spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যমানসিকভাবেই মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করেছে সংখ্যাগুরুরা

লিখেছেন : তৈমুর খান

মানসিকভাবেই মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করেছে সংখ্যাগুরুরা

তৈমুর খান

.
স্বাধীনতার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে শিক্ষা সংস্কৃতিতে এবং অর্থনীতিতে। যদিও স্বাধীনোত্তর ভারত গঠনে মুসলিমদের ত্যাগ অনেকখানি বিশেষ করে ওয়াকফ সম্পত্তির হস্তান্তর এবং হায়দ্রাবাদের নিজাম এর ধন সম্পদ দান। এমনকী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদানও সবচেয়ে বেশি। সেইসব ইতিহাসকে কৌশলে সংখ্যাগুরুরা তুচ্ছ করে তুলেছে। সেই গৌরব ও মহিমাকে ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে যুক্ত করেনি। কতকগুলি বিচ্ছিন্ন ও নগণ্য ঘটনাকে তুলে ধরে মুসলিমদের সন্ত্রাসবাদি তকমা দিয়ে মূল স্রোত থেকে সরিয়ে রেখেছে। কখনোই তাদের বৃহৎ এর সঙ্গে সংযুক্ত করেনি বা মিশতেও দেয়নি। সমাজ ও রাজনীতিতে তাদের অচ্ছুৎ করে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সংখ্যাগুরুর মনে মুসলিমদের প্রতি এক ফোবিয়া সৃষ্টি করেছে। স্বাভাবিকভাবেই মুসলিমদের প্রতি অবিশ্বাস ও ঘৃণা বৃদ্ধি পেয়েছে সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষের। মুসলিমদের গুণের কদর বা মেধার মূল্য এখানে জোটেনি। তার ফলে তারা প্রেরণা বা উৎসাহ পায়নি। গভীরভাবে এক হীনমন্যতার ক্ষত ও যাতনা তারা ভোগ করেছে। বিভেদ বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়ে সমাজের মূল স্রোত থেকে মানসিকভাবেই তারা প্রতিবন্ধী। ক্রমাগত এইটি ঘটতে থাকায় তাদের ভাবনাতেও একটা সংকট ও দূরত্ব জেগে উঠেছে। ছোট থেকে যে হিন্দু প্রধান গ্রামে বড় হয়েছি আমি নিজেই এটা উপলব্ধি করেছি। হিন্দুদের সঙ্গে মেলামেশা যে খুব সহজ নয় এটা আমার জ্ঞান না হওয়া অবস্থা থেকেই আজ অব্দি অনুভব করি। হিন্দু বাড়িতে গেলে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্পর্শ না করার একটা সতর্কতায় সর্বদা সজাগ থাকতে হতো। বিদ্যালয়ের নানা স্তরে কতকগুলি বন্ধু সহপাঠি জুটলেও মনের সব কথা আদান প্রদান সম্ভব হতো না। বাহিরের জগৎ এবং সমাজ ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি মুসলমান। আমি ঘৃণ্য। আমি তুচ্ছ। আমি সন্ত্রাসী। আমি মন্দ। এই মানসিকতা উপলব্ধি করা অবস্থায় সমাজে বড় হওয়া কত কঠিন তা পদে পদে বুঝতে পেরেছি। আজ থেকে বাইশ বছর আগে স্কুলে শিক্ষকতার ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে শুনতে হয়েছিল: “আপনাকে চাকরি দিয়ে আমরা ইস্কুলটাকে পাকিস্তান করবো না।” আজ থেকে কুড়ি বছর আগে এসএসসি বোর্ডের পূর্বাঞ্চল জোনে ইন্টারভিউয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন? পাকিস্তান নাকি বাংলাদেশ? আপনার মাতৃভাষা কী?” অথচ আমি বাংলা ভাষা সাহিত্যের শিক্ষক পদেরই এসএসসি পাস করা প্রার্থী। সংখ্যাগুরু শিক্ষিত সমাজের মানুষেদেরও বামফ্রন্টের শাসন আমলে এরকম প্রশ্ন শুনে আমি আমার অস্তিত্ব সংকটের প্রমাদ গুনে ছিলাম। সেবারও আমার চাকরি হয়নি। মুসলিম সমাজে পথ দেখানোর যেমন কোনো নেতা নেই, তেমন নিরপেক্ষ সুবিচার পাওয়ারও কোনো উপায় নেই। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে কায়ক্লেশে দিনপাত করতে হয়। তাদের প্রতিবাদের ভাষা জীবন সংগ্রামের কাছে পরাজিত হয়। পদে পদে হোঁচট খেলেও তা জানানো হয় না। জানাবার কোনো মাধ্যমও নেই। যদিও বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায় তবে সন্ত্রাসবাদির তকমা পেতে হয়। মুসলমানের সততা, মুসলমানের আবেগ, মুসলমানের ধর্ম চর্চা, মুসলমানের সংস্কৃতি, মুসলমানের জীবনযাপন সবকিছুকেই আড়চোখে দেখার অভ্যাস সমাজের। ফলে মুসলমান ঘরের সন্তানের আত্ম বিকাশের পথ অনেক সময়ে রুদ্ধ হয়ে যায়। তার সত্তার জাগরণ প্রকাশ পায় না। প্রতিভা বিকাশের কোনো সুযোগ থাকে না। সেই হীনমন্যতা নিয়েই দারিদ্র্যে বঞ্চনায় পীড়নে দিন কাটাতে হয়। দেশ স্বাধীন হলেও মুসলিমরা যে স্বাধীন নয়, তা একজন মুসলিমই বোঝে। আজও এদের নির্বাচনের গুটি হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলি। সহমর্মিতার ছিটেফোঁটাও লক্ষ করা যায় না।

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

  1. কবি তৈমুর খানের লেখাটি পড়লাম। অনেক বেদনার অভিজ্ঞান। তার কবিতার মাঝেও এই বেদনার ছায়া ও ছাপ ফুটে ওঠে মাঝে মাঝে৷ পশ্চিমবঙ্গে বাম ফ্রন্ট সরকার মোটেও অসাম্প্রদায়িক ছিলো না। মুসলমানদের দাবিয়ে রাখা ছিলো তাদের অন্যতম প্রধান কৌশল৷ বিজেপি এখন যা করছে তা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই করছে। তারা মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে চায় এবং উপমহাদেশের সবখানি জুড়ে প্রতিষ্ঠা করতে চায় হিন্দু রাষ্ট্র, হিন্দু সমাজব্যবস্থা। কিন্তু বামেরা ভণ্ড, মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে আর কাজ করে সাম্প্রদায়িক পরিকল্পনা মতো। এখন বাংলাদেশেও ন্যায্য কথা বললে রাজাকার, পাকিস্তানী, মৌলবাদী ইত্যাদি কালিমা লেপে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজনের বড়ো অংশটাই পশ্চিমবঙ্গের বাম ফ্রন্ট এর অনুরাগী ছিলো। তারা বামদের মানসিকতা নিজেদের করে নিয়েছিলো। তারপরও বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ বলে কিছুটা রক্ষা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা