spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : সুমন সৈকত

গুচ্ছ কবিতা : সুমন সৈকত

প্রসঙ্গ প্যালেস্টাইন : বিজ্ঞাপন কিংবা স্বাধীনতার  কাঙ্ক্ষাপত্র

‘না’ শব্দের তরঙ্গের নার্গিস ফুল, হরফের আবছা রঙ।
জনম গেল বলো কার ফেরার আক্ষেপ!
ফিঙে পাখির আদর খুনসুটি,
উড়াল রেখো আষাঢ়ে উপেক্ষা, কপাট খুলে বসেছি- চুরি হয়ে যায় সোনারঙ কৈশোরের লাটাই, মার্বেল ও পাথর সময়।
রাতের জবুথবু শুনসান নীরবতাকে মানি জন্মান্তরের মায়া। অথচ তুমুল মতান্তরের কোটি আলোকবর্ষ সময় পেরিয়ে আজও দেখি-
তুমি আমি বেশ আছি সরলরেখা যেন পাশাপাশি।

সুবেহ সাদিক আদর দিলে চোখে, মুঠোক্লান্তি- মুঠোঘুম হারিয়ে যায় বলো, কার কথা ভেবে?ভেঙে পড়া  রক্তচূড়ার ডাল জেনে যায়
গোলাপ মানে- অজস্র অভিমান।

সমস্ত ছায়া ফিকে হয়ে আসে
সব মায়া হারিয়ে যায় অবশেষে, সমুদ্রের লোনা-তরঙ্গের আর্তি পরে রয়
বালির পাঠশালায় সব রোদন যায় মিশে

জানি, স্বাধীন তুমি
কখনোই হয়তো আসবে না আর নীড়ে
চলো বিজ্ঞাপনের বাড়ি হয়ে যাই দু’জনেই।

পাখির শোক

ছোট্ট বেলায় পাখি হওয়ার প্রচন্ড সাধ ছিলো। মাকে বলতাম, ‘মা, মা, ওমা! দেখ দেখ পাখিগুলো কত্ত সুন্দরভাবে উড়ছে মেঘের কোলে…
মা তুমি আল্লাহ্ র কাছে প্রার্থনা করো না- আমাকে পাখি বানিয়ে দিন…’

‘দূর বোকা তাই কী হয়…’

মা কোনদিনই আমার জন্য পাখি হওয়ার প্রার্থনা করেননি, তা আমি জানি! কিন্তু আমার মা হয়তো জানেনই না উইঘুর, কাশ্মির, পশ্চিম তীর,  গাজার মায়েরা মুক্ত পাখির শোকে আজও  নিভৃতে কত অশ্রু মোছেন…

প্যালেস্টাইন

আমার বুক পকেটে জমা রাখি
পাখি তোর উড়বার শোক…

ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি
চোয়ালে চোয়াল রেখে
                    টিপে যাই  দাসত্বের ট্রিগার…

ট্রানজিট

তিতাস যেন প্রিয়ভাষিনীর শোকার্ত চোখ…

নোঙর

( জললিপি বোঝ না তুমি নোনতা জলের ব্যাকরণ )

তোমার আত্মহননের পান্ডুলিপি এইমাত্র শেষ করে ঘরে ফেরার কথা ভাবতেই দেখি ঈশ্বরিণীর  শাড়ির আঁচলে বাঁধা কিশোরী সন্ধ্যা। চুরুটের   গন্ধে মাতাল তখন মেথর সর্দারের উঠোন, আত্মস্থ করতে থাকি নগরের  অন্ধগলির মাংশাসি প্রলোভন। নিষিদ্ধ  গন্ধমের জল-পিপাসায় কাতর জমজ স্তন। কৃষ্ণাঙ্গ ঠোঁটে, মায়ার কলতান…

দূরগাঙে পড়ে রয়
                      মাঝির হাহাকার,
                             ছেঁড়া মাস্তুল
                                        আর
লোনাজলের শীৎকার ।

আবরার

নৃশংস!
হত্যা!!
মানচিত্র!!!
কৃতদাস হয়ে উবু হয়ে বসে থাকা, আধিপত্যবাদী মেঘের আনাগোনা; এইসব দিন-রাত্রি।
নক্ষত্র ভরা শব্দহীন রাতের আর্তি ! শকুনের নখরে খুবলানো মানচিত্র! বন্ধকী বিবেকের রুদ্ধ পাটাতন!

আবরার! আবরার! আবরার!
চোখ খোল্ আবরার
তোর শরীর চোয়ানো ছোপ ছোপ রক্তে
ভেসে যায় পিতার বুক পাটাতন
ভেসে যায় শ্যামল মায়ের আঁচল 
আর পদ্মাবিধৌত পলল ভূমির মানচিত্র

আবরার! আবরার! আবরার!
চোখ খোল্ আবরার!
দ্যাখ, দ্যাখ বারভূঁইয়া ঈশা খাঁ’র ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি দূর নীলিমার বুক চিরে ছুটে আসছে…
চেয়ে দ্যাখ্ আবরার
তোর চিবুক চোয়ানো প্রতিটি রক্তকণা
গোলাপ আর রক্তচূড়া হয়ে হাসছে

তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখের পাপড়ি মেলে দ্যাখ আবরার-
তোর রক্তে ভেজা সবুজ পাজামা
নিমিষেই হয়ে যায় সবুজের বুক ফুঁড়ে রক্তাম্বর পতাকা…
আর অরক্ষিত স্বাধীনতার সবুজ খেলান।

ব্যথিত ল্যাম্পপোস্ট

‘মাতৃস্তনে লালিত আজন্ম স্বপ্ন উড়ে শকুনের স্বর্ণ ঠোঁটে’

মা তুমি কাঁদছো; কাঁদো মা কাঁদো
                                           তবে
অশ্রুকণাগুলো বাঁটিতে জড়ো করিও
আমি ঐ জলকণাগুলোকে পদ্মার
ভূখা-তৃষিত চরে ঢেলে দিবো, না হলে দেখবে
মরুর উষ্ণতা তোমার শরীর জ্বালাবে
রৌদ্রের খরতায় দৃষ্টিরা পোড়াবে
মেঘ বালিকার ঘরে ফেরার বিশ্বাস কম
জোয়ার হবে তাতেও আস্থা নাই; রোদ আছে
তাই চুরি করতে পারছি না রাতের ক্রন্দন
একরত্তিও পানি দিবেন না পণ করেছে উত্তরের মুরব্বিগণ
তাই তোমার অশ্রুতেই শেষ ভরসা আমার…

তুমি কাঁদছো মা,  তুমি কাঁদো
দেশটা সাবসাহারা হওয়ার আগেই কেঁদে নাও; অশ্রু ঝরিয়ে নাও
নইলে মা- মরুর দেশে তোমার চোখ অশ্রু পাবে কই!

চুম্বন

(তখন অস্তগামী সূর্য নিমগ্ন ছিলো গোধূলির ওষ্ঠে)

অভিলাষের পানপাত্রে চুমু দিয়েই জেনেছি
শীতলক্ষার দীর্ঘশ্বাস বয়ে নিয়ে- সন্ধ্যা মেয়ের ঘরে ফেরা।
ধ্রুপদী জোসনায় ভাসবে বলে, হয়তো তুমিও
কেঁদেছিলে সেদিন।
বি

র্ণ           হৃ
তা          দ
য়            য়
যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত টাইগ্রিস স্রোতস্বিনী।
আর মাদক সন্ধ্যায় ,
তোমার ঠোঁট প্রকম্পিত তখন
অঙ্ক শেখার ভুল ধারাপাতে…

ফটোগ্রাফার

ভূগোল জন্মরহস্যে আস্তাবল থেকে বেরিয়ে  পড়েছে কালো ঘোড়াটি।
সহস্র-কোটি আলোকবর্ষ দূরে গোপন অন্ধকারে ধ্যানমগ্ন কোন এক সৌখিন পূজারি, পাশের জঙ্গলে বৃক্ষরাজির প্রার্থনার ক্যানভাসে কোরাস করে মৃত বালিকার লাশের কৈশোরিক চপলতা।
গন্ধবণিকের সাথে কফিতে চুমুক দেয় ছদ্মবেশধারী হত্যাকারী ফটোগ্রাফার।

দিগন্তে ভেসে বেড়ায় ধূলিঝড়ের দুরন্তপনা…

আহারে কৃষ্ণঘোড়া,
নক্ষত্র-যোজনপথ এখনও বাঁকি;
অথচ
তোর খুরে রাজ্যের ক্লান্তি…

রূপকল্প

এইসব যাপিত নাগরিক রাত- ল্যাম্পপোস্ট, ঝিঁঝিঁ’র ডাক, চাঁদ-কুয়াশার জলকেলি- বিষন্ন বাতাসে গুপ্তহত্যার চিত্রকল্প।

হলদে পাখির পায়ে, নৈর্ব্যক্তিক জিজ্ঞাসা
লাশকাটা ঘরে পরিতোষ হাতে মাতাল ডোম।আটচালার কাঁচাপাকা কবিতাপত্রে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে সোনা সোনা রোদ। জন্মান্ধ আবেগে পোড়ে মধ্যবিত্ত টানাপোড়নে নীলাভ দুঃখপাথর।

খন্ডিত দৃশ্যপটে, বিস্মিত জানালার পাশগলিয়ে শিরিন আপু, তোকে আজ খুব মনে পড়ে…

পরিব্রাজক

রঙতুলি ক্যানভাসে; বুকের পাটাতনে আঁকি দাউ দাউ আরাকান আগুন…
মস্তিষ্কের কোষে গেঁথে রাখি কালো হাবসি নারীর মানচিত্রহীন শোকার্ত অভিমান।

বৈষম্যের কাঁটাতারে বিঁধে থাকে
মানবিক
.               ভোর,
পার্শ্বচরিত্রে সাম্রাজ্যবাদী প্রেত-প্রেত্নীর নাচের রিহার্সেল, সূর্যোদয়ে সাংঘাতিক বিড়ম্বনা।

এসব নষ্ট সময়েও আমি দিব্যি হেঁটে যাই সপ্তপৃথিবী পরিভ্রমণে…

নিকাশ

বাবা সব খরচই লিখে রাখতেন
লাল মোলাটে মোড়ানো খাতায়
টানাপোড়নের সংসার
মায়ের অভিযোগের অন্ত নেই
কয়ড়া ভরা উনুনে মায়ের
সমস্ত দুঃখ টগবগ করে ফুটতো
বিষাদের পান্ডুলিপি জমা রাখতেন মা, রোজ অভিমানের আঙিনায়।
এনিয়ে বাবার কোন আক্ষেপ নেই
বলতেন, ‘ছেলে পড়াশোনা শেষ করুক সবই ঠিক হবে।

জীবন সায়াহ্নে বাবা আজকাল প্রায়শই ঘোলা চশমার পুরো কাঁচে জমা-খরচের পাতা উল্টিয়ে দেখেন- টালিখাতার সব হিসাবই ভুল!

……………………
সুমন সৈকত
সম্পাদক বোল
আটচালা, নওগাঁ।

আরও পড়তে পারেন

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