মহাবিশ্বের করতালি
এক.
ধমনী আমার নদী
হৃদয় সমুদ্র
প্রেম গহীন আফ্রিকা;
আত্মা আকাশ; যার ছাদ ছেয়ে আছে
হাওয়ায় ছুটন্ত
মেঘের হ্রেষা।
নিঃশ্বাসের ফেনা ঠেলে নিবিড় উড়াজাল
ক্ষিপ্র মাছরাঙ্গা চোখের আগ্রহে
শিকারীর ত্রস্ত হাতে
আলখেল্লার মতো ঘিরে ফেলে
তাবৎ নীলিমা।
আমার
দৃষ্টির প্রভা
বিমুগ্ধ বৃষ্টি ঝরায়
স্নেহের সৌরলোকে!
কঠিন গাম্ভির্যের শহর
ডাগর পলীর জরায়ূতে নেয়ে
ভাসিয়ে নেয় তুমুলশ্রী শ্রাবণ।
চোখের মৃত্তিকা নড়লেই
উল্লাসে মেতে ওঠে
নিসর্গের বিশাল তৃণাঞ্চল।
আমার বিশটি অঙ্গুলি থেকে
সমস্ত স্রোতধারা
ছুটে যায় মাঠে মাঠে;
রজনী মাতাল করে এবং
তোমাকে মিসাইল মারা হনুমানের
দম্ভ ভেঙ্গে
কী স্ফুর্তিতে
মোচড় মারে ফারাক্কার ক্রোধে!
অতঃপর জ্যোৎস্না নামে
কক্সবাজার যখন হাটের উত্তাপে
সমুদ্রকন্যাদের উষ্ণতা ছেনে
ঠাণ্ডা লেবুর রসে
ভরে তোলে তৃষ্ণার গেলাস!
এবার পাল্কিভরা ইন্দ্রানি তিমির
ঢালো সিথানে!
তিনটি বজ্রপাত হয়েছিলো গতকাল
আমার আওতায় এসেই
সবগুলো সহসা–
নবজাত রাজিয়ার কান্নার ছাইয়ে
হেসে উঠা সৃষ্টির ধ্বনির ঢেওয়ে লুটিয়ে পড়লো!
তেমনি অশ্রুর সাথে ঝরাও অন্ধকার;
এই দু’হাতে–
সেগুলো নাচতে দেখবে পুষ্পিত গোলাপে
– যেমন কিছু পুষ্প
লুট ও রিক্ততার দীঘল বসতিকে
ছুঁড়ে মারছে উর্ধ্বপানে
টিকরে পড়া অশ্রান্ত প্রশ্নের স্পর্ধায়!
মত্ত বৈশাখে
ধূলো ওড়া ঘূর্ণির চুল্লিতে
পুড়ানো স্বপ্নের করতালে
বলছে– হাহাশ্বাসে তড়পানো মানুষের পাঁজরে
পা রেখে ঐ হায়ান করুন কেন শিখরের লিফট চড়বে প্রভু?
তারই প্রত্যুত্তরে শুনি- সুদিন ক্ষয়িত!
বিবর্ণতার বুলডোজার নিয়ে
এক দঙ্গল ধেয়ে আসছে উঠানের স্বপ্নময় খেতে!
তোমার সেলুলয়েডে শুধু
চাষার রোদভাজা সরল চিত্রকল্প!
তার লুণ্ঠিত শস্যের মাটি
লাঙ্গলের ফলা উঁচিয়ে
অবিনাশী ব্যুহের শিরে
বিপ্লব লিখতে পারে– জানো না?
আমার উদর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল;
প্রসব গর্বে মৌ মৌ করছে
প্রত্যহ লালন-তিতু; অটল সহোদর।
এবার বৃষ্টি নামবে,
গর্বউদ্ভিদেরা হাত মুখ ধুয়ে রেখো;
বিক্ষোভের কাল সমুপস্থিত!
বৃষ্টিধারা আদিম উপত্যকায়
ধৃষ্টের সাথে হাড্ডাহাড্ডিতে জিতে
পুনরুত্থানের পতাকা হাতে
আসছেন শস্যের প্রতিবেশে!
প্রান্তর মাথা তেলো, প্রকৃতি প্রদর্শনের বাজছে নাকাড়া।
দুই.
আমার মিসকলে জাগে–
ঘুমন্ত শহর, লাস্যে!
তার তুষারশতাব্দি–
দিক-দিগন্তে ভেঙ্গ পড়ে!
শিউরে তনুবসন্তে তোমার আগুন
শ্যামলি পাথর দেখে–
রৌদ্রসিক্ত দিঘিতে পল্লবের!
পাথর স্বপ্নের কারু– উজানো হাওয়ায় হাঁটে,
নগ্নবুক ছিটিয়ে দেয় মুগ্ধমধুস্রোত!
এসো পাথর!
সরল, উদোম,
ভেতরের সুরভি পাকিয়ে, মরমের জলন্ত বিছানায়!
–তুষারের গলগল রক্তে
বিদগ্ধ সন্ধ্যার প্রণয়
ভেসে যাচ্ছে দ্রাক্ষাবনে;
সন্ধ্যাকে বস্তিতে রাখো,
আমার আব্দার।
নারী! শিরিন আগুনে বাঁধো সাঁঝের প্রণয়।
আমার দাওয়াত পেয়ে আকাশ মোরগ–
ঝুঁটিতে শেনওয়ার্নের তরঙ্গ
মুহুর্তেই উইকেট নিয়ে উড়ে যাবে!
ব্যাঙের আহ্লাদ থেকে অলৌকিক নীলহাত
নগরীর খুলে দিলো বিষাদ কফিন!
প্রেতিনীরা কাঁদে সমস্বরে–
কে উড়িয়ে নিলো তাবু আস্তানার?
কে খুলে নিলো খুশির বল্কল?
অতঃপর একটি ফটক দিয়েও
চাঁদের পয়গামকে নগরে আর ঢুকতে দেয়া হবে না !
নগরী এভাবেই যুদ্ধমুখর…
আমার নি:শ্বাস থেকে ফরফর ফড়িং
আত্মাহীন আস্তরণের দম্ভে
ছুঁড়ে মারে তৃণের পদাঘাত!
কাচের বিচূর্ণিত বৃত্তে
হাপিত্যেশ ক্যাকটাসের জন্ডিস কান্নায়–
কী যে হাহাকার!
একুশের মতো সর্বময় যে অনিবার্য জ্যোৎস্নার আকাশ;
তার প্রচ্ছায় সিনান থেকে আটকাবে কে ক্লান্ত শহর?
না প্রেতনী, না ট্রাফিক পুলিশ।
আমার স্রোতের নৃত্যে তোমার বারুদ
তোমার খররোদে
অষ্টপ্রহর
আমার বাতাস পেলব মেখে দেয়।
তবুও তো
ঘূর্ণির অভ্যন্তরে তুমিই কড়া নাদ!
নাসিকার নালামুখে
ঠেলে দেও নিঃশ্বাসের সমুদ্ররোদন
তোমার বিবেক!
বিশ্বাসের ওয়েসিসে যখন
শিরার রক্তে গোসল সেরে
প্রেমের সাহারা মন্থনের অশ্ব বুকে পুরবো–
তখনই পর্বত চূর্ণ-বিচূর্ণ করে
তোমার নদীশিকস্তিহাত নিঝুম তুলে রাখো
কপোলে আমার।
পালিত পিপাসাগুলো রুদ্র হরিণের
উল্টানো মুক্তছন্দ দৌড়ের ঢেউয়ে–
টুকরো টুকরো হয়ে যওয়া
নৈশব্দের পালের ঝনাৎকারে উতলে ওঠে
আমার মোহনায়।
আহা, তুমি খুললে না চোখের নেকাব,
মায়াবী পুকুর খোঁজে পরিশ্রান্ত যদিও–
আমার হুদহুদ!
তাহলে হাত দিয়ে কেন আগলে রেখেছো
কপোলের জলপ্রপাত?
আমার বিশীর্ণ প্রতিপক্ষের কব্জি সহসা তুমুল নীল আর
ধলোর দাপাদাপিতে টিক টিক আর্তনাদ থামিয়ে দিলো।
রুরোদ্য কাকের ঐকতানকে শাসিয়ে
যাযাবর টিয়ে বলে উঠলো–
নৈশব্দকে আজ থেকে সংবিধানে মেনে নাও,
সকল ঔদ্ধত্য দুষণ শোরগোলের।
তখনি আমাকে অন্তহীন
মোহ ও তপ্ততার সুনিবিড় জিগর দেখিয়ে বললে–
এই হচ্ছি পুকুর, নেকাব খোলা আমি!
আমি তো প্রার্থনায় গলছি
একবার হিমালয় ভেঙ্গ হচ্ছি তাজমহল
হাঁঁটছি বুকভর্তি ধানের দাপটে
উড়ছে শিল্পের বোধগম্যধুলো!
আমিতো সূর্যের সুরমা–
সমুদ্রের চোখে এলাম অস্তিত্বের দু’ফোঁটা রেখে
–বাহবা সমুদ্র! এতো মউজ দেখিনি কখনো তার !
তুমি যদি রশি ছুঁড়ো, ধরবো যেখানেই থাকি ; আকাশ-মহাকালে
জেটের মঞ্চ থেকে রশিকে পলকা সুতা বলা হলেও আমি জানি
তা কেমন মৃত্তিকার বাঁধনে গড়ে দারুচিনি দ্বীপ
তিন.
আমার পশমের হিজবনে মগ্নগীত জোৎস্না
আকাশ বিহঙ্গের তুতলিয়ে চলা রক্তাক্ত ডানা
গোখরোর দাঁতের দাগে
আকস্মাৎ আঁতকে ওঠে।
নিখিলের নাসারন্দ্র লাশের জ্বালাময়ী
গন্ধে ভাবে- কখন বসরাও হয় গোরস্তান আর
মাতম বেজে ওঠে!
আকাশে মেঘের চিতা নড়ে আর
জেরুসালেমের হৃদপিণ্ডে
দৌড়ে বিভৎস কুড়াল।
ধমকে উঠে মতিভ্রষ্ট ষাঢ়
শকুন রাখালের ইন্ধনে-
গুঁতো মেরে ছিঁড়ে দেবে গিঁট!
যতই অমাবস্যা বলা হোক,
পলাতক এসো এসো ঐশ্বর্যের গোয়ালে
হার্দিক রশির গিঁটে
ইথারে ছড়িয়ে দিচ্ছে দূর্জয় সিংহের থাবা–
আবেগের ঝুমঝুম।
আতরের সুগন্ধিতে বুঝে নেবে-
সান্নিধ্যে রাখাল চাই,
অজর মানুষ আর
নাব্যযূথতা।
পলির অন্তরঙ্গ প্রজণন ছিঁড়ে
যেভাবে রুদ্ধশ্বাসে বেরিয়ে আসে প্রত্যয়,
তেমনি সামর্থ্যের
গোলাপ মাখবো বিহঙ্গডানায়!
সৌহার্দের শৈবাল এনে
আতপ্ত তোমার চাদরে এঁটে দেবো!
শরণার্থী ঘরে ঘরে
এই মাঘে বিলাবো চাদর।
আহা! জেরুসালেম,
তোমার জন্যই তো
গোটা তাজমহল
প্রলয়ের মধ্যে বিপ্লবের ভেঙ্গে হচ্ছি
সুইসাইড।
যখন বীজের জিভে
সূর্যের দুগ্ধ ঢেলে
ছন্দসিক্ত আলের
দু’কাঁধ বেয়ে
বয়ে গেলো চাষী–
তুখুর কবুতরগুলো তখনি
ডানা ঝাড়ে–
ডাকাতের চালে!
তখনি ফিচকিরি দিয়ে
চুলের বিলাপ ঠেলে
মগজের মাখন ওঠে ভাতের থালায়।
তেড়ে আসে বুকজলের লোভার্ত কুমির,
হাউমাউ পড়ে যায়
বাতাসের মহল্লাজুড়ে।
তবে কেন শরের ফণা তোলে
নিশুতির মানচিত্রে তুমি আঁকবে না বিদ্যুৎ?
রৌদ্রজনতা প্রস্তুত হবে–
অবশেষে কুমিরকে তিস্তার জল নিয়ে
খেলতে দেবে না জুয়া।
আমার বস্ত্রের ইন্দ্রিয়গুলো সহসা
সেই সাক্ষ্যে লাফিয়ে উঠছে।
হে তুমি সংঘর্ষের আর্দ্র স্ফুলিঙ্গ!
মুখোমুখি দু’বুক থেকে দ্রাবীভূত সতৃষ্ণ চালে আজ
ফাগুনের
ফোঁটা ফোঁটা শস্য ঝরাবো।
ওদের কামান থেকে ছুটুক গোলা
এবং যতই কারাগার দেখানো হোক, আমরা গ্রেফতার বুঝি না।
চার.
আমাদের সূর্যাশ্বগতি
দীর্ঘ অন্ধকারে ছাওয়া রহস্যের প্রান্তরে,
দ্বন্দ্বের কান্নায় যেন ফলিত সত্যের লক্ষ্যে সৌরবিচ্ছুরণ!
নিজের ভিতরে কোনো
প্রবাস যাপনে তাই
নক্ষত্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে জোর প্রতিবাদ!
নির্ঘুম মহাকাশ ছায়াশূন্য ছাদ এই খনিগর্ভ মাটির,
সে আকাশ বন্দি হলো আমার অন্তর্গত সান্ত অসীমায়
ভূমির ভূমায় উপ্ত যে বন্ধন পেঁচিয়েছে–
মানচিত্রের প্রতিটি পিলার;
সে আমার বৃক্ষের শিকড়।
আশ্বস্ত যে পাখিটি এই মাত্র দিগন্ত পাড়ি দিলো,
ওজোনের অক্টোপাসে
ডানার বিক্ষেপে সে রহস্যের বিশাল খাচা
ভেঙে দিতে ধায়।
তার বুকে স্পন্দমান
মানুষের মহামুক্ত ফলবতী স্বদেশ!
এদিকে গজিয়েছে বিষবৃক্ষের ফলা
নাস্তির আগুন থেকে নাজিসৈন্যসারি …
সত্তার যে চাষাটি
জ্যোৎস্নাভরা খেতে করবে মনীষার চাষ, সে এখন
বোধের পাহাড় কাটে
ফ্রয়েডের ছদ্মমানুষ।
এখানে ক্ষুধার সাপ নড়ে রক্তে-চোরাটানে,
তার পাশে ঘাসে ঘাসে
সুতুমুল বৃষ্টির আশ্বাস।
সৌরজল মাতিয়ে তোলা আদিপৃথিবীর মাছ
অগাধ হৃদয়ে খুঁজে মুক্তির শ্বাস।
এখানে আলোক ছিলো, আমি তার বিচ্ছিন্ন স্ফুলিঙ্গ
সুর্যচ্যুত রশ্মির মতো, আমার রাগিনী মানে
ফিরে চলো আপন সত্তায়!
যেহেতু আত্মসুখী কালের বিষাদ
আলোর বৈভবে তাই একাকার ঝড় হয়ে
রাত্রির রন্দ্রে রন্দ্রে হানা দেবো।
যে সৌর্যে প্রাণ পেয়ে প্রস্ফুটিত মরুর বালু
কর্ডোভার সূর্য হয়ে গেলো–
তার তৃষ্ঞা আজো বাজে যন্ত্রময় যন্ত্রণার
পাথরে পাথরে।
রক্তমদজটরের জটিল প্রলোভ জুড়ে
হার্দিক উদ্ভাসনে
অস্তিত্বের টান।
ভেনিসের শাইলক দেখো সংঘের মাথায় চড়ে ফেরি করে
মাৎসন্যায়; নিখিল-নিয়ম …
নিস্ফলা আবাদের মাঠ
অগ্নিখাদ্য প্রেম-শিশু,
উধাও দোতারা আর
ছদ্মবাতাসে গুড়ো ধাঁধা
তবুও হৃদয়ের নিয়মে কোনো ব্যত্যয় মানি না।
তৃষ্ণার্ত হরিণীরা জলাশয়ে নেমে যায় ভ্রুক্ষেপহীন
ড্রাগনের বীভৎসতা
আমাদেরও রুখতে পারবে না
আলোকের উৎসবিহারে।
বানর, শুয়র আর ব্যাঘ্রতা নিকৃত রেখে
চরাচরে দেখো কত আয়ুর আয়াত!
এই যে আমাদের ধর্ম; হেমন্তের পুড়ো মাঠে ফুলের বাগান
অদৃষ্টে সওয়ার হয়ে
নিয়ে যাওয়া তাকে নিজ লক্ষ্যের মঞ্জিলে!
সত্তার নিসুপ্তি আর অফলার বুক জুড়ে দীপ্ত পদক্ষেপে
নির্বিরাম নদীর মতো গেয়ে ওঠো–
মৃত্যু নয় মৃত্যু নয় প্রেম!
আমাদের যাত্রাপথে আনবিক কুণ্ডুলি
দৃষ্টিতে হায়েনা হাসে
মেঘের মগজে ফোটে ক্রোধের কড়াই
– এরই নাম সভ্যতার বাযুর বাহার?
তুমি-আমি মোতি-সুতা, ছায়াপথ-নক্ষত্রের মতো
মানবসমুদ্রে লীন
বৃষ্টির কণা।
অস্তিত্ব ঘোষণা করে প্রাণোচ্ছ্বল উড়ে যাবো–
আবারো আকাশে।
মিকাইল হেঁকে হেঁকে–
কিষাণের স্বপ্নজুড়ে বর্ষাবেন উদ্গমের জলধারা!
হায়েনাও ভিজে যাবে ঘোর বরিষণে!
আমাদের ধর্ম ঠিক ফসলের মতো
মানবতা তার শস্যমাঠ।
পাঁচ.
এই মাটি খনিগর্ভ এখানে দাঁড়াও
এই তো পথরেখা, তার বুকে নড়ে উঠলো
চাঁদের সুষমা!
দীর্ঘ রাত্রি ক্রন্দনের এই হলো প্রেমার্ত জবাব।
হে তুমি উজ্জ্বল উজ্জ্বল উজ্জ্বল ঔজ্জ্বল্য!
নৃত্যরত পর্বতে দেখো সুন্দরের মৌজ
সে আমার আত্মার উৎসব।
পর্বতের একেক কণা মুক্তফুলের পাঁপড়ি
রৌদ্রঝড়বৃষ্টিসন্ধ প্রকৃতির চোখ
সহস্র ঊষার দীপ্তি সংগোপন তার অতলে !
বাতাসে বাতাসে পদশব্দ বিশ্বাসের, শব্দে শব্দে নীরব করতালি !
তার একচোখে
বর্ণালী মযূর; চাঁদ-নক্ষত্র বিহার
অপর চোখে প্রাণের প্রাণের প্রাণ
তুমি কি কিছু খাবে? ক্ষুধা পেলে আমাকেই খাও।
আমার বুকের ভেতর
ফলন্ত নতুন জগত। না কি আমার জগত খেতে
বেসাল এই রাত্রি
বাঁধভাঙ্গা এই পৃথিবী?
খাও তবে, হে পৃথিবী আমাকেই খাও।
জ্বলন্ত ফলের স্বাদ
উতলানো প্রেমের বুক
এ সবুজ সুরাহির সজীব শরাব
প্রতিটি ফোঁটায় সুপ্ত সমুদ্রজোয়ার–
পান করো
অতৃপ্ত মাছের মতো।
যতই সে পান করে, সমুদ্র ছোট হয় না।
জ্যোৎস্নার দধি আর
উজ্জ্বল রূহ নিয়ে
সময়ের নাক দিয়ে ঢুকে যাবো
নিশিগন্ধা ঘ্রাণ!
যদিও কুমিরের খাদ্য পরিশেষে কুমির হয়ে যায়
কিন্তু মহাকাল আমাকে খেলে সে নিজেই হয়ে যাবে বর্ণগন্ধময় প্রকৃতি বা
আমারই দীপ্রমুখচ্ছবি।
সত্য এক প্রেমসিক্ত মহাপরিবার
আমার নিঃশ্বাসে তাই বেজে উঠে মহাবিশ্বের হর্ষিত পদাবলি !