ড. ইসরাইল খান
‘পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ড, পূর্ব পাকিস্তান শাখার মুখপত্র প্রথমে ‘পূরবী’(১৯৬০) নামে ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয় নওবাহার-সম্পাদক কবি গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪) এবং মুসলিম ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণকামী লেখক-গবেষক, অধ্যক্ষ মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের (১৯১৯-৬৯) যুগ্ম সম্পাদনায় গিল্ডের পূর্বাঞ্চল শাখার অফিস বর্ধমান হাউস (এখন বাংলা একাডেমী), ঢাকা থেকে। দীর্ঘ যাত্রার আকাঙ্ক্ষা ছিল, কিন্তু একবার বেরিয়েই বন্ধ হয়ে যায়। পরে ‘লেখক সংঘ পত্রিকা‘ নামে প্রকাশিত হয়ে এক বছর চলে। তবে আবারও রূপ পাল্টায়, হয় ‘পরিক্রম’। পরিক্রমের ইতিহাস জানার আগে ‘পূরবী’ ও ‘লেখক সংঘ পত্রিকা’ সম্পর্কে অবহিত হই।
পূরবী ক্রাউন সাইজে ৪২ পৃষ্ঠার ছিল। দাম এক টাকা। এর প্রথম রচনা ছিল কবি গোলাম মোস্তফার ইকবালের ‘শিকওয়া ও জবাব-ই-শিকওয়া’। এরপর ‘কায়কোবাদ’ সম্পর্কে সৈয়দ মুর্তজা আলীর প্রবন্ধ এবং প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর প্রবন্ধ ‘আমাদের সাহিত্য’, মতিনউদ্দীন আহমদের ব্যঙ্গ-রচনা ‘বর্ষাতি’, বেগম ইউসুফ জামাল হোসেনের আলোচনা ‘আদমজী প্রাইজ’ প্রসঙ্গে।
বেগম ইউসুফ আলোচনা করেন পাকিস্তানের বিভিন্ন সাহিত্য-পুরস্কার প্রবর্তনের পরিপ্রেক্ষিত বিষয়ে। এই রচনায় জানা যায় লেখক সংঘ স্থাপিত হওয়ার পর তাঁদের আযোজিত ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার’ বাঙালী কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। বলা প্রয়োজন, দেখাদেখি এরপর বিভিন্ন ব্যক্তি, কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠান সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজসেবার জন্য আইয়ুব খানের আমলে বেশকিছু পুরস্কার দেওয়া শুরু করেন। লেখক সংঘের উদ্যোগে দেওয়া হতো ‘দাউদ পুরস্কার’। ‘পূবালী’ পত্রিকার মালিক-সম্পাদক নূরুল ইসলামও বার্ষিক ‘পূবালী পুরস্কার’ (১০০০ টাকার) প্রদানের কথা ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট আইউব খানের তরফে বিভিন্ন খেতাব ও পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। পূরবীর পাতায় ‘রাইটার্স গিল্ডের সংবাদ’-এ বলা হয়:
‘‘পূরবীর নামকরণের মধ্যে একটা তাৎপর্য আছে। পূরবী বেলা শেষের সুর। অস্তগামী সূর্যের বিদায়-রাগে এসুর অনুরঞ্জিত। এ সুরে বিদায় ও অবসানের করুণ মুর্ছনা আছে। কিন্তু সত্যই কি এ অস্ত গমনের সুর? সত্যই কি সূর্যের কোন উদয়াস্ত আছে? ভৌগলিক সীমারেখা টানিয়া আমরা আকাশকে খন্ডিত করিয়া রাখিয়াছি।
