spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধবাংলা কবিতায় ইসলামি ভাবাদর্শের উত্তরসূরী আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

লিখেছেন : আবু তাহের সরফরাজ

বাংলা কবিতায় ইসলামি ভাবাদর্শের উত্তরসূরী আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

আবু তাহের সরফরাজ

ঊনবিশং শতাব্দির নব্বইয়ের দশকটি বৈশ্বিক ও স্বদেশি বিভিন্ন পরিমণ্ডলে ভাঙনের একটি সময় পার করেছে। এই ভাঙনের মধ্যদিয়ে সদ্য কৈশোর পেরোনো একদল তরুণ কবিতার বীজ মাথায় নিয়ে জীবিকার খোঁজে একত্রিত রাজধানী ঢাকা শহরে। সেই সময়ে ব্যাপকভিত্তিতে ছোটকাগজ চর্চা হতো। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন সেই চর্চা আর নেই। নব্বইয়ের দশকের ওই কবির দল ছোটকাগজ কেন্দ্রিক নানা আড্ডায় সরগরম করে তুলতো কবিতার অঙ্গন। একজন আরেকজনের কবিতা সম্পর্কে মতামত দিতো। কবিতার সেই সোনালি সময় এখন আর নেই। ছোটকাগজ চর্চা উঠে গেছে। কবিদের ভেতর এখন নানা সিন্ডিকেট। নোংরামি। সে যাই হোক, আজকের সময়ে এসে নব্বইয়ের দশকের কবিতার দিকে যদি আমরা আমাদের শিল্পচোখকে ফেরায় তাহলে দেখতে পাবো, ওই দশকের কবিতায় স্বকীয় কাব্যভাষা নির্মাণের একটি চেষ্টা আছে, তবে এক্ষেত্রে সফল কবির সংখ্যা খুবই অল্প। গড়পড়তায় বলা যেতে পারে, নব্বইয়ের কবিতায় আধুনিকতার ঘেরাটোপে রূপক ও প্রতীকে ফুটে ওঠে রহস্যময়তা, যা বহুমাত্রিক রূপ-রস-গন্ধে শিল্পের অনন্য আস্বাদ এনে দেয় পাঠককে। এই দশকের কোনো কোনো কবির কবিতায় পাওয়া যায় ইতিহাসের ছায়া, বিজ্ঞান ও মিথের বহুমাত্রিক চিত্রকল্প। যা তাদের কবিতায় প্রকাশ ঘটে অনন্য ব্যঞ্জনায়। এই সময়ের কবিতায় আমরা দেখি চিত্রময় রূপে কবির অন্তর্জগতের দৃশ্যপট। এইসব দৃশ্যময়তাই আসলে কবিতার শরীর। চিত্রশিল্পী যেমন রঙ আর তুলির আঁচড়ে এঁকে ফেলেন জীবনবোধের টুকরো টুকরো ছবি, একজন কবিও শব্দের তুলি বুলিয়ে তেমনভাবেই অঙ্কন করেন তার বোধের ভেতর তৈরি হওয়া দৃশ্যপট। পার্থক্য হচ্ছে, ক্যানভাসে চিত্রিত দৃশ্য চিত্রময়, আর কবিতায় চিত্রিয় দৃশ্য শব্দময়। শব্দ ও চিত্রের কিছু তো পার্থক্য আছেই। সেই পার্থক্য ধরা পড়ে মহৎ কবিতা পাঠে। সেই রকম কোনো কবিতা কি লেখা হয়েছে নব্বই দশকে? আমার পাঠ অভিজ্ঞতা বলছে, ওই সময়ের এত এত কবিতার ভিড়ে মাত্র কয়েকটি কবিতায় এরকম কবিতার আভাস আমরা পাই। বেশিরভাগ কবিতায় সময়ের জ্যামিতিক রেখায় যাপিত সময়ের দর্শন, যা মূলত ব্যক্তির হতাশা আর অস্থিরতা। নব্বইয়ের কবিতার প্রসাদগুণ এই যে, এই হতাশা কবিতায় সরাসরি উঠে আসেনি। বাস্তব আর পরাবাস্তবের মিশেলে কবিতার ভেতর শোনা যায় কবির করুণ আর্তচিৎকার। এই চিৎকার আসলে নব্বই দশকের ভূরাজনৈতিক সমাজজীবনের করুণ আর্তনাদ। আবার, কারো কারো কবিতায় হঠাৎ উঁকি দিতে দেখা যায় আশ্বিনের রোদ। চৈত্রের ঝিমধরা দুপুরে হঠাৎ ছুটে আসা ঝিরঝির হাওয়ার পরশ বুলিয়ে দেয় কারো কবিতার ভেতর ফুটে থাকা শব্দদৃশ্য। নব্বইয়ের দশকের একঝাঁক কবিদের কবিতার এই হচ্ছে মোটামুটি বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এই ঝাঁকের ভেতর থেকে আবু সাঈদ ওয়ায়দুল্লাহর কবিতা আলাদাভাবে চেনা যায় খুব সহজেই। আমরা দেখেছি, সৈনিকরা যখন প্যারেড করে তখন তাদের সবার পরনে থাকে একই রঙের ইউনিফর্ম। ধরেন, একজন সৈনিকের ইউনিফর্ম শাদা। তাহলে খুব সহজেই শাদা পোশাকের সৈনিককে আপনার চোখে পড়বে। আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ ওই শাদা পোশাকের শুদ্ধতম কবি হিসেবে নব্বইয়ের দশকের আরসব কবিদের থেকে আলাদা। এই স্বাতন্ত্র্য তার কবিতার বিষয়, ভাব ও শব্দ বুননে উপস্থিত। যা কবিতার মেধাবী পাঠক সহজেই ধরতে পারবে। কারণ, তার কবিতা ইসলামি ভাবাদর্শে উজ্জীবিত।
দীর্ঘকাল ধরেই বাংলা কবিতায় ইসলামি ভাব ও আদর্শের জয়গান ছিল তুঙ্গে। ১৪-১৫ শতকের কবি শাহ মুহাম্মদ সগীরের কবিতায় আমরা দেখতে পাই ইসলামি ভাবদর্শনের জয়গান। এরপর কায়কোবাদ, কাজী নজরুল ইসলাম, আবদুল কাদির, গোলাম মোস্তফা, ফররুখ আহমদ ও আল মাহমুদসহ বাংলা কবিতার অসংখ্য দিকপালের নাম করা যেতে পারে যাদের কবিতার বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে ইসলামের গুণগান। সত্যি বলতে কি, আল মাহমুদের পর থেকে বাংলা কবিতায় ইসলামি ভাবধারার কোনো কবি আর চোখে পড়ে না। ইসলাম-ঘেঁষা বলে আল মাহমুদকে কত রকম যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তা কবিতার পাঠক মাত্রই কমবেশি জানে। তার মৃত্যুর পর এখনো কতিপয় ‘বিশিষ্ট মূর্খ’ আল মাহমুদকে নিয়ে নানা কুতর্কের সৃষ্টি করে। ইসলামি রেনেসাঁর কবি হিসেবে খ্যাত ফররুখ আহমদ গোটা একটা জীবন উপেক্ষিত থেকেছেন কেবলমাত্র ইসলামি ট্যাগ গায়ে লাগানোর অপরাধে। যদিও এটা অপরাধ নয়। কিন্তু বঙ্গসমাজে তিনি নিন্দিত হয়েছিলেন এই অপরাধে। মনীষী আহমদ ছফা ফররুখের করুণ জীবন নিয়ে একটি গদ্য লিখেছিলেন তৎকালীন দৈনিক বাংলায়। সেই লেখাটি যাদের পড়া আছে তারা জানে, ফররুখের ওপর কী অমানবিক যন্ত্রণা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার একমাত্র ‘অপরাধ’ ছিল তিনি ইসলামি কবি। অথচ ইসলামি ভাবধারার বাইরেও তার অসংখ্য শিল্পোৎকর্ষ কবিতা রয়েছে, সেসব কবিতা আমাদের বিবেচনায় আসে না। আসে কেবল, ইসলামি কবিতা লিখে তিনি জাতির প্রভুত ক্ষতি করে গেছেন! কী আহাম্মকি সিদ্ধান্ত আমাদের!
ইসলামি কবিতা লেখার কারণে অগ্রজ কবিদের এহেন করুণ জীবন নিশ্চয়ই আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর অজানা নয়। এরপরও তিনি নিজে তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আবির্ভূত হন নব্বইয়ের দশকে। এই দশকের আরসব কবির কবিতায় ইসলামি ভাবধারার কোনো চিহ্ন আমরা খুঁজে পাই না। তবে এমন কবি খুঁজে পাই যারা তাদের কবিতায় ইসলামকে ডেটল জলে ধুয়ে দিতে পারলে বেশ উচ্ছ্বসিত হন। এই উচ্ছ্বাস অবশ্যি আজকের সমাজের সকলেরই। সাহিত্যে ঈশ্বর শব্দটি থাকলে কোনোই সমস্যা নেই। সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন আল্লাহ শব্দ লেখা হয়। হিন্দু রীতিনীতি ও সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের দেশের সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে কারোরই কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ইসলামি সংস্কৃতি নিয়ে এলে নানাদিক থেকে শুরু হয় বাক্যবাণ ও নোংরা সমালোচনা। আমাদের এই ভূখণ্ডে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে— ক. হিন্দু, তুমি আরও হিন্দু হও। খ. বৌদ্ধ, তুমি আরও বৌদ্ধ হও। গ. খ্রিস্টান, তুমি আরও খ্রিস্টান হও। ঘ. মুসলিম, তুমি যতটা পারো তোমার ধর্ম ছেড়ে দাও। এই সমাজ-বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে ইসলামের মহত্ত্ব ও ভাবাদর্শ কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে আনা অবশ্যই হিম্মতের পরিচয়। ওবায়দুল্লাহ সেই হিম্মত বেশ জোরেসোরেই দেখাচ্ছেন। তিনি বিস্মৃত নন, ইসলামি আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কবিতা লেখায় তার পূর্বসুরীদের অবস্থা কী হয়েছিল। ইসলামের মহৎ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কবিতা লিখলে যদি ‘একঘরে’ থাকাই সামাজিক দণ্ড, সেই দণ্ড নিজের জীবনেও মেনে নিতে তৈরি ওবায়দুল্লাহ। ‘আল মাহমুদের কবর’ কবিতায় তিনি লিখছেন:

কবর কবির বাড়ি— তা জেনেছিলেন আল মাহমুদ।
তাই নিয়েছেন কোলে তুলে ইসলাম— আল্লাহ কবুল।
আল্লাহর পথে যে হাজির থাকে তাকে তুমি খুঁজো না কবরে
সে তো জান্নাতের সুগন্ধ, খোশবু পেয়ে গেছে
আলোময় বারযাখে।

কবর নাকি কবির বাড়ি! তা কী করে হয়! তাহলে নারীদেহের শোভা, মদ্যশালায় বসে শিল্প নিয়ে ভারি-ভারি কথাবার্তা বলা আর ক্ষমতাবানদের তোষামোদি করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট্য খেয়ে বেঁচেবর্তে থাকবে কারা? কবির বাড়িতে থাকবে গাঁজার পুটলি। ধুমছে গাঁজা টেনে লিখতে বসবে কবিতা। আর ডেটিং থাকবে নিত্যনতুন। তবেই না কবি! বঙ্গদেশের আধুনিক কবি! কিন্তু না, ওবায়দুল্লাহ বলছেন কবরই কবির বাড়ি। মৃত মানুষের শেষ বাড়ি তো কবর। তবে কি কবি এক অর্থে মৃত? আর এই সত্য আল মাহমুদ জানতেন? ওবায়দুল্লাহর কবিতা পড়ে এই সত্য আরেকটু গভীরভাবে ভাবার তাড়না যোগায় আমাদের অন্তর্জগৎ। কবিতা আসলে আধ্যাত্মিক বোধ। প্রকৃত কবিমাত্রই জানেন, এ কারণেই কবিতা লেখা যায় না। কবিতা নিজেই কবির হাত দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করে নেয়। কবি এখানে নিমিত্ত। কবির বোধের জগতে প্রতিমুহূর্তে ভেসে ওঠে নানা রঙছবি, কলস্বর। কবি শুনতে পান, অচেনা গ্রহ থেকে ভেসে আসা অস্ফুট স্বর। তারা প্রকাশ চায়। আর তখন বেগ তৈরি হয় কবির ভেতর। কবি তাদেরকে প্রকাশ করতে বাধ্য হন। প্রকাশ ঘটে গেলে কবি আরাম পান। নিজেকে তখন তার নির্ভার লাগে। সুতরাং বলা যায়, কবিতা হচ্ছে কবির জগৎ দেখার অনুভূতি। জগতে মানুষের আবির্ভাব কোনো কারণ ছাড়াই নয়। এর পেছনে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। এই আধ্যাত্মিক উপলব্ধি ঘটেছিল আল মাহমুদের কবিসত্তার ভেতর। আর তাই তিনি হয়তো জেনে গিয়েছিলেন, পৃথিবী সত্যদ্রষ্টার বাড়ি নয়। সত্যদ্রষ্টা পৃথিবীতে স্রেফ একজন মোসাফির। সত্যদ্রষ্টার প্রকৃত বাড়ি কবর। কেননা, মৃত্যুর পর আত্মা দেহমুক্ত হয়। আর তখন আত্মা প্রত্যক্ষ করে আলোময় বারযাখ। বারযাখে মুক্ত আত্মা জান্নাতের খোশবুতে তৃপ্ত হয়ে ওঠে। এই তৃপ্তি পায় কেবল শুদ্ধ আত্মা। কলুষিত আত্মা এটা পায় না। এসব উপলব্ধি করেই আল মাহমুদ বুকের ভেতর লালন করে গেছেন ইসলামের মহত্ত্ব। স্বীকার করে নিয়েছেন, আল্লাহ ছাড়া আর কারো অনুগত হওয়া যাবে না। ওবায়দুল্লাহ বলছেন, আল্লাহর পথে যে হাজির থাকে কবরে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, সে আর কবরে নেই। মৃত্যুর পর সেই আত্মা বেহেস্তের সুগন্ধ হয়ে যায়।
ইসলামি চেতনার এরকম কাব্যিক বয়ান নব্বইয়ের দশকের আর কোনো কবির কবিতায় আমাদের চোখে পড়ে না। ওবায়দুল্লাহর কবিতার বিশেষ গুণ হচ্ছে, ইসলামি দৃষ্টিকোণ দিয়েই তিনি জগৎ-সংসারকে পর্যবেক্ষণ করেন। অনেকেই এ কথা শুনে ভুরু তুলবেন, তাহলে তা তার কবিতার বিষয়বস্তু খুবই একপেশে। সর্বজনীন নয়। তাদেরকে আমি জিগেশ করতে চাই, কোন যুক্তিতে আপনি ইসলামকে একপেশে বা বদ্ধ বলে রায় দিচ্ছেন? ইসলাম যে সর্বজনীন নয়, তার পক্ষে আপনার যুক্তি কি? আমি নিশ্চিত, তারা যেসব যুক্তি দেবেন সেসব যুক্তি ছেলে-ভোলানো টাইপ। বিজ্ঞান কিংবা দর্শন ভিত্তিক নয়। তারা যদি বিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠও মোটামুটি পড়া থাকে তাহলে তারা বুঝতে পারবেন, কোরআন এই বিশ্বপ্রকৃতির সংবিধান। আর হাদিস সেই সংবিধানের ব্যাখ্যা। সুতরাং, তাদের সঙ্গে এঁড়ে তর্কে আর না গিয়ে আমার অনুরোধ, বিজ্ঞানটা একটু পড়ে এসে এরপর বলুন, ইসলাম সর্বজনীন কিনা।
আসলে বাংলা কবিতার পাঠক এখন প্রভাবিত। ধর্মনিরপেক্ষ ট্যাবলেট খুব কৌশলে তাদেরকে গিলিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ইসলামের নামে যা কিছু, সবই তাদের কাছে একপেশে। তথাকথিত প্রগতিশীল (ইসলামি বিধানে যে প্রগতি রয়েছে তারচেয়ে সার্থক প্রগতি আর কোত্থাও নেই) কবিদের কবিতা সহজাত নয়, নির্মিত। তারা শব্দের পর শব্দ বসিয়ে কবিতার শরীর নির্মাণ করেন। কবিতা নিজে এসে তাদের হাত দিয়ে প্রকাশিত হয় না। ফলে, সেসব কবিতার আগামাথা কিছু না বুঝলেও এসব রচয়িতাদেরকে বিশিষ্ট কবি হিসেবে মেনে নিয়েছে পাঠক। কারণ, গণমাধ্যম কিংবা বিভিন্ন সাহিত্যসভা তাদের কানের কাছে সারাক্ষণ ওইসব কবিদের নাম ধরে ঘ্যানঘ্যান করেই চলেছে। কে না জানে, যত প্রচার তত প্রসার। ফলে প্রভাবিত হচ্ছে পাঠক। এই দৃশ্য দেখে আল মাহমুদের উত্তরসূরী আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ ‘বাংলা ভাষার প্রতি’ কবিতায় লিখছেন:

তোমাকে আক্রোশে নিয়ে গেছে ভাষা-ডাকাতেরা
সংস্কৃত-প্রেমিক অধ্যাপক আর ছন্দপাগল কবিরা।…
আমি ভয়ে কুল রক্ষা করে দূরে চলে আসি
আমার পরম জান তুমি, প্রিয় আমার আম্মা…
যেন ফজরের আয়াতের স্নিগ্ধ ফুল তুমি।

ভাষা-ডাকাত বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন কবি? শিল্পের ভারিক্কি ব্যাখ্যায় না গিয়েই সোজাসাপ্টা বলা যায়, যারা কবিতাকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে আর রায় দেয় যে, তাদের দেখানো পথেই কবিতা লিখতে হবে, তাদেরকেই ওবায়দুল্লাহ ভাষা-ডাকাত হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাইছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামি ভাবধারার কোনো কবি বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। ইসলামি সাহিত্য নামের একটি বিষয় যে যুগ-যুগ ধরে বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছে, সেই ইতিহাস আজকের প্রজন্ম ভুলেই গেছে প্রায়। দেশের প্রতিটি সেক্টর যেমন গুটিকতক সিন্ডিকেট দখল করে রেখেছে, একইভাবে সাহিত্যও এসব সিন্ডিকেটের দখলে। কবিতার সিন্ডিকেটে রয়েছে পীর-কবি ও মুরিদ-কবি। কে কবি আর কে কবি নয়, সিন্ডিকেটের পীর-কবিরা সেই লাইসেন্স নানাভাবে দিয়ে বেড়ান। এরাই ভাষা-ডাকাত। একইসঙ্গে সংস্কৃত-প্রেমিক অধ্যাপককেও ওবায়দুল্লাহ ভাষা-ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করতে চান। কেননা, সাহিত্যে তাদের মোড়লিপনা নেহায়েত কম নয়। সাধারণ মানুষ এসব অধ্যাপককে বাংলা ভাষার ঠিকাদার বলে মনে করে। ফলে সৃষ্টি হয় নানা বিপত্তি। কিন্তু সকল বিপত্তি ও ভাষা-ডাকাতদের নোংরামি থেকে নিজের আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে কবি দূরে চলে আসেন। যদিও কবি বলছেন, ভয়ে তিনি দূরত্ব তৈরি করেন। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি, এই দূরত্বের কারণ ভয় নয়, ঘেন্না। ইসলামের মহান আদর্শ যার বুকে, সেই মানুষ কখনোই আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। ওবায়দুল্লাহও পান না। আল মাহমুদের মতোই তিনি জেনে গেছেন, কবির প্রকৃত বাড়ি কবর। ফলে, তিনি পৃথিবীকে বাড়ি ভাবেন না। কিন্তু ভাষা-ডাকাতেরা অবিশ্বাসী। তারা ভেবেই বসে আছে, পৃথিবীই তাদের প্রকৃত বাড়ি। ফলে শুদ্ধতম কবির মতোই ওবায়দুল্লাহ নিজেকে আড়ালে রেখে নিভৃতে শিল্পচর্চাকেই জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। বাংলা ভাষাকে নোংরা না করে তিনি ইসলামি দর্শনে সিক্ত করে পবিত্র করে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। কেননা, এই ভাষা তার প্রিয় আম্মা। ফজরের আজানের স্নিগ্ধ ফুল। ভাষা-ডাকাতেরা নাম চায়, খ্যাতি চায়। কিন্তু যে কবি জেনে গেছেন কবির প্রকৃত বাড়ি কবর, তার পক্ষে এই পৃথিবীতে নাম ও খ্যাতি চাওয়া নিরর্থক। ওবায়দুল্লাহও তাই খ্যাতি চান না। ‘কবিতা ও ভবিষ্যৎ’ কবিতায় তিনি লিখছেন:

নাম খুঁজি, নাম খুঁজি, চাই অমরতা
রাজাসন, মিথ্যা পাঠকের মনে…
আসি সিপাহসালার
যেন এনেছি সোনালি তরবারি শব্দের বারুদ…
একদিন সময়ের কবরে মেশাবে দেহকোষগুলি।

মনে পড়ছে সারা জীবন ভাতে-মরা নির্জনতম কবি জীবনানন্দ দাশের সেই বিখ্যাত পঙক্তি:

অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়—
আরও এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত— ক্লান্ত করে…

বোধের ভিন্ন মোড়কে ওবায়দুল্লাহর উপরিউক্ত পঙক্তিগুচ্ছতে এই বিপন্ন বিস্ময়ের উপস্থিতি পাঠকের চোখ এড়ায় না। শিল্পচর্চা করে প্রত্যেকেই আমরা নাম খুঁজি, খ্যাতি খুঁজি। প্রত্যাশা করি অমরত্বের। একবারও ভাবি না, সমকালের পাঠককে নানা মাধ্যমের প্রচারণায় যতই প্রভাবিত করা হোক না কেন, চিরকালীন পাঠক কিন্তু কোনো মাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাদের চোখ জহুরির চোখ। কোনটা প্রকৃত হীরা আর কোনটা সাময়িক দ্যুতি, ঠিকই তারা ধরে ফেলে। খ্যাতিপ্রার্থী কবিদের আস্ফালন এতটাই উন্মত্ত যে, তাদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয় তারা কবিতার সিপাহসালার। শব্দের বারুদ নিয়ে এসেছে। অথচ মৃত্যু অনিবার্য। কিছুই চিরস্থায়ী নয়। চিরস্থায়ী কেবলমাত্র নিষ্কলুষ আত্মা, যা প্রশান্ত চিত্তে তার প্রতিপালকের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। আর তাই জীবনানন্দের মতো ওবায়দুল্লাহ বিপন্ন বিস্ময় বোধে তাড়িত হয়ে ক্লান্ত হন না। বরং আত্মসমর্পণ করেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতির কাছে। তিনি বিশ্বা করেন, ক্লান্ত হওয়ার নাম জীবন নয়। পৃথিবীতে জীবনের গভীরতম মানে রয়েছে।
ইসলামি আদর্শ ও রীতিনীতির কবিতা এখন আর কেউ লিখছেন না। কিন্তু আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ লিখছেন। তবে তিনি যে কেবল ইসলামকে বিষয় করেই তার কাব্যসৌধ নির্মাণ করে চলেছেন, তা বললে মিথ্যে বলা হবে। আরও নানা বিষয়ই তার কবিতায় শৈল্পিক ব্যঞ্জনায় সুষমামণ্ডিত হয়ে ওঠে। তার প্রেমের কবিতাগুলো দারুণ ফুরফুরে অনুভূতি তৈরি করে পাঠকের মনে। প্রেমকে তিনি ধ্যানের মতো জ্ঞান করেন। ‘শুক্রবারের কবিতাগুলি’তে ওবায়দুল্লাহ লিখছেন:

চুম্বনে বিনাশ নাই। যেখানেই দেব সেখানেই ফুটে
ওঠে তাহিতি রমণীদের চাঁদ। তুমি সে কথা ভেবো না
যুদ্ধকথা বলব না আজ। বলব না কতটুকু কাছে এলে
শত্রুদের গোপন মাইনগুলো ফুটে ওঠে পায়ে পায়ে।

কবি বিশ্বাস করেন, চুম্বন প্রেমের প্রগাঢ় অনুভূতির প্রকাশ। আর তাই চুম্বনে কখনো বিনাশ হয় না। যেখানেই চুমু দেয়া যায় সেখানেই তাহিতি রমণীদের চাঁদ ফুটে ওঠে। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত একটি দ্বীপ তাহিতি। এখানকার রমণীদের সৌন্দর্য বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পল গঁগ্যার চিত্রকর্মে। ওবায়দুল্লাহ বলছেন, চুম্বনের চিহ্ন হিসেবে তাহিতি রমণীদের সৌন্দর্যমণ্ডিত চাঁদ ফুটে উঠবে। এসময় প্রণয়কথা ছাড়া আর কোনো কথাই শোভনীয় নয়। তাই তো প্রেমিক তার প্রেমিকাকে যুদ্ধের কথা বলতে চায় না। আরও বলতে চায় না, একজন আরেকজনের কতটা কাছাকাছি হলে শত্রুর পেতে রাখা গোপন মাইন পায়ে পায়ে ফুটে ওঠে। শত্রু কে, সেই খোঁজে না গিয়ে বরং বলা ভালো, প্রেমের এই পঙক্তিগুচ্ছ এখানে ওবায়দুল্লাহ তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন পাশাপাশি দুটি অনুষজ্ঞ রেখে দিয়ে। মাইন কী রকম ধ্বংসযজ্ঞ ঘটায় তা আমাদের সবারই জানা। পাশাপাশি এটাও জানা যে, চুম্বন কী প্রগাঢ় অতলান্তিক শিহরণ তুলে বয়ে যায় আমাদের শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। জীবনের দুটি মেরু একই সমতলে এনে রেখে দিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ। চুম্বন মানেই ধরে নিতে পারি সৃষ্টি কিংবা আনন্দ। একইভাবে, মাইন বলতে ধরে নিতে পারি ধ্বংস কিংবা যন্ত্রণা। চুমুর ভেতর দিয়ে যেতে যেতে যন্ত্রণার কাছে পৌঁছানো কিংবা যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে চুমুর কাছে পৌঁছানো— জীবনের অর্থময়তা এভাবেই উপমিত হয়ে ওঠে আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর কবিতায়।
তার কবিতার ভাষা নির্মেদ, ঝরঝরে। তবে কখনো কখনো শব্দের বিন্যাস একটু খটোমটো বলে মনে হতে পারে পাঠকের কাছে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে, ওই পঙক্তিগুচ্ছ পাঠকের মনোযোগ আরেকটু বেশি দাবি করছে। গভীর পর্যবেক্ষণ নিয়ে যদি ঢুকে পড়া যায় কবিতার ভেতর তাহলে উপলব্ধ হবে, শব্দের ভেতর লুকিয়ে থাকা অর্থময়তা। যে কোনো মহৎ কবিতার প্রসাদ গুণ এখানেই। যে কোনো শিল্পই আসলে আয়নার মতো। যে শিল্পে জীবনের প্রতিফলন যত পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে সেই শিল্প তত বেশি সার্থক ও শিল্পোৎকর্ষে অনন্য। কবিতাশিল্পে ওবায়দুল্লাহ সেই জাদুকর, যার তৈরি শিল্প-আয়নায় যাপিতজীবনকে কিংবা জীবনের অন্তর্গত বোধকে পষ্টভাবে পাঠক উপলব্ধি করতে পারে। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হচ্ছে, ইসলামি তমদ্দুনকে তিনি বাংলা কবিতায় পুনর্জীবিত করে তুলছেন। কেবল কবিতাতেই নয়, গদ্যেও। ‘বাংলা ভাষায় মুসলমানি ঐতিহ্যের কবিতা লেখা প্রসঙ্গে’ শিরোনামে তার একটি গদ্যের বই রয়েছে। এ বইতে কবিতায় হারানো ইসলামি মূলবোধকে নতুনভাবে তুলে আনার সচেতন প্রয়াস লক্ষ্যণীয়। নব্বইয়ের দশকের আরসব কবি থেকে এখাইেন তার স্বাতন্ত্র্য। তিনি বাঙালি মুসলমানের কবি। বাঙালি মুসলমানের ঐতিহ্যের যে পরম্পরা সেই পরম্পরার সাথে কবিতার মধ্যদিয়ে বর্তমান সময়ের মেলবন্ধন ঘটিয়ে চলেছেন আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ।

