spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতানির্বাচিত ৫ কবিতা : রফিক-উল-ইসলাম

নির্বাচিত ৫ কবিতা : রফিক-উল-ইসলাম

যা বলতে চেয়েছি
…………………….

আমি নদীর কথা বলতে চাইনি, কেননা আমি
পাহাড়ের কথা বলছি। আমি পাহাড়ের কথা বলতে চাইনি
কেননা আমি নদীর কথা বলছি।

তোমরা আমাকে নদীপ্রবণ ভাবলে। তাই বাঁধ ভেঙে দিয়ে
ভাসিয়ে দিলে ঘর। ভাসতে ভাসতে কত অজানা চরে
নাম লিখ রাখলুম। আবার ঢেউয়ে মুছে গেল সব। তোমরা আমাকে
পাহাড়প্রবণ ভাবলে। তাই প্রস্তরখন্ড ভেঙে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলে
ঘর। নিশ্ছিদ্র সেই গুহার ভেতর অন্ধকার থেকে কত কাহিনি
টুকে টুকে রাখলুম। আবার তা ডুবে গেল গহিন আঁধারে।

এভাবেই আমি যা যা বলতে চেয়েছি, বিরূপ স্রোত ভেবেছে
অন্য কিছু। আমি যখন অন্ধকার লিখতে চাই, তোমরা ভেবেছ
বারুদ। আমি যখন প্রস্ফুটিত ফুলের কথা লিখে উঠতে চেয়েছি,
তোমরা ভেবেছ কাফের!

জলের লেখা
……………….

পদ্মপাতায় থমকে আছো জল? লিখবে কিছু?
আঁচড় না-ফেলে লেখা, সে তো তোমারই
করতলগত! আমি শুধু হাওয়ায় হাওয়া গড়িয়ে
যাওয়ার ক্ষণ। যা খুশি লেখো, ইচ্ছে না হলে
উড়ে চলে যাও রমণীর নির্জনে।
আঁচড় না-ফেলে লেখা আমি ঠিক পড়ে নেব
কোনো এক অতিশয় ভোরে।

একটা জীবন পদ্মপাতার অধোবদন লিখতে লিখতে
হে পরাক্রমী জল, ক্লান্ত হয়ে এলে! খোলা পাতা
পড়ে রইল। ভেবেছিলুম তোমার পরেরটুকু আমি
লিখব। তারপর গুঞ্জন শেষ হলে আমাদের যৌথ জীবন
বেজে উঠবে কোনো এক অনাগত পত্রে…

ধ্যান
…….

পাথরের মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ছিলে, নাকি আমি
নিজেই পাথর! তোমার অশ্রুত ধ্বনি পড়তে গিয়ে
একাকী এই নির্বাসনে আছি। দৃষ্টি স্থির, পলক পড়ে না,
আঙুলের ডগা থেকে ঝরে গেছে স্পর্শের অভিমান।
কীভাবে জাগাব আমি, হে প্রবহমান, এভাবে কি
জাগিয়ে তোলা যায়!

অথচ স্পষ্ট টের পাচ্ছিলুম তোমাকে। নবীন জলে
দুলে উঠেছিল ছায়া। যা ছিল রচনা করবার,
পাথরের আঙুল তা ধ্বংস করে দেয়। একটা জীবন শুধু
পাথর হতে লাগে, পরিপূর্ণ একটা জীবন। তাও দিতে
রাজি আছি, যদি তোমার ধ্বনি থেকে একটু আলো পাই।
আমি তো তেমন গৃহনিপুণ নই, শুধুই পাথর,
আগামি কোনও কালে কুলুকুলু নদীর প্লাবন…

আপাতত এরকমই এই স্বেচ্ছা-নির্বাসন!

ও-পাশ ফেরা
……………………

বাতাস থেকে কুড়িয়ে নেব তোমাকে। আর কিছু না থাক,
অন্ধকার একটি রাস্তা আছে আমার। মাটির অরণ্য খুঁড়ে
গহনা এনে সাজিয়ে তুলব তোমাকে। আর কিছু না থাক,
চমৎকার একটি গাঁইতি আছে আমার।

ভোরবেলা, খুব ভোরবেলা অবহেলার তুলি উঠে গিয়ে
দেওয়ালে ছবি আঁকে। আমি চক্ষুহীন, বালিশ উলটে নিয়ে
ও-পাশ ফিরে শুই। তুলির শৌর্য বুঝি না। তাকে ইচ্ছেমতন
টেবিলের নীচে, নর্দমায় অথবা জঞ্জালের স্তূপের দিকে
নিক্ষেপ করি। আহা, তুমিও যদি কোনওদিন
তুলিটিকে আপনসখা ভেবে নিতে পারতে, অন্তত একটা জীবন
বৃথা যেত না।

বাতাস থেকে যেভাবে, মাটি পাথরের আস্তরণ খুঁড়ে যেভাবে,
অন্ধকার রাস্তায় হোঁচট খাওয়া শব্দের ভিতর থেকে যেভাবে
তোমাকে তুলে আনা যায়, তা কি অঙ্কিত করা যায়
কোথাও? ক্লান্ত বাড়ি ফিরে অবহেলিত তুলিটির ওপর
আরও ক্রোধ বেড়ে যায়। এ জীবনে তো ঠিকঠাক
সঙ্গ দিতে চাইলে না আমাকে। আবার অন্য জন্ম?
নাঃ থাক, আমি ও-পাশ ফিরে শোব।

বাংলাদেশ
………………

পোড়াবাড়ির দেশে তুমি চমচম, রাঙামাটির দেশে তুমি
ফতুয়ার রঙিন সুতো। একুশের মেলায় বইপ্রকাশের স্টলে
আমাদের জীবিত হয়ে ওঠা। ওই হাত ছাড়তে পারি না
আর। হাতের ভেতর হাত রাখতে গিয়ে, বুকের ভেতর
মুখ লুকোতে গিয়ে আমার সর্বাঙ্গ জুড়েই শহীদ মিনার।
পুষ্প দাও, পুষ্প দাও, পুষ্প দাও। আমি পুষ্পের আহ্বানে
অনন্ত জীবন কাটিয়ে দিতে পারি। আমি রাঙামাটি থেকে বান্দরবান,
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন তোমার সামান্য ইঙ্গিতে
ঘরে আনতে পারি। তুমি কি ফিরিয়ে দেবে? এসো
যৌথ খামারবাড়ির পথিক, বাংলার নয়, ভারতেরও নয়,
সীমানাচিহ্নহীন পারাপারে একসাথে বেঁচে উঠি…

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা