spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধনজরুলের দ্রোহী কবিসত্তারই অংশ 'ধূমকেতু'

লিখেছেন : আবু রাইহান

নজরুলের দ্রোহী কবিসত্তারই অংশ ‘ধূমকেতু’

আবু রাইহান

জীবদ্দশায় একই সঙ্গে পুষ্পমাল্যে অভিষিক্ত হওয়া আর সমালোচনার শরশয্যায় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলেন প্রেম ও প্রতিবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২১ ও ১৯২২ সাল নজরুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯২১ সালে তিনি লেখেন কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ আর এর এক বছর পর ১৯২২ সালে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’। সেই হিসাবে ২০২২ সাল “ধূমকেতু”  প্রকাশের শতবর্ষ।১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ অগস্ট পরাধীন দেশবাসীর মনে প্রবল আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’। ১৫ বাই ১০ ইঞ্চি ফুলস্ক্যাপ সাইজ়ের চার পৃষ্ঠার কাগজ। পাঠকের কাছে পত্রিকার কপি পৌঁছয় পরের দিন, অর্থাৎ ১২ অগস্ট। সেই কারণে অনেকেই ওই তারিখটিকে পত্রিকার প্রথম প্রকাশকাল হিসেবে ধরে নেন।১৯২২ সালে নজরুল যে পত্রিকাটি আরম্ভ করেছিলেন, সেই পত্রিকার নাম ছিল প্রথম সংখ্যাটিতে প্রকাশিত অনলবর্ষী দীর্ঘ কবিতা ‘ধূমকেতু’র (Dhumketu) নামেই। বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘ধূমকেতু’ হল ধুলো, বরফ ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের মহাজাগতিক বস্তু, যা উজ্জ্বল ‘আগুনের ঝ্যাঁটা’র মতো প্রবল গতিতে আছড়ে পড়ে, চিহ্ন রেখে যায় ধরাভূমে। নজরুলের ‘ধূমকেতু’ কবিতার সঙ্গে তার যেন খুব মিল।‘শুনি মম বিষাক্ত ‘রিরিরিরি’-নাদ/শোনায় দ্বিরেফ-গুঞ্জন সম বিশ্ব-ঘোরার প্রণব-নিনাদ!/ধূর্জটি-শিখ করাল পুচ্ছে/দশ অবতারে বেঁধে ঝ্যাঁটা করে ঘুরাই উচ্চে, ঘুরাই—/আমি অগ্নি-কেতন উড়াই!—/আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু/এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!’

