spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : তমিজউদদীন লোদী

গুচ্ছ কবিতা : তমিজউদদীন লোদী

মানুষের মুখ
——————
আমাকে মানুষের মুখ আঁকতে বলা হয়েছিল।
কিন্তু আমি আঁকতে গিয়ে টের পাই পৃথিবীর অন্যতম কঠিন একটি কাজে
আমার অজান্তেই আমি হাত দিয়ে ফেলেছি।

বরং শৈত্যপ্রবাহের ভেতরে বরফ কুড়ানো কিংবা মরুর
তপ্ত বালির উপর হাঁটা ঢের ঢের সহজ কাজ।
কপোল , চোখ ও থুতনি আঁকতে গিয়ে টের পাই
এদের নানা ভঙ্গি ও অভিব্যক্তি -অভিন্ন রহস্যের চাদরে ঢাকা।

মুখ আঁকতে গিয়ে দেখি মুখের আড়ালে আরো আরো মুখ আছে
যেন একটি দুরধিগম্য টানেল
অপার অন্ধকার ছাড়া যার সামনে আর কিছুই নেই।

মানুষের মুখ আঁকতে গিয়ে অবশেষে
আমি প্রতিবিম্ব ছাড়া আর কিছুই আঁকতে পারিনি।

কবিতায় কি কি হয়
————————
কবিতা লিখে কত টাকা পাও বাবা বলো? তার চেয়ে
চলে এসো আমার খামারে। এখানে ডিম হয়,মাংস হয়। প্রোটিনের
খুব ছড়াছড়ি। গাভীও আছে বেশ ক’টি।দুধ,সেও পাবা খুব।
খুব একটা কিছু করতে হবে না বাপজান।খানিকটা পরিচর্যা,
মাঝে মাঝে কিছু দেখভাল– এ আর এমন কি!

কবিতায় কি কি হয়, খুব একটা জানিনা বাপজান, তবে একটা জানি
বাড়ি গাড়ি দূরে থাক পেটে ভাতও জুটে না শেষতক। বিনয় নামের এক কবি
না খেয়ে না খেয়ে মরে ভূত হয়ে গেছে এই আলমডাঙ্গায়। তুমিও কি
এই পথে যাবা! তুমি দেখো নাই কেমন ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে এইসব হাভাতে কবির দল!

কিন্তু চাচা যারা খুব খাচ্ছে দাচ্ছে, খেতে খেতে খেতে কেবল খেয়েই যাচ্ছে
তারাও কি খুব ভালো আছে? খাই খাই ইচ্ছেটা তো মরছে না কিছুতেই।
ওরা তো খেয়ে ফেলছে সব, ব্যাংক নদী মাটি–
আরে বেটা কি কথায় কি কথা বলিস যে তুই, আমি কি ওসব বলেছি তোকে?
আমি দেখি চাচা রেগেমেগে সম্বোধনই পাল্টে ফেলেছে।

আমি বলি, চাচা, কবিতা আর যা-ই দিক তস্কর করে না।
আমি আকাশকে আকাশ আর নদীকে নদীই দেখতে চাই চিরকাল
খামার দোষের নয় ঠিক- তবে একটি লোভের দরজা
এ বড় অনন্ত চাচা, একবার পেয়ে গেলে কিছুতেই ছাড়ে না।

আমাকে পাগল ঠাওরে চাচা খুব মর্মাহত খামারে গেলেন।

আলোটা এদিকে ফিরাও সুলোচনা

আলোটা এদিকে ফিরাও সুলোচনা
অন্ধকারে ছেয়ে গেছে এ’পাশ।
যে সব কাঁচপোকা , যেসব নক্ষত্র এ যাবত আলো ফেরি করে বেড়িয়েছে
তারা হারিয়ে গেছে অরণ্যে ও ব্ল্যাকহোলে।

এ সুযোগে বেরিয়ে পড়েছে চামচিকা,বাদুড় ও রাতপাখিগুলো
বেরিয়ে পড়েছে শ্বদন্ত সারমেয় সব
ফসফরাসের যেসব আলো প্রতিসরাঙ্কের ধরনে ইতিউতি বৃত্তের মতো
উঁকি দিচ্ছে তারা নিস্প্রভ তারার মতো জ্বলছে।

গাঢ় এবং গাঢ়তর হচ্ছে এ’পাশে আঁধার
আলোটা এদিকে ফিরাও সুলোচনা।

আনন্দময় নৈরাশ্য ও ইস্পাত মানুষেরা

আনন্দময় নৈরাশ্যে ডুবে আছে দিন । রোদের ভেতর হেঁটে যাচ্ছে ইস্পাত মানুষেরা।
শিরস্ত্রাণে পালকের স্তূপ । দস্তানায় লেগে আছে শুকিয়ে যাওয়া কালচে রক্তের ধারা।
তারা খেলে এসেছে হত্যার মতো পোকোমন খেলা । ফিনকি-ওঠা রক্তধারায় রিরংসার
বীজ খুঁজে আবারো ফিরে যাচ্ছে মহড়ায় । ফিরে যাচ্ছে বহুগামি বীভৎস যৌনতায়।

দিগন্তস্পর্শী উৎকণ্ঠার বিপরীতে মানুষেরা তবু থিতু হতে চায় ছায়াচ্ছন্ন অশথের নিচে।
যে ঝড় ওঠে দিকচক্রবালব্যাপী যে প্রভঞ্জনে উড়ে যায় আকাঙ্ক্ষা ও অভীপ্সাসমূহ
তার নিচে প্রচ্ছন্ন স্রোতস্বিনী । তার নিচে জলধারা অনন্ত প্রবাহের মতো বহমান।
অন্তরালে উন্মোচন চিহ্ন , আশ্লেষের স্বাদ আর আপাত সারল্যের আবহ খেলে মননে বিভায়।

আনন্দময় নৈরাশ্যে যতই ডুবে থাক দিন । গোধূলি শেষে তবু মানুষেরা ঘরে ফেরে।

মার্কেজ এবং কফিরঙ মেয়েটি

ডাঃ পাভেলের রিসেপসনে মেয়েটিকে দেখে বললাম,’তোমাকে কি এর আগে দেখেছি!
কফিরঙ মেয়েটি চোখ তুলে তাকালো, স্মিত হেসে বললো-‘না আমি নতুন এসেছি ‘।
তার চোখে গাঢ় রঙ, চুল যেন ঢেউ । শরীরে যৌবনের হ্রেষা লেগে আছে ।

বললাম, ‘কোথা থেকে এসেছো তুমি ?’ সে বললো, ‘আমি ল্যাটিনো।’
বললাম,’ঠিক আছে,তুমি ল্যটিনো; কিন্তু কোন দেশ?’
মুহূর্তে তার চোখে ঘন কালো শ্রাবণের মেঘ। অনন্ত বিষাদ।
সে চুপ হয়ে যায়। আমি দেখি একটি ঝলমলে আলো নিভে গেল অকস্মাৎ।

বললাম,’ঠিক আছে,আপত্তি থাকলে বলো না।’

সে বললো, ‘না না , তুমি কিছু মনে করো না। আমি এসেছি কলোম্বিয়া থেকে।’
বললাম,’বাহ! কলোম্বিয়া! তুমি তাহলে মার্কেজের দেশ থেকে এসেছো মেয়ে!’
আমার বিস্ময়ে সেও খানিকটা বিস্মিত, হতচকিত এবং হঠাৎ উৎফুল্ল।

  • তুমি,তুমি এভাবে বললে! এর আগে কখনো কেউ বলেনি তো এভাবে? মার্কেজ!
    ঠিকই তো, মার্কেজের দেশ!
  • এতো বিস্মিত কেন মেয়ে ? মার্কেজেরই তো দেশ।
    -তাতে কোনো সন্দেহ নেই স্যার! তবে আমাকে এদ্দিন খুন,গুম আর ড্রাগের দেশের
    মেয়ে বলেছে সবাই। বলেছে স্বৈরশাসকের দেশ। তার চোখে জল, আনন্দ্রাশ্রু!
    -আমি তবে শুধু খুন,গুম আর ড্রাগের দেশের নই।
    আমার রয়েছে মার্কেজ,একজন নোবেল লোরিয়েট ,একজন মহান লেখক।

এ কটি চাকা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে গোধূলির ওপারে

সমস্ত সূত্রের বিপরীতে সময় স্থবির হয়ে আছে । কাঁটাগুলো অলস , স্থির ।
শুধু ওরা একটি চাকা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে গোধূলির ওপারে ঈশানে, নৈর্ঋতে ।
কারা যেন বসে আছে সিংহাসনের মতো কোনো আসনে নির্লিপ্ত নির্বিকার ।
পানপাত্রে টলটলে লাল সুরার ভেতর ডুবে যাচ্ছে খণ্ডকালিন সূর্য ।

সিডরের মতো ঝড়ো আক্রোশে কারা যেন উল্টে দিলো সব । চাকা গড়িয়ে গেলো
কাঁচের ওপারে। পরিকীর্ণ পানপাত্রে লেগে রইলো কয়েক ফোঁটা মদ আর ঊছ্রিষ্ট
বাদামের খোসা। আর ওদের মুখের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলো থকথকে থুতু।

ঘৃণা ও আক্রোশের প্রতিধ্বনি বিদ্রূপ ছড়াতে থাকলো প্রাসাদ ও প্রেইরি অবধি।

হুলস্থূল হত্যাকাণ্ডের ভেতরেও

আগুনমুখো সমুদ্রঘূর্ণিকে পেছনে ফেলে পলেস্তরাখসা পুড়োবাড়িতে এসে দাঁড়ালে
দেখা গেলো আলো ও আঁধারের রহস্যের ঘনঘোর। অস্পষ্ট মুখের ভঙ্গুর ভঙ্গিমা।
এখানেই তোমার ছেনি ও হাতুড়ি। কাঠখোদাইয়ের নানা সরঞ্জাম । অথবা সেইসব
আয়না যা তুমি বেশ আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিলে। অথচ তা থেকে উঁকি
দিচ্ছে মুখ । রক্তাক্ত ব্যণ্ডেজে মোড়া কিংবা পোড়া দাগে বীভৎস।

যতই উৎসের খোঁজে তুমি হন্যে হচ্ছো ততই গভীরে নামছো অতল গভীরে।
গোয়েন্দার মতো তুমি রহস্যের কিনারা খুঁজতে খুঁজতে দেখছো হাড় ও পাঁজর।
করোটি ও কশেরুকা। চতুর ও অধরা হত্যাকারীর ছিন্ন সূত্রের কিয়দংশ। অনিচ্ছুক
আটকে যাচ্ছো বৃত্তের ভেতরে ‘সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বের’ সেই রমণীর মতো।

দেখছো পরিত্যক্ত আয়নার ভেতর লাফাচ্ছে চাঁদ। লাফাচ্ছে অসংখ্য ভাঙাচুরা মুখ।
কফিনের ভেতর থেকে মাংশহীন হাতগুলো আঙ্গুলগুলো ঝাপটে ধরছে জীবিতের
মাংসল হাত। ঠাণ্ডা ,হিম। সমূহ সর্বনাশের ভেতর যারা অবিশ্বাস্য স্থির ও অটল।
হুলস্থূল হত্যাকাণ্ডের ভেতরেও যারা হিমাংকের নিচে নিশ্চল,নিথর এবং দর্শক।

তোমার উৎসঙ্গে শুধু


মৃত মানুষের কাছে কবিতা আওড়ে গেলে কি লাভ? মৃতরা তো কবিতা শোনে না।

দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর বৃদ্ধপ্রেমিকার মুখ যেভাবে পাথুরে ও নির্লিপ্ত সেভাবেই লীন কোনো
ফসিলের খোঁজে তুমি যতই হন্যে হও তোমার উৎসঙ্গে শুধু মাংশহীন হাড়ের ইতিহাস।
পাথুরে শিলার ভেতরে অলীক ঝর্ণার মতো যতই খুঁজে ফিরো ক্লেদজ ফুলের সৌরভ ।
তুমি ব্যর্থ হতে বাধ্য। তুমি শুধু পেতে পারো গড়ানো পাথরেরস্তূপ ।কিংবা পাথরের কণা।

যেমন ব্যর্থ হয় পাথুরে মুখের কাছে আওড়ে যাওয়া পয়ার কি গীতি কবিতার সুর। ব্যর্থ হয়
প্রার্থনা কি স্তব । ভেঙে পড়ে যাবতীয় অনুরাগের আয়না। ন্যাটিক মুহূর্ত। বরং খণ্ড খণ্ড
আয়নার ভেতর প্রতিবিম্বিত হয় অসূয়া ও রিরংসার চোখ। বীভৎস রস আর ক্রূরতা।

গ্যালারিতে ঢিল ও বারুদের দাগ। ভেঙে পড়ে পিকাসো ও দাভিঞ্চির যাবতীয় চিত্রকলা।

আজও ফুটেছে আরেকটি নাইট কুইন

সেদিনও এরকম মেঘলা ছিল। ভেজা ভেজা। বৃষ্টি আসবে আসবে করছে, কিন্তু আসছে
না। চাঁদ নামবে নামবে করছে , কিন্তু নামছে না। ভেজা হাওয়ার স্পর্শে যখন শিহরিত
তখনই অকস্মাৎ তোমার ঠোঁট নেমে এসেছিল। নেমে এসেছিল আশ্লেষের গন্ধ। আর
বহুদিন পর ফুটেছিল নাইট কুইন।

অথবা মনে পড়ে , জলের ভেতরে চাঁদ । সুপোরি গাছের পাতাগুলি উড়ছে পতাকার
মতো । যে দোয়েলগুলি তুমি খাঁচায় পুষেছিলে সেদিনই অকস্মাৎ মুক্ত করে দিলে।
বললে, এগুলোও আকাশের নিচে ভালোবাসা করুক।

সেদিন অথবা তার পরের দিন বৃষ্টি এলে তুমি আবারো বন্য হলে । টোকা দিয়ে ফেলে
দিলে জল পাতা থেকে। অজস্র বৃষ্টির ফোঁটা ঝরে পড়লো পায়ে, আঙ্গুলে,মুখে ও
চুলের ভাঁজে ভাঁজে। মেঘ যেন শান্তির দূত। বৃষ্টি যেন পীযূষধারা ধরিত্রীর বুকে।

তুমি আঁকড়ে ধরে থাকলে হাত। আঙ্গুলে ধরে রাখলে আঙ্গুল। স্খলিত চাঁদ আর বৃষ্টির
ভেতর তুমিও স্খলিত হলে। প্রেম আর রিরংসা একীভূত। এক অপরূপ দৃশ্য হয়ে থাকলো
ভবিষ্যতের জন্য।

আজও সেরকম মেঘলা দিন। বৃষ্টি আসবে আসবে করছে কিন্তু আসছে না। আর
কী আশ্চর্য আজও ফুটেছে আরেকটি নাইট কুইন।

চে’গুয়েভারার চোখ
————————————————
হিমঘরগুলো খুব শীতল। লাশগুলো ঠাণ্ডা হচ্ছে। হাতকড়া আর শেকলের শব্দ থেমে
গেছে। মৃত চে’গুয়েভারার চোখ চেয়ে আছে জীবিতের মতো। দেশে দেশে বিপ্লবের
আগুন নিভে গেছে নাকি জ্বলছে। বাইরে রাজনীতিবিদ আর দুর্বৃত্তরা হেঁটে যায়।
তাদের পদশব্দ আর উচ্চকিত হাসি ভেঙ্গে পড়ছে অতলান্তিকের ঢেউয়ের মতো।

রক্তে ধ্বংসের বীজ নিয়ে মানুষেরা হাঁটছে ঊষর মাটির ওপর। সবুজ ভূখণ্ডের ছায়া ও
আচ্ছাদিত সুন্দরের বিপরীতে দেখছে প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর– থাবা। আবারো যেন
উড়ছে টেরাডাকটিল।শকুন শানাচ্ছে ঠোঁট ।অস্থির হাওয়ার মতো হাওয়া বইছে অবিরাম।

জঙ্গুলে সমারোহে অকস্মাৎ ছমছমে যেনবা খড়গ নেমে আসে কিংবা নতুন আয়োজনে
গিলোটিন। উৎকণ্ঠা অভ্যাসে মানিয়ে যায় । স্নায়ু যেন ধরিত্রীর মতো সহনীয়, সর্বস্বান্ত।
নিশিপাওয়া মানুষের মতো স্বপ্নভ্রষ্ট তবু মুহুর্মুহু কারা উচ্চারণ করে পথের ঠিকানা। । অন্ধ
সৈনিকের মতো অন্ধকারের সিঁড়ি ভাঙতে থাকে উন্মোচনের মর্মভেদী টানে।

তবু পাল্টায়না কিছু। গির্জা আর মসজিদের বারান্দাও রক্তে লাল আর কালো হতে থাকে।

সে আর ফেরেনি মাতৃক্রোড়ে

আমাদের গ্রামের কাছাকাছি কোনো নদী ছিল না। খানিকটা দূরে যে নদী ছিল তা আসলে ছিল কুশিয়ারার শাখা।
লোলা নদী। আমরা বলতাম গাঙ , লোলা গাঙ । শীত এলে আমরা হেঁটেই পাড়ি দিতে পারতাম এটি। নড়বড়ে একটি
সাঁকোও ছিল পারাপারের জন্য। বর্ষায় নদীটি ফুলেফেঁপে উঠলে আমাদের সম্বল ছিল খেয়ানৌকা।

৭১ সালে এ নদীর সবুজ পারে জড়ো হয়েছিল তারা। তাদের হাতে হাতে অস্ত্র , চোখে চোখে হিংস্রতা। অনতিদূরে
তারা আগুন দিয়েছিল ঘরে। বাঁশ ও খড়ের ঘরটি পুড়ছিল শব্দ করে । স্ফুলিঙ্গ উড়ছিল হাওয়ায়।

যে ছেলেটি যুদ্ধে গিয়েছিল সে ছিল দারিদ্রের কষাঘাতে দগ্ধ। শৈশবে হারিয়েছে বাবা, সে ছিল মফিজ, একমাত্র পুরুষ
মা এবং বোনের সংসারে। তার ঘরটি পুড়ছিল অসীম এক দেশমাতৃকার প্রেমে। সে আর ফেরেনি মাতৃক্রোড়ে। ঠাঁই নিয়েছে
তিরিশ লক্ষের ঘরে।

বস্তুত মফিজের মতোরাই ঝাঁপ দিয়েছিল বিনিময়হীন যুদ্ধের আগুনে।

শুশ্রূষার রঙ
—————————
ঝুল বারান্দায় বসে আছি
ল্যাভেন্ডার, পিয়নি,ডেইজি ও অর্কিডের সমারোহে
চারপাশে শুশ্রূষার রঙ
অনতিদূরে আকাশ ছুঁবে বলে দাঁড়িয়ে আছে ওক, বার্চ ও সাঈপ্রেস
অতলান্তিক আর ইস্ট রিভার থেকে উঠে আসছে হাওয়া
ঠাণ্ডা, ভেজা

চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছে সারসার টিউলিপ ও ক্রিসেন্থিমাম
লনের সবুজ ঘাসগুলো যেন দৃষ্টির আরাম

মাটি ভেদ করে উঠে আসছে স্থাপত্যের কান্না
স্কাইস্ক্যাপারের হাঁটুর নিচে কাঁপছে তৃতীয় বিশ্বের ঠোঁট
কালো ক্রীতদাসের রক্তে বোনা নগর-ইতিহাসের ভ্রূণ

কৌণিক রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে দেখছি দেয়ালে দেয়ালে
লেপটে আছে স্বপ্নবিষাদ, রক্তমাখা প্যাস্টেল
দীর্ঘ পথ পেরোনো কবিতা- শিল্পের খেরোখাতা।

গ্রহণলাগা চাঁদ

তোমার বাগানে কারনেশন, হায়াচিন্থ আর ক্রিসেন্থিমাম
তোমার লনে সাজানো ঘাস
তুমি তুষারের উষ্ণীষ পরে সহজ চেয়ারে বসে আছো

অতলান্তিক থেকে উঠে আসা মেঘের শুঁড়
বৃষ্টি হয়ে তোমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে
নিমগ্ন তোমাকে ঘিরে আছে বিষণ্ণতার উদ্বাস্তু চুম্বন

তুমি লুকিয়ে রেখেছো উত্তপ্ত স্পন্দন
শ্যাওলায় ঢেকে যাওয়া শিলার মতো
তুমি আড়াল করে রেখেছো প্রেম
তুমি বুঁদ হয়ে ভুলে যেতে চাইছ আত্মনীপিড়ন

যেন তুমি মৃত নক্ষত্র, গ্রহণলাগা চাঁদ।

স্মৃতি ক্ষয়ের অনুষঙ্গ নিয়
—————————————————
স্মৃতি ক্ষয়ের অনুষঙ্গ নিয়ে সে হাঁটছে প্রবল নির্মোহে
অনাসক্তি প্রবাহিত হচ্ছে নদীর মতো
অবান্তর বস্তুপুঞ্জ, পত্র,পুষ্প ,ঝরাপাতা
দুপাশে বয়ে যাওয়া হাওয়ার মতো বেরিয়ে যাচ্ছে

মিথ্যাগুলোকে সত্যে বদলে নেবার স্তোক
আরোহণ কি অবরোহণ
সিঁড়ি টপকাবার নানা কসরত
কিছুই তাকে ছুঁয়ে যায় না

স্মৃতি ক্ষয়ের অনুষঙ্গ নিয়ে সে হেঁটে যায় প্রবল নির্মোহে।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা