spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদবই নিয়েপলিয়ার দিওয়ানা মহুয়ার মীমে

লিখেছেন : তাজ ইসলাম

পলিয়ার দিওয়ানা মহুয়ার মীমে


তাজ ইসলাম

মহুয়া প্রকৃতির সন্তান। মহুয়া একটি বৃক্ষের নাম। তার গর্ভভেদ করে প্রস্ফুটিত ফুলের নাম মহুয়া ফুল। যেমন জবা গাছের ফুলসন্তানের নাম জবাফুল।

বলা হয় ফুল পবিত্র,ফুল সুন্দর।
নারীরা পরিচিত হয় ফুলের নামে। চামেলী,চম্পা,জবা,জুঁই একই সাথে ফুল ও নারীর নাম।
মৈমনসিংহ-গীতিকা বাংলাদেশের ও বাংলা ভাষার অমূল্য সম্পদ। মৈমনসিংহ-গীতিকার উজ্জ্বল নারী চরিত্র মহুয়া। গীতিকার পালায় মহুয়ার আগমন চুরি হওয়া শিশুকন্যা হিসেবে।

“পাইয়া সুন্দরী কইন্যা হুমরা বাইদ্যার নারী।
ভাব্যা চিন্ত্যা নাম রাখল “মহুয়া সুন্দরী”।
এই মহুয়া সুন্দরী দ্বিজ কানাই রচিত মহুয়া পালার অন্যতম চরিত্র। মহুয়া,মলুয়া,চন্দ্রাবতী ইতিহাসখ্যাত মৈয়মমসিংহ গীতিকার অংশ।

রবীন্দ্রনাথের মহুয়া কেমন? তা রবীন্দ্রনাথের কাব্যকথায়ই চিনতে পারবেন। কবি বলেন:

“রে মহুয়া,নামখানি গ্রাম্য তোর লঘুধ্বনি তার,/ উচ্চশিরে তবু রাজ কুলবনিতার/ গৌরব রাখিস উর্ধ্বে ধরে “।
মহুয়া নামে রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থ আছে। মহুয়া নামে কবিতা আছে। মহুয়া বাংলা সাহিত্যের বহুল পরিচিত উজ্জ্বল নাম বা চরিত্র। বহুজনের কলমে হাজির হয়েছে বহুরূপে।

পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতায় মহুয়া এক বিচিত্র চরিত্র। তার কবিতায় মহুয়া এসেছে নানা রূপে,ভিন্ন চরিত্রে। পলিয়ার তার কবিতায় মহুয়া মহুয়া বলে নাম জপেন। মহুয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখেন:

” আমরা কোথায় যাব মহুয়া?( তিন)”
আবার বর্ণনা করেন,
“রোজা ভাঙার আগে মহুয়া ডেকে গেল/.. ( বার)।”
আবার বলতে থাকেন,
” মহুয়া, ধরো — কখনো দেখা হবে না/..(তেরো)”।
মহুয়া পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা নারী,কবিতা কুমারী,কবিতা জায়া কিংবা প্রেমিকা। পলিয়ার ওয়াহিদের কল্পনায় মহুয়া নারী,নদী,জল হাওয়া ও প্রেয়সী। মহুয়া বিচিত্র চরিত্রের নাম। পলিয়ার মহুয়াকে যেমন নারী বলতে পারেন, তেমন ভাবতে পারেন হাওয়া হিসেবে। আবার চিত্রকল্পের মতো চিহ্নিত করেন ফুল হিসেবে। মহুয়াকে নিয়ে পলিয়ার ওয়াহিদের সরল বয়ান,
“মহুয়া একটা ফুলের নাম।”
পলিয়ার ওয়াহিদ তরুণ কবি। তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী। প্রখর কল্পনা শক্তি বলে তার কবিতা কিতাবে একজন মহুয়াকে শব্দের তুলিতে চিত্রিত করেছেন বর্ণিল রঙে। রাঙিয়ে রাঙিয়ে মহুয়াকে করেছেন অনন্য আর করেছেন একান্ত আপন। মহুয়াকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে সিরিজ। মহুয়াকে নিয়ে কবির আশা বা উচ্ছসিত বাণী ” আমি আর মহুয়া পাখনাবিলাসী হব”(দুই)”।

“চুমুক আটকে আছে মাকামের ফলে”
জোতিষ্কের সোনার চিরুনি” “এখানে থাকে মৌমাছি মাহফিলের ফজিলত”
মহুয়ার চোখ একেকটা বেহেস্তের সন্তান”
এগুলো পলিয়ারের মহুয়া উর্বশীর শরীরে জড়ানো কবিতা শাড়ির শব্দের রঙিন কারুকাজ। চক্ষু শীতল করা পঙক্তি।
কবি পলিয়ার ওয়াহিদের সেই শীতল গীতল পঙক্তির উদাহরণে বলতে পারি ” আমার প্রেমিকার মুখ পাকা ধান ক্ষেতের মতো স্বচ্ছল” এই প্রেমিকার নাম মহুয়া। পলিয়ার জীবনানন্দ নন,তার অনুকরণ বা প্রভাবিতও নন। তবু যেন একটা সুর দোলা দেয়। যে সুরে বাজতে থাকে অগ্রজ কণ্ঠসুর। সে সুরে ভেসে ওঠে মহুয়ার মুখ,মহুয়ার ঠোঁট।
মহুয়ার ঠোঁট গমের রুটির মতোন সুস্বাদু”( মহুয়ার মুখ)।
আর মৈমনসিংহ-গীতিকার মহুয়া নদ্দার চাঁদের মহুয়া কেমন তা নদ্দার চাঁদের কণ্ঠেই শুনি “

“গরু রাখ রাউখাল[১৪৭] ভাইরে কর লড়ালড়ি[১৪৮]।
এই পন্থে যাইতে নি দেখ্‌ছ[১৪৯] মহুয়া সুন্দরী॥”

মহুয়া সিরিজ লিখেছেন কবি পলিয়ার ওয়াহিদ। সিরিজ ছাড়াও সমগ্র বইয়ে মহুয়ার বিচরণ। পৌনঃপুনিকতা দ্বিরুক্তির বিরক্তি আনে পাঠক রুচিতে। আসে একগুঁয়েমি। কবি তো প্রেমিক। প্রেমিকার বারবার প্রত্যাবর্তন বা নামজপ প্রেমিকের বিরক্তি লাগে না। বরঞ্চ লাইলি লাইলি জপতে জপতে তিনি হয়ে ওঠেন একবিংশ শতাব্দীর মহুয়া ওয়াহিদ।

“গন্ধম হল — স্বর্গ ও দুনিয়ার মাঝে ঝুলে থাকা মাংসের ফল”( নবম জান্নাত)। এই সংক্ষিপ্ত বয়ানে ভেসে ওঠে আদম হাওয়ার পৃথিবী আগমনের ইতিহাস। বিশ্বাসের সূত্র আদম হাওয়ার দুনিয়ায় আসার কাহিনী। কবির কাজ বিস্তারিত বলা না। কবির কাজ বিস্তারিতকে সংক্ষেপের মোড়কে বিস্তর বিতরণ। ওয়াহিদ প্রজ্ঞার সাথে তা করতে সক্ষম। তবে মাংসের ফল ঐতিহাসিক সত্যের সাথে,বিশ্বাসী বক্তব্যের সাথে অসামঞ্জস্যতা তৈরী করে। গন্ধম কোন মাংসের ফল না। গন্ধম হল বৃক্ষজাত ফল। দুনিয়া ও স্বর্গের মাঝখানে এ ফল বিরহ-বিচ্ছেদের ফল,স্বর্গ ও দুনিয়ার মাঝে সংযোগ সেতু। একথাও সত্য কবির প্রয়োগকে ইতিহাস দিয়ে,ব্যাকরণের নিক্তি দিয়ে মাপামাপ করা কবিতার অলংকার,উপমা,চিত্রকল্প তৈরীর কবিত্বের প্রতি অবিচার। সুতরাং মাংসের ফলের প্রায়োগিক তাফসির কবির হাতে আংশিক রেখে দেয়াই সঙ্গত। আমরা রেখেই দিলাম।

“তাহলে আমাদের প্রেমিকারা কোন সুরে মাতন করবে” মাতন কি মাতম হবে?
না মাতনই হবে। মাতম ও মাতন পাশাপাশি শব্দ হলেও অর্থের ফারাক আছে। মনে হয় টাইপ মিস্টেক। আসলে তা না। টাইপ মিস্টেকের মতো বিড়ম্বনা এ বইয়ে খুব কমই।

মহুয়ার কথা বলতে বলতে মনে পড়ে মরমী গমের কথা। মরমী গম বললে একটা উচ্চাঙ্গ আবহ আসে,গভীর ভাব জাগ্রত হয়। মূলত পলিয়ার ওয়াহিদকে আমরা মরমীধারার কবি হিসেবে পছন্দ করি। তার কলম থেকে যখন প্রকাশ হয় মরমী গম, তখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি মরমী ভাব। আন্দাজ করি মরমী ধারার বয়ানের মধুরতা,উৎকৃষ্ট উৎকর্ষতা। কিন্ত কবি যখন লেখেন, ” রুটি খাওয়া মানুষগুলো অভাবে গম খাবে।… বিভিন্ন রকমের গম হবে ক্ষেতে খামারে।( দশ)। তখন সাধারণ পাঠক মারেফাতের ধ্যান থেকে বিচ্যুত হয়। হাকিকত ও তরিকতের ধ্যান তাদের ভঙ্গ হয়। চলে আসে শরিয়তের স্পষ্ট জমিনে। পলিয়ারের গমকে তখন বুঝে নেয় সাধারণ কৃষি জমিতে উৎপাদিত কৃষি ফসল গম হিসেবেই। গমের মরমীভাব খোঁজার চেষ্টা ও তেষ্টা প্রকট হয় না। এই গম ও গন্ধমের ভিতরও বিচরণ করেন মহুয়া। মহুয়া ছাড়া তিনি চলতে অক্ষম। তাই বলেন, মহুয়া চলো,আমরা স্বর্গের শায়া খুলে ফেলি” (ছয়)। মহুয়াকে জীবন সঙ্গী করাতে দোষ নাই,কিন্ত কবিতা সঙ্গী করা অবশ্যই বিরক্তিকর। তবে স্বর্গের শায়া খুলে ফেলা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এ প্রশংসা সাহসীকতার,চিন্তার প্রখরতার।

“মানুষ — একটা অভিন্ন আলিফ। ( এক)।” আলিফ লাম মীম ও মহুয়ার মরমী কবিতা কিতাবের প্রথম কবিতার প্রথম পঙক্তি। কোরানিক শব্দ গুচ্ছের প্রয়োগে কবিতা কিতাবের নামকরণ যাত্রা। তবে কবিতায় কোরানিক স্টাইলের অতোটা মজবুত উপস্থিতি নাই। কিন্তু বক্তব্যের মজবুতি হাজির করেছেন তার রচিত পঙক্তিতে।” মানুষ — একটা অভিন্ন আলিফ। সভ্যতার গাছ ও অসম্ভব অসভ্য।” এই দুই বাক্যে বিবৃত হয় বিস্তর চিন্তার কথা। প্রকাশ হয়ে পড়ে মানব জাতীর সম্ভাব্য চরিত্র। মানুষ একই সাথে চাষাবাদ করে সভ্যতার। অসম্ভব অসভ্য আচরণও এই মানুষের দ্বারাই সম্পাদিত হয়। আলিফের বিচরণ পৃথিবী জুড়ে। কবির ভাষায় ” এই পৃথিবীলামে তুমি অভিসারে আছ।( ঐ)”।

আলিফ লাম মীম এর অর্থ অনুদ্ঘাটিত। এর অর্থ উদ্ঘাটনের আগে পড়ে নিই ” গলে যাচ্ছে আদম/ উড়ে যায় রে হাওয়া….
আলিম মানে আল্লাহ/ আলিফ কাম আমি/ অর্থ সঙ্ঘাত পূর্ণ। বিশ্বাসের সাথে চরম সাংঘর্ষিক। বরঞ্চ আলিফের অর্থ গূঢ় থাকলেই ভালো হত। আল্লাহ হলে আর আমি হওয়ার সুযোগ কই? ইমান তো এই দাবী মানে না।

” দেহের ভেতর দীর্ঘ লাম… ” লামের পর থাকে মীম। মীমের প্রাথমিক সন্ধান মিলে ” নাভির একটু নিচে।” নাভির একটু নিচে মহুয়া মীমের মহাসাগর নিয়ে ঘুমে মগ্ন”(তিন)। পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা পুস্তকে যে আলিফ লাম মীম যাত্রা শুরু তাকে সনাক্ত করতে সহায়ক তার কবিতা ও কবিতা পঙক্তি। তা খোলাশা করতে অবশ্যই পাঠ করতে হবে তার কবিতা। পাঠ করতে হবে মগ্নতার সাথে।
নতুবা প্রশ্ন জাগবে,প্রশ্ন থেকে যাবে,” কোথা থেকে এলো আলিফ?”… লামের ঠিকানা কেউ জানেন? (মীম) সে এক কাশ্মীরী ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।(?) ওয়াহিদ তোমার কিছু বলার আছে?

আমরা কথায় কথায় বলি ভাতটাত,রুটিটুটি। কবিতায় এমন প্রয়োগ খারাপ না। জনমুখের এরূপ ভাষা কবিতায় প্রয়োগ পরীক্ষা প্রবণতা হিসেবে গণ্য করা যায়। কলম- মলম,রান্না- বান্না,তালে- মালে,ক্ষয়ে- ময়ে,জমা- মমা পলিয়ারের কবিতায় প্রয়োগকে সাধুবাদ জানানো যায়।
” আন্দোলনে গেলে — আমি ঘোড়ার মতো দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে ঘুমাই” বাস্তবতার চরম কাব্যিক উচ্চারণ। সমকালে যার ব্যাখ্যা না করলেও চলবে। চাক্ষুষমানদের চোখের সামনে সমগ্র চিত্রই পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির মতো ভাসতে থাকবে। ব্যাখ্যা করলে লিখতে হবে সমকালীন সমগ্র সত্য।এই সব পঙক্তি কবিতায় যারা সমকালের প্রতিনিধিত্ব করে তার বা তাদের কলম থেকেই বেরিয়ে আসে স্বর্ণালী রঙে।পলিয়ার ওয়াহিদ সমকালের সচেতন কবি।তার কবিতায় মর্মীবাদের মেকাপে আছে রাজনৈতিক বাস্তবতা।কবিতায় আছে চিন্তার মিশ্রণ,দর্শনের ছাপচিত্র।বয়ানে আছে সরলতা।
” এতো সিজদা কোথায় দাও?/ সব জায়গায় তো শয়তান দিছে!/ ( এই কুটিল প্রশ্নের উত্তরে) সরলভাবে বলেন, না গো আমি সিজদা দিই/ শুধু তোমার – ই জায়নামাজে।( নয়)।

” আমার অবিবাহিত ঠোঁট /”
“তোমার সবুজ উরু আর লাল নদী”
“যুবতী বাহুর ডোরাকাটা আয়না”
“আমি নতমুখী শালিক”
” নদী নিজেকে ধৌত করে– আমরা পারি না”

কবিতা বহুজন লিখে। কবিতার শরীরে প্রচলিত মসলিন,বেনারসি,টাঙ্গাইল শাড়ি অনেকেই পরাতে পারেন। পলিয়ার ওয়াহিদ যখন শব্দ বাক্যের সাদাসিদা জমিনে নিজের প্রজ্ঞা, মেধা,চিন্তা,দর্শনের মিলিত ফুল ফোটান তখন অন্য রকম হয়। প্রকাশ পায় নিজস্বতা। নিজস্বতা বা স্বকীয়তা একজন কবিকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করে। তখন তিনি পরিচিত হন অনেকের মাঝে অনন্য হয়ে। বহুজনের ভীড়ে সনাক্ত হয় একজনের স্বকীয় কণ্ঠ।
পলিয়ার ওয়াহিদে কবিতায় চিন্তা ও দর্শনের গভীরতা আছে। আছে ভাবনা ও বিচক্ষণতা। কিন্তু বয়ানে সরল। সরলতাও গুণ। এই গুণেই কঠিন কথা বলতে পারেন সহজে। সহজিয়া কথা, ” পোষাক পরেও মানুষ উলঙ্গ থাকে”( সতের)।

সুফিবাদ আর বাউল তরিকার চিন্তা ও দর্শনের মিশ্রণ আছে কবিতায়। এসব চিন্তা ও দর্শনের সমন্বয় আনতে চেষ্টা করেছেন কবি পলিয়ার ওয়াহিদ তার কবিতায়। ইসলামে সুফিবাদ চর্চা জারি আছে। কিন্তু এই বাংলা মুলুকে সুফিজমের নামে প্রচলিত আছে বহু সাংঘর্ষিক ও অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড। সুফিবাদের নামে প্রচলিত আছে অনেক ইমান বিধ্বংসী কার্যকলাপ। বাউলদের মাঝেও এমন সব কাজ চালু আছে যা সরাসরি ইসলাম বিরোধী। এইসব ভালো মন্দ,হালাল হারাম প্রভেদ ধরতে পারা,ধরা ও বাচবিচার করে চলতে হয় একজন ইমানদারকে। ইসলামী জীবন বিধানের মূল উৎস কোরআন ও হাদিস। হাদিসের বক্তব্য কোরআনের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হলে কোরআনের কথাকে দলিল মান্য করার কথা বলা আছে। এই বাংলা মুলুকে সুফিবাদের নামে প্রচলিত আছে বিভ্রান্ত কর্মকাণ্ড। বাউলদের চিন্তা বিশ্বাস আরও উদ্ভট। যা ইসলামের বিশ্বাসের পরিপন্থী। সাহিত্যে তথা কবিতায় সুফিবাদ আর বাউল তত্ত্ব হাজির করতে চাইলে বিশ্বাস ও ইমানদারি প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি। অবশ্য আমাদের দেশে ইসলাম,ইমান,আমলের ধার না ধারা মডারেট পরিচয়ের কিছু মুসলমান আছে। আছে সেকুলার পরিচয়ের মুসলমান। ওরা ধর্ম না মানলেও ধর্মকে ব্যবহার করে সাহিত্যে প্রয়োগ করে মনগড়া তথ্য। ধর্মহীন,আমলহীন মুসলমান নামধারীরা সুফিবাদের নামে করে ভণ্ডামি। কবিরা হয় কল্পনাপ্রবণ। কবিতায় সুফিজমকে তুলে ধরতে কল্পনার আশ্রয়ে নির্মাণ করলে কবিতা, খেয়াল রাখতে হবে বিশ্বাসের দিকে। কল্পনা আর বিশ্বাসের সমন্বয় সাধন করতে পারলে রচিত হবে উত্তম কবিতা। নতুবা শিল্পে শ্রেষ্ঠ হলেও বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক হলে তৈরী হবে বিতর্ক। কবিতা চর্চা করতে গিয়ে ধর্মীয় বিতর্ক এড়িয়ে চলে প্রজ্ঞাবান কবি।
“আলিফ মানে আল্লাহ “হলে আলিফ কাম আমি বিতর্ক মুক্ত নয়।
” এককভাবে আমি লাম আঁকা শিশু– যীশু” সরল বাংলায় কোন ইমানদার নিজেকে যীশু ভাবেনি,যীশুর মতোও না। যারা দেব দেবীতে বিশ্বাস রাখে তারা একই সমাজে নির্বিঘ্নে নিজেদের দেব দেবীকে পূজা করবে। ইসলামের উদারতা হল এ কাজে বাঁধা না দেয়া। কিন্তু নিজেরা দেব দেবীতে বিশ্বাস রাখে না। কাজেই সচেতন মুসলিম কবি ” দেবীরা আমায় খুব আদর দিতো”– লিখতে গভীরভাবে ভাববে। আদর দেয়া স্বীকার করলেতো দেবীর অস্তিত্বই মেনে নেয়া হয় প্রকারান্তরে ।
বিশ্বাস কখনো কখনো যুক্তিহীন সমর্পণ। যার কোন আক্ষরিক অর্থ নেই। মুসলমান কেন দেবীর অস্তিত্ব স্বীকার করে না? কারণ ধর্মে স্বীকার করা হয়নি। ইসলামী আহকাম কেন মানতে হবে? কারণ ইমানের দাবী পূরণে। কখনো কখনো সব যুক্তিবাদেই আত্মসমর্পণ।

