সৈয়দ আহমদ শামীম
এক.
…..
তোমার গান উদ্ভাসিত করেছে আমার হৃদয় হে রজার
মাখলুকাত যখন মজলুম থেকে মুখ ফিরায়ে নিয়েছে
তোমার গহীন কণ্ঠ প্রফেটের ভবিষ্য রেখার দিকে চেয়ে
এক অলোক সত্যের সমাগত আশার বারি প্রবহ করেছে
তুমি কি হকএ বিবৃত ঈসার মুষ্টিমেয় বুজুর্গের কেউ!
তোমার সংগ্রাম মনে রাখবে গাযা’র শহীদ শিশুর দল
বেহেশতে তাঁরা তোমার সম্মানে যে কনসার্ট জুড়ে দিবে
আমিও থাকব সেখানে আমিওতো ওঁদের জন্য লিখেছি
কবিতা, উচ্চমার্গ নয়, পেরেশান আর দরদের মায়ায়
°
নভেম্বর ১০ দুই হাজার তেইশ ঈসায়ী
দুই.
…..
সত্য সমাগত!
সেই সত্য এসেই গেছে!
আমার সত্তায়,অনেতিহাসে!
আমার কর্ম পরিবার সমাজ জনপদ
পেশাজীবিতা,ইতিহাসে!
আমার খ্যাতি বাসনায় কোনো সত্য নেই
আমার গোপন দুরভিসন্ধিতে কোনো সত্য নেই
আমার ভাষার মুনাফেকি নিজেই মিথ্যা
আমার ব্যক্তি অভীপ্সার লেলিহান জিহ্ব স্বয়ং মিথ্যা
সত্যের সর্বপ্লাবী ঝড়ের তোড় হতে মুখ ফিরানো মিথ্যা
সুহৃদ হে
এই বিমিশ্র শয়তানি হাওয়ার দিনে
আমাকে নিরালায় ডেকে ভ্রাতৃভাবে শুধরে দিও
মিথ্যার নান্দনিক কবিতা শিল্প ধর্মনিরপেক্ষ
নেফাকিগুলো আমার ঠোঁট চোখ আর মেরুদণ্ড হতে
আলগ করে দৃষ্টির সমুখে রেখো
আমি তো দীর্ঘ কাল সত্যকে প্রাণ হতে অপসৃত
রেখেছি
°
শুক্রবার ঈসায়ী ২০২৩ নভেম্বর ১০
তিন.
…..
তোমাকেও একা হতে হবে
প্রকৃতি ও বাতাস একটা দূরবর্তী প্রাচীন কবরস্থানের
অগাধ সৌন্দর্য কিছু সান্নিধ্য দেবে সুহৃদের তারপরও একা
হ্যা বাতাস তোমাকে ছেড়ে যাবে না মহিমময় নিদ্রা
তোমাকে ছেড়ে যাবে না কিন্তু মানুষ তোমাকে ছেড়ে যাবে
তোমার কলংক তোমার হৃদয় ভার করে দেবে
হাত বাড়িয়ে কিছুই ছুঁতে পারবে না
মানুষের তীব্র কোলাহল উদরের সমস্ত বমি কণ্ঠায়
এনে আটকে রাখবে
পুরনো ক্ষতের নিরেট হিসেব নিয়ে হাজির হবে একদা
গুরুত্বপূর্ণ শত্রুরা
যতই বলো যে তোমার স্মৃতি পর্যন্ত নিঃস্ব ওরা শুনবে না
তুমি চাইলেই একা বা নিঃস্ব হয়ে যেতে পারবে না
সমস্ত অদৃশ্যের হাতে
পুবের বৈরাগ্য দিয়ে বা প্রতীচ্য প্রসব চিন্তার
কলাবৈকল্য কোনো কিছুই তোমাকে একা বা নিঃস্ব
করে দিতে পারবে না
তোমাকেও একা হয়ে যেতে হবে তোমার অনায়ত্ত
বাস্তবের হাতে আর তুমি পারবে না তা
আছে! ঈশ্বর!
কবিতা শিল্পের বহিস্থে যারে সাধারণে আল্লাহ বলে!
°
২০ নভেম্বর ঈসায়ী দুই হাজার তেইশ
চার.
…..
আরব স্থানে একটা জাহেল যুগ ছিল
সজ্ঞানে একদল লোক অন্ধকার পথে হাঁটতো আর
সজ্ঞানে বিক্ষিপ্ত সত্য সন্ধানী চিরসত্য’র জন্য অপেক্ষা করতো
পার্সিয়ান সালমান ফারসি বন্ধু আবু দারদা কত নবীর
প্রেমিক কত প্রান্ত হতে মক্কা মদিনার অনিশ্চিত অথচ
হৃদয়ের পবিত্র ঘ্রাণের খোঁজে চলে আসতো
তাঁরা দেহমনহৃদয়ের পৌত্তলিক বিলাস
অজ্ঞেয় উৎস ক্ষমতার নৈরাজ্যবিরাজ
দার্শনিক জ্ঞানের ঔদ্ধত্য ঝলক
কিছুই পরোয়া করেনি
দুনিয়ার ক্ষুদ্রাতি পরিমাপ তাঁরা সৌভাগ্যের সাথে
অবনত চিত্তে হেঁটে পার করে দিয়েছিলেন
তাঁদের চিরকালীন আড্ডার স্থল হবে জান্নাতুল
ফেরদৌসের অকল্প বাস্তব যার আভা খোদা হৃদয়ে
তাঁদের থির তরঙ্গে স্থির করে দেছে
তোমার স্থানে একটা জাহেল যুগ আছে
তোমার কিছু বন্ধু সজ্ঞানে জাহিলিয়া বেছে নিয়েছে
তারা নিয়ত দেহমনউদ্ভূত কবিতা ও স্থাপত্য
শয়তান শিহরিত ক্ষমতার নৈরাজ্য বিরাজ
দুনিয়ার ক্ষুদ্রাতি পরিমাপ স্থায়ী ভালোবেসে তাগুত
হতে হতে নিজের অজান্তে মরে যেয়ে
চিরকালীন অগ্নির লালসার গহ্বরে ঢুকে গেছে
তোমার কিছু চেনামুখ আরবের সেকালের
সত্যনিষ্ঠদের মতো মৃদু পায়ে সন্তর্পণে তোমার কাছে
থাকে তাঁরা আবু দারদার পরামর্শে চুপ থাকে
চুপ থাকা গভীর অন্তর্দৃষ্টি জন্ম দেয়
তোমার জাহেল স্থান হতে নীরব গভীর দৃষ্টি গুলোর
সন্ধান করো দুনিয়ার ক্ষুদ্রাতি নৈরাজ্যের ক্ষতে
°
১৯ নভেম্বর ঈসায়ী ২০২৩
পাঁচ
…..
জায়নিস্ট আগুন ফিলিস্তিন জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর সে
আগুন সুদূর মার্কিন মুলুকে এক তরুণীর মনে আগ্রহ
জাগালো সত্য
কোথায় আছে জানার
মেগান রাইস গণহত্যার মুখে ফিলিস্তিন শিশুকিশোর
যে মানসিক দৃঢ়তা দেখায় তার উৎস খুঁজতে গিয়ে
কোরআন খুলে অবাক
একএকটা বাক্য তাকে খুশীতে পাগল বানিয়ে দেয়
ইসলামোফোব দুনিয়া তাকে যে বদ্ধমূল ঘৃণা
শিখিয়েছিল, সে আবিষ্কার করে কোরআন এক সহজ
প্রাণবন্ত স্বচ্ছ জলহাওয়া, মানুষের সরল অন্তঃকরণ
পেলে সে জড়িয়ে ধরে
সত্য সম্পর্কে মানুষ কোরআনকে মাঝে রেখে দুইভাগে
বিভক্ত হয়ে গেছে
এক দিকে বিশ্বাস
এক দিকে অবিশ্বাস
যে অবিশ্বাস পছন্দ করেছে সে জানেই না কীসে তার
অবিশ্বাস
সে একবার মেগান রাইসের মতো যেকোনো পৃষ্ঠায়
মনের চোখ মেলুক
°
১৯ নভেম্বর ২০২৩
ছয়.
…..
পাপিষ্ঠ তুমি, কীভাবে মুক্তির দুয়ারে পৌঁছুলে?
ফেরেশতা জানতে চাইলে…
আমি তো ফটোগ্রাফ পছন্দ করতাম না কিন্তু
প্যালেস্টাইনের শিশুদের ছবি দেখলে মৃত্যুর মতো স্তব্ধ
হয়ে প্রাণ খুলে পড়ে যেত
আমার ছোট সন্তানের মুখ ছিল প্রিয় কিন্তু তাকে
আমি হারিয়ে ফেলেছি গাযা’র হাজার হাজার
শিশুদের সাথে
সবাইকে একসাথে খুঁজতে খুঁজতে আমি ক্লান্ত হয়ে
যেতাম
ঘরের গলি হারিয়ে কোনদিকে চলে যেতাম পায়ের
সাথে দেহ হাতের সাথে হৃদয় আলগা মনে হতো
জীবন অর্থময় কিন্তু চিরবিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল
কিন্তু বিশ্বাস পরিস্কার হয়ে যেত, কেননা এই শিশুদের
জনক জননী বয়োবৃদ্ধ পিতামহ সবাই জানতো মৃত্যু
এক সুনিশ্চিত মুহূর্ত মাত্র
প্রাণ হারিয়ে যাক আকসা তাদের রক্তের প্রতিটি
বিন্দুর সাথে ঈমান হয়ে আছে
দুনিয়ার নিরাপদ প্রান্তের যেকোনো সুফিসাধকের
চেয়ে গাযা’র শিশুদের শীতল হাত আমার
ঈমানের পতাকা হয়ে ওড়ে
°
২৪ নভেম্বর ঈসায়ী দুই হাজার তেইশ
সাত.
…..
আফ্রিকার মহিষ যখন সন্তানের পরম প্রিয় জান
রক্ষার্থে আট দশটি নির্দয় সিংহর সাথে লড়তে লড়তে
নিজেই অসহায় শিকার হয়ে যায়
খবর রাখতে পারে না আর তার বাছাধনের কী হল
মানুষের চোখ দিয়ে এই দৃশ্য আমরা দেখেছি
একপাল হিংস্র হায়েনা সিংহের সাথে মায়ের শক্তি
আর পেরে ওঠে না কিন্তু আমাদের প্রাণে একটা মহিষ
মা একটা মহিষ শিশু জন্ম নেয়
যারা মনে করেছে যোগ্যতমের উদ্বর্তন বলে হায়েনা
সিংহ মিলে জুলুম করেছে, আহা কত অযোগ্য তারা
আমরা যদি অন্তঃকরণ সাফ সাদা করে, ওইসব হিংস্র
দৃশ্য পার হয়ে হয়ে ওই মহিষের মাতৃহৃদয় আর
মাতৃহারা মহিষ সন্তানের অতৃপ্ত অন্তরসহ বিচার দিবস
পার হতে পারি
ওইখানে হিংস্র হায়েনা সিংহের কোনো স্মৃতি নেই শুধু
হৃদয় মাতৃমমতা আর আকুতি জানালে গভীর মায়ার
কারুণ্য নিয়ে সেই মা মহিষ তার হারিয়ে যাওয়া
সন্তানটিকে নিয়ে তোমার সেই আর্তপীড়িত চোখের
সমুখে এলো
আহা
°
২৩ নভেম্বর ঈসায়ী দুই হাজার তেইশ
আট.
…..
অনেক পাপের স্মৃতি বিজড়িত তুমি হয়তো মরে গেলে
আজ শুক্রবার ঈসায়ী তেইশ সালে
ফেরেশতা যথারীতি এক সাধারণ পাপিষ্ঠকে পেল
খোদা হে, এ তো নরাধম, আকিদার অনেক
অস্পষ্টতাসহ ছাপোষা উম্মতি মুহাম্মদ, ঘরবাজার
আর অপশাসনের বেড়াজালে হাহুতাশ এক ফোকলা
মানুষ কিন্তু ওই বক্ষের কোণায় সুদূর এক মৃদু সবুজ
তারার মতো মিটমিটে আলো
ওটা তো চিনি না খোদা!
ওটা গাযা
গিজগিজে নাফরমান আর খুনে অভিশপ্তদের ভীড়ে
সে খুব আদর মহব্বতের সাথে গাযাকে আহত
সন্তানের মতো পুষেছিল
দুনিয়ায় এটাই তার দরদের জায়গা ছিল
ওকে তোমরা জায়ন আর আরব দোসরদের ক্লেদাক্ত
ভাগ্যের সাথে মিশিও না
°
১৭ নভেম্বর, ঈসায়ী দুই হাজার তেইশ
নয়.
…..
তুমি এক পাখির শাসন
উড়ে উড়ে বীজ ফেলে
আমাদের কোমল কৈশোর
পরকালীনের কাছে রুয়ে থুয়ে গেছ
তোমার কণ্ঠের সাথে
ঝাঁক বেঁধে উড়ে গেছে
আমাদের রূহের সাঁতার
…….
সৈয়দ আহমদ শামীম
পিতা মরহুম সৈয়দ মমতাজ আহমদ
মাতা মরহুমা সেগুফতা বেগম
জন্ম ১৯৭১
জন্মস্থান গ্রাম-ইলশা, বাঁশখালি, চট্টগ্রাম
বিদ্যাবহর: স্কুল হালিশহর মেহের আফজল হাই স্কুল
কলেজ সরকারী চট্টগ্রাম কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলা স্নাতক, স্নাতকোত্তর
পেশা : স্কুল শিক্ষক
অবলীলাদের বাড়ি, কবিতা গ্রন্থ
অনেতিহাসের লোকগান, কবিতা গ্রন্থ
প্রকাশিতব্য: ঝাঁক বেঁধে উড়ে গেছে রূহের সাঁতার
সম্পানা: জলঘড়ি, শিলাপাঠ