তৈমুর খান
১
ডাক
……
তোমার বসন্তে ফুটে উঠলাম
আমি আজ কী ফুল? কী ফুল?
গোলাপি রঙের পাঁপড়ি
মেঘে মেঘে সোনালি উত্তরীয়
পঁচিশে বৈশাখ এসে ডাক দিল
এত সংশয়! অন্ধকারে ডুবে আছে পথ
প্রহরে প্রহরে জেগে ওঠে বিষণ্ন কাক
তবু যুগ, যুগের পথিক
নিরালোকে খোঁজে সেই মুখ
তুমি ডাকো, ডেকে নাও
আমার সন্দিগ্ধ চেতনায়
হে পঁচিশে বৈশাখ!
২
রবীন্দ্রনাথকে দেখি
…….
আধ্যাত্মিক প্রশ্রয়ের মতো কোনো কোনো রাত আসে
যে রাতে রবীন্দ্রনাথকে দেখি
আলোর বলয় হয়ে চারিপাশ ঘিরে ঘিরে হাসে
ক্ষুৎপিপাসায় ডুবে থাকা এ-জীবন ধুলো ও কাদায় মাখামাখি
অশ্রু ও বেদনার কলঙ্কে ভেজা
তবু এক লুকোনো ডানায় উড়তে থাকে অলৌকিক পাখি
এপারে ওপারে সাঁকো ,মাঝে কালপ্রবাহের নদী
বয়ে চলে দীর্ঘপথ
দুইপাশে জীবনের ঢল,নশ্বর মায়ায় খেলে রতি
বোঝালেন রবীন্দ্রনাথ, এখানেই তাঁহার ঘরের চাবি
মগ্নচৈতন্যের আঁধারে ডুবে আছে
অথবা সোনার তরী ভাসে,তরীতে আমাদের পার হওয়ার দাবি….
সীমানা যতই আঁকা ,অসীমের হাতছানি বাজে
অমরতার সুতো টেনে টেনে
জীবনকেই মেলে দিচ্ছি রোজ রোজ মানব সমাজে
৩
জন্মদিন
……..
সব দরোজা খুলে যাচ্ছে একে একে
প্রতিটি দরোজায় তুমি বেরিয়ে আসছ আজ
আমরা সব বাংলা ভাষার পাখি
আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে ভাষার বৈভব !
৪
সহজ পাঠ
……..
অক্ষর চিনেছি আর অক্ষরের কাছে
প্রথম চিনেছি তোমাকে।
লন্ঠনের কাচ মুছে আমার সন্ধেবেলা
নির্মাণ করেছে পাঠশালা।
কত যুগ চলে যায়, যেতে যেতে ডাকে
আঁকড়ে ধরেছি আমি বাংলা ভাষাকে।
আজও নন্দলাল বসু এসে অলংকরণ করে যায়।
৫
গীতাঞ্জলি
……..
আত্মা পরমাত্মার কাছে যাবে
রাস্তা ঠিকঠাক আছে
নৈশপ্রহরীরা জেগে আছে রাস্তায়
পৃথিবীর রঙিন উৎসবে
আত্মা আর থাকতে চাইছে না
দূরে বাজনা বাজছে
ঈশ্বরতত্ত্বের গান ঝরে পড়ছে ধুলোয়….
৬
বাইশে শ্রাবণ
……..
মেঘ নেই, স্মরণের ধূসর বিকেলে
অস্ত আলোর রশ্মি তির্যক হয়ে পড়েছে জলে।
নৌকা সব চলে গেছে স্বর্গের দিকে
আমরা বিভ্রান্ত যুগে আর ডাকি না তোমাকে।
বেহুলাও ফিরবে না আর;ঊর্বশী নেমেছে ঘরে ঘরে
ডুবে গেছে চাঁদ ধ্যানভঙ্গ কামার্ত তিমিরে।
তোমার গানের রেণু লেগে আছে অভিমানী ফুলে
ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে দেখি, তার প্রেম হেম হয়ে জ্বলে।
কুমারী মাছরাঙাদের পাড়ায় কারা ঢেউ তোলে?
সভ্যতা গড়ায় দেখি রঙিন রঙিন সাইকেলে।
রাস্তার স্ট্যাচুগুলি আর কি জাবর কাটে উল্লাসে?
ভাষাহারা পাখি আর কি ভাষা খুঁজতে আসে?
পাঠশালার সহজপাঠে শ্রাবণের নদীরগুলি হাসে
আমরা আরোগ্য চাই এই তপোবন ভালোবেসে।
বাইশে শ্রাবণ শুধু গীতবিতানের আলো পেয়ে
স্পন্দিত হোক তবে নন্দিত এ অসীমে চেয়ে।
৭
আমার বিষাদপুর
………
রাস্তা ছিল না কোনো দিকে
অপেক্ষায় কেটেছে সকাল
তবুও কাঁদিনি আমি
ছুঁয়েও দেখিনি কারও গাল।
খাতাতেই এঁকেছি নদী
শব্দের বাগানে পুষেছি পাখি
কল্পনা ভাসিয়েছে নাও
দূরে দূরে তাকেই ভেসে যেতে দেখি।
আমার বিষাদপুরে কেউ কি নূপুর গেছে ফেলে?
যদিও দেখি না চোখে তাই বাজে থেকে থেকে
কে নেচে যায় একাকী দুপুরে?
আমি রোজ মনে মনে চুমু খাই তার গোলাপি করতলে।
যদিও বৃষ্টি আসে,উচ্ছ্বাসে জানালা খুলে যায়
মেঘের পসরা নিয়ে নামে বর্ষার মেয়ে
গীতবিতানের সুরে তার নরম বুক ছুঁয়ে
মাঝে মাঝে আমিও রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাই !
নানান রবীন্দ্রনাথের একটি মালা ।