‘‘আমাদের দৃষ্টিও তাই সংকীর্ণ হইয়াছে। এই সীমানা প্রাচীর তুলিয়া দিলে কোথাও অস্ত নাই, উদয় নাই, পূর্ব নাই, পশ্চিম নাই। সব তখন একাকার হইয়া যায়. এক মহান ঐক্যের মধ্যে সব খন্ডতা বিলীন হইয়াা যায়। পূর্বাচলকে যখন একান্ত আপনার বলিয়া ভাবি তখনই অস্তাচলকে দেখিয়া দুঃখ পাই। কিন্তু এক আকাশের অস্ত ত আর এক আকাশের উদয়। সূর্য যেখানে ডুবিয়া যায়, সেখান হইতেই ত পশ্চিম আকাশের উদয় প্রভাত সূচিত হয়। কাজেই পূর্ব-পশ্চিমকে এক করিয়া দেখিলে কারো মনেই কোন খেদ থাকে না। মুসলমানের স্বদেশ তাই মাটির স্বদেশ নয় ; ভৌগোলিক স্বদেশ-প্রেমকে অতিক্রম করিয়া সে করে বৃহত্তর মানব-প্রেমের সাধনা। মনের দিক্চক্রবালের সম্প্রসারণের সাধনা। সূর্যের সঙ্গেই একমাত্র তার তুলনা হইতে পারে। কবি ইকবাল তাই সত্যই বলিয়াছেন:
“জাহাঁ মেঁ আহলে ইমাঁ সুরাতে খুরশীদ জিতে হুঁয়ে
ইধার ডুবে উধার নিকলে, উধার ডুবে ইধার নিকলে।”
অর্থাৎ এই দুনিয়ায় সূর্যসম সুরাৎ হল মুমিনদের। এদিক যদি যায় ডুবে ত ওদিক আবার উঠবে ফের।
‘পুরবী’র মর্মবাণীতে এই সুরই ধ্বনিত হইবে। যুগমনের স্বপ্নও তাই। আজ আমরা এক নতুন যুগের প্রবেশ দুয়াারে আসিয়াা দাঁড়াইয়াাছি। এ যুগ নভো-ভ্রমণের যুগ। চাঁদে-চাঁদে-গ্রহে গ্রহে তারায় তারায় ফিরিবার যুগ। প্রাচীন পৃথিবীর চৌহদ্দী, রূপ ও গঠন আজ তাই অনেক খানি মূল্যহীন প্রমাণিত হইতেছে। আজ অজানাকে জানিবার দিন, না-দেখাকে দেখিবার দিন। কাজেই প্রচলিত ভূগোলের আলোকে এই পৃথিবীকে একান্ত করিয়াা দেখা আর চলিবে না। আমাদের দৃষ্টিকোণকে খানিকটা পরিবর্তিত করিতেই হইবে। আমাদের হৃদয়তন্ত্রীতে যে সুর এখনও অনাহত রহিয়াছে, তাহাকে আবার জাগাইতে হইবে। পূরবী এই নূতন সুর সাধনায় যথাসাধ্য আত্মনিয়োগ করিবে।’’
‘পূরবী’ পাকিস্তন রাইটার্স গিল্ডের পূর্বাঞ্চল শাখার মুখপত্র হলেও ‘আপাতত ইহা ত্রৈমাসিক রূপে প্রকাশিত হইবে।…মূলত একখানি সাহিত্যপত্রিকাই হইবে। তবে গিল্ডের যাবতীয় সংবাদ ও তথ্য এই পত্রিকায় প্রকাশিত হইবে’’ । পূরবী পূর্ব পাকিস্তন শাখা গিল্ডের সেক্রেটারি ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক কর্তৃক প্রকাশিত এবং ইডেন প্রেস ৪২/এ হাটখোলা রোড, ঢাকা থেকে এ. আর, খান কর্তৃক মুদ্রিত হয় পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে ও নিয়ন্ত্রণে বি. এন. আর-এর মাধ্যমে। তবে মাহেনও-এর মতো সরকারি কর্মচারিদের ব্যবস্থাপনায় এটি ছিল না। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কিছু স্বাধীনতা তাঁরা ভোগ করতেন। ভোটাভুটির মাধ্যমে এর কর্মকর্তা, সম্পাদনা-পরিষদ ও কার্যকরী পরিষদ গঠিত হতো।
লেখক সংঘ পত্রিকা (১৯৬১- ১৯৬২)
