spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : আবদুল হাই শিকদার

গুচ্ছ কবিতা : আবদুল হাই শিকদার

……
ফিলিস্তিনের মায়েরা
……

মরুভূমি থেকে পাথর কুড়িয়ে আনে ফিলিস্তিনের শিশুরা।
জমা করে রাখা পাথরের টুকরোর সামনে
ফিলিস্তিনের মায়েরা অশ্রুসজল চোখে হাসে,
আর সন্তানের রক্তে ভিজে যাওয়া হাত তোলে আকাশে,
প্রভু, এই পাথর মেরে আমাদের সন্তানরা যেন
মানুষ ও মানবতার দুশমনদের উদ্ধত মাথা
গুড়িয়ে দিতে পারে।

নবজাতক বুকে নিয়ে ফিলিস্তিনি মায়েরা
ঘুমপাড়ানি গান গাইতে পারে না,
অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে তারা গেয়ে ওঠে
অগ্নিগিরির মতো জ্বলে ওঠার মৃত্যুন্জয়ী সঙ্গীত।
সন্তানদের শেখায় জুলুমের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার গান।

ছেলেরা যুদ্ধে যায়।
মায়েরা সেজদায় উবুড় হয়ে কাঁদে,
প্রভু, মাতৃভূমি উদ্ধারের এই অসম সংগ্রামে
আমাদের সন্তানদের ত্যাগকে তুমি কবুল কর।
আমাদের আরও সন্তান দাও —
যাতে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে
তারাও যুদ্ধে যেতে পারে,
আর ঢেলে দিতে পারে বুকের রক্ত ।

ফিলিস্তিনি মায়েরা শরণার্থী শিবিরের
হৃদয়হীন বালুর উপর বসে বসে কাপড় বোনায়।
তারপর যত্ন করে গুছিয়ে রাখে।
ছেলেরা শহীদ হয়ে ফিরলে
এই সাদা বস্ত্রখন্ড দিয়ে তাদের সাজিয়ে দেবে।

ফিলিস্তিনের মায়েরা দুবার সন্তান বহন করে,
একবার গর্ভে, আরেকবার কবরে নেয়ার সময়।
অবিরাম ঘটতেই থাকে আনন্দ ও কষ্টের এই প্রক্রিয়া।
— এভাবে মহাবিশ্বে একমাত্র তারাই এখনও মানুষ উৎপাদন করে।

ফিলিস্তিনের মায়েরা
বিলাসের জন্য স্বামীদের সাথে মিলিত হয় না,
তারা একত্রিত হয় শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের জন্য।
তারা সন্তানদের লাশ এমনি এমনি মাটিতে পুঁতে রাখে না,
তারা রোপন করে অযুত নিযুত রক্তবীজ,
নতুন নতুন বৃক্ষের চারা।
ফি বছর এই গাছ মহীরুহ হবে।
এগিয়ে দেবে পথের নিশানা।
— তারপর মানুষের সভ্যতা আবারও মানুষ হবে।

……
দু:সহকাল : অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা
…….

পরিত্যক্ত ছেঁড়া জুতার প্রতিও একধরণের মায়া থাকে।
আমাদের শাসকদের ততটুকু দরদও নিজ দেশের জন্য নেই।

করোনাকালে পথের কুকুরগুলোকে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছিল
বাংলাদেশের মানুষ,
আর অন্তরে পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছিল নকশিকাঁথার মতো জন্মদাত্রীকে।
প্রিয়জন হারানোর কষ্ট তাকে কাতর করে তোলে।
সেই মানুষকে গুম করে খুন করে লাশের উপর উন্মাদনৃত্য করছে ফ্যাসিস্ট শাসক।
মানুষ মাত্রই আজ ক্ষুধার্ত বুলেট ড্যাগার টর্চার সেলের অসহায় আহার।

একটা ছোট্ট পাখিরও সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরার আকুলতা থাকে।
সেই তাড়নায় ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত আজ তেরশত নদীর হৃদয়।
তার বসতবাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে ঘুঘু চড়াচ্ছে বাকশালী ভূত।

আর তাড়া খাওয়া বন্য হরিণের মতো উর্দ্ধশ্বাসে দিগ্বিদিক ছুটছে নারী শিশু যুবক বৃদ্ধ,
তাদের পেছনে শত শত হাজার হাজার মামলা হামলার পঙ্গপাল।
ধর্ষিতারা এখন আর বিচার চায়না,
তারচেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে জীবনের জ্বালা জুড়ানোই উত্তম।
আর সুরক্ষিত ক্যাসলে বসে ড্রাকুলারা
হাড় হিম করা দাঁত বার করে হিসহিস করে হাসে।

প্রতিকারহীন শক্তির হিংস্র ক্রুর দম্ভের সামনে
স্তম্ভিত পাললিক ভূমির অস্তিত্ব কেঁপে উঠেছে ভয়াবহ ভূমিকম্পে।
কূলহীন কিনারহীন অথৈ তুফানে হাহাকার করে মায়েরা,
পুঁতিগন্ধময় এই দোযখের খাদ্য জোগাতে জোগাতে আমরা ক্লান্ত,
আমাদের জড়ায়ুগুলো ধ্বংস করো মালিক,
তারা হয়তো মানুষ জন্ম দেয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে।
— নইলে মাংসাশী ঘাতকদের পিঠের চামড়া অক্ষত থাকে কী করে !

নদী মরে গেলে কিংবা সরে গেলে নদী কিছু চিহ্ন রেখে যায়।
আধিপত্যবাদের দাসরা যে একদিন মানুষ ছিল
তাও আজ আর বোঝার উপায় নেই!

এ এমন এক সময়
যখন বাতাস শুদ্ধতার জন্য মাথা আছড়িয়ে মরে।
লক্ষ শহীদের কাছে চিঠি লেখে ক্ষুব্ধ সাগর,
শব্দদুষণে আমাদের অন্তরাত্মা স্তব্ধ,
পতাকা হারিয়েছে তার ফুসফুসের কার্যকারিতা।
— সংঘবদ্ধ সারমেয়কুল মানুষের লেবাস পরে ঘোরে।
আর মানুষের ঝাপসা দৃষ্টিশক্তির চারদিকে সারমেয়দের গগনবিদারী বিজ্ঞাপন।

ফলে দাস আর মুক্ত মানুষের মধ্যে
এখন আর কোনো পার্থক্য ঠাহর করা যায় না।

……
হামাস
……

আফ্রিকার হৃদয়ে সূর্যোদয় চেয়েছিলেন প্যাট্রিস লুমুম্বা।
নেলসন ম্যানডেলা আনলেন পরিষ্কার দিন।
আর সিরিল রামাফোসা গণহত্যাকারী ইসরাইলকে
কান ধরে নিয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক আদালতে।

আফ্রিকা, এই কালো আফ্রিকা থেকেই
একদিন বিশ্বময় ছড়িয়েছিল মানুষ।
মানুষের আদি ভূমি আফ্রিকার কাছে তাই পৃথিবীর অজস্র ঋণ।

ফিলিস্তিনের নারী হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আফ্রিকা দাঁড়ায়।
গাজার শিশু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আফ্রিকা দাঁড়ায়।
মানুষ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আফ্রিকা দাঁড়ায়।
—আর আবুধাবি, বাহরাইনে হত্যাকারীদের কোমর জড়িয়ে ধরে
নৈশভোজ করে আরবরা।

ফিলিস্তিনে মানবতার বধ্যভূমির বিরুদ্ধে
ঘৃণার তুফান তোলে বলিভিয়া।
ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটে কলম্বিয়ায়।
চিলি পেরু আর ফিদেলের দেশে
নির্বিরাম অশ্রু ঝরে মানুষকে ভালোবেসে।
—আর মুসলিম শাসকেরা ইয়াংকিদের পায়ের উপর সিজদায় পড়ে আছে।

ইসরাইলি ঘাতকদের পক্ষে দাঁড়ায় লিংকনের দেশ।
পশ্চিমা ক্রসেডাররা তেলআবিবে পিকনিক করে,
যেনো ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা অতিশয় পুণ্যের কাজ।
—আর মুসলিম শাসকরা আমেরিকার পায়ের তলায় বেহেস্ত তালাশ করে।

রক্তস্রোতে লাল হয়ে যায় ভূ-মধ্যসাগর।
মুসলিম শাসকরা প্রমোদতরী নিয়ে সফরে বের হয়,
ঘাতকদের চশমা দিয়ে বলিউডের নায়িকা চাখে।
যৌনতার বাণিজ্য নিয়ে দিন-রাত বাহাস করে।
—উটের বাচ্চাদের হাতে পেট্রোডলার।

লোহিত সাগরে হুতিদের হৃদয় চিৎকার করে,
ইসরাইলি ড্রাকুলার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে শেষ রক্তবিন্দু।
প্রাণোৎসর্গ করে মমতাময়ী দরিদ্র ইয়েমেন।
আর মুসলিম রাজারা পোষা বিড়ালের মতো
আমেরিকার পাপোশ হতে মিউমিউ করে।

অথই রক্তের নিচে ডুবতে ডুবতে ফিলিস্তিন কাঁদে,
মুসলিম দেশে দেশে সূর্যোদয় হয় না কেন?
সিনাইয়ের মরুভূমি হাহাকার করে,
রাজতন্ত্রের গায়ে কেন ইসলামি লেবাস?
ফারাক্কা লাঞ্ছিত পদ্মার জিজ্ঞাসা,
গণতন্ত্রের শত্রুরা কিভাবে মানুষ হয়?
—ফ্যাসিবাদ কি পুষ্প ও পরাগের প্রতিপক্ষ নয়?

পশ্চিমা কপটতা নয়,
ইয়াংকিদের মানবতা নয়,
মোদি কিংবা নেতানিয়াহু নয়,
রাজা যুবরাজাদের ভণ্ডামী নয়,
লাঞ্ছিত ইহকাল লোভনীয় পরকাল নয়,
অর্থহীন বোলচাল নয়,
তত্ত্বের কচকচানী নয়,
আফ্রিকার ঘোষণা অক্ষয়—
নিঃশেষে প্রাণ যারা করে দান
মানুষের ভাই আজ হামাস।
হুতি আর হিজবুল্লাহ মজলুমের আলোর আকাশ।
—গাজার কবরগুলো দিয়ে যায় সেই বার্তা, সে শপথ, দৃঢ় বিশ্বাস।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা