পর্শ করেছে স্বমহিমায়।একদিন যে জীবিকার তাগিদে মুম্বাইয়ে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে চলে যায় গ্রামের আর পাঁচ জন যুবকের সাথে, পরবর্তীতে সেই নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজে অংশকালীন অধ্যাপনার কাজ করেন।বর্তমানে একটি উচ্চবিদ্যালয়ে সুনামের সঙ্গে শিক্ষকতা করে চলেছেন।এছাড়াও নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন বাংলা সাহিত্যের আর দুই সমান্তরাল ধারা গদ্য ও পদ্যের সৃষ্টিশীলতায়।সাহিত্যের এমন কোনো অঙ্গন নেই যেখানে তৈমুর খানের স্পর্শ নেই!তিনি কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ,মুক্তগদ্য,দীর্ঘকবিতা ইত্যাদি ইত্যাদি।কত কত তরুণের প্রথম অথবা তৎপরবর্তী কাব্যগ্রন্থের উপর নিঃস্বার্থভাবে আলো ফেলেছেন তার কোনও হিসেব নেই।এসব তিনি করেছেন কবিতার প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে।এই সমস্ত কারণে তাকে বাংলাসাহিত্যের একজন একনিষ্ঠ গবেষকও বলা যেতে পারে।
সুদীর্ঘ এক কবিজীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে এ যাবৎ কবি তৈমুর খানের তেইশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হলো: কোথায় পা রাখি (১৯৯৪),বৃষ্টিতরু(১৯৯৯),খা শূন্য আমাকে খা(২০০৩ ),আয়নার ভিতর তু যন্ত্রণা(২০০৪),বিষাদের লেখা কবিতা(২০০৪),একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ(2007),জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর(২০০৮),প্রত্নচরিত(২০১১),নির্বাচিত কবিতা(২০১৬),জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা(২০১৭),স্তব্ধতার ভেতর এক নিরুত্তর হাসি(২০১৮), উন্মাদ বিকেলের জংশন(২০১৮),নির্ঘুমের হ্রস্ব ধ্বনি(২০১৮),আকাঙ্ক্ষার ঘরের জানালা (২০১৯),সভ্যতা কাঁপে এক বিস্ময়ের জ্বরে(২০২২), সর্বনাশের ডায়েরি(২০২৪)প্রভৃতি।
এছাড়াও পদ্য ও গদ্যে সমান সাবলীল এই কবির আটটি গদ্যগ্রন্থ, একটি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্প সংকলন আছে।তাঁর উল্লেখযোগ্য গদ্যগ্রন্থগুলি হলো: কবির ভাঁড়ারের চাবি(২০০৬,২০১৮), আত্মসংগ্রহ(২০০৯,২০২২),মুক্তির দশক নব্বইয়ের কবি ও কবিতা(২০০৯,২০২১),আত্মক্ষরণ(২০১৬),কবিতার বাঁক ও অভিঘাত এক অন্বেষার পরিক্রমা(২০২০),এই কবিতা জীবন(২০২৩) ইত্যাদি।একমাত্র উপন্যাস জারজ(২০১৯) ও একটি ছোটগল্প সংকলন জীবনের অংশ(২০১৯)।
তাঁর সাহিত্য ভাষাও অত্যন্ত ব্যঞ্জনাময় ও যুক্তিনিষ্ঠ।তার গতি এত সাবলীল যে যেকোনো নিবিষ্ট পাঠকের তাতে কোনো অসুবিধে হবে না।নানা সময়ে ঘটে থাকা কবিতার বিমূর্ত বাঁকগুলি তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন।বাংলা কবিতার প্রেক্ষাপট কীভাবে বদলে গেছে তাকে লিপিবদ্ধ করেছেন সুচারুভাবে।নিজে নব্বইয়ের কবি হয়ে নব্বই দশককে লিপিবদ্ধ করে রাখলেন গবেষকের পরিশ্রমে।কবিতার বাঁক ও রহস্যকে তিনি তুলে ধরেছেন রূপগত ও ভাবগত দিক থেকে।প্রতিটি শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের ভিতর যে এক প্রজ্ঞাময় মগ্নতার ক্ষেত্রভূমি রচিত হয় তিনি তাকে সবিশেষ চেনেন।কোনও স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া অপরিচিত যেকোনো কবিস্বরের এমন গভীরতর খনন প্রয়াস বাংলা সাহিত্যে খুব বিরল।
—————————————————————–
অনিমেষ মণ্ডল
নব্বই দশকের কবি ও গদ্যকার
বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।