“আলিফ লাম মীম ও মহুয়ার মরমী” শব্দগুচ্ছ কবিতার বইয়ের নাম। এর কোন আক্ষরিক অর্থ নেই। নেই আভিধানিক অর্থ। এর অর্থ কী? আক্ষরিক ও আভিধানিকভাবে কবি নিজেও বুঝিয়ে দিতে হয়তো ব্যর্থ হবেন।
“ঐ যে বলছিলাম — এর অর্থ প্রভু কাউকে জানান নাই” তবু মানতে হবে। এর আছে গূঢ় অর্থ। কবিতার জন্য আক্ষরিক অর্থ কখনো কখনো অপ্রয়োজনীয়ও বটে। আভিধানিক বা আক্ষরিক অর্থের বাইরে অতিরিক্ত যে দ্যোতনা তা কেবল মেধাবী কবিই তৈরী করতে পারেন। পলিয়ার ওয়াহিদ অভিনবভাবে এই শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে পাঠককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছেন।
এর অর্থ কী? এর অর্থ কবিতা নির্মাতা জানেন। পাঠককে জানাননি। কিন্তু এই কথা যখন প্রভুকে নির্দিষ্ট করেন কোন বিশ্বাসী কবি, তখন তাকে সচেতনভাবে সমন্বয় রাখতে হবে শিল্প ও বিশ্বাসের । যারা রাখেনি তাদের দ্বারাই বিভ্রান্তি তৈরীর থাকে সমূহ সম্ভাবনা। স্রষ্টার প্রতি ইঙ্গিত করে ওয়াহিদের কবিতা প্রশ্ন ” তিনিও কি জানেন?” তখন এর উত্তরে সংশয়হীন দৃঢ় চিত্তের জবাব হবে– হ্যাঁ, অবশ্যই জানেন।
কোন সংশয়ের সুযোগ এখানে নাই।
বিশ্বাসী মানুষ খোঁজে বা অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করে বিশ্বাসের ঝিনুক। এবং তাকে সাহায্য করে ” এই ঝিনুকে চড়ে মীমের মোকামে পৌঁছাতে।” মোকাম মানে গন্তব্য। গন্তব্যে পৌঁছাতে পারাই সফলতা। কবির গন্তব্য হল পাঠকের হৃদয়ে পৌঁছা। কবিতার বন্দরে পৌঁছা। কবি পলিয়ার ওয়াহিদ পাঠক হৃদয়ে পৌঁছতে পারবেন বা পারছেন বলেই মনে করি।

“আলিফ লাল মীম ও মহুয়ার মরমী গম” পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা কিতাব। যা প্রকাশ হয়েছে প্রথমবারের মতো অমর একুশে বইমেলা ২০২৪- এ। প্রকাশ করেছে ঘাসফুল প্রকাশনি। এর বিনিময় মূল্য ১৯৫ টাকা। প্রচ্ছদ শিল্পী শামীম আরেফীন। রকমারিতে বইটি কিনতে পাওয়া যায়। এই সময়ের কবি ও কবিতাকে জানতে পলিয়ার ওয়াহিদের এই কিতাব হাতের কাছে রাখুন। মেলায় ছিল। এখনো পাবেন।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. পড়েছি কবির বইটি।
    ভালো লেগেছে। এখন আলোচনা পড়লাম।
    আলোচনাটি বেশ শক্তিশালী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা