লোককথা
কাহিনী আছে প্রাচীন অনেক
শুরু করি তার কথা …
চাঁদ সদাগরের অমর কাব্য
সাথে মনসা দেবীর স্বপ্ন
সে কথাই বলা হবে আজ একে একে।
চাঁদ সদাগরের কাহিনী বলি বলি আছে তা লোক লোকান্তরে
মনসা দেবী সর্প দেবী বলে কথিত আছে মুখে মুখে অন্তরে।
বেহুলা-লখিন্দরের অমর প্রেম মানুষের মন কারিয়া লয়
সে সবই বলিতেছি চিরায়ত প্রেম-ভালোবাসা, দ্বন্দ্ব-জয় পরাজয়।
এদেরই কথা মনসামঙ্গল বলিয়া আছে এক কাব্যে বর্ণন
এসবই বলা হবে অশ্রু ঝরিবে শুনিয়া করিলে ক্রন্দন।
আ…আ… চাঁদ সদাগর মনসা দেবী বর্ণন হইতেছে
চুপ করে শোনে সবে যত না সে সব কহিতেছে।
আহা! আহা! তাই বলা হবে কথিত আছে যাহা বইয়ের পাতায়
আকাশে বাতাসে আরো যতখানে আছে মনের খাতায়।
আ…আ… চাঁদ সদাগর মনসা দেবী বর্ণন হইতেছে
চুপ করে শোনে সবে যত না সে সব কহিতেছে।
সে সব শুনিতে আসুন আসুন বসুন বলি ডাকি
সুখ-দুখের কথা সকলের সাথে ভাগাভাগি করি রাখি।
সেই সব কথা শুনিতে আসে পাড়া-পড়শি কাছে দূরে যত
কত দূর থেকে কত জনে আসে মানুষের ভিড় জমে শত।
ঘিরিয়া বসে একে একে যত ছেলে বুড়ো নারী জন
শুনিব সবি আপনি আমি একে একে সবি মোদেরে কন।
এবার বলি শুনুন আসল কথা চাঁদ নামে ধনী সদাগর
আছিল এক ধনশালী ক্ষমতাশালী ঘুরিত কত নগর নগর।
চাঁদ সদাগর
কাহিনী তার অনেক দুঃখ
সুখ ছুঁয়েও হয় না সুখ ছোঁয়া।
আহা আহা চাঁদ সদাগরের ধন দৌলত জীবন যায় খোয়া
যায় যায় যায় ব্যথা কত শত তবু মাথা হয় না নত নোয়া।
চাঁদ সদাগর শিবের ভক্ত হিন্দু লোককথায় আছে
মনসা পূজা কামনা করে চাঁদেরই কাছে।
চাঁদের জন্ম সেখানে যার নাম জানে লোকে চম্পক নগর
খোঁজে প্রাচীন ভারতের কোথায় তা কোথা সদাগর।
বলে লোকে চম্পকনগর বঙ্গদেশের ভিতর আছে
কেউ বলে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের আশেপাশে।
সাগর সাগর ঘুরে বাণিজ্য করে ঘোরে বন্দর নদী
পিছু নেই পূজার আশায় মনসা নামের সর্প দেবী।
মনসা
ছদ্মবেশে সুন্দরী নারী সাজে
চাঁদের গোপন রহস্য নেয় জেনে।
চাঁদের কপালে চাঁদ প্রতিদিন চুমু দিয়ে যায়
মনসা কপাল ঠোকে চাঁদের জন্য হায় হায়।
চাঁদ কেন মানে না শিকল পড়ে না তার অবতার
মায়ার বেড়ি বলে পড়াতে চায় মনসা দেবতার।
মনসার সাথে চাঁদের দ্বন্দ্ব সেই থেকে শুরু
প্রলয়ের আঘাতে আঘাতে বুকটা তাহার দুরু দুর।
চাঁদের সব ছিল কপালে লিখন ছিল না সুখ
মনসা তার সুখ কারি লয় শুধু বাড়ায় দুখ।
ভক্ত হইয়া ভক্তি করিত শিবের যারপর নাই
অন্য কাহারো মাগিবে না ভিখ সুখ যদি নাও পাই।
ছাড়ে না পিছু মনসা তাহার যত আছে তার ছলনা
ধাওয়া করে পিছু নানাভাবে নানা কৌশলে ললনা।
এসব করিয়াও মনসা পায় না এতোদিন চাঁদের সঙ্গ মন
ছলচাতুরি করিয় মারে ছলনায় থাকে সারাক্ষণ।
অস্বীকারে অস্বীকারে যায় পূজা দেবে না মোটে
তাই বিনাশ ধ্বংশ তরী ডোবে পুত্র শোক জোটে।
চাঁদের উপর আঘাত শুধু ভয়ংকরভাবে মনসা দ্বারা
কূল-কিনারাহীন হয়ে এলামেলো সংসার হয় সারা।
পূজার বাসনায় মনসা বারেবার বহুরূপী ভাব ধরে
চাঁদের পূজা শিবে মানে না পরাজয় আচমকা ডরে।
বেহুলা-লখিন্দর
কোষ্ঠী মিলাতে গিয়ে আঁতকে ওঠে কেমনে হবে বিয়ে বেহুলার
বাসররাত্রে সর্পাঘাতে মৃত্যু লখিন্দরের লেখা আছে তাহার।
তবু জুটি মেলে বেহুলা-লখিন্দর চাঁদ বানায় লৌহবাসর
ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে মনসা সাপের আঘাত হানায়।
চাঁদ যখন মানে না পূজা বশ্যতা মনসার
স্বর্গের দুই নর্তক-নর্তকী সহায় হয় তার।
