আগুন জ্বলছে
একরাম আলি
১.
আলো এসেছে, আলো তারায় নির্মিত
রমণী ঘুরছে, রক্তমাংসে গড়া
আলো, তারা, রমণী, রক্তমাংস
কিছু-না-কিছু বস্তুর শৃঙ্খলা
আলোয় তোমার চুপসে-যাওয়া ব্রা দেখি
কুঁচকে আসছে ত্বক
ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে-দেওয়া সেই চুল
পাতলা হয়ে এল
আরও ভেতরে বিশুষ্ক আজ জন্মান্ধ জরায়ু
আলো এত বেড়ে যাচ্ছে কেন
আগুন জ্বলছে?
২.
কতদিন ভেবেছি, এবার বেরিয়ে পড়ব
কোথাও-না-কোথাও চলে যাব একদিন
দলিলপত্র হলুদ হয়ে আসছে
লেখার হরফ আবছা হচ্ছে দিনদিন
আর মাথার চারপাশে তারারা
ততই ঝকঝকে হয়ে আসতে চাইছে কাছে
যেমন তুমি, তোমায় আমি
লক্ষ্মীর ভাঁড়ে ভরে রেখেছি কত দিন হল
গায়ে কালচে দাগ ওগো আমার তুমি
একদিন না একদিন ওই ভাঁড়
আছাড় মেরে ভেঙে তোমায় বের করব
তারপর ঠিক চলে যাব কোথাও
খাঁড়ির হাওয়ায় উড়ে-উড়ে ফের রুপোলি হবে তুমি
৩.
তোমায় দেখি, দেখতে দাও তুমি
একটা চোখ আরেকটার চেয়ে ছোট
মৃত্যুর মতো পক্ষপাতদুষ্ট
তোমার শুকিয়ে-যাওয়া স্তন আজ অন্যমনস্ক
নাভির গর্তে কবেকার আগুনের ছাই
কোন সময় থেকে বেরিয়ে
কোন সময়ের দিকে যাও?
মৃত্যু নও, পরীও নও তুমি
তবু আসবাবের আড়ালে মাঝে-মাঝে ঝলকে ওঠো
বিস্মৃতির পিছু-পিছু এসে গেছ এত দূর!
৪.
সন্দেহ এক বাতিক, তবু
পাশে শুয়ে-থাকা তোমাকে সন্দেহ
তীব্র দৃষ্টি–যেন পুড়ে যাবে
সন্দেহে পুড়ে-পুড়ে শেষ হবে তুমি
আমার সন্দেহ তবু জানে
তোমারও মন আছে, সেই পোড়া মনে
ফের গুনগুনিয়ে উঠবে নতুন কোনও সুর
হয়তো শুয়েই থাকবে পাশে, হয়তো
খাল পেরিয়ে চলে যাবে দূরে, অন্য কোনও শহরে
ভাববে পুরনো সব ঝিলিমিলি সন্দেহের কথা
হয়তো-বা একদিন পেয়েও যাবে নতুন তোমাকে
৫.
একটি হাত, নিখুঁত হাতের মতো
বাহু, কব্জি, তালু আঙুলের মসৃণ গঠনে
নড়াচড়ায়
তার অবস্থান বুঝে নেয় হাওয়ারা
শুধু আকাশ-নীল নখে সে অন্য কিছু হতে চাইই
হাওয়া এখানে তৎপর
সমস্ত নশ্বরতা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে যায়
হাতের অতিরিক্ত হাতে
ঠোঁটের অতিরিক্ত ঠোঁটে
চোখের গাঢ় কালো রঙে
সে-ও হতে চায় আরও নশ্বর
কেননা, তার অনন্তযৌবন পুরুষ এখানে নেই
৬.
না। পিঁপড়েরা কিছু খবর নিয়ে এসেছে
জানলার ওপারে কিছু আছে
কাচের স্বচ্ছতাতেও যা দেখা যায় না
যেমন তুমি, কত কত বছর হল
পরস্পরকে আমরা দেখছি
তবু, আজই প্রথম চোখে পড়ল
একটা সদ্যোজাত তিল তোমার ঠোঁটে নড়ছে
জলের তলায় কাঁসার থালার মতো
তোমাকে দেখছি
তোমার গায়ে চিবোনো সজনেডাঁটা, ভাতের কণা
আর আমার গুল্মেরা ভেসে যাচ্ছে
ঢেকে ফেলছে পুরনো কাঁসার শরীর
৭.
যখন দল বেঁধে গেয়ে ওঠো
গানের ভিড়ে হেঁটে যাও
খুঁজছিলে তো সেই কথাটি, দশকের পর দশক
পালটে পালটে আজ যা খয়েরি
ঝরনার ধারে, এই ঢালু প্রান্তরে
যখন গেয়ে ওঠো সবাই
গাইতে গাইতে চলে যাও আরও ঢালের দিকে
কোনও-না-কোনও বিচ্ছেদগীতিই তো গাও
তোমাদের বেড়াল পিছু নিয়েছে
কুকুরেরা ছুটে চলেছে আগে-আগে
পোষা পায়রার দল কিছু দূর এসে ফিরে গেল
তাদের ডানার শব্দে হাহুতাশ
দূরে নতুন শহর, গুঞ্জন
তারা কান পেতে রেখে হাওয়ায়
৮.
আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ি
যে-যার বিছানায়
রাস্তায় সার সার তীব্র আলো
কত কাল আগেকার উৎসবের আলো সে-সব
আমরা কি তবে রাস্তায় গিয়ে শুয়ে পড়ব?
অপেক্ষা করব আরও একটা উৎসবের?
সময় ফুরিয়ে আসে
শুকিয়ে কুঁকড়ে যায় আমাদের পদ্মপাতাগুলি
উৎসবের আলো ততই জ্বলজ্বল করে