এসেছে দারুণ শুক্রবার। তোমার কি মৃত্যু হলো?
তুমি কি আনত হও শিলাখণ্ডে, দূর করে দাও পরিচয়?
জানি- বিবাহ উৎসব করো, নৃত্য করে আগুন বানাও
মাংস খাও আর চুপিচুপি দেখে নাও মদ ও মহিলা।
এসেছে দারুণ শুক্রবার। তোমার কি জাগরণ হলো?
তুমি কি নিজেকে সমাহিত দিবে পুরানো কবরে?
নাকি যাবে কোথাও, যেখানে জলধারা বেরুবে পাথরে।
সেখানে নিশ্চিত পেয়ে যাবে ঘন সবুজ উদ্যান-
নিচে স্রোতধারা চলে ছলছল? শুক্রবারে ঘরে দূত-কবুতর।
যেন মসজিদের গালিচা এসে ছড়িয়ে পড়ছে শূন্য বিছানায়।
শান্ত হয়েছে ভাবনা লুসিফার, দূর হয়েছে মরণ ভাষালিপি।
২
রোজ শুক্রবারে তুমি বধূ হও। আমি মধুর জানাবা শেষে
পাখির উড়াল মগডালে। দেখি আচমকা ঝুম বৃষ্টি নামে।
নদী নদী জিপসিদের আনন্দ নৌকা, যেন প্রাচীন চীনের টাঙ
রমণীদের স্বামী বদলের গল্প শুনে জেগে উঠছে–
মমিরাজা তুতানখামেন। এভাবেই শুক্রবারে পুরুষের
তরবারি নাচে আর রাজ্য পরিক্রমা হয়। সেই ভেবে আমি
প্রতি সপ্তাহে মধুর শুক্রবার চাইবো। প্রাচীর বেয়ে ওঠে
আসবো। দেখবো ছাদে গিরিবাজ পায়রাদের ডিগবাজি।
দূরে কেউ সিজদা করছে আর বুকের বাগানে ফুটে আছে
সুরা আল কাহাফের গল্পগোলাপ।
৩
চুম্বনে বিনাশ নাই। যেখানেই দেবো সেখানেই ফুটে
ওঠে তাহিতি-রমণীদের চাঁদ। তুমি সে কথা ভেব না,
যুদ্ধকথা বলবো না আজ । বলবো না কতটুকু কাছে এলে
শত্রুদের গোপন মাইনগুলো ফুটে ওঠে পায়ে পায়ে ।
রক্ত ঝরে ফসলে ফসলে। তার চেয়ে আসো– মাছে
সবজিতে রান্না করো। গন্ধ পরো হলদে সবুজ বসন্তের।
তুমি কি চাওনি আমি শুক্রবারে সঙ্গমের কথা বলি,
তোমার বুকের কথা বলি? বলি অন্ধকার হও, নিশ্চুপ হও।
বলি শীত মৌসুমে কিভাবে আটলান্টিক পেরিয়ে তিমি মাছগুলো
দূর মহাসাগরের মেয়ে-তিমি মাছগুলিকে বিবাহ করে!
৪
এই শুক্রবারে আমি আমার মায়ের স্মৃতিচিহ্নে ফিরে যাবো।
তার মৌন জরায়ুতে শুয়ে থাকবো। দেখবো স্নেহপাখি শিস,
অবুজ ময়ুর, থোকা রক্তগোলাপ ফুটেছে আমার নামে ।
বলো- আম্মা কি জাগে নি শান্ত লাল সুবহে সাদিকে?
তার কি ছিলো না রেহেল যেখানে কোরান রেখে
পড়তেন সুরা ইয়াসিন। যেন তাই হোক, শুক্রবারে শহর থেকে
এক রিজাল আসুক। বলে দিক ঝর্না আর কলকল পানির কথা।
আমি মুক্ত মনে মিনারে আজান দেবো আর জানালার দিকে
তাকিয়ে দেখবো- মধু মায়ের চুম্বন, ডালিমের রঙ নিয়ে
ফুটে আছে তার সিজদার গালিচায়!
৫
শুক্রবারের কবিতাগুলি নাজেল হতে থাকে ধীরে।
ক্বল্বের জানালা দিয়ে উড়ে আসে কল্পনার ঘুঘু।
রক্তে নামে সালাতের বীজ- চোখে আহাদের ইশারা।
মন বশীভূত হয়- সাল্লু সাল্লু বলে দশ দরবেশ পাখি।
যেন আমার কলম ঝর্না পাওয়া অতি তৎপর জল
পলি আর গর্ভবতী করে দেবে ইট পাথরের ঘর।
তুমি কি দেখেছ গাছ থেকে পাতা জন্মানোর প্রবল সকাল
যেন নারীর স্তনের বর্ণ, আকার, আমাকে করে তুমল অজ্ঞান।
শুক্রবারে চেতনা বিলুপ্ত হয়। থাকে শুধু এক পথের ইমেজ
লাব্বাইক লাব্বাইক বলে হাড়ে জমা হতে থাকে কাব্য-ইয়াকিন।
৬
শুক্রবারের কবিতাগুলি আচানক বীর হয়ে ওঠে। ইতিহাস থেকে
উঠে আসে বাঙলা মুল্লকে। তারা দক্ষ তীরন্দাজ, তারা সিপাহশালার।
ঘোড়া চালায়, নিঃশঙ্ক তরবারি চালায়। সিন্ধুর অববাহিকায়
দাওয়াত নিয়ে আসে। বলে- ওরে, ওরে লুইপাদ, ওরে কাহ্নু পাদ,
আয় তোরা শান্তি লাভে আয়। তোদের কবিতা দিবে ভাষার খলিফা।
আর ঐ যে বড়ু চন্ডীদাস- বাংলা কবিতায় জন্ম দেয় প্রেম পরকিয়া।
তুমি কি শুনেছো সুরা ইখলাস? তুমি কি বুঝেছো আর রাহমান?
এই শুক্রবারে তারে ধরে আনি মসজিদে। আর সুর করে শুনাই আজান।
যেন তার মতিগতি হয়, যেন সে রাধাকে গহবধু করে নিয়ে আসে ঘরে।
বিসমিল্লাহ খানের শানাই বাজায় আর দূর করে কৃষ্ণলীলা, শয়তান।
৩১/১২/২০২৩