আরও পড়তে পারেন

3 COMMENTS

  1. সরফরাজ ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন ওবায়দুল্লাহর কবিতার মৌল চেতনা। ভালো লাগলো। অভিনন্দন কবিকে।

  2. সুলিখিত প্রবন্ধ। আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ একজন মেধাবী কবি।

  3. নব্বইয়ের দশকে সেক্যুলার ধারায় চিন্তা করছি ও কবিতা লিখছি। আমাকে সেই সময়ে অনেকেই উত্তর আধুনিক ও উত্তর উপনিবেশিক ধারার কবি হিসাবে মেনে নিয়েছেন। আমি আধা আধুনিক আধা ট্রাডিশনাল পরিবেশে বড় হইছি। বাঙালি মুসলমান কবি সাহিত্যিকেরা যে ভাবে বড় হয় আর কি। ঘরে মা, বাবা প্রেক্টিসিং মুসলমান হইলেও তাদের ছেলেমেয়েরা হয়ত তা হয় না। তবুও মনে বিশ্বাসের একটা বীজ ত থাকেই। প্রথম ও দ্বিতীয় দশক থেকে আমার কবিতার ভাষা ও স্বর ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে। এমন না যে শুধু এক ধারায় লিখছি এবং লিখবো। একজন কবির একটা কবিতার মধ্যে কয়েক রকমের টোন, ভাব থাকতে পারে। লিংকের লেখাটা পড়ে আমার একটা পরিচয় হয়ত পাওয়া যাবে, কিন্তু তাতে ঠিক সব পরিস্কার হয় না। আমার ‘সিজদা ও অন্যান্য ইসরা(২০১৫)’ ‘সমস্ত বিসমিল্লাহ'(২০২২) ও ‘কবির নামাজ(২০২৪)’ বইগুলো থেকে উপকরণ ও উদাহরণ নেয়া যেত। হয়ত তা সংগ্রহে নাই। তবুও আমার কবিতার ট্রেণ্ড নিয়ে যে আবু তাহের সরফরাজ ভাই একটা চমৎকার গদ্য লিখছেন তাতেই আমি খুশি হয়েছি। তাকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। সাথে সাথে বাংলারিভিউয়ের সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লবকেও অনেক ধন্যবাদ জানাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা