spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : শাহীন রেজা

গুচ্ছ কবিতা : শাহীন রেজা


কেউ না

কেউ ডাকেনি আমাকে; কেউ না–

না মেঘ না রোদ
না দীঘল মাঠ না শানবাঁধানো পুকুর
জোনাক ঘুমের ভোরগুলোও না
শীতের শরীর ছোঁয়া রাতগুলোও না

শুধু একটা ডাহুক একদিন পাহাড়ি পথের ঢালে বুনো কুয়াশা বিছিয়ে বলেছিল, এসো–

সেদিন আমার ধূসর চোখ
অশ্বত্থের বুক বেয়ে নেমে আসা স্তব্ধতায়
ঠায় তাকিয়েছিল ; আজন্ম দাওয়ায়

নির্বিঘ্নে দূরে সরে যায় পাখির ওমের মতো সময় আর নির্জন দুপুরের স্মৃতিগুলো–

একাকি পথের শেষে
কতকাল শিউলি ঝরে না

কেউ হয় না স্মৃতি
না আমি না তুমি

শুধু ঈশ্বর দাঁড়িয়ে থাকেন
চেনা গলির পাশে চির অন্ধকারে ।


একা

কেউ পাশে নেই অথচ নিজেকে একা মনে হচ্ছে না; মনে হচ্ছে না অসহায়,

তুমি নেই সে নেই ওরা নেই
অথচ আমি একা নই–

ঠিক জন্মমুহূর্তের মত ভেসে বেড়াচ্ছি নিবিড় নৈঃশব্দের অনিমেষ রক্ত-উপাত্যকায়;

হয়তো কোথাও আছে কানি বক, রত্নদ্বীপ আর বোগেনভিলিয়ায় ঠোঁট ছোঁয়ানো শেষ চৈত্রের ওম, আছে নির্ঘুম স্বপ্নবিলাপ, কাব্যের আলুথালু বোধ আর চৈতন্যের খুনসুটি এবং তুমি।

ঠিক এখন এখানে আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্জনতা এবং তুমি বিশ্বাস কর;

আমি একা নই–

কেউ না থাকলেও মানুষ নিঃসঙ্গ হয় না
কখনো কখনো ; যেমন আমি।

না আমি একা নই, তুমি না থাকলেও।


জোছনার ধ্বনি

জোছনা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেলো রাত
ঝিঁঝির অর্কেস্ট্রায় পতনের সুর
দ্বিখণ্ডিত লয়ে ‘ আই লাভ ইউ মোর দ্যান আই ক্যান সে’–

বলার চেয়েও কি বেশি বলা যায়;
তবু আমি ভালবাসি বলতে বলতে নদী হয়ে যাই

জলের মর্মরে বেদনার ধ্বনি–

আর কতো কাঁদাবে আমাকে?

কাঁদতে কাঁদতে আকাশ ফিঁকে হলে
তবে কি নক্ষত্র বেরুবে,
গভীর রাতে হরিণ দুটো চোখ ভিজবে মায়ায়?


জলের ভাঙ্গন

খুব তাড়া ছিলো
তবু্ মাথা বাড়িয়ে দেখি
তিন ফুট জলের ভেতর নয় ফুট ছায়া।
মাছেরা ধূসর খোঁজে
লেজের আঘাতে ভাঙ্গে কানকো ঢেউয়ের,
বাহারী রাতের নীচে নদীর ভাঙ্গন;
তিন ফুট জলের ভেতর ছায়াগন্ধ্যা চোখ
নদীকে খোঁজে।


হালখাতা

আলেয়ার আলো ছুঁই নি বলে কি জীবনের সব চেনা
হলো শেষ আজ, ফুরালো আঁধারে যতটুকু লেনাদেনা

বোশেকের চিঠি লিখেছে মাধবী, ডাহুকীর ধরে হাত
চাঁদের ছোঁয়াতে আসমানে ভাসে লীলাময় ঘন রাত

মেঘের মিনারে সারিসারি সব ব্যাঙাচির লুটোপুটি
জীবন খুঁজেছে জীবনের কাছে এতোটুকু এক ছুটি

বছরের শেষ সব শোধবোধ সবুজে অবুঝ পাতা
নতুন হিসেবে আঁকা হবে আজ সময়ের হালখাতা।


মানুষ

মানুষের হাত ধরে ভীড়ের মধ্যে হাঁটা ছায়াটাও কেমন মানুষ হয়ে ওঠে। ভীড়ের ভেতরে জোছনা ঢোকে না, প্রেমবালিকার চোরা চোখ ঝলসে ওঠে না-
তবুও লোকটা মানুষ হয়ে উঠল, অন্ধ দৃষ্টি মেলে খুঁজল মেঘের বেদীতে ফুটে ওঠা কয়েকটি নক্ষত্র।
অমানুষের ভাষা আলাদা, লোকটা খাঁটি বাংলায় সুর করে গাইতে শুরু করল–’ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।
লোকটার মুখাবয়বে তখন বিচিত্র সেই রং, যে রং মেখে স্বর্গ থেকে আদিমাতা হাওয়ার হাত ধরে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন প্রথম পুরুষ আদম।
মিছিলে শ্লোগান হয়, ক্রুদ্ধ পদভারে কেঁপে ওঠে রাজপথ, দাবীর শব্দগুলো চিলের পালক হয়ে উল্কি আঁকে সময়ের হাতে, কখনো গুলির শব্দ, রক্ত ও ঘামের মিলিত লোনা ঘ্রাণ।
সেই ঘ্রাণে জন্ম নেয় একাধিক চে , মাও, লেনিন।
লোকটি মানুষ হতে গিয়ে একসময় হয়ে ওঠে কোন এক চারু মজুমদার।


এখন একটা ঘুমের খুব প্রয়োজন

মহান সক্রেটিস নাস্তার টেবিলে ধ্যানমগ্ন–
তার বাটার লাগানো রুটি ঘিরে ধরছে একদল লালপিঁপড়ে আর চায়ের কাপের ক্লান্ত ধোঁয়া হাত বাড়িয়ে ধরতে চাচ্ছে জানালার ব্লাইন্ডআই,
যীশুর দাঁড়ি উড়ে উড়ে রৌদ্র তাড়াচ্ছে এবং
প্রিয় মুহম্মদ সুরেলা কণ্ঠে পবিত্র কোরআন আওড়াচ্ছেন হেরা’র নিভৃত গুহায়–

এই অবসরে একটি শব্দ খসে পড়ছে শূণ্য থেকে
একটি একটি আরও একটি আরও আরও

শব্দ মালায় ঢেকে যাচ্ছে পথ মাঠ নদী ঘরগেরস্ত
মসজিদ দালানকোঠা পাহাড় উপত্যকা রাস্তাঘাট
এমনকি তোমার বিদীর্ণ হৃদয়ও–

একটি কবিতা তৈরি হচ্ছে
একটি কবিতা জন্ম নিচ্ছে

একজন রবীন্দ্রনাথ একজন নজরুল
একজন সুকান্ত একজন আল মাহমুদ
একজন কাজুকো একজন রুমি
একজন বায়রন একজন হোমার

একজন সৌমিত একজন শাহীন
একজন স্টালিন একজন ইরম

বাতাসে নদীর চোখ জল ছড়াচ্ছে

বৃক্ষে সবুজের হুল পাতারা ঘনিষ্ঠ

এখন একটা ঘুমের খুব প্রয়োজন
পাখির ঘুম আলোর ঘুৃম কবির ঘুম।

আরও পড়তে পারেন

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা