কোয়ারান্টাইন, উদ্বেগের সাদা ঘোড়া
শাটডাউন শহরে ঘুরে উদ্বেগের সাদা ঘোড়া
যেন সে নাগরিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে পড়া
হারানো ব্যস্ততা তাড়া যান্ত্রিকতা সওয়ার হয়েছে তার পিঠে
যেন সমস্ত অস্থিরতা বিহ্ববল আমাদের প্রত্যাশার চাবুকে!
এখন সে দখলে নিয়েছে এভিনিউর সুনসান নীরবতা
কোয়ারান্টাইন শহরের অদ্ভুত মান্যতা, তার ক্ষুরের আঘাতে
অবলীলায় মাড়িয়ে যায় রীতি প্রথা আইন
যেন বিস্ময়কর মুক্তির স্বাদ আজ তার অবমুক্ত বুকে!
চোখ তার জ্বল জ্বল করে কোন নির্জন ভৌতিক সুখে
যখন বস্তি ও ক্ষুধার্ত জনপদগুলো ফ্যাকাশে জোছনা পান করে
সে হেঁটে বেড়ায় সেসকল কর্পোরেট দুঃখ প্রান্তরে
আর শাটডাউন রোগীদের কফিনের ভিড়ে, কবরে!
দুর্যোগের শহরে ভুলগুলো সাপের মতন ফণা তোলে
আর জমানো পাপের ভাগাড়ে নগ্ন অনুতাপ নৃত্য করে
যখন মৃত্যু হানা দেয় ক‚ট কৌশলগুলো উলঙ্গ হয়ে যায়
তাদের বহন করে উদ্বেগের সাদা ঘোড়া!
আজ সে ক্ষুরের শব্দে মাড়িয়ে যায় অর্জিত অনুশোচনা
বুকের ভেতরে কাঁপন তোলে যেখানে জমেছিলো সময়ের দেনা!!
পিপিই পরা শুক্লপক্ষের চাঁদ
মধ্যরাতে বিস্মিত হয়ে দেখি সাদা পিপিই পরা শুক্লপক্ষের চাঁদ
থেমে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সের মতন আচ্ছন্ন জোছনা
আর কী অদ্ভুত মাস্ক পরা এই রাতের নীরবতা
যেন লকডাউন শহরে ঘুরে উদ্বেগের সাদা ঘোড়া!
অচঞ্চল বাল্বের মতন ডাক্তার ও নার্সেরা
আটান্নটি আইসোলেশন বেডে সুদূূরের নির্জনতা
ঝুলে আছে ভেন্টিলেশনের ফ্রেমে
সমাগত মৃত্যুর হাত ধরে!
আজ শহরের বুক ভরে আছে করোনা ক্লান্তি
মর্গের মতন শোক, পিপিইপরা পূর্ণিমার চাঁদ
আলোর প্রতিবিম্বে থোকা থোকা কোয়ারান্টাইন
শহরে ছড়িয়ে দেয় শোকাহত কবরের আইন!!
পরিযায়ী শব্দের বিভ্রম
রাত ও দিনের রূপ একাকার নৈশব্দের মাঝে
মানুষের বুকে সঘন হয়ে আছে কোয়ারান্টাইন
মধ্যরাতে জোছনার নীরবতা গিলে খায় অদৃশ্য ভাইরাস
আদিম ভয়েরা আজ ডানা ঝাপটায় স্বপ্নের বারান্দায়
দিশাহীন দারিদ্র্য মুখ থুবড়ে পড়ে গলির ভাগাড়ে
বুক থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নামে দূরের আশঙ্কা
সারারাত পঙ্গপালের মতন ঝরে শব্দের বিভ্রম
দিনকে রাতের ফ্রেমে বন্দী করে অলৌকিক আইন
সাদা পিপিইর ভেতরে ঢেকে রাখে সময়ের চঞ্চলতা
কেমন একাকার হয়ে যায় থাকা ও না থাকা
একাকিত্বের তীরে বিদ্ধ নিসর্গ ও নির্জনতা
সহসাই মনে হয় চারপাশে পৃথিবীর সব রঙ সাদা
গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকেরা অদ্ভুত ফ্যাকাশে ও সাদা
সময়কে বুকপকেটে রেখে সব যান্ত্রিকতা আজ সাদা
স্বপ্ন প্রেম অভিপ্রায় সবই আজ নিঃস্তব্ধ ও সাদা!!
শিকড়
সবুজ সম্পর্কের শিকড় ছড়িয়েছি
মাটির নিঝুম উর্বরতায়
অনেকটা জৈবনিক রক্ত প্রবাহের মতো
বিশ্বাস জড়ানো, থোকা থোকা
অবশ্য তারও একটা কাহিনি আছে
সকলেই জানে, এই স্বচ্ছ নদী
এই টিয়া রঙ বদ্বীপের চরাচর
পোষমানা পাখিদের মতোই বন্ধনে আবদ্ধ
ডাক দিলেই উড়ে আসে
নির্ভয়ে বসে যায় বিশ্বাসের ডালে।
কোন স্বরচিত অভিমান নেই
কোন অঘোষিত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই
সব বাঁধা কাটিয়ে
সোজা সান্নিধ্যের দিকে ধাবমান।
এমন কোন সময় বা দুঃসময় নেই
সে আমার ডাক শুনতে পায় না
এমন কোন বেড়ি নেই,
নেই কোন আচানক আড়ম্বর
আমি শুয়ে থাকি তার সবুজাভ বুক বরাবর
তার অকৃত্রিম বিশ্বাসের গন্ধ আমাকে আপ্লুত করে
তার ডানার উষ্ণতা ছুঁয়ে
আমি একটা জনপদের স্বপ্ন রচনা করি।
শস্যের গন্ধের মতো শুদ্ধতম তার সান্নিধ্য
অদৃশ্যের বন্ধনে আমাকে বাঁধে।
ভাষারও সীমাবদ্ধতা ঘুচে যায়
তুমি আমাকে সেই উপলব্ধি মধ্যে নিয়ে গেছো
অনেক প্রতীক্ষা শেষে যা জেগে ওঠেছিলো
এই গ্রহের জলজ কররেখায়
সেখানে মুখর মাঠ ছিলো
স্বপ্নের ছায়ায় ঢাকা প্রান্তর দিগন্ত ছিলো
উদ্বেলিত পৃথিবীর ফুল ও ফসলে আঁকা
তুমি আমাকে সেই উদযাপনের মধ্যে নিয়ে গেছো
যার মর্মার্থ জেনে গিয়েছিলো পাখি, প্রকৃতি ও মানুষ
নদীগুলোর ছুটে চলা দেখে ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো পৃথিবীর
আর প্রতিটি সকালের বুকে ঝরেছিলো রাশি রাশি স্বপ্ন
অবিকল হাত ছুঁয়ে দেখতে পাবার মতো স্বপ্ন
যার ছিলো নিজস্ব বাচ্যার্থ ও ভাবার্থ
তুমি আমাকে সেই নিবিড় সার্থকতায় নিয়ে গেছো
কোন জন্ম ও পুনর্জন্মে যার সাধ ফুরাতে চায় না
যার সুখ সত্যিকার কোন ঝর্ণা হয়ে বয়ে যায় বুকের অতলে
ভাষারও সীমাবদ্ধতা ঘুচে যায় উঞ্চ আবেগের অশ্রুতে
ধ্বনি চিহ্ন রঙ বর্ণ কোন প্রতীকেরই প্রয়োজন পড়ে না
তুমি আমাকে নিয়ে গেছো সেই আশাবাদের দিকে
যার মধ্যে খুঁজে পেয়েছি দরিয়ার মতন অনবরত উত্থান
যেখানে খুঁজে পেয়েছি ধ্বনি ও প্রতীকের নিগূঢ় চাষাবাদ
কবিতার মতো সহস্র পুনর্জন্ম।
হে যুদ্ধ বণিক
পৃথিবীর বারান্দায় একটি ঝরঝরে সকালের টেবিলে
তুমি রেখে দিলে পূর্ব পরিকল্পিত ইউক্রেন যুদ্ধ
দ্যাখো এখন, অভুক্ত পাখিরা উড়ে যাচ্ছে দিকবিদিক
আর ডানা ভেঙে পড়ছে শান্তিকামী পৃথিবীর স্বপ্ন
তোমার শান দেয়া বণিক চাতুর্য এখন খুশি তো?
অতি মারির হৃদয় বিদারক শোক
এখনো ছিঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে অবশিষ্ট সম্ভাবনার বুক
উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তাড়া করছে আশাবাদী পাখিদের
আষট্টি লক্ষ সাদা কাফনে মোড়ানো
তুষার সন্দিগ্ধ পথ। দীর্ঘতম মন্দার হাতছানি।
দ্যাখো, এখনো জ্বলছে ফিলিস্তিন
সিরিয়া লিবিয়া কাশ্মীর। হাত বাড়ালে রক্তে ভিজে যায় হাত।
এতটুকু বাঁচার আশায় ছিটিয়ে দিয়েছো ঝাঁঝালো বারুদের গন্ধ
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রযোজিত যুদ্ধ বাণিজ্য!
হে যুদ্ধ বণিক, এই হলো মন্দা উসুলের মোক্ষম সুযোগ!
দুর্বলতম সিচুয়েশন
লক্ষ্য ভেদের দারুণ মুহূর্ত!
পৃথিবীর অবশেষ সম্ভাবনা গিলে খাওয়ার উদগ্র আকাক্সক্ষা
ছড়িয়ে দিলে বিবেকহীন বিশ্ব ব্যবস্থার নিপুণ কৌশলে!
শান্তির স্বপ্ন
কতকাল স্বপ্ন দেখেছি
বন্দুকের নলে এসে বসবে সেই শান্তির পাখি
তার অব্যাহত গান শুনবে প্রজন্মের সন্তানেরা
পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তরে গড়ে উঠবে
নিরুপদ্রব শান্তির ডেরা!
যুদ্ধবাদের কুফল থেকে খসে পড়বে
দীর্ঘতম চাহিদার লাগাম
রক্ত পিপাসু খুনিরাও বলে উঠবে– আর না, আর না
কতকাল স্বপ্ন দেখেছি
সব মন্দা আর সমস্ত যুদ্ধের শেষে
এই পৃথিবীর বিশাল মিম্বরে
হাঁটু গেড়ে বসে
অনিঃশেষের গান গাইছে লক্ষ কোটি পাখি!
সন্ধি
যন্ত্রের যুগ রাখে কিছু অপশন
হত্যার গেম হয় না ওভার তবু,
ভার্চুয়ালি ভারী হয়ে থাকে মন
বাঁচার স্বপ্ন চারদিকে জবুথবু।
সিয়ানের হাতে যুদ্ধবাদের খেলা
যন্ত্রের মতোই ঘোরতর কৌশল,
উদ্বেগে যেন শেষ হয়ে আসে বেলা
কপালের ফের টেকনোক্রেটের ছল!
ডিজিটাল গেমে দাসযুগ আসে নেমে
শ্রম ধর্ষণে হাপায় যুগের বন্দি,
‘আশাবাদ’ চলে বেদনায় থেমে থেমে
অন্তিমে তবু হয় না কোন সন্ধি!
অপারগতা
প্রতিনিয়ত উদ্বেগের করোনা বাতাস বয়ে যায়
ছিন্নভিন্ন খর রৌদ্রের আয়নায় দেখি নিজেরই মুখ
নেকড়েদের খুবলে নেয়া খাদ্যের মতো
যেন পলিথিন মোড়ানো কোনো উদ্বাস্তু শিবিরের মতো
সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরগুলোর মতো
নাকি গ্রিসের জঙ্গলে অনাশ্রিত অভিবাসীদের মতো
কিছুতেই আর বুঝতে পারি না
একচক্ষু মিডিয়ার মতো এই চোখের অপারগতা
গাজা উপত্যকায় দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন আর্তনাদ বুঝতে পারি না
যুদ্ধবাদের কুফলে চাপা পড়া পৃথিবীর উৎকণ্ঠা বুঝতে পারি না
কাশ্মিরের বোবা কান্না বাতাসকে ভারী করে আমাকে করে না
যেখানে সযত্নে প্রতিপালিত হয় মানুষের প্রতি ঘৃণা
এমন রাজনীতির উর্বর শস্যক্ষেত্রে আজ আর আমাদের কারোরই অমত না!
বারুদের ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে সর্বসম্মত আমাদের আন্তর্জাতিক চেতনা
একমাত্র ধ্বংসোপকরণকেই বলা হচ্ছে এই ভ‚গোলের পরম প্রতিরক্ষা!
যুদ্ধবাদীদের কূটকৌশলের নাম এখন সভ্যতার কূটনীতি
গোলার্ধের বুকে কম্পন বাতাসের বুকে ভয়
সমুদ্রের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে উন্নয়ন দুর্বৃত্তপনা
ছায়াগ্লাসের আড়ালে মারণাস্ত্রের জিঘাংসা
উদ্বেগের পিপিই পড়া শহরগুলোতে
প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ে ভয়ার্ত রৌদ্রের ফেনা
হয়তো তা করোনা হয়তো তা আমাদেরই সময়ের দেনা।
মানুষ নিজেই একটি কবিতা
(বন্ধু অধ্যাপক মিজানুর রহমান স্মরণে)
কোন মহৎ কবিতা এতটা হৃদয়ভেদী নয়
যতটা একজন মানুষ তার অস্তিত্বে জানান দিতে পারে
আমি কোন উপমা বা কোন উৎপ্রেক্ষার কাছে
মানুষের নান্দনিকতা খুঁজে পাই না
আমি চিত্রকল্পের পাতা তন্নতন্ন করে দেখেছি
মানুষের গন্ধ আকর্ষণ বা আবেদনের মতো কোন সারমর্ম নেই
কতদিন পুরাণের ঐতিহ্যে আদি অকৃত্রিমতায় ঘুরেছি
হেঁটেছি বিধ্বস্ত সভ্যতার পথে
ইন্দ্রজাল বিছানো কত কাহিনির পংক্তিতে
মানুষের মতো বিকল্প মানুষ আমি দেখিনি কোথাও
যেমন মিজানের মতো কোন বিকল্প মিজান
ইকবালের মতো কোন বিকল্প ইকবাল
পৃথিবীর কোন দৃশ্য বা সার্থকতায় নেই
তোমরা যারা ক্ষুধা ও প্রেমের জন্যে এতটা উৎগ্রিব ছিলে
কিংবা কোন অলীক স্বপ্ন বপনের তাগাদায়
নিজেকে একটা ক্লান্ত চিলের মতো আকাক্সক্ষার রোদে ঢেকে দিলে
আজ শোনো, সময় যে ঔদার্য তোমাকে দিয়েছিলো
তার প্রতিপাদ্য ছিল একমাত্র মানুষ
সেই সর্ববাদী সংবেদন অহমের আঁচলে ঢেকে চলে গেল দিন
তবু তার গন্ধ আজও উপেক্ষার স্মৃতিতে উড্ডীন।
সত্য
কৌশলের কারাগারে কোনদিন বেঁধে রাখা যায় না সত্যকে
সত্য সব প্রতিবন্ধকতাকে ভেদ করে উঠে আসে
এমনকি আগুনও তার লোমকে স্পর্শ করতে পারে না!
ককেসাস ওশেনিয়া এন্টার্কটিকা থেকেও উঠে আসে অনায়াসে
আফ্রিকার খরাকাল পার হয়ে স্মরণীয় ইতিহাসের মতো হাসে
গোপন কারাগারগুলোর ঘৃণ্য বর্বরতা অতিক্রম করে
নির্ভয়ে ডিঙিয়ে যায় সভ্যতার নামে গড়ে তোলা বাধার পাহাড়
কত ভ‚ত খসে পড়ে, মৃত্যু মারণাস্ত্র পায়ের তলায় পিষে যায়
সত্য সেই অবিকল সূর্যোদয় হয়ে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে
যেন একটা অনিবার্য অভ্যুত্থান হয়ে ফিরে আসে
তখন পরিপূর্ণ কোন মওসুমের মতো মনে হয় তাকে
সে পরোয়া করে না কোন অবিবেচক ভেটো ক্ষমতার
বিপদজ্জনক রাজার রক্তচক্ষু কিংবা কাঁটাতার
স্নায়ুযুদ্ধ অস্ত্র প্রতিযোগিতা ইমিগ্রেশন
অদম্য বিপ্লবীর মতো সবকিছু সয়ে যায়
মানুষের অন্তরে উদ্ভাসিত আশাবাদের মতো
পাখিদের ঠোঁটে সমাগত উচ্চারণের মতো
স্নায়ুতন্ত্রে উদ্বেলিত ঢেউগুলোর মতো
যার মুন্ডু কেটেও কোনদিন আলাদা করা যায় না!
দীর্ঘশ্বাস
হাইকোর্টের বারান্দায় গুমড়ে ওঠা অসংখ্য দীর্ঘশ্বাস
ধূমায়িত হতে হতে একদিন আশঙ্কার ঝড় হয়ে যায়
যেন এখনি আছড়ে পড়বে বিবেকহীন নগর চত্ত¡রে
স্বার্থপর অট্টালিকা আর গলা উচিয়ে থাকা টাওয়ারগুলোতে
কখনো কখনো পার্কের ভিতরে বাউকুড়ানীর মতো
সব কিছুকে তছনছ করে। বেঞ্চিতে বসে উন্মাদের মতো
মাথা কূটে। কখনো বা রূপ নেয় জবা ফুলের মতন রক্তবর্ণে
এইসব দীর্ঘশ্বাস বায়বীয় বলে বেধে রাখা যায় না কোন হ্যান্ডকাফে
গোপন বা প্রকাশ্য কোন লকারে রাখার ব্যবস্থাও নেই
নেই গুম করে ফেলার প্রথাগত কোন সহজ সুযোগ
প্রতিদিন দেখা যায় ব্যস্ততম রাস্তায় বা হাইকোর্টের বারান্দায়
কিংবা সুপ্রিম কোর্টের অনেক ব্যস্ততম এজলাসগুলোতে
এরা উপস্থিত থাকে নিম্ন আদালতের ডান্ডাবেরি পড়ে
দীর্ঘশ্বাসগুলোর নিজস্ব কোন অবয়ব নেই বলে
প্রায়শ পড়ে না তারা বিজ্ঞ আদালতের নজরে
অভিশপ্ত চেতনার মতো এরা বস্তিতে ফুটপাতে ঘুরে
তবু তারা যায় না কোন নষ্ট পান্ডিত্যের আসরে
যায় না রাজনীতি নামক সস্তা বেচা কেনার হাটে
মিডিয়ার ভাগার থেকে অনিবার্য কারণেই থাকে দূরে
এরা যায় না মন্দাকালের শিল্প সাহিত্যে আঁধারে
রাজনৈতিক ব্যর্থতার মতো এরা নিজেদেরকেই শুধু খুঁজে।
লরা ভেগলিয়েরি স্মরণে
রোমের হলুদ বাতাস আর আসন্ন সন্ধ্যার চোখে অশ্রু
অনেকেই তাকে সভ্যতার কান্না বলে মেনে নিতে দ্বিধান্বিত
কিন্তু দুর্দশা পতন সচেতন আত্মার কাছে চিরকালই বিব্রতকর
তাই দুঃখিত লরা তার ঝিনুক খোলসে বিষাদের রঙ ঢেলে
গড়ে তুলেন এক অনিবার্য উত্থানের নীরব প্রাচীর
তখন নিয়ন আলোতে জ্বলে উঠেছিল অদৃশ্য উদ্বেগ
প্রাচীন এই নগরীর রাস্তায়
নৈশব্দের ইমারতে ধ্বসে পড়েছিল কামনার রাত
যেন মানুষের মনে অর্ন্তদাহনের মতো মৃত্যুর মহোৎসব
কোটি কোটি ভ্রূণ মৃত্যু আলোর নিউরণে ঝরে
হয়তো দেখে না কেউ উপলব্দির সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন
নির্জন খোলসে ঢেকে ধেয়ে আসে নৈতিক মৃত্যু
অব্যাহত কোলাহল সাইল্যান্সারে মহাপতনের আগাম গোঙানি
কে প্রশ্ন করবে, কে দেবে উত্তর? এমন অমীমাংসিত সন্ধিক্ষণে
সন্তপ্ত হৃদয়ে আশার আলোতে রক্ত ঢেলে
লেখেন তিনি অনিবার্য সাক্ষ্যদানের মতো
তার প্রতিটি অক্ষর অন্ধকারে জ্যোতির্ময় সত্ত্বা হয়ে জ্বলে!
স্বপ্নের অধিক এক উদ্যানে
শৈশবের ঘোর লাগা সবুজ সময়ে
কতবার স্বপ্নে দেখেছি সৌম্যকান্তি রবীন্দ্রনাথকে
আর মানুষ মানুষ শব্দে দিশেহারা চিরদ্রোহী
কবি কাজী নজরুল ইসলামকে
তাহারা আমাকে আশির্বাদের ফুল দিয়েছিল হাতে
সে সব স্বপ্নকে সব সময় স্বপ্ন বলেই মনে হয়েছে
বয়ে যাওয়া নদী আর অরণ্য শস্যের মাঠ
কতোবার স্বপ্নের ডানায় উড়াল দিয়ে পার হয়েছি
কোনদিন তাকে বাস্তব বলে ভাবিনি
কিন্তু ইদানিং আমার স্বপ্নগুলোকে অধিকতর কোন সত্য বলে মনে হয়
যখন বিশাল এক উদ্যানের সবুজ গালিচা হাঁটতে হাঁটতে পার হয়ে যাই
ক্লান্ত হওয়ার আগেই আমার জন্য প্রস্তুত থাকে পরিদের ডানা
বিস্ময়কর সেই নিসর্গের নদী ঝর্ণা আর প্রস্তুতকৃত পাহাড়
দেখতে দেখতে বিমুগ্ধ হয়ে বলি সোবহানাল্লাহ
আমার শোকরিয়ায় সত্তর হাজার হুর গুঞ্জনের মতো প্রতিধ্বনি তোলে
পাখি ফুল পতঙ্গ ভোমরা গান গায় আমাকে ঘিরে
আর অসংখ্য সুরের ঝর্ণা আমার পায়ের কাছে বইতে থাকে
যেন আমি যা কোনদিন দেখিনি তা আমাকে দেখানো হয়
আমি যা কোনদিন শুনিনি তা আমাকে শুনানো হয়
আর আহারের জন্য হাজির করা হয় একটি গ্রহের সব ফল ফলাদি
যার অধিকাংশই নাম না জানা
এসব ফলের গন্ধ এমন যে আহারের আগেই সব তৃপ্তি মিটে যায়!
আমি দেখি পৃথিবীর কোন যুদ্ধ ক্ষতই আর আমার শরীরে থাকে না
মন্দার উদ্বেগ দারিদ্র্যের কষাঘাত আর যত শোকের আঘাত নিমিষেই মুছে যায়!
সে উদ্যানে ঘুরে ফিরে মনে হয় কত কাল পার হয়ে যায়
আমি কোন ক্লান্তি বোধ করি না
সমুদ্র সৈকতগুলো ঘুরে দেখি যেন এ সবই অপার্থিব
ফুলের রেণুর মতো স্নিগ্ধ ঢেউ তীরে তীরে আছড়ে পড়ে
মেঘগুলো উড়ে এসে পঙ্খিরাজ ঘোড়ার মতোন আমাকে উঠিয়ে নেয়
আর সব জ্যোতির্ময় রমণীরা সুখকর সঙ্গী হয়
যাদের চোখের থেকে শৈল্পিক সুন্দর আর কিছুই নেই
তারা নিরব বিছিয়ে দেয় জোছনার মতোন আচ্ছাদন
খুলে দেয় ইন্দ্রিয়জ থেকে অতিন্দ্রিয় সব আকাক্সক্ষার ভাজ
আমার আহার রূপে আনা হয় প্রতিশ্রুত মাছের ব্যঞ্জন দুগ্ধ সুস্বাদু আনার
এক ঝুরি মেওয়া ফলের শরাবন তহুরা
আমি শুধু জাগতিক অশ্রু ভেজা আনন্দের মতো বলি আলহামদুলিল্লাহ
আমার শোকর শুনে সমস্বর ধ্বনি তুলে অগণন মালাইকা
আমার উদ্যান লেকে সম্মানিত মেহমান করে আনা হয়
কামিয়াব সকল স্বজন আর ছয় লক্ষ ফিলিস্তিনি শিশুদের
যাদের অনেকে মহান শহিদ আর সকৃতজ্ঞ ধৈর্যশীল বলে খ্যাত
তারা এডেনিক ভাষায় অর্থবোধক কবিতার তিলাওয়াত শোনায়
আর সার্থকতার অজস্র ঝর্ণাধারা বইয়ে দেয়
মেঘ পাখি নদী ফুল সুবাসিত বৃক্ষদল সকলেই আজ সংগঠক
হুর নামে খ্যাত সেই সঙ্গীতময়ী রমণীরা কণ্ঠে তুলে মুগ্ধ করা সুর
যা শেষ হয়ে গেলেও কোনদিন শেষ হয় না!
আমার ইচ্ছার অগ্রে আমাকে নিয়ে যায় অদেখা দৃশ্যের গুলিস্তানে
সেইসব ঝর্ণা পাখি ফুল উদ্ভিদ ও ঘাসেদের কাছে
যাদের সৌন্দর্য সুগন্ধ মর্মমূল ভেদ করে চেতনায় উঠে আসে
যে কল্পনা চিরকাল আমাকে টেনেছে তার সম্মোহন অজানার দিকে
যে অলিক সুখরাজ্য কোনদিন ধরা দেয়নি কারো কাছে
যে সার্থকতার জন্য লড়াই করেছি যুগ-যুগান্ত অবধি
আজ সবই এখানে একান্ত স্বপ্রণোদিত হয়ে দৃষ্টি স্নায়ু ও হাতের নাগালে
সকাল দুপুর রাত এক সাথে জ্যোতির্ময় উপলব্দির গুলবাগে আলো ফেলে
আমার স্বপ্নের বিরতি ঘটে এই নান্দনিক নিসর্গে উদ্যানে ঘুরতে ঘুরতে
অথচ স্বপ্নের শেষে তার শিশির সুগন্ধ প্রাণবন্ত চেতনায় লেগে থাকে!
স্বীকৃতি
পথের ক্লান্তির অবসরে জুতার সুকতলি পর্যন্ত ছিড়ে যায়
পায়ে পড়ে উনুনের মতো দগদগে ব্যর্থতার ফোস্কা
সে শুধু চেয়েছিল তার স্বোপার্জিত কবিতার কিছুটা স্বীকৃতি
যা সে অর্জন করেছিল বিপন্ন মানুষের অন্তিম আকাঙ্খা থেকে
কিন্তু তার স্বীকৃতি তো তিরিশ বছরে কোথাও মেলেনি!
পন্ডিতেরা তা শোনার আগেই কেমন গিধরের মতো গোদ গোদ করে
আর উত্তরাধুনিক কবিতা ক্যাফেতে বাসি কদমের গন্ধ
অথচ বুঝি না এইসব ভাগাড়ে কী ভাবে তারা এতো এতো বগল বাজায়
আহা, শিখবার বহু আগেই তারা অভিজ্ঞ শিক্ষক হয়ে যায়!
গোপনে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে অযোগ্যেরা রাতারাতি স্বীকৃতি বাগায়
আর অন্বেষী কবির কৃতী কর্পোরেট স্রোতে ভেসে যায়!
তবু কবি হারানো স্বপ্নের খোঁজে এ শহরে জনপদে তন্ন তন্ন ঘুরে
স্বার্থ দ্বন্দ্বেরর ক্রসফায়ারে নিহত নদীদের দীর্ঘশ্বাস সযত্নে তুলে আনে
গুম হয়ে যাওয়া সম্ভাবনাগুলোর সন্ধানে অবিরত পথ হাঁটে
মধ্য দুপুরে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকে দুঃসহ রোদের রিমান্ডে
আশা
একদিন বুকের পাজর ভেদ করে জন্ম নেয় ধ্বনি
ভূমিষ্ঠ শিশুর মতন তার গায়ে লেগে থাকে চেতনার রক্ত
একদিন সে আগামীর মশাল হয়ে জ্বলে উঠে
সেই আলোর ঝর্ণাধারাটির নাম হয় আশা
তার বিগলিত স্রোত অবারিত স্বপ্নের প্রান্তর পেরিয়ে
নেমে আসে অকর্ষিত ভাষার উপত্যকায়
যার রেখাচিহ্ন অসংখ্য নদীর মতো দিকে দিকে ছুটে।
সেই রেখাচিহ্ন ধরে যেতে যেতে দেখি তার কত উত্থান-পতন
মর্মমূলে অব্যক্ত যন্ত্রণা দুঃখ ক্ষোভ ক্ষুধার পীড়ন
প্রেম কাম অভিমান। হয়তো সুশোভিত বদ্বীপে আবার ভাঙ্গন।
নির্ভরতার উপত্যকায় ভূমি ধ্বস। ভেসে যাওয়া বাসনার হাহাকার।
এভাবেই অকথিত শূন্যতায় বহুদূর সময় গড়ায়।
হয়তো আবার কোথাও জেগে ওঠে বিশ্বাসের চর।
নতুন স্বপ্নের বুক ভেদ করে ওঠে আসে ফসলের চীৎকার।
অদম্য বল্লমে বিদ্ধ খুলে যায় বাধার প্রাচীর।
রমণীয় কোন স্বপ্নে বেড়ে ওঠে চারাগাছ, শস্যবীজ, সাহসী পৌরুষ।
বুক জুড়ে গৃহপালিত প্রেমের উত্তাপ। আপত্য সংসার।
স্নিগ্ধ সকালের মতো হেসে ওঠে জোয়ের মওসুম।
ভরা ঐশ্বর্যের মাঠ আর দিনগলো পাখিময়।
হয়তো আবার আসে চরভাঙা দুঃস্বপ্ন আর
অজানা ব্যাধির মতো ছিড়ে খায় সমস্ত অর্জন!
দরোজা
নীরবতার ভিতর দিয়ে অনুভবের দশটি দরোজা
যার সাথে সংযুক্ত সিদরাতুল মুনতাহা
সীমাবব্দতার মরু সমুদ্র পর্বত পেরিয়ে
মানুষ পৌঁছতে চায় মোক্ষম প্রান্তরে
তবু স্বরচিত রক্তপাত নফসের বিবাদ ও রাজনীতি
পাঠ করে বড়ই দুর্বোধ্য ঠেকে
মানুষ জড়িয়ে আছে নিজেরই সীমাবদ্ধতার জালে
কিন্তু তার শুভ ইচ্ছাগুলো থাকে এইসব জটিলতার উর্ধে
বিতাড়িত অমঙ্গল তাকে জড়িয়ে রাখে আবর্তে
সুতরাং মানুষ ইকরা বিসমে কাল্লাজি খালাক থেকে শেখে
এই শেখাই হচ্ছে তার সক্ষমতার ডানা
মানুষ শেখে লোক থেকে পরলোক অবধি
মানুষ শেখে সীমাবদ্ধতা থেকে সীমাহীন হয়ে উঠার আকাঙ্খা হয়ে উঠা নদী
এভাবে পাথরের মতো ভাংতে পারে কঠিন বাস্তবতা
এতো রক্তপাতের নদী স্বার্থের সংক্ষুব্দ সমুদ্র
রাজনীতির নামে ধু্ম্রজাল প্রোপাগাণ্ডা
তার শুভ ইচ্ছাগুলোকে দমাতে পারে না
মানুষের অবমুক্ত ইচ্ছার সত্তাটি বলে সে কোনদিন নিঃসঙ্গ না
তার সব থেকে কাছেই থাকেন পরম করুণাময় আল্লাহ
আর তার অনুভবের উজ্জ্বল রাস্তাটি তার ভেতর সত্তার মতোই খোলা
সম্ভাবনা চাষের কাহিনি
জেনে রাখো, আমি মূলত এক সম্ভাবনা উৎপাদনকারী চাষী
আমার পিতাও করেছেন এমনিতর নিখাঁদ চাষাবাদ
দাদা, পরদাদা করেছেন বুক ভরা আশার আবাদ
অক্লান্ত লাঙ্গলের ফলায় ফলায়
মাটিতেই লিখেছেন তাঁরা অনন্য পংক্তিমালা
এমন সুখদ শিল্পের গন্ধে দশ ঘরে পড়ে গেছে সারা
এই আঁক শিখে গেছে কত আনকোরা চাষা
বুবু বলতেন, শোন্ এই হচ্ছে গাজি বংশের আদি কবিতা
ঘর্মাক্ত শ্রমের ছন্দ উৎপ্রেক্ষা!
আমি তার আদিতম পায়ে পায়ে হেঁটে
কুঁড়িয়েছি সেই শিল্পের প্রেরণা
শৈশবে দেখেছি একটা অনাবাদি পতিত হাওর কীভাবে
অবারিত শস্যের চিত্রকল্প হয়ে ওঠে
দেখেছি শস্যের সুগন্ধে বাতাস কীভাবে ফলপ্রসু হয়ে ছুটে
আর পাখিরা তাদের অতীত ভুলে প্রত্যয়ের সংসার গড়ে
দেখেছি টিলার উপরে দাঁড়ানো হিজল ও ছাতিমগাছগুলো
শ্রমজীবী শিল্পের মুগ্ধতায় আকণ্ঠ বিভোর হয়ে
ভুলে যায় নির্জন বয়সের সীমা
উপলব্দির ফাঁক গলিয়ে দিগন্তে নেমে আসে
সেই স্বপ্ন ও সম্ভাবনার নীলিমা।
বটবৃক্ষ
বৃক্ষ তো অনেক হয়
তার মধ্যে বটবৃক্ষ হয় অতি সামান্যই
কিছু কিছু মানুষও তেমনই
উদাত্ত বৃক্ষের মতোই তাদের স্বকীয় অধিষ্ঠান
এই পৃথিবীর মহৎ পাঠশালায় কতো বিচিত্র অক্ষরে
লেখা হলো তাদের বন্দনা
কিন্তু বর্ণনা করা গেল সামান্যই
বটবৃক্ষের যেমন থাকে অগণিত পাতা আর ডাল
আকাশে বাতাসে তার উদ্দাম বিস্তার
শুধু দশদিক নয়, শতদিকমুখী তার সচল বিশ্বাস
কিছু কিছু মানুষও তেমনই
কোনদিন কোনকালে
পুরোপুরি হয় না তারা লাশ।
দায়
শার্লি হেবদো কিংবা ম্যাকরনের আক্রোশে
বিস্মিত নই আমি
তা হতে পারে একেবারে কোন স্বভাব যন্ত্রণা
যেসব ক্রোধের কোন সাধারণ উপশম থাকে না
তা রূপ নেয় পাথর ও অগ্নির আদলে
আমি বিস্মিত নই কোন অভিশপ্তের কৌশল ও ক্ষমতায়
তা হতে পারে বিতাড়িতের নিজস্ব ভড়ং
যে ঘৃণার পরিণাম কেবলই লাঞ্চনা
তা রূপ নেয় আকাঙ্খিত আত্মঘাতে
আমি বিস্মিত নই কোন অমঙ্গলের ছদ্মবেশী ছলনায়
তা হতে পারে কোন অর্জিত নিয়তি
যে কখনোই বুঝতে চায় না মানুষের সহজ সম্প্রীতি
কোন কল্যাণের পক্ষে আস্থা রাখা তার পক্ষে দায়!
সহজাত
একদিন প্রেম ছিলো সহজাত প্রকৃতির বন্ধু
কতকাল সে দৃশ্যকে করেছে নিবিড় আনন্দঘন
এই বুকে জ্বালিয়ে রেখেছে কত উদগ্র আকাঙ্খা
আর দমিয়ে রেখেছে সেই আটপৌরে যান্ত্রিকতা।
সেই সত্যের এখন আর কোন যুগমূল্য নেই
যার জন্যে বুক জুড়ে জ্বলে শুধু অথৈ বিবমিষা
যেন এক অন্ধ গোধূলির দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে সময়
পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে কেবলই দ্বন্দ্বের ভাইরাস।
সভ্যতা এখন ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে
যান্ত্রিক আক্রোশে পাহাড় ও সমুদ্রকে করে সমতল
অবশিষ্ট শান্তির দিকে নিক্ষেপ করে ক্ষমতার ক্ষেপণাস্ত্র
তারপর দৃশ্য থেকে নিশ্চিত করে নিজেরই অবসান!
রূপকল্প
আমি হয়তো বৃক্ষই হতে চেয়েছিলাম
এক নির্লিপ্ত নিরপেক্ষ সময়ের বুক জুড়ে
উদাত্ত আকাশ সাক্ষী রেখে সেই আদিম অরণ্য
যেখানে নিয়ত অফুরন্ত বন্যগন্ধ ছড়িয়ে দেয়
আমি তো আসলে ছড়িয়েই যেতে চেয়েছিলাম
গোপন সেলাইয়ের ভেতর থেকে নিবিড়তম অনেক দৃশ্যে
আমার হাত এখনো সেই আশাবাদের ডালপালা মেলে আছে
আর হৃদয় ধরে রেখেছে উদ্ভিদের সবুজাভ মৌন ইবাদত
আজও আমার অন্তর থেকে বয়ে যায় গোপন ঝরনাধারা
আর অভিব্যক্তির ভেতর থেকে কোটি কোটি পাতার শিহরণ
এখনো চেতনায় চমকায় পাখিদের নিঃশর্ত সৌহার্দ্য
আর বুক জুড়ে কোন এক নীরব নদীর অনাবিল সৌন্দর্য।
দৃশ্যবোধক চোখ দুটো
হয়তো অর্ধেক সত্তা ব্যর্থ হয়ে যেতো
আর অনুভূতির পৃষ্ঠাগুলো
থেকে যেতো অনুর্বর জমিনের মতো
হয়তো অক্ষরের চাষাবাদ হতো না এ পৃথিবীতে
জ্ঞানবৃক্ষে বসতো না সেই অরূপের পাখি
প্রকৃতির পাঠশালায় প্রবেশের দরোজা
হতো না উন্মুক্ত
চেনা হতো না প্রিয় মুখ, প্রিয় বৈচিত্র,
তার রূপ-অরূপ
হাওর-নদী-সমুদ্র দেখে হতো না মন আত্মহারা
পৃথিবীকে কোনদিন মনে হতো না রঙিন পৃথিবী
শুধু এই দৃশ্যবোধক চোখ দুটো ছাড়া।
দুঃখ ফুলের মধুঘ্রাণ
লাগিয়ে দিয়েছি অন্তহীন দুঃখের চারাগাছ
তাকে দোলা দিচ্ছে হৃদয়ের মুক্তমনা বাতাস
রক্ত সেঁচে জল সিঞ্চন করেছি বাগানে
সেখানে প্রতিদিন স্বপ্নের পাখিরা গান করে
আশীর্বাদের রোদ ঝরে পড়ে গাছে গাছে
আর আমার আশা তাতে সযত্ন পাহাড়া দেয়
এই উন্মুক্ত হৃদয় হাওর দুখের দিগন্ত
আমাকে দেয় অন্তহীন স্বপ্নের মায়াফল
বুক ভরে রাখি কতো কষ্ট নদীর কলতান
অরূপ তৃষ্ণা জুড়ায় আমার দুঃখফুলের মধুঘ্রাণ।
স্বাধীনতা
স্বাধীনতা, মূলত রক্তের ভিতরে আকাক্সক্ষার আগুন
স্বাধীনতা, মূলত ক্ষুধার আহার্যে এক চিমটি নুন
স্বাধীনতা, নিপীড়িতের বুকে জ্বালা আশার প্রদীপ
স্বাধীনতা, বাঁচার জন্যে রক্তস্নাত সবুজ বদ্বীপ
স্বাধীনতা, অদম্য সাহসের একগুচ্ছ ফুল
স্বাধীনতা, মায়ের স্নেহের মতো চিরকাল নির্ভুল
স্বাধীনতা, স্বদেশের বুকে বয়ে যাওয়া মুক্ত বাতাস
স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার বুক ভরা নিঃশ্বাস
স্বাধীনতা, কোটি মানুষের সম্মিলিত পদচারণা
স্বাধীনতা, উত্তোলিত পতাকার নীরব সান্ত্বনা
স্বাধীনতা, মৃত্যুর মুখ থেকে ছিনিয়ে আনা এতটুকু আশা
স্বাধীনতা, গুম হয়ে যাওয়া মানুষের নির্বাক ফিরে আসা
স্বাধীনতা, অদম্য এক প্রেরণার নাম
স্বাধীনতা, জীবনের পক্ষে অন্তহীন সংগ্রাম
স্বাধীনতা, আবহমান, চিরকাল এবং চিরন্তন
স্বাধীনতা, কুসুমের মতো উদ্ভাসিত মানুষের মন
স্বাধীনতা, শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে আর সম্ভাবনার পক্ষে
স্বাধীনতা, প্রকাশ্যে, পরোক্ষে এবং প্রত্যক্ষে
স্বাধীনতা, সব সময় বিস্তৃত এবং ব্যাপক
স্বাধীনতা, চিরকাল স্মরণীয় ও স্মারক।
চাষ দেয়া কবিতার জমি
অতি যত্নে চাষ দেয়া আশার জমিন
কতো ত্যাগ বুনেছি এই মাঠে
কল্পনা আবেগ প্রেম বাসনার পুষ্পিত ফুলে
কবিতার পংক্তির মতন এই শস্যের পদাবলী
দুই পাতার অন্তমিলে আটকে যায় চোখ
ক্লোরফিল রঙ মেখে মুছে যায় ব্যথার অসুখ
দুঃখের পানিতে সেচ দিয়ে গড়ে তুলি
উত্তরাধিকার চিত্রকল্প আমার
যখন নেচে ওঠে অবারিত শস্যদানা
বিমোহিত কবিতার শিল্পচেতনা
কেউ জানে না কতটা অর্থগামী
এই শস্যের উৎপ্রেক্ষা
শব্দ ও বর্ণের গন্ধে উদ্বেলিত
আবাদের সবুজ চেতনা
সৃজনের ছন্দে গাথা
আদিগন্ত এই শস্যের বন্দনা
যার মুগ্ধতা লেগে থাকে
দিবসের অন্তিম অবধি
চাতুর্য বা কৃত্রিমতা কোনদিন
স্পর্শ করে না এই ভূমি।
অবারিত করে দিলেন ক্ষমা
দশদিকে যাত্রা তার সহৃদয় মানবিক কাহিনি বিস্তার
মুঠোতে আছেন ধরে অব্যাহত রহমতের ধারা
কে জানতো সুনাম সুখ্যাতি তাঁর কেবলই প্রসারিত হবে
আর অবারিত মেঘের মতন জমে উঠবে মানুষের আশা
তাঁর সহৃদয় উচ্চারণ থেকে ছড়িয়ে পড়লো কথার সৌরভ
তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো শান্তির সুদৃঢ় সোপান
বিশ্বাসের স্নিগ্ধ মেঘ নেমে এলো বিরান উপত্যকায়
পুরুজ্জীবিত হলো বরাভয় সত্যের আবাদ
কে জানতো এভাবে বিধ্বস্ত হবে বিভেদের কায়েমি প্রাচীর
হিংসার পিলারগুলো একে একে খসে পড়বে আর
বিতাড়িত অমঙ্গল গুটিয়ে ফেলবে তার ধূয়ার কুন্ডলী
আইয়ামের খাজ থেকে খসে পড়বে পুরনো বিবাদ
তাঁর সাহসের পতাকায় লেখা হলো অনন্ত বিজয়
বিশ্বাসের সবুজ ছায়ায় মুক্তি পেলো শাদা কবুতর
সমবেত আশাবাদের হাতে তিনি তুলে দিলেন নির্ভরতা
আর মানুষের মনে অবারিত করে দিলেন ক্ষমা।
আশ্চর্য আলোর বার্তা
যখন হৃদয় পুড়ে ধূলি হয়ে গেছে সেই পথে
বিক্রি হচ্ছে মানবতা নিলামের সরব বাজারে
ক্রীতদাস জামানার শ্বাসরুদ্ধকর তেমন যাতনা
বলদর্পী উল্লাসের যৌথধ্বনিতে একাকার।
যখন যুগের নীতি পাশবিক আদিম উল্লাস
নিষ্ঠুরতা মাল্য পায়, স্তব্দ হয়ে থাকে জনপদ
বল্লমের উর্ধ্বে ঝুলে জাহলের বর্বর বন্দনা
এইসব অপকর্মে চোখ রাখা যায় না যে আর!
সেই পাথরখন্ডকে সরাবার শক্তি খুঁজে তিনি
বসে যান ধ্যানমগ্ন আবহমান নির্জনতার গভীরে
তখন আজল ভরে উঠে এলো সান্ত¡নার সমুদ্র প্রবাল
আর দয়ার বৃষ্টিতেস্নিগ্ধ হল দগ্ধ চরাচর।
পাথরের বুক ফেটে উদ্ভাসিত হলো সেই সবুজ মহিমা
মানচিত্রে ইতিহাসে নেই যার যুগ পরিসীমা।
ডাল পাতা ফুলে যার নেই কোন যুগ পরিসীমা।
আশ্চর্য আলোর বার্তা ডানা মেলে উড়লো আকাশে।
সঞ্চয়
অজানা বাতাসে মন কাঁপিতেছে নীরব শয্যায়
শুকনো হৃদয়ে ছুঁয়ে বয়ে যায় নাভিশ্বাস আর
আসন্ন মৃত্যুর গন্ধ ছায়া ফেলে আহত মজ্জায়
বুকের গভীরে ক্রমে জমা হয় শাদা হাহাকার!
হিমেল বাতাসে ভয় দানা বাধে গভীর গোপনে
এমন অজানা দিনে দূরাগত আশঙ্কার সাথে
তুমিও কাঁপছো বসে ধূয়াশায় ছিন্ন ক্লিষ্ট মনে
চেতনাকে ধরে আছো, এতটুকু আশাকে বাঁচাতে!
স্রোতোবাহী মহাকাল, তার গতি পাঁক খেয়ে চলে
ঘূর্ণাবর্তে উড়ে ভয় বাড়ে শুধু ঘটনা বিস্তার
সত্তার ভেতরে যেন আশাগুলো ধুকে ধুকে জ¦লে
শুকনো মলিন তবু খুঁজে ফেরে সামান্য নিস্তার।
অজানা ভয়ের ভারে অতি ধীর বইছে সময়
একটু অভয় যেনো হয়ে ওঠে মহৎ সঞ্চয়\
অপার্থিব চেতনার গান
তুমি আমার প্রাত্যহিক অনুভূতিকে করেছো আশ্চর্য রঙিন
আমার ইচ্ছার ভেতরে বইয়ে দিয়েছো এক প্রেরণার নদী
স্বতোচ্ছল, ঢেউয়ে ঢেউয়ে উচ্চারিত
আকাক্সক্ষায় ধাবমান যার গতি
তুমি তাকে অনুশোচনায় দিয়েছো উত্থান
অস্তিত্বের চরাচরে শুনি তারই অপার্থিব গান
দৃশ্যের ভেতরে কত দৃশ্য খুঁজে মনের তাড়িত চোখ
ল্যান্সে তার কত রঙ প্রতিদিন প্রত্যাশাকে করেছে রঞ্জিত
জীবনকে পলকে পলকে করেছে অর্থবহ
শুধু এই চোখের সক্ষমতায় দিয়েছো সৌন্দর্যের সুখ
যার উম্মিলন ছাড়া কোন দৃশ্য কোন রঙ প্রকৃতি নেই
সমুদ্রের চেয়েও গভীরতম যে অদৃশ্য ইন্দ্রিয়
আকাশের চেয়েও বিশাল যে অনুভবের অন্দর মহল
আর দীপ্ত বিবেকের বিষ্ময়কর পরিত্রাণ
সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে শুনি সেই অপার্থিব চেতনার গান।
দুঃখীদের রাজা
দুঃখীদের রাজা তিনি
সহিষ্ণুতার মহান সম্রাট
মলিন নিঃস্তব্দতায় বেড়ে ওঠা
বৃক্ষ যেন বিশাল বিরাট
পাথরকে ঘষে ঘষে
জ্বালালেন প্রাণের আগুন
নিঃসার জীবন যেন
খুঁজে পেল সার্থকতা নুন
মুঠো মুঠো যন্ত্রণায়
অবিচল জ্বলে তার মন
ক্ষান্ত নন, ক্ষুব্দ নন, তবু তিনি
মিলালেন জীবনে জীবন
জগত শুনিল সেই মানবের
অপার্থিব গান
দুঃখীদের বুক ভরে নেমে এলো
জীবনের ঘ্রাণ।
মেঘ স্বপ্নের দুনিয়া
মেঘ স্বপ্নের দুনিয়া
চাইলেও যাওয়া যায় না
দীর্ঘ লতার সত্ত্বা টানে বন্দনে প্রেমে
অবিরল স্বপ্নের দরোজা
অনন্ত আশার মতো যেন
সবুজ স্নেহের দিন
বুক ভরা অনেক প্রতীক্ষা
জন্মে জন্মে ছড়ানো প্রান্তর
থোকা থোকা আশার ফুল ফোটে
সুখদ স্বপ্নের মতো ভরে যায় আঙ্গিনা
চাইলেও যাওয়া যায় না
রক্তগন্ধময় নদী
এই বুকে বয়ে বয়ে যায়
এমন ঋণের দেনা ছিড়ে
চাইলেও যাওয়া যায় না!