লেখক সংঘের বাংলা মুখপত্র ‘পূরবী’র একটি সংখ্যা প্রকাশিত হবার পরই এটা ‘লেখক সংঘ পত্রিকা’ নামে প্রকাশিত হয় এগার বার। প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা জ্যৈষ্ঠ ১৩৬৮তে। প্রথম ও দ্বিতীয়-তৃতীয় যুগ্ম সংখ্যায় সম্পাদক হিসেবে শুধু গোলাম মোস্তফার নাম ছাপা হয়। মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সরে যাবার কারণ ডাল-রুটি নিয়ে কামড়া-কামড়িতে তাঁর অদক্ষতা। পত্রিকার পাতাতেই লিপিবদ্ধ আছে আইউব-সরকারের ছুঁড়ে দেয়া ডাল-রুটি ভাগাভাগি নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের লেখক বুদ্ধিজীবীদের দলাদলি-কষাকষি-রেষারেষি ও প্রবল প্রতিযোগিতার মজাদার বিবরণ।
লেখক সংঘ পত্রিকার চতুর্থ সংখ্যা থেকে গোলাম মোস্তফার সঙ্গে কবি বেগম সুফিয়া কামালের নাম ছাপা হতে থাকে। প্রথম সংখ্যার ‘আমাদের কথা’য় বলা হয়:
‘‘পত্রিকা আরো আগেই প্রকাশ করা উচিত ছিল। কিন্তু নিয়মিত মাসিকরূপে পত্রিকা প্রকাশ করতে হলে আনুষঙ্গিক আয়োজন করতে হয় অনেকখানি। পত্রিকার নামকরণ সম্বন্ধেও মতবিরোধ ছিল। তাই সকল মতের সমন্বয় করতে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে।… ‘লেখক সংঘ পত্রিকা’ শেষ সিদ্ধান্তের ফল। প্রথম সংখ্যার পৃষ্ঠা ছিল ৮০, পরের যুগ্মসংখ্যার ১২০, পরেরটার ৬৬ মোট ৯ খন্ডে ৬৯০ পৃষ্ঠা। সুফিয়া কামাল লেখক সংঘ পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদকরূপে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। এই পত্রিকা আশরাফউজ্জামান খান কর্তৃক পাকিস্তান লেখক সংঘ, পূর্ব পাকিস্তান শাখার অফিস বর্ধমান হাউস থেকে প্রকাশিত ও পূর্ববঙ্গ প্রেস, ২ জিন্দাবাহার ২য় লেন, ঢাকা থেকে মুদ্রিত। দাম পঁচাত্তর পয়সা, কখনো এক টাকা। ৪ মাস বন্ধ থেকে ‘পরিক্রম’ নাম ধারণ করে।
লেখক সংঘের চরিত্র-লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বোঝার জন্য সহায়ক হবে ‘পাকিস্তান লেখক সংঘের শপথপত্র’র মর্ম অনুধাবন করলে। ‘শপথপত্রের’ প্রথম শর্ত ছিল–
‘‘দেশের প্রচলিত সকল ভাষার প্রতিনিধি আমরা পাকিস্তানের লেখকগণ আমাদের মাতৃভূমির সর্বাঙ্গীন উন্নতি, মর্যাদা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক শান্তি এবং মানবজাতির বিকাশের কার্যে আত্মোৎসর্গের শপথ গ্রহণ করছি।
জাতিসংঘ রচিত মানবাধিকারের সনদে আমরা বিশ্বাসী। লেখক হিসাবে স্বাধীনভাবে মতামত জ্ঞাপন ও প্রচারের অধিকার আমাদের একটি মৌলিক অধিকার। এ অধিকার অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। কারণ এ অধিকারের অভাবে সৃষ্টিধর্মী রচনা অর্থহীন ও উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ে।
সত্যের যথাযথ রূপায়ণ, দেশাত্মবোধের অনুশীলন আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং মানুষের মধ্যে উন্নততর সম্পর্ক স্থাপন করার মহান কর্তব্য সম্বন্ধে আমরা সজাগ, কারণ মানবজাতির মর্যাদা ও সুখসাচ্ছন্দ্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নততর সম্পর্কের উপরই নির্ভরশীল।
লেখক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে এমন একটি সুখী ও সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করছি যেখানে সকলের জন্য অবাধে সমান সুযোগ সুবিধা থাকবে এবং যার ফলে ঐশ্বর্য ও ক্ষমতা মানবিক গুণাবলী ও আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা বিকাশের সহায়ক হবে। কাজেই আমরা বিজ্ঞানের উন্নতিকে পৃথিবীতে শান্তি ও সম্পদ বৃদ্ধির উপায় বলে বিশ্বাস করি।”
‘লেখক সংঘ পত্রিকা’র প্রথম পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত এই শপথ বাক্যের উদ্দেশ্য দুই পাকিস্তান মিলে থাকার সম্প্রীতি-সাধন। এর রচনাবলিতে ইসলামি আদর্শ ও ঐতিহ্যের চর্চা করা হয়েছে। এর লেখক ও লেখার পরিচয় নেয়া যাক–
লেখক সংঘ পত্রিকার কবিদের নাম : সৈয়দ আলী আহসান, আখতার-উল আলম, আ.ন. ম. বজলুর রশীদ, আবদুর রশীদ খান, সুফিয়া কামাল, জসীমউদ্দীন, বন্দে আলী মিঞা, প্রজেশ কুমার রায়, জাহানারা আরজু, আবদুল কাদিও, মাহবুব তালুকদার, রাশিদা জামান, কাদের নওয়াজ, তালিম হোসেন, শামসুল হক কোরায়শী, বেনজীর আহমদ, হাবিবুর রহমান, নূর মুহম্মদ মিঞা, গোলাম মোস্তফা, আবু সাঈদ জহুরুল হক,আহসান হাবীব, আজিজুর রহমান, বদরুন্নেসা আবদুল্লাহ, মওলানা নুরুদ্দীন আহমদ প্রমুখ। অনুবাদ করা হয়–ইকবালের বাল–-ই-–জিব্রীল থেকে সাকীনামা ও মসজিদ-ই-কারতোবা। তবে এই পত্রিকা গদ্য-প্রধান ছিল। গল্প লিখেছিলেন–শওকত ওসমান , হামেদ আহমদ, মতিনউদ্দীন আহমদ, সুবোধ দাশগুপ্ত, আহমদ রফিক, মোহাম্মদ নাসির আলী, রাবেয়া খাতুন, কৃষণ চন্দর (চীনা পাখী, অনুবাদ : কাজী মাসুম), বেগম সুলতানা ইসলাম, হুমায়ুন খান, আবু জাফর শামসুদ্দীন, বুলবুল ওসমান, আহমদ রফিক, কুদরতুল্লাহ শাহাব (শেষ পর্যন্ত, উর্দু থেকে অনুবাদ: ফখরুজ্জামান চৌধুরী, শহীদ আখন্দ, কাজী মোস্তফিজুর রহমান প্রমুখ। আশরাফউজ্জামানের ধারাবাহিক উপন্যাস ‘ডাকিনী পদ্মা’ প্রথম থেকেই ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়।
প্রবন্ধকার– ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, মুহম্মদ আবু তালিব, আবদুল কাদিও, আতোয়ার রহমান, দেওয়ান আবদুল হামিদ, হাসান জামান, আশরাফ সিদ্দিকী, মুজিবুর রহমান খাঁ, মোস্তফা কামাল বার-এট-ল, হাবিবুর রহমান, আবুল ফজল (নৃত্য শিল্পী বুলবুল চৌধুরী), রফিকুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবু যোহা নূর আহমদ, রওশন ইজদানী,আ. ন. ম. বজলুর রশীদ, আজহারুল ইসলাম, মাহফুজউল্লাহ (মোহাম্মদ?; ‘সাহিত্য ও জাতীয় চেতনা’, সংলাপের ১/১ সংখ্যায় প্রকাশিত ড: সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়নের প্রবন্ধের প্রতিক্রিয়া, ১/৫), সৈয়দ মুর্তজা আলী, গোলাম রসুল, জগলুল হায়দার আফরিক, মুহম্মদ আবদুল হাই,মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, গোলাম সাকলায়েন, ড: কাজী মোতাহার হোসেন (আমার সাহিত্যিক জীবনের অভিজ্ঞতা (স্মৃতি), ইব্রাহীম খাঁ, জসীমউদ্দীন, খোদেজা খাতুন, আনোয়ারুল করিম, শীলা ম্যাকডোনাফ (আধুনিক সাহিত্যে ধর্মীয় চেতনা, অনুবাদ : আখতার উল আলম, ১/১১); ডা: গিরিশচন্দ্র বড়ুয়া (পালি বৌদ্ধ সাহিত্যে জাতকোপাখ্যান, ১/১১) প্রভৃতি।
উপরের তালিকা থেকে দেখা যায় ইকবালের অনুবাদ, ইসলামি-সাহিত্য, মধ্য ও আধুনিক যুগের মুসলিম লেখক, পাকিস্তান ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে পাকিস্তানবাদী লেখকদের স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রচিত আলোচনাই লেখক সংঘ পত্রিকায় মুখ্য ভাবে জায়গা পেয়েছে। অপরাপর পত্রিকায় প্রকাশিত রচনার বাদ-প্রতিবাদ বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং কিছু বইয়ের আলোচনাও এতে স্থান পেয়েছে। সংলাপে ড: সৈয়দ সাজজাদ হোসায়নের ‘সাহিত্য ও জাতীয় চেতনা’ শীর্ষক প্রবন্ধের সমালোচনা করেছেন মাহফুজউল্লাহ। ‘কষ্টি পাথর’ ছদ্মনামে তাঁর সংলাপের কঠোরভাবে সমালোচনাও করা হয়েছে। এতে বলা হয় বি.এন.আর এর মাধ্যমে প্রকাশিত ‘সংলাপে’ পাকিস্তানি আদর্শের অনুপস্থিতি দুঃখজনক (১/৪)।
মাহফুজউল্লাহ বলেন, ‘‘ড: সৈয়দ সাজজাদ হোসায়েন ‘সাহিত্য ও জাতীয় চেতনা’ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখেছেন, যাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তিনি পাকিস্তনের সাহিত্য ও এতে প্রতিফলিত জাতীয় চেতনার স্বরূপ উদঘাটন করে কোনো সমালোচনা বা মতামত উপস্থাপিত করবেন, কিন্তু তিনি বিভিন্ন দেশের নানান সাহিত্যের প্রাচীন ও মধুযুগীয় জাতীয় চেতনার আলোচনা করে অনেকটা চোখ ঠারানোর কাজ করেছেন।’’
যাহোক, লেখক সংঘ পত্রিকায় দেখা যায়, কানাইয়া লাল কাপুর এর রচনা থেকে একটি নাট্যাংশের অনুবাদ করেছিলেন কাজী মাসুম। মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘ফার্সীর বাংলা দখল’ রচনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন মীজানুর রহমান। ড. শহীদুল্লাহও তাঁর জবাব দিয়েছিলেন। আল্লামা ইকবালের স্ট্রে রিফ্লেকশন (আলোচক, গোলাম মোস্তফা) কাজী আকরম হোসেনের ‘দেউয়ান-ই-হাফিজ’ (আলোচক, মোহাম্মদ মনসুরউদ্দীন) রশীদ করীমের ‘উত্তম পুরুষ’ (আলোচক, আহসান হাবীব), আ. ন. ম. বজলুর রশীদ প্রণীত ‘পথ বেঁধে দিল’ (আলোচক মাফরুহা চৌধুরী), মো: গোলাম হোসেনের ‘কাব্য যুথিকা’ (আলোচক : ড: কাজী মোতাহার হোসেন), ‘নজরুল রচনা সম্ভার’ (আলোচক, আবুল ফজল), আবদুর রহমানের ‘কোরআন ও জীবনদর্শন’ (আলোচক, গোলাম মোস্তফা) : হরিনারায়ণ নন্দীর কবিতার বই ‘আকাশ মাটি মানুষ’ (আলোচক, আবদুল কাদির) কবি হাবীবুর রহমানের ‘উপাত্ত’ এবং আহমদ রফিকের ‘শিল্প সংস্কৃতি জীবন’ (আলোচক, শাহাবুদ্দীন আহমদ) প্রভৃতি গ্রন্থের পরিচয়সহ মন্তব্য প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় সঙ্গীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীন এবং শেরে বাংলার মৃত্যুতে সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়।।