কাজী জহিরুল ইসলাম
আমার জন্মদিনটা খুব আনন্দে কাটে এজন্য যে দিনটা ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখ; বসন্ত উঁকি-ঝুকি দিচ্ছে, ঢাকায় মহান একুশে বইমেলা চলছে, প্রতি বছরই আমার বেশ কিছু নতুন বই মেলায় আসে, এবারও এসেছে, আরো কিছু আসছে, একজন লেখক হিসেবে নতুন বইয়ের আগমনী সংবাদের চেয়ে আনন্দের ঘটনা আর কী আছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই সুখবরগুলো আসতে থাকে, তখন মনে হয় জন্মদিনের উৎসব বুঝি শুরু হয়ে গেল। গত এক যুগেরও অধিক সময় ধরে কর্মসূত্রে নিউইয়র্কে বসবাস করি, এখানকার শিল্প-সাহিত্য সমাজের সঙ্গে আমার একটি নিবিড় সান্নিধ্য তৈরি হয়েছে, তারা জন্মদিনে আমাকে ঘিরে উৎসব-আয়োজন করেন, উপহার, সম্মাননা, আমার কবিতা থেকে পাঠ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বেশ আনন্দে কাটে সারাদিন। আমার কাছে সব সময় মনে হয় স্বপ্ন-তীর্থে পৌঁছে যাবার চেয়ে স্বপ্নযাত্রাটা অনেক বেশি আনন্দের। তাই ১০ ফেব্রুয়ারির চেয়ে এর আগের দিনগুলোও বেশ আনন্দে কাটাই। যেমন এই মুহূর্তে জন্মদিন উপলক্ষে এই অনুভূতি লিখছি, এটাও কী কম আনন্দের?
তবে জন্মদিন নিয়ে আমার একটি ভিন্ন উপলব্ধিও আছে। আমার সব সময়ই মনে হয় আমার মৃত্যুও হবে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই এবং তা দশ তারিখেই। এ-বছর এই উপলব্ধি আরো তীব্র হয়েছে, কারণ এ-বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে শনিবার, আমার জন্মের দশ ফেব্রুয়ারিও শনিবার ছিল। তা ছাড়া জন্মদিনের দু’সপ্তাহ আগেই হার্টের দুটো মেজর আর্টারিতে শতভাগ ব্লক ধরা পড়েছে। এইসব ঘটনার কি কোনো পারম্পর্য আছে? মাঝে মাঝে ভয়ে কেঁপে উঠি।
যাই হোক, অল্প হলেও আমার কিছু পাঠক আছেন, শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন, তারা হয়ত এসব কথায় ভেঙে পড়বেন, তারা চান আমি দীর্ঘদিন লেখালেখি করি। তাদের জন্য বলি, আমি এখনও প্রস্তুত না চলে যাবার জন্য এবং আমি এও বিশ্বাস করি আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তিনি একটি এসাইনমেন্ট দিয়েই পাঠিয়েছেন, সেটি শেষ না হলে তো আমাকে তুলে নেবেন না। কাজেই আপাতত মৃত্যুচিন্তা বাদ দিয়ে আমার প্রতি অর্পিত এসাইনমেন্ট নিয়েই ভাবতে চাই। “লুতের শহর” নামে আমি একটি উপন্যাস লিখছিলাম, সেটি থেমে আছে, লেখাটি শেষ করা দরকার। আত্মজীবনী গ্রন্থ দুই খণ্ড লিখেছি, তৃতীয় খণ্ডে হাত দেওয়া দরকার। ত্রিশের দশক থেকে আজ অব্দি বাংলা কবিতার একটি দশক ভিত্তিক পর্যালোচনা গ্রন্থসিরিজ লিখবো, সেই কাজ করতে হবে। বাঙালি কবিদের ইংরেজি কবিতার অ্যান্থোলজি “আন্ডার দ্য ব্লু রুফ” তিন খণ্ড বেরিয়েছে, এতে ১০৮ জন কবির ১ হাজার কবিতা আছে, ১০ খণ্ডে কাজটি শেষ করতে চাই।
শেষ করবার আগে বলি, এ বছর অগ্রদূত অ্যান্ড কোম্পানি বের করেছে আমার “ভ্রমণ সংগ্রহ”, রয়েল সাইজের এই বইটির কলেবর প্রায় ১১০০ পৃষ্ঠা। এই গ্রন্থে একসঙ্গে আমার সব ভ্রমণ পেয়ে যাবেন। এছাড়া ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ বের করেছে ” রুমির রুবাইয়াত” এবং “হেঁশেলের বিশ্বভ্রমণ”, অনন্যা বের করেছে সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার গদ্যগ্রন্থ ” হিলসাইডে শিল্পের আড্ডা”। কলকাতা বইমেলায়ও একটি নতুন বই “প্রেমের পদ্য” ছিল, সেটি বের করেছে মিসিসিপির মেঘ।
আসলে নতুন বই, কবিতাপ্রেমী মানুষের সান্নিধ্য এসব নিয়েই মহা আনন্দে কাটে আমার জন্মদিন, আশা করছি এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হবে না। ৫৭ তম জন্মদিনে আমার প্রতিশ্রুতি হচ্ছে আগামী এক বছরে আমি আমার কাজের গুণগত মান আরেক ধাপ উঁচুতে নিয়ে যাবো।
হলিসউড, নিউইয়র্ক। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