পাখি একা হয়ে গেলে
…………..
তোমারে ফেসবুকে নক করি
তুমি ম্যাসেজ সিন করো না
তোমার সব চলে
দূর বিদেশে তোমার আড্ডা চলে হরদম
কেবল দেখো না অভাগার আকুতি
আমি যেন ফেলে আসা স্কুলের দিন
মনে করতেই চাও না।
তোমার সাথে জামালের কথা হয়
জামাল বলে— “গতকালও কথা হলো
ওর সময় কাটে না
একাকী থাকে বিষণ্ন চাঁদের মতো
কী বলিস, তোর সাথে কথা হয় না?
আমাকে তো রীতিমতো বিরক্ত করে
দিন নাই, রাত নাই সারা সময় টেক্সট।
তোর উচিৎ ওকে ভুলে যাওয়া
মানুষ তো তার মৃত সন্তানকেও ভুলে যায় অবলীলায়
তুই ভুলে যা তোর ফেলে আসা কষ্ট
এমন কী? দিন তো চলছেই
পাখি একা হয়ে গেলে আর ডাকে না
থাকে চুপচাপ বড় নিরালায়।
………..
হয় না ফেরা
………..
বাড়ির থেকে ঢাকায় আসি কেঁদে
মা সাথে দেন সেমাই পোলাও রেঁধে
মাসের টাকা আব্বা হাতে দেন
ভালো থেকো ভাই, দাদী বলছেন।
ছোট্ট আপা শেষ সীমানায় এসে—
বিদায় বলেন মুচকি হেসে হেসে
মেঝো আপা চোখ মোছে আর কয়—
পড়তে গেলে কষ্ট এটুক হয়।
সারাটি পথ কত্ত কিছু ভাবি
ক’দিন পরেই খুলবে কপাল-চাবি
বাবা-মায়ের স্বপ্ন অনেক বড়
আর ক’টা দিন কষ্ট করে পড়।
লেখাপড়া শেষ, হয়ে যায় জবও
ভাবনা থাকে মানুষ বড় হবো
হয় না ফেরা বাবা-মায়ের কাছে
বাড়ি ছেড়ে নাম-ঠিকানা আছে?
………..
সম্পর্ক
………..
আমাদের আর দেখা হবে না
চলন্ত বাসে বসে জারুল ফুল ফেলে আসার মতো—
অবস্থা আমাদের
স্মৃতিকাতর হতে পারবো
দুঃখিত হতে পারবো
কোনো দিন এক হতে পারবো না
আকাশ-পাতালের মতো সম্পর্ক আমাদের।
………….
পাহাড় কেন কাঁদে
…………..
পাহাড় কেন কাঁদে
সুযোগ বুঝে রক্ত ঝরায়
সুশীল ফ্যাসিবাদে!
পাহাড় কেন কাঁদে
ঘর পুড়ে যায় সর পুড়ে যায়
কে সেই ঘরে রাঁধে?
পাহাড় কেন কাঁদে
শুদ্ধ বাতাস রুদ্ধ করে
কার হুকুম আহ্লাদে।
পাহাড় কেন কাঁদে
মানবতা ডুকরে ওঠে
ভয়ংকর এক ফাঁদে।
……………
মব জাস্টিস কেন?
…………….
আগে তুমি চান্স পাও তারপর কথা
প্রাচ্যের ‘অক্সফোডে’ বাণী যথাতথা
ডাকাতের গ্রাম বলে গিয়েছেন কবি
এইখানে ডুবলো কি আলোকের রবি!
মানবতাহীন পশুদের খুব ভিড়
মানুষের খোঁজ নেই, সকলেই পীর
সকলেই জ্ঞান দেয়, সকলেই হিরো
আসোলে হারামজাদা, মানবতা জিরো।
ভার্সিটি শুনলেই কেঁপে ওঠে দিল
ঢাবি রাবি হাবিজাবি কীট কিলবিল
বুয়েট, চুয়েট আর কুয়েটের দিন
বিশ্বসভায় কোথা? বুক চিনচিন।
ইতিহাস বেচে আর কতকাল খাবো
শহীদের তালিকায়ও তলানিতে পাবো?
দিন বদলের দিন ওই আসে ওই
মব জাস্টিস কেন? দুঃখ অথৈ।
…………..
অচেনা বাবা
…………..
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন বাবা
মুমূর্ষু— প্রাণ যায় যায়
কোনো সেন্স নেই
মৃত্যুপ্রায় এক নির্জীব দেহ
পূবের জানালা দিয়ে বাতাস আসে
১১ তলা থেকে নীচের সব চেনা চেনা লাগে
বাস, রিকশা, মোটরসাইকেল
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন
সবই ওপর থেকে দেখে চিনে ফেলি
কেবল বাবাই আমার অচেনা
আমার বাবা তো গোলাপের মতো সজীব ছিলেন
দোয়েল পাখির মতো চঞ্চল ছিলেন
ছিলেন চালতা ফুলের রঙের মতো
ফকফকে সাদা হৃদয়ের।