১.তুমিময়
কোলাহলের প্রশ্বাস থেকে নিঃশ্বাস নিয়ে
ক্লান্ত,অবসন্ন কতকাল;
হে মধুর নীরবতা,
নির্জনতার গভীরতম নিঃশ্বাস;
যেন নিবিড় ভাবে শোনে আমার কথা।
শরৎ মেঘের ছেঁড়া ডানায় চড়ে
ইচ্ছেরা উড়ে যায়।
ভুলের ক্ষতে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে
রক্তাক্ত করে উল্লাসে।
পাহাড় নদী,বনানী পেরিয়ে ঝর্ণার উচ্ছ্বাসে
জ্যোৎস্না আকুল;
না, আমি আর আমার নই।
কেন ছিলাম,কেন এলাম,
কেন যাবো,কোথায় যাবো!
পার হয়ে যাই কতো কতো আলোকবর্ষ;
সম্বিত ফিরে আসে ডাহুকের ডানার মর্মরে
অমরতা পেতে চায় মুমূর্ষুরা;
মালীর খোঁজে
যেতে যেতে
বিন্দু হয়ে যায় আলোর স্ফারণ
অতঃপর গন্ধম বাগান:
মুখোমুখি,
তুমিময় হয়ে গেলো পাথর চাপাপড়া
আলোর কণা।
২.ভাত দেবে,ভাত
অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে আছে ক্ষুধা,
কী আর দেবে
ঘর দেবে?
ঘর আমি চাই না!ভাত চাই,ভাত!
ভাত দেবে?
রক্ত গোলাপ?
এখানে বড্ড গরম,
টক বগ করে ফুটছে গ্রীষ্ম
আর্তচিৎকারগুলো উড়ে যায়
বকের ডানায়।
ভাত দিলে শিখিয়ে দেব
জীবনের মানে
ভাত দিলে
দেব গোলাপ,
হৃদয়
প্রেম!
ভাত দেবে?
ভাত দিলে বেঁচে যাবে
মূল্যবোধ,
আত্মহনন।
নাচবে হৃদয়,
হেসে উঠবে বাগান!
ভাত দেবে,
ভাত!!
৩.মনুষ্যত্ব
প্রত্যেকটি মানুষের ভেতর থেকে
বেরিয়ে আসছে দুর্গন্ধ;
উৎকট দুর্গন্ধ
ওফ্ফ এখানে নয়,এখানে নয়;
অন্য কোথাও,অন্য কোনখানে
ছুট-ছুট-ছুট–
এখনে ওখানে সর্বত্র
পচা নষ্ট দুর্গন্ধে ক্ষেপে উঠলেন মন্ত্রী মহোদয়।
নিজের দিকে তাকালেন,
ওহ তাইতো এখানেও সেই পচন;দুর্গন্ধ।
পচন; মনুষ্যত্বের পচন।
দূর,আর কতো দূরে স্বস্তি!
ছুটতে ছুটতে দেশের প্রতিটি ভীড় ঠেলে
মন্ত্রী এখন শাহবাগ মোড়ে। ততক্ষণে
গাড়ির গ্লাসের ফাঁকে হেসে উঠলো
ছোট্ট এক শিশুর চোখ
‘ফুল নেবেন স্যার,ফুল।
কোথা থেকে হুহু দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে গেল
এখানে দেশ নয়,ফুল বিক্রি হয়, ফুল।
ফুলের আনন্দে এখানে জীবন নাচে
এখানে গান গায় মনুষ্যত্ব!!
৪.বিষ্ময়
মেঘসমুদ্রে মেঘেদের নৃত্য
সীমাহীন স্বপ্নময়তার জালে জড়িয়ে
ভেসে বেড়াচ্ছে,
মায়াবী ছোঁয়ায় খুলে যায়
মনের প্রকোষ্ঠ;
ধুয়ে যায় বেদনার যতো নীল।
হাজার রঙের আনন্দ সিম্ফনিতে
বেহেশতের হাতছানি যেনো!
সৃষ্টির রহস্যের এক বিন্দু ছোঁয়ায়
উদ্বেলিত হৃদয়,
হারিয়ে ফেলা নিজেকে
খুঁজে পাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা।
অস্ফুটস্বরে উচ্চারিত হয়
ফাবি আইয়ি আলা ই রাব্বি কু মা তুকাজ্জিবান;
এবং তোমরা তোমার রবের
কোন কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে’
পায়ের নিচে মেঘ,সবুজের চাদর ঘেরা পাহাড়ে হেলান
দিয়ে ঘুমিয়ে আছে চরাচর।
সুবেহ-সাদিকের রক্তিম চুম্বনে
জেগে ওঠে রহস্যময়তা
এ কোন কারিগর তুমি অদৃশ্যের মাঝে
আরো মোহনীয়,আরো আরো বিষ্ময়কর!
৫.মৃত্যুহীন ভালোবাসা
স্বর্ণলতার মতো জড়িয়ে আছে যন্ত্রণা
প্রজাপতিরা স্বপ্নের কথা জানিয়ে গেলো
লাউ এর ডগার উদাত্ম বেড়ে ওঠা
আমাকে সত্যের সিঁড়ি দেখালো
মৃ্ত্যু মাথায় নিয়ে স্বপ্নের কার্তুজ বুকে বেধে
স্বাধীনতার যাত্রা হলো শুরু–
আমি কাউকে বলি নি:
জ্যোৎস্না ছুরিকাহত গলগলে
রক্তের কথা
যন্ত্রণাকাতর পিরামিডের
আর্তনাদের কথা;
বলিনি এ সূর্য দীপ্তি নয়,
সামাজিক অনাচার!
আমার কী অপরাধ?
দেখালো কারচুপিকারীর রক্তচক্ষু,
শেখালো বীভৎসতার উত্তর;
আমি সেই থেকে দেখেছি
অন্ধকার হৃদয়,
যেনোবা নিঃশেষিত কোন সুগন্ধির রেশ–
পালক খসে গেছে যে ঘুঘুর
রক্তক্ষত যে বুক, ভেবো না
আটকে রাখলেই মরে যাবে
ভালোবাসা!
৬.হত্যা
আমাদের না বলা কথারা উড়ে যায়,
না যাপিত দিনগুলো তাড়া করে জীবনভর।
মেঘের ফাঁকে অদেখা আলো লুকিয়ে ডাকে;
না পাওয়া গুলো শ্রেষ্ঠ ভেবে
বিষাদের আলপনায়
গোধূলি ডাকে।
সে ডাক অগ্রাহ্য করে, কার সাধ্য!
সেই থেকে হাঁটতে হাঁটতে রক্তক্ষত।
এখনো বেঁচে আছি,সত্যিই আছি।
শত সহস্র ঝড় ঝাপটা মাথায় নিয়ে ইচ্ছেঝুলি ফেলে
দিয়ে ঠিকই চলে যাচ্ছি সূর্যাস্তের দিকে। আস্ত রাগের
রক্তিম চোখ আমাকে শাসায়,
এতো এতো স্বপ্ন, কল্পণা,প্রত্যাশা;
কেনো তুমি হত্যা করেছো;কেনো!!
হত্যার প্রতিশোধ চাই;প্রতিশোধ!
৭.যাবে তুমি
মুঠো মুঠো আনন্দ ছড়িয়ে অনন্তে
কিছু না ভেবে চলো যাই অজানার বাড়ি
তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে জেগে ওঠে রোদ
পাহাড়ের ব্যাকুল হাতছানি,
ফেরাবে কেমন করে;
জ্যোৎস্না জলে গলে যায় রাত।
মেঘের রাজ্যে সওদা করি স্বপ্ন
নেবে তুমি
ঘন কুয়াশা ভেদ করে টিলার মাঝে
শর্পীল পথ একে বেকে ফণা তুলছে
যাবে তুমি
পাখির ডানার ঝাপটায় সমুদ্র ওড়ে
ঝর্ণার উচ্ছ্বাসে নেচ ওঠে
কথার প্লাবন
গন্ধমে নীল হতে হতে
যাত্রা হলো শুরু
তুমি যাবে,যাবে তো
সঙ্গে আমার।
৮.জ্যোতি
এ কোন জ্যোতি তুমি ছড়িয়ে দিলে বিশ্বময়
যার আলোয় আলোকিত সৃষ্টি জগত
তায়েফের রক্তাক্ত ময়দান আজও ব্যথিত,
বেদনার্ত;
আহা কী নির্মম আঘাত,
পাহাড়ের বুকে ঘুম হয়ে জেগে আছে।
তবু কিছুই মনে রাখোনি অপার করুণার আধার;
মানব কল্যাণের দিশা,
আহত হয়েও
কেঁদেছ; ইয়া উম্মতি,ইয়া উম্মতি।
চেতনার স্থবিরতায় কতো অদেখা অজানা,
রহস্যাবৃত অনন্ত সৃষ্টি–
তোমার করুণার ভিখারি,
নালায়েক বান্দা আমি,
সব কিছু মিলে মিশে আমি যেনো চলে যাই
সেই সময়ে,
ছুঁয়ে দেখি মুগ্ধতার শব্দমালা;
পরম সত্যের স্পর্শে
মহান এক অসীম সত্যের দিকে তাড়িত হই
প্রতিদিন,প্রতিক্ষণ।
৯.প্রয়োজন
পৃথিবীময় শূন্যতা গিলে ফেলে
হয়ে ওঠো এক জ্যোতির্ময় উচ্ছ্বাস;
শুষে নাও অনন্ত আঁধার;
সূর্যের মতো হেসে ওঠে প্রয়োজন।
যতোক্ষণ প্রয়োজন,ততক্ষণ মূল্যবান,
বাস্তবতার কাছে মূল্যহীন যতো
আবেগের ফানুস।
প্রিয়জন নয়,
প্রয়োজন হয়ে ওঠো
দেখবে হাসছে চারদিক,
থৈথৈ করছে আনন্দ;
পাখির ডানায় স্বপ্ন ছুঁয়ে উড়ছো;
তোমার দিকে অগণিত উৎসুক চোখ,
আহবান জানাচ্ছে;
ভেসে বেড়াচ্ছো জীবন সাগরে!
অথচ সত্যিটা কী!
আাহা,কী বিভীষিকাময়,
অন্ধকার,একাকী;
কেউ নেই,কিছু নেই,
শূন্য,চরম শূন্য পৃথিবীময়।
কেউ নেই; কোথাও কেউ থাকে না!
১০.প্রুনিং
ভেঙে গেলেই জেগে ওঠে
জোড়া লাগার তীব্র বাসনা
যুগলের অনিবার্যতা প্রস্ফুটিত হয়;
ভেঙে যাওয়া শুধু ভেঙে যাওয়া নয়।
বাগানটা প্রুনিং করে দাও;
দেখবে,
সময়ের ব্যবধানে ঐশ্বর্যে পূর্ণ হয়েছে সে।
নিজেকে জাগিয়ে তোলো
দেখো, প্রাণের ভেতর থেকে কে যেনো বলছে
আয়,ফিরে আয়…
১১.তৃষ্ণা
তৃষ্ণার্তই জানে পানির স্বাদ।
যদি কখনো
তৃষ্ণা কাতর হয় পানি,
কার কাছে যাবে বলো,
কোথায় মিটবে তৃষ্ণা!
আমি সেই পানি;
যার তৃষ্ণা মেটায়,
কার সাধ্য!
১২.চাই
সব চাই,সব
এটা ওটা সব আমার
ওটা না পেলে রক্তা রক্তি হবে
সেটা না পেলে জ্বালিয়ে দেয়া হবে
সীমাহীন কসরত…
সব পেতে হবে সব।
এই যে আমি
যার জন্য এত্তকিছু
এই আমি কি আমার!
আমার বলে কিচ্ছু নেই,
আমিও আমার নই
সব তার,সবই।
এ জগৎ কেবল গোলক ধাঁধা
মহাকালে ভেসে ভেসে
একমাত্র তার হয়ে তার কাছে যাওয়া।
১৩.স্বাধীনতা
স্বাধীনতা হচ্ছে
নিজের জেলখানায় বন্দীদশা।
ভেঙে ফেলো জেলের তালা
উড়ে বেড়াও মুক্ত আকাশে
দেখো কী গাঢ় নীল!
বিশাল করে শ্বাস নাও
অতঃপর ভারমুক্ত;
শুনতে পাবে বুকের ভেতর
আনন্দ চড়ুই পাখির কলধ্বনি।