নজরুল তখন অকুতোভয় এক তেইশ বছরের তরতাজা যুবক। প্রথম মহাযুদ্ধের পর প্রায় সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত, তবু তখনও তার রেশ সমাজজীবন থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি। সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নজরুল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ৪৯ নং বেঙ্গলি রেজিমেন্ট ভেঙে গেলে করাচি থেকে ফিরে চুরুলিয়ায় এক বার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তার পর সোজা কলকাতায় চলে আসেন। প্রথমে বন্ধু শৈলজানন্দের মেসে, পরে থাকতে শুরু করেন মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের আস্তানায়। তবে কিছু দিনের মধ্যে উভয়েই স্থান পরিবর্তন করে উঠে যান ৩/৪ সি, তালতলা লেনের এক ভাড়াবাড়িতে।মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে থাকাকালীনই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন নজরুল। দেশবাসীর চরম দুর্দশা তাঁকে ব্যথিত করে, মনের মধ্যে বইতে থাকে বিক্ষোভের ঝড়। তিনি দেখলেন, যুদ্ধের পূর্বে ভারতবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে ব্রিটিশ এখন দেশবাসীর উপর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। গান্ধীজি শুরু করেছেন আইন অমান্য আন্দোলন। সারা ভারতবর্ষ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে উত্তাল,পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। ইতিমধ্যে ১৯২১-এর ডিসেম্বরে ওই তালতলা লেনের বাড়িতে বসেই নজরুল তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার মাধ্যমে জনমানসে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তবু তাঁর মনে যেন কী এক অতৃপ্তির বেদনা। শুধু সাহিত্য বা কবিতা লিখে সব হবে না। জনগণের পক্ষ নিয়ে ব্রিটিশের যাবতীয় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠকে আরও উচ্চগ্রামে তুলে ধরতে হলে এই মুহূর্তে নতুন কিছু করা অত্যন্ত জরুরি, কলম হবে যার প্রধান হাতিয়ার। এই বোধ তাঁকে তাড়িত করতে থাকে এবং সেখান থেকে জন্ম নেয় সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এক সংবাদভিত্তিক পত্রিকা প্রকাশের চিন্তাভাবনা, যার পরিণামে ‘ধূমকেতু’র উদয়।অবশ্য ইতিপূর্বে মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গে যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে সান্ধ্য দৈনিক ‘নবযুগ’ এবং খুব স্বল্প সময়ের জন্য হলেও মৌলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ সম্পাদিত ‘সেবক’ নামে একটি দৈনিক সংবাদপত্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। এই দুই কাগজে কাজ করবার অভিজ্ঞতা নজরুলকে শুধু ঋদ্ধ করেনি, তাঁকে আরও বেশি সাহসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছিল। রাজনীতি, স্বদেশপ্রেম ও সমাজ সচেতনতার যে পরিচয় এই পর্বে পাওয়া যায় তা আরও পরিপূর্ণ এবং তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে ‘ধূমকেতু’র অভ্যুদয়ের পর।‘ধূমকেতু’র নামকরণ থেকে প্রচ্ছদ পরিকল্পনা সবই ছিল নজরুলের।  কমরেড মুজফ্ফর আহ্‌মদ ও নজরুল দুজনেই স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারের লক্ষ্যে এই অর্ধসাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তবে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে এর নিয়মিত প্রকাশ নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু জনৈক হাফিজ মাসুদ আড়াই শ টাকা নিয়ে এগিয়ে এলে নজরুল তাতেই রাজি হয়ে যান। আফজালউল হক প্রকাশনার দায়িত্ব নিলে পত্রিকাটির প্রকাশ সহজ হয়ে যাবে বলে নজরুল মনে করেছিলেন। এই আফজালউল হক ছিলেন সেকালের ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার সম্পাদক মোজাম্মেল হকের পুত্র। এর আগে নজরুলের ‘বাঁধনহারা’ উপন্যাসটি ‘মোসলেম ভারত’ থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। ‘ধূমকেতু’র ঠিকানা হলো ৩২ কলেজ স্কয়ার। ছাপা হবে ৭৯ বলরাম দে স্ট্রিটের মেটকাফ প্রেস থেকে। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১১ আগস্ট ১৯২২। প্রতি সংখ্যার মূল্য ১ আনা, বার্ষিক গ্রাহক চাঁদা ৫ টাকা। সম্পাদক নজরুল, যিনি নিজেকে ‘সারথি’ বলে উল্লেখ করেছেন। সপ্তম সংখ্যা পর্যন্ত তিনি পত্রিকাটির সঙ্গে স্বনামে সম্পাদক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ম্যানেজার ছিলেন শান্তিপদ সিংহ।‘ধূমকেতু’ প্রকাশের সময় মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। কিন্তু পরে কংগ্রেস ও গান্ধীর রাজনীতির প্রতি নজরুলের অনুরাগ দেখে তিনি নজরুলকে একটা চিঠি লেখেন, যাতে নজরুলের কী কর্তব্য, সে সম্পর্কে কবিকে তিনি রাজনৈতিক নির্দেশনা দেন। মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ চেয়েছিলেন, পত্রিকাটি ‘ভদ্দর লোকদের’ না হয়ে কৃষক–শ্রমিকের কথা বলুক। চিঠিতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কৃষক ও শ্রমিকের কথা কখনও ভেবেছ কি?’ নজরুল প্রত্যুত্তরে গান্ধীর পক্ষে সাফাই গাইলেন। আসলে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের শ্রমিক-কৃষক সর্বহারার সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দর্শনের পুরোপুরি অনুগামী নজরুল ছিলেন না। তিনি চাইতেন ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকেরা ভারত ছেড়ে চলে যাক। পরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্য তাঁকে কারাগারে যেতে হলো। কবির নিজের কথায়, ‘আমার কারাশুদ্ধি হইয়া গেল।’ ‘ধূমকেতু’র ইতিহাসে এই কারাশুদ্ধির ঘটনা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।

ধূমকেতু প্রকাশের আগে নজরুল অনেকের কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে ‘তার’ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিপ্লবী বারীন ঘোষ, সরোজিনী ঘোষ,যতীন্দ্রমোহন বাগচী,উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, বিরজাসুন্দরী দেবী,ফজলুল হক সেলবর্সী,কালিদাস রায়,কুমুদরঞ্জন মল্লিক,মিসেস এম. রহমান তাঁদের সদিচ্ছা প্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সবচেয়ে অনুপ্রাণিত করবার মতো আশীর্বাণীটি এসেছিল পত্রিকা প্রকাশের দু’দিন আগে রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে, যা ষষ্ঠ সংখ্যা পর্যন্ত প্রথম পৃষ্ঠায় এবং সপ্তম সংখ্যা থেকে তৃতীয় পৃষ্ঠায় ছাপা হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখার হুবহু প্রতিলিপি হিসেবে এই আশীর্বাণী প্রকাশিত হতো:‘আয় চলে আয় রে ধূমকেতু,/আঁধারে বাঁধ্ অগ্নিসেতু,/দুর্দিনের এই দুর্গশিরে/উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!/অলক্ষণের তিলক রেখা/রাতের ভালে হোক্ না লেখা,/জাগিয়ে দেরে চমক্ মেরে,/আছে যারা অর্ধচেতন!’

তিনি চেয়েছিলেন অন্ধকারের বুকে অলক্ষণের তিলকরেখা এঁকে তাঁর ধূমকেতু যেন এ দেশের অর্ধচেতন মানুষদের চমক মেরে জাগিয়ে দেয়। ধূমকেতু পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় তৎকালীন বহু গুণী মানুষের শুভেচ্ছাবাণী প্রকাশিত হয়।শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন: ‘তোমার কাগজের দীর্ঘজবন কামনা করিয়া তোমাকে একটিমাত্র আশীর্বাদ করি, যেন শত্রু মিত্র নির্ব্বিশেষে নির্ভয়ে সত্য কথা বলিতে পার।’ উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় লেখেন—‘রুদ্ররূপ ধরে ধূমকেতুতে চড়ে তুমি দেখা দিয়েছ-ভালই হয়েছে। আমি প্রাণ ভরে বলছি-স্বাগত। আজ ধ্বংসের দিন, বিপ্লবের দিন, মহামারীর দিন, দুর্ভিক্ষের দিন, সর্ব্বনাশের দিন-তাই রুদ্রের করাল রূপ ছাড়া আর চোখে কিছু লাগেনা।সৃষ্টি যারা করবার তারা করবে; তুমি মহাকালের প্রলয় বিষাণ এবার বাজাও। অতীতকে আজ ডোবাও, ভয়কে আজ ভাঙ্গ, মৃত্যু আজ মরণের ভয়ে কেঁপে উঠুক।ভয়ঙ্কর যে কত সুন্দর, তা তোমার ধূমকেতু দেখে যেন সবাই বুঝতে পারে।’

বিপ্লবী বারীন ঘোষ লিখেছিলেন:আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু দেশের যারা মেকী, তাদের গোঁফ ও দাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিক; আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু দেশের যারা সাঁচ্চা সোণা তাদের খাদ ময়লা পুড়িয়ে উজ্জ্বল করে তুলুক; আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু বাঙালীর মেয়ের মুখে জহরব্রতা রাজপুতানীর সতী-স্ত্রী দেবী-গর্ব্ব ফিরিয়ে আনুক; আশীর্ব্বাদ করি তোমার ধূমকেতু যতুগৃহ জ্বালিয়ে দিক,স্থির-মণি হয়ে বঙ্গমাতার স্বর্ণ সিংহাসন সাজিয়ে নিক, ভগ্নধ্যান শিবের চক্ষু দিয়ে বেরিয়ে এসে এ কামুক জাতির কাম দেবতাকে পুড়িয়ে ফেলুক আর কামিনী উমাকে করুক শান্তজ্যোতি তাপসী। আত্মজয়ের তপস্যার মধ্য দিয়ে বাঙলার মেয়েরা বাঙলার নব- জাগ্রত শিবসেনাকে পূর্ণ জীবনে মুক্তির স্বর্গে ফিরে পাক।আমার ও হেমন্তের বড় সাধ ছিল একত্রে ‘মুড়ো ঝ্যাঁটা’ নাম দিয়ে কাগজ বের করব। বহুযুগের আবর্জ্জনা-ভরা বাঙলায় তথা ভারতে ঝ্যাঁটার বড় দরকার। আশাকরি ধূমকেতু আগুনের ঝ্যাঁটা হয়ে বঙ্গমাতার দেউলখানি সাফ করে দেবে।

অরবিন্দ-বারীন্দ্রের ভগিনী বিদূষী শ্রীযুক্তা সরোজিনী ঘোষ লিখেছিলেন: ‘তোমার ধূমকেতু বিশ্বের সকল অমঙ্গল, সমস্ত অকল্যাণকে পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলুক-তোমার ধূমকেতু যা কিছু মিথ্যা, যা কিছু মেকী, যা কিছু অসুন্দর তা ধ্বংস করে সত্য সুন্দর ও মঙ্গল প্রতিষ্ঠার সহায়তা করুক। তোমার ধূমকেতু মানুষে মানুষে মিলনের সকল অন্তরায় চূর্ণ করে দিয়ে মহামানবের সৃষ্টি শক্তি ও সামর্থ্য এনে দিক!’

যতীন্দ্রমোহন বাগচী লিখেছিলেন: ‘প্রলয়াত্মিকা প্রোজ্জ্বল শিখা সর্ব্বনাশের সাথী/জ্বালুক বন্ধু ধূমকেতু তব বিশ্বদহন বাতি/চক্ষে তাহার যে বিপুল জ্বালা বক্ষে যে কালানল/পুচ্ছে জ্বলিছে অভিশাপরূপে যে মহা অমঙ্গল/এক সাথে তাহা হানুক মিলায়ে ভীষন বজ্র বেগে/পাপ খান্ডব যাক্ জ্বলে তারি উল্কা ফুল্কি লেগে/দেশভরা যত অধস্ম যতু পুড়ে হোক ছারখার/যত অসত্য ভস্মের মাঝে হোক্ সমাপ্ত তার/তব প্রদীপ্ত সংমার্জ্জনা অত্যাচারের ভালে/শেষ লেখা তার লিখে দিয়ে যাক্ চিতার বহ্নিজালে..’

আর কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবী, যাঁকে নজরুল মাতৃসমা জ্ঞানে ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন, তিনি যে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন, ধূমকেতুর প্রথম সংখ্যায়, ১৯২২-এর ১১ আগস্ট ‘মায়ের আশিস’ শিরোনামে মুদ্রিত হয়েছিল লেখাটি: ‘গগনে ধূমকেতুর উদয় হলে জগতের অমঙ্গল হয়, ঝড়, ঝঞ্ঝা, উল্কাপাত, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, মহামারী অনিবার্য্য হয়ে ওঠে,এটা জ্যোতিষ শাস্ত্রের কথা বলে জ্ঞান হয়েছে অবধি শুনে আসছি। আমরা বাঙালী, আমরা বড়ো শান্তিপ্রিয় গো-বেচারা জাতি, তাই আমাদের ধূমকেতু নামটা শুনেই প্রাণটা কেঁপে ওঠে। ভারতের অদৃষ্টে অলক্ষ্যে হয়তো সত্যসত্যই ধূমকেতুর উদয় হয়েছে, তা না হলে আজ এর বুকের উপর দিয়ে এত অমঙ্গল উপদ্রব আর অশান্তির রক্ত-সাইক্লোন বয়ে যেত না। অতএব তোমার এই ধূমকেতু দেখে আমাদের নতুন করে ভয় পাবার তো কিছু দেখি না। যাঁর আদেশে আজ প্রলয় ধূমকেতুর উদয় আর তারই জন্যে অমঙ্গল-শঙ্কায় তাবৎ ভারতবাসী বিত্রস্ত, পথভ্রান্ত, লক্ষ্যভ্রষ্ট আর কেন্দ্রচ্যুত হয়ে ঘুরে মরছে- আমার বিশ্বাস নিশ্চয় এই অমঙ্গল অন্ধকারের পিছনে মঙ্গলময় ভগবান তাঁর অভয় হস্তে মঙ্গলপ্রদীপ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। যখন সকল দেশবাসী আমার সেই মঙ্গল-আলোকের জন্য কেঁদে উঠবে, সকলে এক হয়ে সমস্বরে সেই আলোক-শিখাকে স্মরণ করবে, তখনই সত্য সুন্দর শিব সমস্ত অমঙ্গল আঁধার অপসারিত করে তাঁর মঙ্গল-প্রদীপ নিয়ে ধরায় ধরা দিতে আসবেন। চিরদিন দুঃখের পর সুখ, আাঁধারের পর আলো, কান্নার পর হাসি, বিরহের পর মিলন অনির্বচনীয় আনন্দ দান করে থাকে; এর একটা বাদ দিলে অন্যটার তীব্রতা ও উল্লাস উপলব্ধি করা যায় না। তাই, আমরা মায়ের জাত, তোমার ধূমকেতুর রুদ্র জ্বালা দেখে অমঙ্গল-আশঙ্কায় কেঁপে উঠব না। কেন না, মঙ্গল-দীপ সাজাবার ভার আমাদেরই হাতে। ধূমকেতু ভগবানের বিদ্রাহী ছেলে।। মা বিদ্রোহী দুরন্ত ছেলেকে শান্ত করবার শক্তি রাখে। অতএব ভয় নেই; তাই বলে অহংকারও কোরো না। কর্ম করে যাও, তোমার যাত্রা শুরু কর, বল মাভৈঃ। তিমিররাত্রির অবসানে যখন অরুণ রাগে তরুণ সূর্য্যের উদয় হবে, তখন তোমার এই ধূমকেতু আলোর সেতু হয়ে আঁধারের পারে নিয়ে যাবে। প্রার্থনা করি যতদিন এই আগুনের শিখা এই ধূমকেতুর প্রয়োজন, ততদিন এ অমঙ্গল মঙ্গলমতে নিরাপদে থাক্।’

১২ই সেপ্টেম্বর, ১৯২২ ধূমকেতুর ৮ম সংখ্যায় প্রকাশিত ফজলুল হক সেলবর্সী-এর লেখা:স্বয়ং বিশ্বকবি যাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ, তাঁকে আমার মতো লোকের ভক্তি নিবেদন করিতে যাওয়াও ধৃষ্টতা।সেই পরম পুরুষকে ধন্যবাদ; আজ মুসলমান বাংলার একটি দৈন্য দূর হইয়াছে। আজ সাহিত্যের পুণ্য আঙ্গিনায় আপনার সমাজ দাঁড়াইবার মত যে স্থানটি পাইয়াছে, তাহা আপনারই দয়ায়। আপনি আমার ভ্রাতা, আপনাকে তোষামদ করিব না। চির অন্ধকারের জীব আমরা, আঁধারে আলোর স্বপ্ন দেথাই আমাদের কাজ। দুর্দিনের ‘রাতের ভালে’ প্রতিভার আলোক দেখিয়া প্রাণে যে আনন্দ লাভ করিয়াছি, তাহাই একটু ব্যক্ত না করিয়া পারিলাম না।’

১৫ই সেপ্টেম্বর,১৯২২ ধূমকেতুর নবম সংখ্যায় কবিশেখর কালিদাস রায়ের কাব্যাশিস প্রকিশিত হয়: “জাগ ধূমকেতু ধ্বংসের হেতু,/স্বাগত অশিব মহোৎসব,/শিবের শ্মশান, জীবের মশান/স্বাগত অশিব উপ্লব।”সত্যের জয় হোক। চিত্তের জয় হোক।নিত্যের জয় হোক।অসত্যের ক্ষয় হোক।

১৯শে সেপ্টেম্বর,১৯২২ ধূমকেতুর ১০ম সংখ্যায় প্রকাশিত হয় ধূমকেতু সম্পর্কে কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক-এর অনুভূতি: ‘ও কে এলো আলোরথে/ধূমকেতু সারথি,/অঞ্জলি আগুনের/দিয়ে করে আরতি?/তারা সে বীণার মাঝে/বাজের গমক বাজে,/অনলের মাঝে রাজে/সীতা সম ভারতী।’

১৯শে সেপ্টেম্বর,১৯২২ ধূমকেতুর ১০ম সংখ্যায় মিসেস এম. রহমান লিখেছিলেন:’ধূমকেতু’ সারথি!অনেকদিন আগে আমি আপনাকে খেতাব দিয়াছিলাম ‘বাঁধন ছেঁড়া’, আজ দিলাম ‘সত্য সাধক’। সত্যের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করুন ইহাই প্রর্থনা।

শরৎচন্দ্র পণ্ডিত যিনি দাদাঠাকুর নামে পরিচিত, তাঁর জঙ্গিপুর সংবাদে লিখলেন: ‘ধূমকেতুতে সওয়ার হয়ে/আসরে আজ নামল কাজী/আয় চলে ভাই কাজের কাজী!/তোর সাচ্চা কথার আচ্ছা দাওয়াই/পাবে যারা বেইমান পাজি/আয় চলে ভাই কাজের কাজী!/হাবিলদার আজ আবিলতার/কলজে বিঁধে এপার ওপার/চালিয়ে বুলির গোলাগুলি/জাহির কর তোর গোলন্দাজি।/আয় চলে ভাই কাজের কাজী!/কোনটা বদি কোনটা নেকি/কোনটা খাঁটি কোনটা মেকি/দেশের লোকের দেখাদেখি রে।/‘নজর-উলের’ তীক্ষ্ম নজর/খাক করে দিক দাগাবাজি/আয় চলে ভাই কাজের কাজী!/ধরিয়ে দে সব অত্যাচারী/পাকড়া যত হত্যাকারী/জোচ্চোরদের দোকানদারি রে।/চোখে আঙুল দিয়ে লোকের/দেখিয়ে দে সব ধাপ্পাবাজি/আয় চলে ভাই কাজের কাজী!/জানিস কলির বামুন মোরা/কেউটে নই যে আস্ত ঢোঁড়া/কাজেই আশিস ফলে থোড়া রে।/মোদের হরি তোদের খোদা/তোর উপরে হউন রাজি/আয় চলে ভাই কাজের কাজী।’

সাধারণ মানুষের মধ্যেও অনেকের কৌতূহল এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল তুঙ্গে।

সকলের মনে বিশাল প্রত্যাশা জাগিয়ে নজরুলের হাত ধরে উদয় হয় ‘ধূমকেতু’র। প্রথম সংখ্যাতে তিনি কৈফিয়তের ঢঙে লিখলেন দীর্ঘ এক সম্পাদকীয় ‘সারথির পথের খবর’।ধূমকেতুর প্রথম সংখ্যায় ‘সারথির পথের খবর’ এ প্রকাশিত হয়-“আমার এই যাত্রা হল শুরু/ওগো কর্ণধার,/তোমারে করি নমস্কার!” “মাভৈঃ বাণীর ভরসা নিয়ে” “জয় জয় প্রলয়ঙ্কর” বলে ধূমকেতুকে রথ করে আমার আজ নতুন পথে যাত্রা শুরু হল। আমার কর্ণধার আমি। আমায় পথ দেখাবে আমার সত্য। আমি প্রথমে আমার যাত্রা- শুরুর আগে আমার সত্যকে সালাম জানাচ্ছি-নমস্কার করছি। যে পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ ছাড়া আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়। রাজভয় – লোকভয় কোনো ভয়ই আমায় বিপথে নিয়ে যেতে পারবেনা। আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকি, তা হলে বাইরের যদি আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোনো ভয়ই আমার কিছু করতে পারবেনা। যার ভিতরে ভয়,সেই তার ভয় পায়। আমার বিশ্বাস, যে নিজেকে চেনে, তার আর কাউকে চিনতে বাকী থাকেনা। অতএব যে মিথ্যাকে চেনে সে মিছামিছি তাকে ভয়ও করেনা। যার মনে মিথ্যা, সেই মিথ্যাকে ভয় করে। নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা আপনি এত বড়ো একটা জোর আসে, যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারুকখে কুর্ণিশ করেনা- অর্থাৎ কেউ তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারেনা। এই যে নিজেকে চেনা, আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথ-প্রদর্শক, কাণ্ডারী বলে জানা এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়। এটা আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারেক্তি…”

১৩ই অক্টোবর, ১৯২২ ধূমকেতু পত্রিকায় ‘ধূমকেতুর পথ’  এ কাজী নজরুল ইসলাম লেখেন: “অনেকেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছেন, ধূমকেতুর পথ কি? সে কী বলতে চায়? এর দিয়ে কোন্ মঙ্গল আসবে ইত্যাদি।

প্রথম সংখ্যার ধূমকেতুতে ‘সারথির পথের খবর’ প্রবন্ধে একটু আভাষ দিবার চেষ্টা করেছিলাম, যা বলতে চাই, তা বেশ ফুটে ওঠেনি মনের চপলতার জন্য। আজও হয়ত নিজেকে যেমনটি চাই তেমনটি প্রকাশ করতে পরবোনা, তবে এই প্রকাশের পীড়ার থেকেই আমার বলতে-না পারা বাণী অনেকেই বুঝে নেবেন-আশা করি। পূর্ণ সৃষ্টিকে প্রকাশ করে দেখাবার শক্তি ভগবানেরও নেই, কোন স্রষ্টারই নেই।মানুষ অপ্রকাশকে আপন মনের পূর্ণতা দিয়ে পূর্ণ করে দেখে।

শুরুতেই মিলল ব্যাপক সাড়া। পত্রিকা প্রকাশ হতেই নিমেষে দু’হাজার কপি নিঃশেষ। তার পর থেকে চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকল। সম্পাদকের ধারালো কলমের গুণে আসে এই সাফল্য। নির্ভীক নজরুল রাজশক্তির পরোয়া না করে প্রতিটি সংখ্যায় সম্পাদকীয় কলমে আগুন ঝরাতে লাগলেন। বিভিন্ন শিরোনামে সেগুলি প্রকাশ হতে লাগল। তিনি লিখলেন—‘আমি সৈনিক’, ‘ক্ষুদিরামের মা’, ‘মেয়্ ভুখা হুঁ’, ‘তুবড়ী বাঁশীর ডাক’, ‘মোরা সবাই স্বাধীন মোরা সবাই রাজা’, ‘পথিক! তুমি পথ হারাইয়াছ?’ ইত্যাদি। এই সব রচনার মধ্য দিয়ে নজরুল দেশবাসীকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে মুক্তি-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানালেন। তাঁর আহ্বানে কোনও ফাঁকি ছিল না। নিজেকেও তিনি নিরাপদ দূরত্বের আড়ালে সরিয়ে রাখেননি।

যে-সময় জাতীয়তাবাদী নেতাদের মধ্যে স্বরাজ, না ডোমিনয়ন স্ট্যাটাস— এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে, তখনই সর্বপ্রথম, ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়।‘ধূমকেতু’ দাবি করল পূর্ণ স্বাধীনতা। ১৩ অক্টোবর ১৯২২ সম্পাদকীয় কলমে নজরুল দৃপ্ত ভাষায় ঘোষণা করলেন, “ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, কেননা ও কথার মানে এক এক জন মহারথী এক এক রকম করে থাকেন।ভারতবর্ষের এক পরমানু অংশও বিদেশীর অধীন থাকবে না। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা-রক্ষা, শাসন-ভার, সমস্ত থাকবে ভারতীয়ের হাতে। তাতে কোনো বিদেশীর মোড়লী করবার অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না। যাঁরা এখন রাজা বা শাসক হয়ে এদেশে মোড়লী করে দেশকে শ্মশান-ভূমিতে পরিণত করছেন, তাঁদেরে পাততাড়ি গুটিয়ে, বোঁচকা পুঁটুলি বেঁধে সাগর-পাড়ে পাড়ি দিতে হবে। প্রার্থনা বা আবেদন নিবেদন করলে তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের অতটুকু সুবুদ্ধি হয়নি এখনও। আমাদেরও এই প্রার্থনা করার, ভিক্ষা করার কুবুদ্ধিটুকু দূর করতে হবে।

পূর্ণস্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে সকল-কিছু নিয়ম-কানুন-বাঁধন-শৃঙ্খল-মানা-নিষেধের বিরুদ্ধে। আর এই বিদ্রোহ করতে হলে-সকলের আগে আপনাকে চিনতে হবে। বুক ফুলিয়ে বলতে হবে, ‘আমি আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্ণিশ’! বলতে হবে, ‘যে যায় যাক সে আমার হয়নি লয়’!…”

ধূমকেতু’র গদ্য, বিশেষ করে সম্পাদকীয়র ভাষা ছিল তীব্র জ্বালাময়ী। প্রথম সম্পাদকীয় গদ্যেই ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল: ‘মাভৈঃ বাণীর ভরসা নিয়ে “জয় প্রলয়ংকর” বলে ‘ধূমকেতু’কে রথ করে আমার আজ নতুন পথে যাত্রা শুরু হল। আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।… ধূমকেতু কোনো সাম্প্রদায়িক কাগজ নয়। মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। হিন্দু-মুসলমানে মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, আদত সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য, কোনো হিংসার দুশমনির ভাব আনে না। যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।’

নজরুলের ধূমকেতু পত্রিকাটি তরুণদের মধ্যে অভাবনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। পত্রিকা সংগ্রহের জন্য তারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা করত। তারপর হুড়োহুড়ি কাড়াকাড়িতে কয়েক মিনিটের মধ্যে তা নিঃশেষ হয়ে যেত। কেন পত্রিকাটি এ রকম জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, নিজের স্মৃতিচারণায় সে কারণ উল্লেখ করেছিলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ‘কালির বদলে রক্তে ডুবিয়ে লেখা’ হতো এর সম্পাদকীয় প্রবন্ধগুলো। বোঝাই যায়, নজরুলের লেখাগুলো আলোড়ন তুলেছিল। ঔপনিবেশিক শাসকেরা ‘ধূমকেতু’তে প্রকাশিত নজরুলের গদ্যগুলোকে সহ্য করলেও ‘আগমনী’ নামে একটি কবিতাকে সহ্য করতে পারলেন না। ৮৯ পঙ্‌ক্তির এই দীর্ঘ কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘ধূমকেতু’র ২২ সেপ্টেম্বরের পূজা সংখ্যায়। এতে নজরুল ইঙ্গিতে সমকালীন রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্রিটিশবিরোধী ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছেন। গান্ধী, অরবিন্দ, চিত্তরঞ্জন, সুরেন্দ্রনাথ, বারীন্দ্রকুমার, পুলিনবিহারীসহ ছোট–বড় অনেক নেতার বিপ্লবী ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। রবীন্দ্রনাথের কথাও এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যে রবীন্দ্রনাথ জনসাধারণের মধ্যে চৈতন্যের শিখা ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। প্রথম স্তবকটিতেই নজরুল তীব্র শ্লেষ ও ঈষৎ তির্যক বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসু কণ্ঠে লেখেন:‘আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি-আড়াল/স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাড়াল।/দেবশিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি/ভূভারত আজ কসাইখানা—আসবি কখন সর্বনাশী?’

অবশ্য পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানানোর আগে ‘ধূমকেতু’র দ্বাদশ সংখ্যায় ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯২২  প্রকাশিত হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’। দুর্গাপুজোর ঠিক আগেই। রূপকের আড়ালে দেবী দুর্গাকে উপলক্ষ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মহাশক্তিকে আহ্বান জানিয়ে তিনি নিজের মনোভাব ব্যক্ত করলেন এই ভাবে—‘আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?/ স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি-চাঁড়াল/ দেব শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবাদের দিচ্ছে ফাঁসি/ ভূ-ভারত আজ কসাইখানা— আসবি কখন সর্বনাশী?’…

এমনিতেই ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের তীক্ষ্ণ নজর ছিল ধূমকেতুর উপর। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার প্রকাশ বিদেশি শাসকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয়। আক্রান্ত হয় ধূমকেতুর অফিস। সাত নম্বর প্রতাপ চ্যাটার্জি লেনের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ভাঙচুর চালায়। পত্রিকার যে সমস্ত কপি তখনও বণ্টন করা হয়নি, সেগুলি তারা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় সম্পাদক ও প্রকাশকের নামে। তবু ‘ধূমকেতু’কে দমানো যায়নি। যদিও ৮ নভেম্বর ১৯২২ প্রথমেই গ্রেফতার করা হয় ধূমকেতুর মুদ্রাকর ও প্রকাশক আফজালুল হককে। পুলিশ হন্যে হয়ে নজরুলকে খুঁজতে থাকে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল তিনি আছেন কুমিল্লায়। ২৩ নভেম্বর সেখানে তাঁকে গ্রেফতার করে পরের দিন কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।

নজরুল ‘ধূমকেতু’র ২১তম সংখ্যা পর্যন্ত নিজে সম্পাদনা করেন। তার পর কয়েকটি সংখ্যা বীরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর সহায়তায় বেরোয়। শেষের দিকে সম্পাদনা করেন অমরেশ কাঞ্জিলাল। ধূমকেতুর মোট ৩২টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। নজরুলকে কারারুদ্ধ করবার পর তাঁর বিচারকার্য চলে কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে। ১৬ জানুয়ারি ১৯২৩ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪(এ) এবং ১৫৩(এ) ধারা অনুসারে সুইনহো কবিকে এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। রাজসাক্ষী হয়ে মুক্তি পেয়ে যান আফজালুল হক।

বিচার চলাকালীন ৭ জানুয়ারি ১৯২৩ জেলখানায় বসে নজরুল একটি লিখিত বিবৃতি তৈরি করে তা আদালতে পেশ করেন।এই লিখিত বিবৃতিটিই পরে ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে নিবন্ধাকারে মুদ্রিত হয় ২৭ জানুয়ারি ১৯২৩-এ প্রকাশিত ধূমকেতুর ৩২তম সংখ্যায়। অমরেশ কাঞ্জিলালের সম্পাদনায় ‘কাজী নজরুল ইসলাম সংখ্যা’ নামে এটিই ওই পত্রিকার শেষ সংখ্যা। তার পর ‘ধূমকেতু’ বন্ধ হয়ে যায়।

বিচারাধীন অবস্থায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে নজরুলের লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত আত্মপক্ষীয় বয়ান ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ ব্রিটিশ ভারতে রাজবন্দীদের বিচারের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব একটি ঘটনা। ওই জবানবন্দিতে দেশমুক্তির অপরাধে বিচারের নামে প্রহসনকে নজরুল যেভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন, ভারতের ইতিহাসে তার দ্বিতীয় কোনো নজির নেই। বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি নির্ভীক কণ্ঠে জানান:

‘আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি রাজকারাগারে বন্দী এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত। একধারে—রাজার মুকুট, আরধারে ধূমকেতুর শিখা। একজন রাজা, হাতে রাজদণ্ড, আরজন সত্য, হাতে ন্যায় দণ্ড।…

আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা, ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায় বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়।…

আজ ভারত পরাধীন। তার অধিবাসীবৃন্দ দাস। এটা নির্জলা সত্য। কিন্তু দাসকে দাস না বললে, অন্যায়কে অন্যায় বললে, এ রাজত্বে তা হবে রাজদ্রোহ। এ তো ন্যায়ের শাসন হতে পারে না। এই যে জোর করে সত্যকে মিথ্যায়, অন্যায়কে ন্যায়, দিনকে রাত বলানো—এ কি সত্য সহ্য করতে পারে? এ শাসন কি চিরস্থায়ী হতে পারে? এত দিন হয়েছিল, হয়তো সত্য উদাসীন ছিল বলে। কিন্তু আজ সত্য জেগেছে, তা চক্ষুষ্মান জাগ্রত আত্মামাত্রই বিশেষরূপে জানতে পেরেছে। এই অন্যায়-শাসন-ক্লিষ্ট বন্দী-সত্যের পীড়িত ক্রন্দন আমার কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল বলেই কি আমি আজ রাজদ্রোহী?…

আমি পরম আত্মবিশ্বাসী। আর যা অন্যায় বলে বুঝেছি, অত্যাচারকে অত্যাচার বলেছি, মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছি,…আমি সত্য-রক্ষার, ন্যায় উদ্ধারের বিশ্বপ্রলয়-বাহিনীর লালসৈনিক।’

জেলে থাকতেই রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে তাঁর ‘বসন্ত’ গীতিনাট্য উৎসর্গ করেন। নজরুল রাজবন্দীদের সঙ্গে নির্মম আচরণ ও অব্যবস্থার প্রতিকার চেয়ে শুরু করেন অনশন। অন্তরীণ থাকা অবস্থায় তিনি লেখেন তাঁর সেই অবিস্মরণীয় গণসংগীত:‘কারার ঐ লৌহকবাট/ ভেঙে ফেল্ কর্ রে লোপাট…।’নজরুলের গণসংগীত রচনার সেই তো সূচনা, পরবর্তী জীবনের এই ধারাতেই তিনি লেখেন বেশ কিছু কালজয়ী গণসংগীত।

১৯২২ সালের ১১ আগস্ট থেকে ১৯২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ‘ধূমকেতু’তে সম্পাদকীয়-গদ্য ও কবিতা মিলিয়ে নজরুলের ২৮টির মতো রচনা প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ধূমকেতু’র এই পর্ব নজরুলের জীবন এবং উপনিবেশবিরোধী রাজনীতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে আছে।বাংলা ভাষায় নজরুলই প্রথম সাংবাদিক ও সংবাদপত্র সম্পাদক, যিনি একটি কবিতা লেখা ও প্রকাশের দায়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তাঁর সাংবাদিক–সত্তা কবিসত্তারই পরিপূরক বা সমান্তরাল দিক।‘ধূমকেতু’তে নজরুল মানুষের স্বাধীনতা, সাম্য ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে ভাস্বর করে দুরন্ত আবেগে যেসব সম্পাদকীয় নিবন্ধ, বিবৃতি ও কবিতা লিখেছিলেন তা পাঠক সমাজকে আলোড়িত করেছিল। ধূমকেতুতে প্রকাশিত নজরুলের গদ্য রচনাগুলো পরে ‘দুর্দিনের যাত্রী’ ও ‘রুদ্র মঙ্গল’ গ্রন্থে এবং কবিতা গুলো ‘বিষের বাঁশী’ ও ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়।

নজরুলের সংগ্রামী চেতনার প্রথম উন্মেষ দেখা গিয়েছিল ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থে। প্রাতিস্বিক আত্মঘোষণা ঘটেছিল ‘বিদ্রোহী’তে।আর ‘ধূমকেতু’র সম্পাদকীয় গদ্যের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। পরাধীন ভারতবাসীকে স্বদেশমন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি, স্বরূপ উন্মোচন করেন ব্রিটিশ শাসকদের। ‘আগমনী’ কবিতাটিও নজরুলমানসের আরেকটি দিকের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল, সেটা হলো এই কবিতার মাধ্যমেই সরাসরি ও স্পষ্ট স্বরে তাঁর রাজনৈতিক কাব্যধারার সূচনা ঘটে। পরবর্তী জীবনে এই দুটি ধারাই নজরুলের কবিতা ও গদ্যে বহমান থেকেছে। তিনি স্পষ্টতই বুঝেছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের স্বরূপ। নজরুল সাহিত্যের যে প্রধান দিক—পরাধীনতার অবসান ঘটানো, মানবিক অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, অত্যাচারীর মুখোশ উন্মোচন, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো, যাবতীয় সংস্কারের মূলোৎপাটন, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ—এসবের স্পষ্ট সূচনা ঘটে এই ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার গদ্যে-পদ্যে। ওই সময়ই কবিতায় তাঁর রাজসিক অভিষেক ঘটে, কিন্তু ‘ধূমকেতু’তে বাঙালি পাঠকেরা পেল আরেক নজরুলকে, যেখানে তার বিষয়বস্তু সুস্পষ্ট, গদ্য গতিশীল, আবেগকম্প্র ও ভাষাসৌন্দর্যে উজ্জ্বল। সম্পাদকীয় গদ্যে নজরুল যে গদ্য ব্যবহার করতেন, তা মান্য চলিত বাংলা। এর ভেতর দিয়েই তিনি চলিত গদ্যের শক্তিকে বৃদ্ধি করেছিলেন। যে স্বাধীন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখতেন তিনি, তা ব্যক্ত করেছিলেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’তে।নজরুলেরধূমকেতু’ অধ্যায়টি আসলেই ছিল তাঁর দ্রোহী কবিসত্তারই অংশ।

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা