প্রশ্ন : আপনার প্রথম প্রকাশিত বই কোনটি? কবে প্রকাশিত হয়েছিলো? প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কেমন ছিলো?
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : প্রথম প্রকাশিত বইটির নাম ‘অলৌকিক অহংকার’। এটি আমার প্রথম বই এবং প্রথম কবিতার বই। ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ক্যাঙগারু প্রকাশনের কল্যানে বইটি বেরিয়েছিলো। ক্যাঙগারু প্রকাশনের কর্ণধার ছিলেন বিশিষ্ট ছড়াকার ও চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘ছড়া-পত্রিকা’-র সম্পাদক মাহবুবুল হাসান। মাহবুবুল হাসান খুবই মাই ডিয়ার ম্যান। তাঁর প্রীতিপূর্ণ পীড়াপীড়ির কারণেই বইটির পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করি আমি এবং তাঁর হাতে তুলে দিই। স্বল্প সময়ের মধ্যে সেটিকে সূর্যালোক দেখার সূযোগ করে দিয়ে তিনি আমাকে কৃতার্থ করেছিলেন। যতটুকু মনে আছে, বইটি যখন বেরিয়েছিলো, তার কয়েকদিন পরই ছিলো ঈদ। ঈদ করতে বউ-বাচ্চা নিয়ে যাবো গ্রামের বাড়িতে। মাহবুবুল হাসান দ্রুত বাঁধাই করিয়ে ১০ কপি বই আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। নিজের প্রথম বই হাতে পেয়ে জন্মের পর প্রথম সন্তানকে দেখার স্মৃতি মনে পড়ে গিয়েছিলো আমার। প্রথমবার প্রথম সন্তানের মায়াবী মুখ দেখে যেরকম আনন্দিত, আন্দোলিত ও আবেগাক্রান্ত হয়েছিলাম, প্রথম বইটি হাতে পেয়েও আমি তেমনটা হয়েছিলাম। ঈদে গ্রামের বাড়িতে যারা এসেছিলেন, বেছে বেছে কয়েকজনকে উপহারও দিয়েছিলাম বইটি। এককথায় ঈদের আনন্দ ও বই বের হওয়ার আনন্দ একাকার হয়ে গিয়েছিলো। এর প্রচ্ছদটি ছিলো প্রশংসা করার মতো। প্রায় প্রত্যেকেই এর প্রশংসা করেছিলেন। বিমূর্ত এই প্রচ্ছদটি করেছিলেন শিল্পী দিলীপ মন্ডল। বইটি বের হলে এর এক কপি পাঠিয়েছিলাম দৈনিক ইত্তেফাক-এর সাহিত্য সম্পাদক কবি আল মুজাহিদী’র বরাবরে। তাঁর সাথে তখন আমার পরিচয় না থাকলেও, পরের সপ্তাহে পত্রিকাটির সাহিত্য পাতা পড়তে গিয়ে আমি তো অবাক! দেখি ‘অলৌকিক অহংকার’-এর একটি ছোট্ট পরিচিতি তথা পর্যালোচনা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকাটিতে।’প্রবীণ পাঠক’ ছদ্মনামের একজন প্রাজ্ঞ সাহিত্য সমালোচক তাতে লিখেছেন, “সম্প্রতি মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন-এর কবিতাগ্রন্থ অলৌকিক অহংকার’ প্রকাশিত হয়েছে। ৪৮ টি কবিতা সংকলিত হয়েছে বইটিতে। নিযামুদ্দীনের কবিতায় আধুনিক জীবনবোধ ও বিশ্বাস উৎকীর্ণ হয়েছে। গভীর আততি থেকে। তার ভাষা বেশ স্মার্ট।… নিযামুদ্দীনের বাসনা প্রেমে জীবনকে অভিষিক্ত করা। তার আকাঙ্ক্ষা পল্লবিত বহুমাত্রিকতায় — বইটির পাঠকপ্রিয়তা আমাদের কাম্য।”(ইত্তেফাক, ০২ মার্চ ১৯৯৭)। কবি নিতাই সেন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭-এ লেখা এক চিঠিতে আমাকে লিখেছেন, “অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা ‘অলৌকিক অহংকারের’ জন্য। প্রোডাকশন চমৎকার হয়েছে, দৃষ্টিনন্দন এবং শৈল্পিক সুষমায় সজ্জিত প্রচ্ছদ চমকপ্রদ হয়েছে।… ১২/০২/৯৬ ইং ২ টায় পাহাড়িকা ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম যাত্রার পূর্ব মুহূর্তে হাতে পেয়েছি এ অমূল্য নবজাতককে। ট্রেনের ভেতর এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলা হলো এর বহির্লোক। অন্তঃলোক অধ্যয়নের জন্য চাই আরো গভীর মনোনিবেশ। তবে শব্দকাতরতা, শব্দপ্রীতি, শব্দ শব্দের প্রতি অতিরিক্ত অনুরাগ লক্ষ্য করা গেছে অহংকারের শরীরে। শব্দব্রহ্ম দখল করেছে অধিকাংশ কবিতার সূক্ষ্ম শিরা-উপশিরায়।” কলকাতার বিখ্যাত হাংরি জেনারেশন-এর কবি দেবী রায় ০৯ মার্চ ১৯৯৭-তে লেখা এক পত্রে লিখেছেন, “আজই পেয়েছি ‘অলৌকিক অহংকার’। এতো সুন্দর অঙ্গসৌষ্ঠব, মুদ্রণ পরিপাট্য থেকে বাঁধাই যে ভাবা যায়না। বাংলাভাষায় এরকম একটি কবিতার বই উপহার পাওয়া, এ-তো ভাগ্যের কথা। নিশ্চিত পড়বো ধীরেসুস্থে।” বিখ্যাত ‘মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা’র সুখ্যাত সম্পাদক মীজানুর রহমান ১৮ মে ১৯৯৮-তে লেখা এক পত্রে লিখেছেন, “বাঙালির মনটা কাব্যাবেগ তাড়িত, আপনি ‘অলৌকিক অহংকার’-এ আবার তাই প্রমাণ করলেন।” বগুড়া থেকে প্রকাশিত ও খৈয়াম কাদের সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘নেমিসিস’-এর একটি সংখ্যায়(মার্চ ১৯৯৭) প্রতীক নজরুল লিখেছেন, “সম্প্রতি ‘উপমা’ সম্পাদক (আল মাহমুদ সংখ্যা খ্যাত) কবি মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন-এর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলৌকিক অহংকার’ বেরিয়েছে। কবিতায় যে অলৌকিক শব্দের সমাহার ঘটতে পারে উপস্থিত কাব্যগ্রন্থ তার উজ্জ্বল প্রমাণ।… শব্দ নিয়েই কবির খেলা। এতে কবি আনন্দ পান। উপভোগ করেন। শব্দই কবির সম্বল, তার জীবনের সাথী।… মুহাম্মদ নিযামুদ্দীনের এই কাব্যগ্রন্থ পাঠ করলে স্বপ্ন ও পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতা উভয়েই দোলা দেয় মনে। কাব্য প্রেমিকদের কাছে এটি আবেহায়াত সন্দেহ নাই।” কবি আরিফ চৌধুরী তার পাঠ-প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেছেন, “আধুনিক কবিতার বৈশিষ্ট্যতা নির্ভর করে সময় সচেতনতাকে নিয়ে। আধুনিক সমাজের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে দৃষ্টিকোণের অভিজ্ঞান নির্ভর করে আধুনিক কবিতা হয়ে ওঠে নতুনত্বের হাওয়ায় সুবাসিত। তেমন কিছু আধুনিক কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে মুহাম্মদ নিযামুদ্দীনের কবিতার এই ‘অলৌকিক অহংকার’। মনের গতি-প্রকৃতি, বিপর্যস্ত জীবনের ভাবনা, রোমান্টিক মনের চাওয়া-পাওয়া ও সর্বোপরি শিক্ষিত জীবনের চিত্র নির্মাণে বাস্তবতা ও রূপকের ব্যবহার যেনো কবিতার পরতে পরতে গেঁথে আছে।”( দৈনিক ইনকিলাব, ০১ নভেম্বর ১৯৯৮)। এসব পাঠ-প্রতিক্রিয়া সেসময় আমাকে বেশ উৎসাহ দিয়েছিলো, উদ্দীপিত করেছিলো। সবমিলিয়ে প্রথম বইটি প্রকাশের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি ছিলো আবেগ ও আনন্দের আলিঙ্গনে অসামান্য।
প্রশ্ন : সাহিত্যে আপনি কার উত্তরাধিকার বহন করেন?
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : নির্দিষ্টভাবে কারো নাম না বলে বরং এটাই বলবো– যাঁদের লেখা মা, মাটি ও মাতৃভূমিগন্ধি, যাঁদের লেখায় মানবতা, মরালিটি ও মর্ডানিটির জয়জয়কার– আমি বহন করি তাঁদের উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। সে ক্ষেত্রে মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীমুদ্দীন, ফররুখ, আহসান হাবীব, সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, শাহেদ আলী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আল মাহমুদ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশ গুপ্ত, শহীদ কাদরী, ওমর আলী, দিলওয়ার, আহমদ ছফা, মাহমুদুল হক, আবদুল মান্নান সৈয়দ, রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, ফরহাদ মজহার, ময়ূখ চৌধুরী, সলিমুল্লাহ খান, সালাহউদ্দীন আইয়ুব প্রমুখের লেখা আমাকে বেশি টানে, ঢেউ জাগায় প্রাণে।
প্রশ্ন : এ যাবত সর্বমোট কতটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে আপনার? এর মধ্যে কোনটি বা কোন কোন কাজকে বা কোন বইকে আপনি আপনার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে মনে করেন?
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : এ যাবত প্রকাশিত আমার বইয়ের সংখ্যা বেশি নয়, মাত্র ৫ টি। বইগুলো হলো– অলৌকিক অহংকার (কাব্যগ্রন্থ, ১৯৯৭), বিশ্ব-স্বৈরাচার (১৯৯১ সালে আমেরিকা কর্তৃক ইরাক আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা প্রতিবাদী পুস্তিকা), ওলী-এ-চাটগাম ; তাঁর সৃষ্টি (জীবনীগ্রন্থ, ১৯৯১), ছড়া-চিন্তা (প্রবন্ধ পুস্তক, ২০০৫), ছাগল-চিন্তা (রম্যরচনা, ২০১৪)। একজন পিতা যেমন বলতে পারেননা তাঁর কোন সন্তানটি উল্লেখযোগ্য, কেননা এতে সম্পর্কের ও স্নেহের সমতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সমধিক, তেমনি আমিও অপারগ আমার কোন সৃষ্টিটি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া সেই সময়টাও এখনো আসেনি। কেননা, আমার অধিকাংশ পাণ্ডুলিপিই আজো অপ্রকাশিত।
প্রশ্ন : সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার নতুন বই সম্পর্কে বলুন।
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এমন কোনো বই নেই আমার। আমি যে পরিমান লিখেছি বা লিখছি, সে তুলনায় বই বেরিয়েছে বহু কম। পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করার, প্রুফ দেখার পরিশ্রম করতে গেলে বাকি বৈষয়িক দিকগুলো চলেনা, আবার বৈষয়িক দিক বাদ দিলে সংসার জীবন চলেনা। সেজন্য ইচ্ছে থাকলেও বই বের করার বাসনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি। তাছাড়া বই বের করা এখন এতটা ব্যয়বহুল হয়ে গিয়েছে যে, সাধ থাকলেও সাহস হয়না। ২৫/৩০ টির মতো পাণ্ডুলিপি এখনো হায় — পড়ে আছে বের হতে না পারার বেদনায়।
প্রশ্ন : আপনি নিজেকে কোন দশকের কবি-লেখক বলে মনে করেন? কেন?
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : দশকের দেয়ালে আবদ্ধ করে কারো সাহিত্যকে বিচার করতে গেলে তার সম্পূর্ণ সাহিত্যের প্রতি একধরণের অবিচার করা হয়। এর ফলে দশকের পর দশক ধরে তিনি যে লিখছেন, সেটা সমালোচকের লেখায় সম্পূর্ণরূপে সূর্যালোক পড়েনা। সেজন্য দশকের দেয়ালে আবদ্ধ করে যে সাহিত্য বিচার — তাতে নেই বিশ্বাস আমার।
প্রশ্ন : আপনার সমকাল নিয়ে বলুন।
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : সমকাল তো স্থির কিছু নয় — স্রোতের মতো সদা বহমান। যেমন আজ থেকে বিশ বছর আগে যখন আমি লিখছিলাম, তখন সেটাও আমার সমকাল ছিলো। কিংবা তারো পেছনে চল্লিশ বছর আগে যাই, সেটাও আমার সমকাল ছিলো। আবার এই যে বহমান বর্তমান — এটাও আমার সমকাল। কিন্তু দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা আজো আমাদের অতীতকে অতিক্রম করতে পারিনি। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণকে আমরা আধুনিকতা নামে চালিয়ে দিয়ে আত্মপ্রসাদে ভুগছি। সাহিত্যক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের এই আধুনিকতা আঙ্গিককে যতটা প্রাধান্য প্রদান করে, অন্তর বা আত্মাকে ততটা প্রাধান্য প্রদান করেনা ; মর্ডানিটিকে যতটা প্রাধান্য প্রদান করে, মরালিটিকে ততটা প্রাধান্য প্রদান করেনা। চিত্রকলায় হোক, কবিতায় হোক, গল্পে-উপন্যাসে-নাটকে হোক, নারীকে ন্যাংটো করতে পারাটাকে যারা আধুনিকতা মনে করে, মানুষকেও পণ্য বলে গণ্য করে, তাদের সেই তথাকথিত আধুনিকতায় আমার আস্থা নেই। নারীকে ন্যাংটো করলে থাকে কি? সভ্যতা বলতে কিছুই থাকেনা। জানোয়ারের জন্য জামাকাপড়ের প্রয়োজন পড়েনা। যেমন কুকুরকে জামাকাপড় পরালেই তাকে অসুন্দর লাগবে। তেমনি কাউয়াকেও কোট-টাই পরালে কুৎসিত লাগবে। তাদের উভয়ের জন্য উদম থাকাই উত্তম। কিন্তু মানুষ তো কুকুর নয়, কিংবা কাউয়াও নয়। মানুষ তো মানুষ। তার জন্য পোশাকের প্রয়োজন। এবং সেটাই শোভন। সভ্যতাকে নান্দনিকতার নামে যারা ন্যাংটো করতে চায়, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- তারা কি তাদের মা-কে, বোনকে, বউকে পোশাকহীন দেখতে পছন্দ করবে?
প্রশ্ন : সাম্প্রতিককালে কারা ভালো লিখছে বলে মনে করেন?
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : সাম্প্রতিককালে ভালো লিখছেন এমন লেখকের সংখ্যা ভীষণরকম কম। কেননা, বেশিরভাগ লেখকই এখন প্রজ্ঞানির্ভর নয়, প্রজ্ঞাপন নির্ভর। তবে অল্প যে কয়েকজন লিখছেন, তাদের নাম উল্লেখ করে বাকিদের বিরাগ ভাজন হতে চাইনা। কারণ আমাদের এখানে সমালোচনাকে সহ্য করার ধৈর্য কারো মধ্যে নেই। সবাই প্রশংসার প্লাবনে ভাসতে চায়। কিন্তু অকারণ বা অতিরিক্ত প্রশংসা যে নিন্দারই নামান্তর, সেটা যদি কেউ বুঝতে না চায়, তাকে বোঝানো যাবেনা শত চেষ্টায়। সমালোচনাকে নিন্দা ভাবলে সাহিত্যের এমন দশা তো হবে হায়! তাছাড়া সাহিত্যচর্চা এখন ফেসবুক নির্ভর হয়ে পড়েছে। সাহিত্যের প্রতি কারো নেই খেয়াল, সবাই হতে চায় ভাইরাল, সে জন্য সাহিত্যের এই হাল! এসব নিয়েই চলছে সমকাল।
প্রশ্ন : কোথায় আছেন? কি করছেন? পারিবারিক পরিচিতি জানতে চাই।
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : চট্টগ্রাম শহরেই বাস করি। ১৯৭৮ সালের কোনো একদিন চাকুরির কারণেই চট্টগ্রাম শহরে এসেছিলাম। কিন্তু আমার বুকের মধ্যে বাস করে গ্রাম। আমি জন্মগ্রহণ করেছি ও বেড়ে উঠেছিও গ্রামে। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মান্দারবাড়িয়া নামক গ্রামে আমার জন্ম। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা এই মিরসরাই। এর একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে নদী, মাঝখানে সুবিশাল সমতল ভূমি। যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলতে গেলে এর বুকের ওপর দিয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও রেললাইন। এই সড়ক পথ ও রেলপথ আবার শরীরের শিরা-উপশিরার মতো সারা দেশের সাথে বিস্তৃত। ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকেও সমুজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ এরকম একটি উপজেলায় যেখানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমার, সেজন্য খোদার দরবারে শুকরিয়া বেশুমার। আমার পূর্বপুরুষরা, ছোট দাদু হাজি লাল মিয়া সাহেবের মুখ থেকে এবং তাঁরই চাচাতো ভাই মৌলভী ওয়াজিউল্লাহ সাহেবের মুখ থেকে যতটুকু শুনেছি, এসেছিলেন আরবদেশ থেকে। জায়গা-জমির পুরোনো দলিলপত্রে পূর্বপুরুষদের নামের পূর্বে ‘শেখ’ শব্দটিও সেই সত্যটাকে প্রমাণ করে। একসময় চট্টগ্রামকে বলা হতো প্রাচ্যের প্রবেশ দ্বার। সেকারণে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের লোকদের কাছে ব্যবসা-বাণিজ্যের লোকেশন হিসেবে চট্টগ্রাম ছিলো অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আরবদেশের লোকেরা ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি ইসলাম প্রচারকেও বেছে নিতেন তাদের মিশন হিসেবে। সেজন্য দেখা যায়, দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে চট্টগ্রামে অলী-আউলিয়ার আগমন হয়েছিলো অধিক। আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যেও কয়েকজন অলীয়ে কামিল ছিলেন বলে জানা যায়। তাঁদের মধ্যে সর্বশেষজন ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় বড়দাদু (আমার দাদু হাজি লাল মিয়া সাহেব, যাঁকে আমরা ছোটদাদু বলে ডাকতাম, তাঁর আপন একমাত্র বড়ভাই) মওলানা ওলী আহমদ নিযামপুরী (র.) [১৮৮৫-১৯৬০] ছিলেন অন্যতম। বড় দাদু মওলানা ওলী আহমদ নিযামপুরী (র.) ছিলেন দুনিয়াখ্যাত দেওবন্দ দারুল উলুম (বিশ্ববিদ্যালয়) পাশ সুপ্রসিদ্ধ আলিম, অলীয়ে কামিল ও আরবি-ফারসি কবি। আরবি ও ফারসিতে লেখা তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থও আছে, যেগুলো তৎকালে ভারতের বম্বে এবং উত্তর প্রদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো এবং প্রাজ্ঞজনদের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিলো। তাঁর কবিতাগুলো করোটির কালাম ছিলোনা, ছিলো কলবের কালাম। তাঁর রুহানি রাহবার ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর সিপাহশালার, বিশ্বখ্যাত বিদ্বান ও বুজুর্গানে দ্বীন শে’খুল হিন্দ মওলানা মাহমুদুল হাসান (র.)। দেওবন্দে অধ্যয়নকালে পাকিস্তানের মুফতি মুহাম্মদ শফি (র.) ছিলেন তাঁর সুহৃদ ও সহপাঠী, যিনি পরবর্তীতে ‘তাফসিরাতে মারিফুল কুরআন’ সহ অসংখ্য দ্বীনি গ্রন্থ রচনা করে পুরো পৃথিবীতে পরিচিতি পেয়েছিলেন। বড়দাদু তাঁর সমকালে চট্টগ্রামের ‘শহর কুতুব’ হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত ও সম্মানিত ছিলেন। নজরুল-বন্ধু, ‘নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়’ সহ বেশকিছু বইয়ের লেখক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক সুফী জুলফিকার হায়দার ছিলেন বড়দাদুর একান্ত ভক্ত। বড়দাদুর ভক্তদের কাছে শুনেছি, চল্লিশের অন্যতম আধুনিক কবি আবুল হোসেনও বড়দাদুর দর্শন ও দোয়া লাভের জন্য তাঁর দরবারে আসতেন। বড়দাদু ছিলেন চিরকুমার ও দুনিয়াবিমুখ দরবেশ। তিনি কখনো পিরালি করতেননা। সহজ-সরল ও সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন। জ্ঞানার্জন ও সাত্ত্বিক সাধনায় সবসময় সমর্পিত থাকতেন। ফলে বড় বড় আলিম-ওলামা, সরকারি আমলা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট ও শ্রদ্ধান্বিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সময় আমি ছোট থাকলেও, তাঁর মৃত্যুর পর দেখেছি, কিভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকেরা প্রতিদিন তাঁর মাযার যিয়ারতের জন্য আমাদের গ্রামের বাড়িতে আসতেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কেনা ও সংগ্রহ করা বড় বড় কিতাবের এক সুবিশাল সংগ্রহশালা ছিলো বড়দাদুর। আমি পড়তে না পারলেও বিস্ময়ে তাকিয়ে সেই বইগুলো, তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থগুলো দেখতাম, আর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় সিক্ত হতাম। তাঁরই আপন ছোট ভাই হলেন আমার ছোট দাদু হাজি লাল মিয়া — দাদী আমেনা খাতুনকে যিনি করেছিলেন বিয়া। উভয়ে ছিলেন বড় ধার্মিক, ছিলো সুখের সংসার। তাঁদের ওপর বর্ষিত হক রহম খোদার। আমার আব্বা ছিলেন তাঁদের সন্তান। মেজাজি হলেও মায়ায় ভরা ছিলো তাঁর হৃদয়খান। শামসুল হক নামে সবাই চিনতো তাঁকে। আটাত্তরে গেলেন চলে আল্লাহর ডাকে। চেমন আফরোজ বেগম আমার মায়ের নাম — সহজ-সরল, সংসারী ও ধৈর্যশীলা হিসেবে ছিলো তার সম্মান ও সুনাম। তিনিও জন্মেছিলেন সম্ভ্রান্ত ঘরে — তাই তো দাদু তাঁকে এনেছিলেন পুত্রবধূ করে। মা ছিলেন আমাদের জন্য স্নেহ ও মায়ামমতার খনি। তাঁর কাছে আমরা চির ঋণী। তাঁকে হারিয়ে সত্যিই এতিম আমরা। রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি সগিরা। আরেকজনের কথা যদি না বলি যাবো আমি অকৃতজ্ঞের কাতারে – কাকা বলে ডাকতাম আমি তাঁহারে। আবদুল খালেক নাম তাঁর, ছিলেন মওলানা — খুবই নরম ছিলো তাঁর হৃদয়খানা। এমন সহজ-সরল, ধার্মিক ও মানবিক মানুষ কোথায় পাই! তিনি ছিলেন আমার আব্বার একমাত্র আপন ছোট ভাই। তিনি ছিলেন আমার জন্য স্নেহ ও ভালোবাসার স্থল — তাঁর কথা মনে হলে চোখ বেয়ে নামে জল। এভাবে এক ধর্মীয়, উদারনৈতিক ও আধ্যাত্মিক আবহের মধ্য দিয়ে আমি বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি। ফলে আমার চিন্তায়, চর্চায় এসবের তাপ ও ছাপ থাকা স্বাভাবিক। বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্রে আরো একজনের কথা সামনে চলে আসে – তিনি হলেন আমার শ্রদ্ধেয় শ্বশুর। তাঁর নাম মওলানা মতিউর রহমান নিজামী (র.)[রাজনীতিবিদ নন]। তিনি ছিলেন মশহুর মুহাদ্দিস ও উর্দু কবি। কলকাতা আলীয়ার এই কৃতি ছাত্র যে বছর সেই বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ থেকে গোল্ড মেডেল সহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে কামিল পাশ করেন, সে বছর রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। আমৃত্যু তিনি চট্টগ্রামের চন্দনপুরাস্থ দারুল উলুম আলীয়া’র প্রধান মুহাদ্দিস ছিলেন। তাছাড়া যতদিন গোটা দেশে একটিমাত্র মাদ্রাসাবোর্ড ছিলো, ততদিন তিনি ছিলেন মাদ্রাসাবোর্ডের হাদিসের প্রধান পরীক্ষক। ‘তনহা নিজামী’ ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। এই লকব বা উপাধিটি তিনি উপহার পেয়েছিলেন প্রখ্যাত উর্দু কবি জিগর মুরাদাবাদী’র কাছ থেকে। তখনকার জনপ্রিয় উর্দু পত্রিকা ‘জং’ সহ ভারত-পাকিস্তানের নামকরা পত্র-পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশ পেতো। তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য ছিলো- স্বল্প কথায় সমুদ্রের গভীরতা, যা পাঠককে দ্রুত কানেক্ট করতে পারতো — ঋদ্ধ ও মুগ্ধ করতে পারতো। মৃত্যুর মাস কয়েক আগে ‘নসীমে মশরেক’ নামে তাঁর একটি উর্দু কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছিলো, যা তাঁর ছাত্র, ভক্ত ও পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলো। বাংলায়ও তাঁর একটি বই বের হয় ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে। বইটির নাম ‘কাছাছুল হাদিস বা কাহিনীমূলক হাদিস’। এটি বেরিয়েছিলো তাঁর মৃত্যুর পর। তাঁকে দেখা এবং তাঁর লেখাও একজন সাহিত্যিপ্রেমিক হিসেবে আমার জন্য সৌভাগ্যের সওগাত।এরপর বলতে পারি আমার আব্বার এক চাচাতো ভাইয়ের কথা, যার নাম মাহফুজুর রহমান। বয়সে আমার ছোট হলেও প্রতিভায় ও প্রতিষ্ঠায় তিনি একজন বড় মাপের ব্যক্তিত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় অনার্স ও এমএ পাশ করার পর সাংবাদিক হিসেবে কেরিয়ার শুরু করলেও সাহিত্যের প্রতিও তার অনুরাগ বা আন্তরিকতা কম নয়। একসময় ছিলেন বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র এডিটর। কিছুকাল ইংরেজি দৈনিক দ্যা সান-এর নিউজ এডিটর হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে ‘সময়’ টিভি’র সাথে সম্পৃক্ত — সম্পাদক (ওয়েব) হিসেবে। বাংলায় ও ইংরেজিতে মিলে কয়েকটি বইও বেরিয়েছে তার। আমার স্ত্রীর একমাত্র ছোট ভাই সালাহউদ্দীন আইয়ুবের কথাও এ প্রসঙ্গে চলে আসে। মৌলিক মেধার অধিকারী সালাহউদ্দীন আইয়ুব গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত। উত্তরাধুনিকতা নিয়ে তার উত্থান, এবং তারপর নতুন নতুন দিগ্বিজয়ে অগ্রাভিজান। কুয়োর ব্যাঙগুলো যতোই লাফাক না কেন, তাদের বাসের পৃথিবী ও বোধের পরিধি তো অতি ক্ষুদ্র — তাদের কি আছে সাধ্য মন্থন করে সমুদ্র! সিন্দাবাদের নাবিকের মতো সালাহউদ্দীনেরও লক্ষ্য সমুদ্রমন্থন। সেটাই তার সর্বমুহূর্তের জীবন-যাপন। বৈশ্বিক বোধকে করেন বলে ধারণ – তার বিশ্লেষণও অসাধারণ। আর তার গদ্য, সত্যি অনবদ্য। বাংলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি, ইউপিএল সহ কয়েকটি প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে তার কয়েকটি বই এবং সুধী মহলে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। তার সর্বশেষ বইটির নাম ‘ফরাশি তত্ত্ব পল দা মান ও সাহিত্যের অগস্ত্যযাত্রা’, যা বেরিয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে – মার্চ ২০১৮ সালে। আমেরিকায় তিনি দুটি বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। একটি ফোকলোরের ওপর, অন্যটি ক্রিমিনাল জাস্টিসের ওপর। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো স্টেইট য়ুনিভার্সিটির ক্রিমিনাল জাস্টিস, ফিলসফি, অ্যান্ড পলিটিকাল সাইন্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। এর আগে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমি ও নজরুল ইনস্টিটিউট – এর একজন রিসার্চ ফেলো’ও। এরপর যার কথা বলতে হয় সে হলো আমার প্রথম সন্তান — ডাকনাম তার জিশান। আসল নাম মুহাম্মদ রাগিব নিযাম। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছে হাসিল, কিন্তু সাইন্স ফিকশনে তার পড়ে থাকে দিল। সাইন্স ফিকশনধর্মী ২ টি বইও বেরিয়েছে তার। সেই খুশির খবর সবাইকে সে বলেও বারবার। বই দুটির একটি হলো ‘দ্যা মিয়ানমার পোস্ট’। বেরিয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। অন্য বইটির নাম ‘বাংলাদেশের অতি মানবেরা’, যা বেরিয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বের করেছে ঢাকার স্বরে-অ প্রকাশনী। ব্যক্তিজীবনে সে বিবাহিত। রাফিদ জাওয়াদ (জাবিয়ান) নামের এক পুত্র সন্তানের জনক। আমার মেয়ের নাম আনিকা আনজুম। এমবিএ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিবাহিতা। নাইফা মুজাইনা (তিবাহ্) নামের এক কন্যা সন্তানের জননী। মর্জিয়া খানম নামের দীর্ঘদিন থেকে আমার সাথে বাস করেন যিনি – তিনি আমার সন্তানদের মা, আমার অর্ধাঙ্গিনী। তার কাছে আমি যে চির ঋণী।
প্রশ্ন : আপনি কি কখনো কোনো পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিন অথবা সংকলন সম্পাদনা করেছেন? বিস্তারিত বলুন।
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : জ্বী হ্যা, সম্পাদনার সাথেও আমার সানুরাগ সম্পৃক্ততা ছিলো এবং আছে। আমার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের পেছনে কাজ করেছিলো আল মাহমুদ অনুরাগ। তাঁর প্রবন্ধ ও কবিতা, বিশেষ করে কবিতা, আমাকে এতোটাই আকৃষ্ট করেছিলো যে, আমার মনে হয়েছিলো — তাঁকে, তাঁর সৃষ্টিকে, মূল্যায়ন করা কেবল সময়ের দাবিই নয়, আমাদের দায়িত্ব। তিনি কবিতার প্রতি খুবই দুর্বল ছিলেন, কিন্তু দুর্বল কবিতা কখনো লিখেননি। অকবিতার সাথে তিনি কখনো করেননি সন্ধি। তিনি নিজেই ছিলেন নিজের কবিতার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। তখন স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। কবিরা দুই ভাগে বিভক্ত বঙ্গে। এরশাদ ক্ষমতায় আসার আগে কবিদের মধ্যে যে সৌহার্দ ছিলো, ক্ষমতায় আসার পর সেটা থাকলোনা আর। বিভক্তি সৃষ্টি হয় কবি ও কবিতার। এই বিভক্তি সৃষ্টির পেছনে এরশাদ ছিলেন মূল হোতা। কারণ, তিনিও করতেন কোশেশ লিখতে কবিতা! সেটা অনেকটা কাকের কোকিল হওয়ার কোশেশের মতো। কিন্তু কোথায় কাক, কোথায় কোকিল — স্বরে সুরে নেই কোনো মিল। কবিদের মধ্যে বিভক্তির পেছনে এরশাদের কূটকৌশল ছাড়াও রাজনৈতিক কারণও কম দায়ি ছিলোনা। কেউ কেউ চাইছিলেন কবিতার রাজনীতিকরণ, কেউ কেউ বলছিলেন সেটা হবে কবিতার রক্তক্ষরণ কিংবা মরণ। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সে কি রণ! রাজনৈতিক চিৎকার চিন্তাকে চাপা দেওয়ার চতুর চেষ্টা করে। এরশাদ পতনের পর এই চেষ্টা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কিছু কিছু কবিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয় এবং সেই তালিকা পত্র-পত্রিকায়ও পাঠানো হয়, যাতে তাদের কবিতা ছাপা না হয়। সেই তালিকার অন্যতম একজন ছিলেন আল মাহমুদ। আমার মনে হয়েছিলো, আল মাহমুদকে বয়কট করা মানে আধুনিক বাংলা কবিতাকে বয়কট করা। কিন্তু কবিতা তো এমন এক ক্রিয়েটিভ কর্ম, যা পাঠ করতে কারো ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা রাজনৈতিক বিশ্বাস বাধা হতে পারেনা। কিন্তু কিছু লোক আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো চিৎকার করতে থাকে বয়কট বয়কট বলে! একটি বিদ্বেষী ও বিক্ষুব্ধ বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছিলো যার ফলে। তখন দৈনিক সংবাদ-এর সাহিত্য পাতায় একটি প্রবন্ধ লিখে কাজটি যে কল্যাণকর নয় সেকথা বলছিলেন ড. আনিসুজ্জামান। তাঁর কথাগুলো আমার কাছে কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ মনে হয় এবং চিন্তার সহায়ক হয়। সেই প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে আল মাহমুদের ওপর কিছু একটা প্রকাশ করতে আমি প্রবৃত্ত হই। অবশ্য এ চিন্তাটা আরো কয়েক বছর আগে হলেও কাজ শুরু করি এরশাদ পতনের পর। বিশিষ্টজনদের কাছে আল মাহমুদর ওপর লেখা চেয়ে চিঠি লিখি। কারো কারো সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেও লিখতে অনুরোধ করি। কেউ কেউ সাড়া দেন। কেউ কেউ লেখা না দিলেও এটা স্বীকার করেন যে, আল মাহমুদ শুধু একজন — মেধায়, মৌলিকতায় ও মননশীলতায় তাঁর মতো আর কেউ নন। অবশেষে ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ সকল বাঁধার বিন্ধ্যাচল পেরিয়ে আমার সম্পাদনায় বের হয় ‘উপমা’- আল মাহমুদ সংখ্যা। এর প্রচ্ছদে ব্যবহার করেছি শিল্পী মুর্তাজা বশীরের আঁকা আল মাহমুদের একটি স্কেচ। এতে নতুন পুরাতন লেখার পাশাপাশি ছিলো আল মাহমুদের নিজের লেখা, সালাহউদ্দীন আইয়ুবের নেয়া আল মাহমুদের অসাধারণ একটি সাক্ষাৎকার, তাঁকে নিবেদিত কবিতা, তাঁকে লেখা বিশিষ্টজনদেরর অমূল্য সব চিঠিপত্র। লেখাগুলো তো মূল্যবান ছিলোই, সবচেয়ে বেশি মূল্যবান ছিলো আল মাহমুদকে লেখা বিশিষ্টজনদের চিঠিপত্র। বের হওয়ার পর মুদ্রিত সবগুলো কপি যখন বাসায় নিয়ে আসি, দেখে আমার স্ত্রীর বদন থেকে বিদায় নেয় হাসি, চক্ষু উঠে যায় কপালে, বলে, এতগুলো কপি বিক্রি হবে কি কোনো কালে? বাসের জায়গাটুকু বরবাদ করেলে সার – তার সাথে গচ্ছা দিলে সময়ের ও টাকার! উল্লেখ্য, বের করেছিলাম ৬০০ কি ৭০০ কপিরও বেশি। বিক্রি না হলে হবে গলার ফাঁসি! বের হওয়ার অল্প কয়েকদিন পরই ছিলো ঈদ। অফিস থেকে বেতন ও বোনাস বাবদ যে টাকাগুলো পেয়েছিলাম, সবগুলো ‘উপমা’র পেছনে ব্যয় করার কারণে ঐ ঈদে বউ-বাচ্চাকে, পরিবারের কাউকে কোনো নতুন জুতো জামা কিনে দিতে পারিনি। কিন্তু বের হওয়ার পর কি ঢাকায়, কি চাটগাঁয় — বাংলাদেশের সব জেলায় — বিপুল সাড়া পড়ে যায়। স্বল্প সময়ের মধ্যে সবগুলো কপি হয়ে যায় শেষ। এই তো আমার কবি ও কবিতার বাংলাদেশ। ফোনে ও পত্রে প্রশংসাও পাই প্রচুর। দুঃখ যত ছিলো হয়ে যায় দূর। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘উপমা’র উক্ত সংখ্যাটি ঊষার আলো দেখার পর এর এক কপি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম কলকাতার ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকার সম্পাদক, লেখক, ও প্রখ্যাত রেডিক্যাল হিউমেনিষ্ট প্রফেসর শিবনারায়ণ রায়ের বরাবরে। তিনি ছিলেন আল মাহমুদের কবিতার অত্যন্ত অনুরাগী। একটি গোষ্ঠী যখন আল মাহমুদ বিরোধীতায় বা তাঁকে বয়কট করার চেষ্টায় উঠেপড়ে লাগে, তখন শিবনারায়ণ রায় তাঁকে তুলে ধরেন সবার অগ্রভাগে। উপমা’র উক্ত সংখ্যাটি পাওয়ার পর তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে ‘জিজ্ঞাসা’য় এর বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করেন, যেখানে উল্লেখযোগ্য বাংলা সাহিত্য পত্রিকার নাম উল্লেখ করতে গিয়ে উপমা’র নামও উল্লেখ করেন। এরপর উপমা’র আরেকটি সংখ্যা বের হয়েছিলো আমার সম্পাদনায়। সেটি বেরিয়েছিলো ১৯৯৬ সালের ১৫ জুলাই। সেই সংখ্যায় স্থান পায় উত্তরাধুনিকতার ওপর ও কবি দিলওয়ারের আলাদা আলাদা দুটি ক্রোড়পত্র। সাথে ছিলো বিবিধ লেখা। সেই সংখ্যাটিও সুধীজনদের সুদৃষ্টি লাভে সমর্থ হয়। উত্তরাধুনিকতা বিষয়ক ক্রোড়পত্রে সালাহউদ্দীন আইয়ুবের দুটি লেখা প্রকাশিত হয়। একটি তার নিজ নামে, অন্যটি আবুল কালাম শামসুদ্দীন ছদ্মনামে। সংখ্যাটি বের হওয়ার পর পাক্ষিক ‘পালাবদল’-এ এর রিভিউ প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি আবুল কালাম শামসুদ্দীন ছদ্মনামে ‘উত্তরাধুনিকতা’ শিরোনামে লেখা সালাহউদ্দীন আইয়ুবের লেখাটিও পুনঃপ্রকাশিত হয়। লেখাটির সাথে ছাপা হয় সম্পাদকের নোট। তাতে লেখা হয়, “পালাবদল- এর এ সংখ্যায় সৈয়দ আলী আহসান-এর আধুনিকতা বিষয়ক নিবন্ধটি যখন ছাপার জন্য প্রস্তুত, তখনই সম্পাদকমন্ডলীর মনে আসে, উত্তর-আধুনিকতা বা পোস্ট-মডার্নিজম বিষয়ক একটি লেখা এরই পাশাপাশি ছাপাতে পারলে মন্দ হতো না। সেই ভাবনারই ফল এ লেখা। লেখাটি নেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত, মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন-সম্পাদিত মননশীল লিটল ম্যাগাজিন ‘উপমা’ থেকে। এটি মূলতঃ ‘উপমা’-সম্পাদককে লেখা একটি পত্র-প্রবন্ধ। ঝরঝরে গদ্যের এ প্রবন্ধটি পাঠকদের কৌতুহল মেটাতে সক্ষম হবে বলে আমরা আস্থাবান। প্রবন্ধের লেখক ও ‘উপমা’-সম্পাদক – উভয়কেই ধন্যবাদ।”(পালাবদল, ১ – ১৫ নভেম্বর ১৯৯৬)। ‘উপমা’র উক্ত সংখ্যা দুটি ছাড়াও আরো কয়েকটি কাগজ সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার সূযোগ ও সৌভাগ্য হয় আমার। সেগুলো হলো- ১. অবিনশ্বর (সাহিত্য পত্রিকা, ঢাকা) – সৈয়দ আলী আহসান সংখ্যা, নভেম্বর-ডিসেম্বর ২০১৬, অতিথি সম্পাদক। নিয়মিত সম্পাদক- ফরিদা হোসেন ২. অবিনশ্বর – শাহেদ আলী সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি-মার্চ ২০১৮, অতিথি সম্পাদক। নিয়মিত সম্পাদক- ফরিদা হোসেন। ৩. অবিনশ্বর – আল মাহমুদ সংখ্যা, ফেব্রুয়ারি ২০১৯, অতিথি সম্পাদক। নিয়মিত সম্পাদক- ফরিদা হোসেন। ৪. অবিনশ্বর – চট্টগ্রাম সংখ্যা, জানুয়ারি-মার্চ ২০২২, অতিথি সম্পাদক। নিয়মিত সম্পাদক- ফরিদা হোসেন। ৫. কালধারা – (বুলেটিন-১) ; সিআরবি হেরিটেজ রক্ষায় কালধারা কাব্যিক নিবেদন, প্রকাশ- ১৭ আগস্ট ২০২১। বুলেটিন- ২, প্রকাশ- ২৬ আগস্ট ২০২১। বুলেটিন- ৩, প্রকাশ- ২ সেপ্টেম্বর ২০২১। বুলেটিন- ৪, প্রকাশ- ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১। যৌথ সম্পাদক- মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন ও তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী। ৬. কালধারা- কবিতা সংখ্যা, জুন ২০০৭, চট্টগ্রাম, সহকারী সম্পাদক। ৭. কালধারা- ছড়া সংখ্যা, জুন ২০০৯, চট্টগ্রাম, সহযোগী সম্পাদক। ৮. সাহিত্য সম্পাদক, মাসিক সমধারা, ঢাকা। এছাড়া বড় আকারের ২ টি স্মারকসংকলন সম্পাদনারও সৌভাগ্য হয়েছে আমার। একটি হলো ‘মওলানা ওলী আহমদ নিযামপুরী স্মারকসংকলন’ (চট্টগ্রামের ‘শহর কুতুব’ খ্যাত প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, অলীয়ে কামিল ও আরবি-ফারসি কবি মওলানা ওলী আহমদ নিযামপুরী সংক্রান্ত ৪০০ পৃষ্ঠা সমৃদ্ধ স্মারকসংকলন), প্রকাশ- ১৮ জুলাই ২০০৩, চট্টগ্রাম। অপরটি হলো ‘ভাষাসৈনিক বদিউল আলম চৌধুরী স্মারক সংকলন, প্রকাশ- ১০ অক্টোবর ২০১৪।
প্রশ্ন : লিটল ম্যাগাজিন এর সংজ্ঞা কি এ নিয়ে আপনার ভাবনা বলুন।
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : লিটল ম্যাগাজিন তথা ছোট কাগজকে আমি বাবুই পাখির বাসার সাথে তুলনা করেছি আমার একটি লেখায়। লেখাটি সম্ভবত ‘বাবুই পাখি ও শিল্পের ডানা’ শিরোনামে ছাপা হয়েছিলো সাজ্জাদ বিপ্লব সম্পাদিত ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য’– এর কোন একটি সংখ্যায়। আবদুল মান্নান সৈয়দ সেসময় ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য’ সম্পাদককে লেখা একটি চিঠিতে সংখ্যাটির এবং আমার সেই লেখাটির প্রশংসা করেছিলেন, যা ছাপা হয়েছিলো ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য’-এর পরবর্তী সংখ্যায়। ০৪/০১/২০০১-এ আমাকে লেখা এক পত্রে সাজ্জাদ বিপ্লব লিখেছেন, “কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ Telephone-এ আলাপকালে আবারো আপনার লেখার প্রভূত প্রশংসা করলেন। আপনার পত্রিকার খবর জানতে চাইলেন।” বাবুইপাখি যেমন বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট খড়কুটো এনে গভীর যতনে বানায় তার নজরকাড়া নিপুণ নান্দনিক বাসা, তেমনি ছোটকাগজের সম্পাদকরাও প্রথাবিরোধী লেখকদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করে তাদের কাগজকে সাজাতে ও সমৃদ্ধ করতে সচেষ্ট হন। স্রোতের অনুকুলে গা না ভাসিয়ে স্রোতের বিপরীতে তথা বিরুদ্ধে যাওয়ার এই চেষ্টা একধরণের বিদ্রোহ বৈ কিছু নয়। শুধু বিদ্রোহও নয়, কিছু করে দেখাবার পাগলামিও বটে। বড় বা বুড়োদের মধ্যে এ ধরণের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়না। ভিন্ন বা ব্যতিক্রম কিছু করার তাগিদে তরুণরাই সাধারণত এ জাতীয় কাজে উদ্যোগী হয়। তারুণ্যের তেজ না থাকলে এ কাজে অগ্রসর হওয়া যায়না। লেখক ও সম্পাদক উভয়ের মধ্যে এ তেজ থাকতে হয়। যাদের তা নেই, তাদের জন্য ছোট কাগজ নয়। সবশেষে বলবো- ছোটকাগজ হলো বিন্দুর মাঝে সিন্ধুর গৌরব।
প্রশ্ন : অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিন চর্চাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : অনলাইন ম্যাগাজিন বা ওয়েব ম্যাগাজিন সময়ের পরিবর্ত বা চাহিদার ফল বা ফসল। যেমন একসময় মুঠোফোন ছিলোনা। এখন মানুষ মুহূর্তেই এই মুঠোফোনের মাধ্যমে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে, ঘরে বসেই অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্র-পত্রিকা পড়ে ফেলতে পারছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে এই যে ডিজিটাল সুবিধা, এটা যুগেরও বাস্তবতা। অতি অল্প সময়ে যদি অধিক ও দ্রুত সুবিধা পাওয়া যায়, মানুষ তো তা গ্রহণ করবে নির্দ্বিধায়। তেমনি ওয়েব ম্যাগাজিনও বর্তমান সময়ের বাস্তবতা, যা ইতিমধ্যেই লাভ করেছে ব্যাপকতা ও গ্রাহ্যতা। কারো মন না দেখে লেখার মান দেখে যদি লেখা নির্বাচন করা যায়, লেখক না ছাপিয়ে যদি লেখা ছাপা যায়, তাহলে এক্ষেত্রেও সফলতাকে কে আটকায়?
প্রশ্ন : আগামী দিনের সাহিত্য কেমন হবে? আপনার কল্পনায়।
মুহাম্মদ নিযামুদ্দীন : আগামী দিনের সাহিত্য সম্পর্কে বলার আগে সাহিত্যের বর্তমান বাস্তবতা সম্পর্কে বলাটা জরুরি। কেননা যেটাকে আমরা বর্তমান বলছি, পঞ্চাশ বছর আগে সেটা ছিলো ‘আগামী দিন’ বা ভবিষ্যত। সেই নিরিখে বিচার করলে বোঝা যাবে আমাদের সাহিত্য কি প্রাগ্রসর হয়েছে, নাকি পিছিয়েছে! আগামী দিনের সাহিত্য কেমন হবে — তার জন্যও এই ইঙ্গিতটি যথেষ্ট। বাবুইয়ের বুনন যেখানে কম দেখা যায়, সর্বত্র ছেয়ে আছে যেখানে চড়ুইয়ের চঞ্চলতায়, সেখানে আগামীটা কেমন হবে, তা সহজে অনুমান করা যায়। ইমারতের ক্ষেত্রে যেখানে হয় রডের ক্ষেত্রে বাঁশের ব্যবহার, সেখানে সাহিত্যক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি বা ব্যতিক্রম কি আশা করা যায় আর! কবিতার কথাই ধরা যাক। কবিতা নিয়ে কতোই না হৈ চৈ! কিন্তু কবিতা কই? যার কাছে গাই গরু নাই সে বেচে দই! অর্জনের চেয়ে গর্জন বেশি, যা দেখলে বা শুনলে পায় হাসি। সাহিত্যের বাকি সব ক্ষেত্রের বাস্তবতাও ব্যতিক্রম নয়। এসব কারণে ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে গেলে জাগে ভয়। তবে তরুণদের মাঝে গভীর পাঠস্পৃহা, পরিশ্রম করার প্রেরণা, প্রবল প্রত্যয় ও প্রতিভার আগুন জ্বালানো যায় যদি — যতিকে হটিয়ে আসতেও পারে গতি — জ্বলতে পারে আশার বাতি। এসে জীবনের গোধূলিবেলায় – অপেক্ষায় রইলাম সেই আশায়।
গ্রহণে : সাজ্জাদ বিপ্লব
ডিসেম্বর ২২, ২০২৩
চমৎকার