১.
কখনো কারো জন্য গোলাপ কিনিনি
ফুল ছিঁড়িনি
আমার বাসায় গোলাপের চাষ হয়
শুধু কার্জনের কাঠগোলাপগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে একে-ওকে বিলাতাম
কিন্তু কি বিস্ময়!
দেখি কারো মনটা ছেঁড়া
কারোটা বেচে দেয়া ..
আফসোস!
সব কাঠের মতো কঠিন হৃদয়গুলো আমার কাঠগোলাপের গ্রহীতা!
২.
পতিতাপল্লীতে ঈদ এসেছে। এই প্রথম বোধহয় ক্ষুধার্ত খবিশগুলো ঢুকতে পারবে না। করোনাকে অশেষ ধন্যবাদ। এই প্রথম বোধহয় রাষ্ট্রীয় ধর্ষণ ভড়কে গেছে।
আশা করা যায়, অন্তত কিছুদিন মানুষের জীবন পাবে পতিত রাষ্ট্রের মেয়েরা।
রাষ্ট্রলিঙ্গ ভোঁতা হয়ে গেছে পাপিয়াপল্লীতেও। একাত্তরের দু’ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের ব্যবসায় আজ মন্দা। করোনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। সে এই মন্দাটাও মন্দ করেনি!
শুধু টাকা পাচারের শিকার ধর্ষিতা ব্যাংকগুলো আজও রেহাই পেলো না ..
৩.
আমি মেহজাবিনকে পছন্দ করি, মেহজাবিন চৌধুরী- অনেস্টলি আমার ভীষণ প্রিয় মুখ!
তারপরও মেহজাবিন এতটা সুন্দর নয় যত সুন্দর ফিলিস্তিনের মুখ।
আমার বড় ঈর্ষা আমার আজও হয়নি ফিলিস্তিনের মতো একটা বুক, একটা হৃদয় কিংবা একফোঁটা বিশ্বকাঁদানো রক্তবিন্দু!!
নইলে হয়তো অনেক আগেই আল্লাহকে পাইতাম আমি।
সেটাই হতে পারতো আমার সবথেকে বড় ঈদ।
আর তাতে পৃথিবীর সমস্ত মেহজাবিনদের বড় ঈর্ষার কারণ হত এই ফিলিস্তিন।
৪.
ঢাকা যৌবন ফিরে পায় প্রতি রাতে।
এমন সৌভাগ্য কোনো ঢাকাবাসীরও হয়নি।
জ্যামমুক্ত রাতের ঢাকা সত্যিই এক চিতাবাঘ। গাবতলী সাত নম্বরটাও চিতাবাঘের মতো পারফর্ম করে।
ঈর্ষণীয়, আসলেই!
সম্ভবত এমন নগরী পৃথিবীতে একটাই যে দিনের জ্যামে কুঁজো হেঁটে ভিক্ষাবৃত্তি করে আর রাতের বেলা দিগ্বিজয়ী চিতাবাঘ হয়ে যায়।
৫.
একবার পথ দেখাও
তোমার রাহবার হয়ে যাবো
চশমাটা খুলে ফেলো
তোমার চোখ হয়ে যাবো
বেশুমার ঝরে পড়া বাসন্তী পৃষ্ঠায়
তোমাকে অজস্র চিঠি লিখে রেখেছি
কোনো একদিন ওই ফুটপাতে হেঁটে গেলে
আমাকে পড়ে নিও
আমাকে খুঁজে নিও
রেলকলোনীর কোনো বঞ্চিত নারী এসে
আমাকে জ্বালাবার আগে
৬.
তোমাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবাটাই দায়
যদি না অন্ধকার নামে …
এমনকি অন্ধকার নামলেও তোমার শাদা দাঁতগুলি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ভাবি, এত শুভ্রতার ভেতর পঙ্কিল জলে নামি কি ক’রে! তোমাকে ঐ মুহূর্তে আমার বেলকনিতে আসা ছোট্র চড়ুই মনে হয়। স্পর্শ না ক’রেও যারে ভালোবাসা যাবে, বুকে না জড়ালেও বুক ভরে যাবে।
তুমি কি তোমার চোখের পলকে রুমের বাতিটা নিভায় দিতে পারো? ইদানিং ইলেকট্রনিক সবকিছুই অসহ্য লাগে। এই যেমন পিসিতে বসলেই বাম হাত আর বাম চোখ জ্বালাপোড়া করে।
চিন্তা করো, আর সব ছেড়ে বাম হাত আর বাম চোখ!
তবে এটা বামপন্থীদের অভিশাপ নয়। ভালো আমাকে বামপন্থীরাও বাসে। ভালো আমাকে বাসে ফেইসবুক নিজেও। শত্রুরাই শত্রুদের বেশি ভালোবাসে। আর তাইজন্য রিচ কমায় দেয় মিলিট্যান্ট মুজাহিদদের পক্ষে কলম ওঠালে!
মিডিয়া দেখালো মুজাহিদরা নারীদের উঠিয়ে এনেছে, অথচ সে দ্যাখেনি নারীরা বীরদেরকেই বরণ করে আরও কিছু বীরের জন্ম দেয়ার জন্য। এমনকি ট্যাক্স পেয়ার কর্পোরেট বেশ্যারাও দ্যাখে – ঘরের স্বপ্ন …
যাহোক শিগগির তোমাকে নিয়ে হানিমুনে যাবো আমি
মধ্যযুগে
তোমার শরীরে কায়ি কাবিলার বীর নারীদের পোশাক জড়াবো। বিশেষ ক’রে মাথায় তাজ সম্বলিত যে অস্থির হিজাবটা তারা পড়ে! তুমি আয়নার সামনে দাঁড়াতেই হেসে ফেলবে, আমি শিওর। তোমার সাম্যবাদী শুভ্র দাঁত আমাকে বলবে- “যাও, আর্তুরুলের পোশাকটা প’ড়ে নাও!”
অথচ বামপন্থীরা আমাকে ঐ পোশাকে দেখতে চায় না। তারা ভাবে আমি তোমার এবং শুধুই তোমার পোশাক নই। তুমি কি চোখের পলকে আমার ওদেরকে দেখার নেশাটা বন্ধ করতে পারো? ওদেরকে আমার ফেইসবুক গুগলের মতো লাগে!
গ্রামের মেয়ে তুমি গ্লোবাল ভিলেজে থাকো। অথচ পড়তে জানো না, খুঁজতে জানো না… যেন তোমার বয়সই হয়নি!
যাক তবুও আশাবাদী, এই পাগলনামা একদিন পৌঁছে যাবে…
৭.
তুমি ধানক্ষেতে শাড়ি পরে দাঁড়ালে কবিরা কৃষক নিয়ে ভাববে না তোমায় নিয়ে লিখবে ..
দুষ্ট সংশয় আর মিস্টি অপরাধবোধ ঘিরে ফ্যালে আমাকে ..
বলতেই পারো আমার এতো কিসের ভাক্কা
শোনো আমি কবিদের ধর্মবাপ লাগি
তোমার জন্য আমার বাচ্চারা যুদ্ধ করে, গৃহযুদ্ধ
যুদ্ধ শেষে ‘আমেরিকা তুমি কার’ সে প্রশ্ন অবশ্য উহ্যই রাখে মহাকাল!
তা তুমি কি করিডর ধ’রে একটু আগাতে পারো, যে পথে নদীগুলো মেরে ফেলা হয়েছে? যে পথে কৃষকের দাম খোয়া গ্যাছে ??
বিপন্ন সময়ের সবশেষ আশ্রয়, তোমায় নিয়ে খুব ভয় হয়! খুব ভয় হয়!
নদী হারিয়েছি, তোমাকে হারাতে চাই না।
৮.
প্রকৃতির বুক থেকে আমি তারে ফুল এনে দিলাম
সে কাগজের ভুল ভেবে হৃদয়হীন হাতে ছিঁড়ে ফেললো
সে ফুল চেনেনি …
আর আমি বুঝিনি বিশ্বাসের ফল হবে রক্তাক্ত এপ্রিল-ফুল
৯.
যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। যে গাইছে সে
ভাবছে তার গান তাকে ইতিহাসে নাম লেখাবে। কবির বিশ্বাস কবিতাই
করবে তারে পূর্ণ। চমৎকার দুটি স্তন দুনিয়া মাত করবে জন্য বারবার পড়ে
যাচ্ছে বুকের ওড়না। হাহ!
অথচ কিছুতেই কিছু হবেনা
যদিনা আরাধ্য আপন ম’নে গেয়ে ওঠে ..যদিনা তার ঘুম ভেঙে যায়
তাই আমিও বেরিয়ে পড়েছি..
আমিও বেরিয়ে পড়েছি ধূসর এলাকায়..
এই অগাস্টে কেউ একজন ভিজে গ্যাছে। কেউ আক্রান্ত হ’য়ে ভেজে কেউবা আত্মঘাতী হামলায়। সে কোনো সুইসাইড নোট কিংবা জঙ্গীপনার চিহ্ন রাখেনি। তাই আমি বেরিয়ে পড়েছি.. বেরিয়ে পড়েছি ধূসর এলাকায়!
এখানে দেখতে পাচ্ছি অসংখ্য প্ল্যাকার্ড.. ‘সরকারি চাকরি’ ‘যৌবনের ক্ষুধা’ ‘ধূসর প্রিয়তমা’ ‘টাকার জন্য সংগ্রাম’ ..ওহ!
অথচ আমার ঘুম পাচ্ছে। প্রচুর ঘুম। দ্বিধান্বিত প্রেম; দ্বিখণ্ডিত মন।
আর এখানেই ঘুমের ভেতর হেটে বেড়ানো সুস্থ-শব-যাত্রা।
আমি চাই চীন-ভারত যুদ্ধ লাগুক। একঘেয়ে মানচিত্র আর ভাল্লাগেনা। যে পৃথিবী বহুরূপী নয় সে মৃত। আমি চাই পৃথিবী কেঁদে উঠুক। না কাঁদলে কেউ কি শুধরায়? কেউ কি জন্মায় ধরাধামে? চাই প্রতারক ইতিহাস, নিখোঁজ প্রিয়তমা, সেক্সি দুর্নীতি, ভণ্ড সমাজ সব.. সব চোখের জলে ভেসে যাক..কেঁদে উঠুক চিৎকার ক’রে..
কেবল কান্নার আওয়াজই ঘুম ভাঙাবে এই ধূসর এলাকায়..
১০.
তোমাকে প্রতিবাদে পাওয়া যাবে এই লোভে আমি সমাবেশ মিছিলে যাই
এইখানে খুঁজি ওইখানে খুঁজি
কোত্থাও তুমি নাই
গুজব শুনি .. সেই চেতনা দি’র বাড়িতে নাকি বেড়াতে গিয়েছিলে; তারপর গুম হয়েছো কি ঘুম গিয়েছো .. কেউ বলতে পারে না .. আহা ..
আমায় আজো শূন্য রেখেছো রাখো; তবে
দেশ মায়ের বুক খালি ক’রে তোমার সুখ কোথায়!
তোমাকে প্রতিবাদে পাওয়া যাবে এই আশায় আমি সমাবেশ মিছিলে যাই
দরিয়ায় খুঁজি নক্ষত্রে খুঁজি
কোত্থাও তুমি নাই
শাহনেওয়াজ আরেফিন
লেখালেখিটা সহজাত শুধু নয়, তার ভালো থাকা বা না থাকার কারণ। সৃষ্টি কষ্টের উদযাপন হলেও তা সমাজেরই সৃষ্ট আর কবির এইসব কবিতা তারই বহিঃপ্রকাশ। কবি শাহনেওয়াজ এর জন্ম বগুড়ায়। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি আজিজুল হক কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। পেশাগত জীবনে তিনি ফিল্মমেকিং, এড মেকিং সহ বিচিত্র কনটেন্ট ক্রিয়েশান, মার্কেটিং ও গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত। সাহিত্য, দর্শন, মনোবিজ্ঞান ও রাজনীতি তার প্রধান আগ্রহের জায়গা।