বেহুলা পুত্র রূপে আসে চাঁদের ঘরে ওদিকে লখিন্দর
সয়াবেনের কন্যা রূপে জুড়ায় দুজনার অন্তর।
লখিন্দর হলো চাঁদের পুত্র আর পত্রবধূ হয়ে
আসে বেহুলা ভাসে সংসার সুখে দুজন দুজনারে লয়ে।
মনসার ছলনা চলে থামে না থামে না কভু
একে একে ব্যর্থ হয়েও ছলনা চালায় তবু।
বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনী নয় কারো অজানা নয়
মরিয়া লখিন্দর তবু বাঁচে এক লখিন্দরের প্রেমের জয়।
চাঁদের এক বন্ধু ছিল নাম ছিল শঙ্কর
শত্রুর জানা ছিল সে ছিল শত্রুর জন্য ভয়ঙ্কর।
তাকেও মারে চাঁদেরে পাওয়ার আশায়
চাঁদের জীবনটারে শুধু সাগরে ভাসায়।
শিব দুর্গার পূজা করত চাদঁ নিজ বসতভিটায়
শিবের পূজা করে চাঁদ মন-তৃষ্ণা মিটায়।
যত যাদু ছলকলা শিবে নত তবু চাঁদ
এসব দেখিয়া ভাঙে আরো মনসার বাঁধ।
ভিক্ষাবৃত্তি করে তবু ছাড়ে না ছাড়ে না শিবের পূজা
কত শত কষ্ট তারে ঘিরে ধরে করে না মনসার পূজা।
রাগ ক্ষোভ দংশনে সব হারায় পুড়ে ছাড়খার হয়
বৃথা যায় সব চাঁদের হৃদয় কভু মনসা না পায়।
এই দুঃখে সব করে ধ্বংস
তাও হয় না রাজি হয় নির্বংশ।
আহা কি কাহিনী লোককথা মানুষ জানে
মনসা ছাড়ে না মন যে তার না মানে।
শত ছলনায় চাঁদ পূজা দিতে অস্বীকার যায়
আসুক যত ঝড় বিপদ পূজা দেবে না মনসায়।
সেই দুঃখে রাগে ক্ষোভে হানে আঘাত আবার সর্পদেবী
আবার নিজের অহংকারে সব ভুলে ওঠে শুধু ক্ষেপি।
ছয় পুত্র চাঁদের টুকরা কলিজার
প্রাণনাশে সর্পাঘাতে বশ্যতা মানার।
এই তো জীবন চাঁদের কেমনে পাবে শান্তি তার
পায় না খুঁজে পায়ের নিচের মাটি শান্তি নাই আর।
তাতেও থামে না মনসা পিছু নেয় পূজা যার কামনা
সর্বহারা করেও মনের জ্বালা পূজার আশায় কমে না।
বেহুলাকে বদ করে শ্বশুরকে পূজায় করে রাজি
ফিরে পাবে প্রাণ বেহুলার লখিন্দর আজি।
অবশেষে প্রতিমাসের কৃষ্ণা একাদশীতে মনসার পূজায়
রাজি দেখে তাতেই ভীষণ খুশি মনসা যারপর নাই।
তবু দুঃখে শোকে ভোলে না জ¦ালার কথা মনসা দিয়েছে যত
ক্ষমা করে না চাঁদ সেই ব্য্যথা-বেদনা পেয়েছে কত শত।
মনসা তাতেই খুশি হায় পূজা পায় চাঁদের কাছে
ছয় পুত্র ফিরে পেয়ে শান্তিতে কাটায় বসবাসে।
ভগ্ন হৃদয় সব হারায়ে উৎসাহ নাই আশা আর মনে
হয়তো ভাবে সব ছেড়ে ছুড়ে যাবে চলে অজানা বনে।
তার তবু হয় না যাওয়া
ছাড়ে না পিছু ছাড়ে না ধাওয়া।
আরো ভাবে মনে লয়ে জোর আরেকবার শেষ চেষ্টা করি
শত কষ্টেও তাই নব তরে আবার সাজায় বাণিজ্য তরী।
মনসার ঝড় তোলে প্রচ- কাঁপন ধরে চাঁদের বুকে
কত আর সওয়া যায় এভাবে পারে না দাঁড়াতে রুখে।
যায় না রোখা সেই ঝড় হারায় শেষে খেই সওদাগর
ডুবে যায় তরী তার ডুবে যায় আশা আর বাণিজ্যের।
চাঁদ সদাগরের নৌাক কেউ বলে বগুড়ায় কেউ শেরপুরে
ডুবিছে কোথাও তাও সেখানে সেখানে পাওয়া যায় মাটি খুরে।
কথিত আছে অনেক বলে ভ্রমণ পর্যটকে
দেখে আছে ওইসব নিজেকে গোছায় যে শখে।
তরী ডুবিল শুনি নেত্রকোনা জেলায়
চল সবে দেখে আসি জায়গাটা পাঁচগায়।
হায় সব যায় ধনদৌলত যা আছে
তবু এ যাত্রা সওদাগর প্রাণে বাঁচে।
মায়াবিনী হয়ে হানে আঘাত রুক্ষ করে তোলে জীবন সংসার
আর শুনেছেন যারা আহা! চোখের পলক পড়ে না তাহার
এসব কথা শুনিতে শুনিতে লোকে করে হাহাকার
শান্তি সুখ কিছুই পাইল না প্রথম জীবনে চাঁদ আর।
এস কথা সবে বলিতেছে যেবা
তাহারে ঘিরায় ধরে কত কেবা।
ধনী বণিক ক্ষমতাশালী বণিক সে সময়ের একজন
বশ্যতা মেনে নিলে শান্তি ফিরায় দেয় মনসার পণ।