আল মাহমুদের কবর
*
কবরে কি শুয়ে আছে কবি আল মাহমুদ?
নাকি উড়ে গেছে কোথাও– গায়েবী দেশে।
কবরের অধীক যেখানে–
শুয়ে থাকে শুধু বিশ্বাসী মানুষ।
এ আমার জানার নয় তো।
আমি পাঠক– পড়ুয়া,
উইপোকা যেমন কামড় দেয় রেশম, তেমনি
আমি বসে আছি এই কবির ভাষায়।
কবর কবির বাড়ি– তা জেনেছিলেন আল মাহমুদ।
তাই নিয়েছেন কোলে তুলে ইসলাম– আল্লাহ কবুল।
আল্লাহর পথে যে হাজির থাকে– তাকে তুমি খুঁজো না কবরে।
সে তো জান্নাতের সুগন্ধ, খুশবু পেয়ে গেছে
আলোময়– বারযাখে।
১৮/০২/২০২৪
বাংলা ভাষার প্রতি
*
তোমাকে আক্রোশে নিয়ে গেছে ভাষাডাকাতেরা,
সংস্কৃত-প্রেমিক অধ্যাপক আর ছন্দপাগল কবিরা।
যেন তাদের শরীরে তুমি রোয়া ওঠা কর্কটের ফুল।
গন্ধ দাও পচা মাছ আঁশটের। তোমার কপালে ফোটে
জাতি হারানোর কালো তিল, আত্মগরিমার পলেস্তারা।
আমি ভয়ে কুল রক্ষা করে- দূরে চলে আসি।
আমার পরম জান তুমি, প্রিয় আমার আম্মা।
আমি তো তোমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি!
যেন ফজরের আয়াতের স্নিগ্ধ ফুল তুমি,
আমার বাগানে চিরদিন আপনা আপনি ফোটো।
ভাষাসমস্ত
*
তোমার রূপমুগ্ধ বসে থাকি– ভাষামজনুন।
*
চাঁদের আলোতে ভাসা তোমার মুখ– ভাষাকাবিন।
*
দরোজায় দাঁড়ানো আম্মা– প্রথম ভাষাকবিতা।
*
মায়াবী আঙ্গুর, তুমি আমার ঘুমন্ত ভাষাফল।
*
কাঁটাতারে ঝুলে আছে আমার কন্যা ফেলানি — ভাষাঅপরাধ।
*
শান্তি আমার ‘সমস্ত বিসমিল্লাহ’ ভাষাজায়নামাজ।
*
আমার আমিতে মুখরিত মায়ের মুখ- ভাষাআয়না।
*
রক্তাক্ত কাশ্মীর– লাল ভাষাগোলাপ– জালিমের বাগানে!
*
গভীর ছলনা আর কুহক করে- ভাষারবীন্দ্র!
*
আমি কবিতার গাছ– পাতায় পাতায় গান করে ভাষানাইটিংগেল ।
*
মোহাম্মদ(সাঃ): কী শান্তি এই নামে! চারিদিকে শুধু ভাষারহমত!
কবিতা ও ভবিষ্যৎ
*
ভাষার জমিনে যতো চারাগাছ,
পানি ঢেলেছি সকাল সন্ধ্যা-
আপন সন্তান ভেবে।
উপচে পড়ছে প্রাত্যহিক মুকুর,
মধুর ভাষা। তবু
নিজের ছায়ার কোনো প্রতিবিম্ব নাই।
পাতালের মুখ খুলে দেখি
মায়ের আতর, গুল্ম কাঁথা।
সেদিকে পাথর, অবিরাম গিরগিটি,
হাত বাড়াতে চাই না- ভয় পেয়ে।
নাম খুঁজি, নাম খুঁজি , চাই অমরতা
রাজাসন, মিথ্যা পাঠকের মনে!
নিজের ক্ষমতার রঙ দেই, উইপোকা–
মাটির পুস্তকে।
আমি সিপাহসালার,
যেন এনেছি সোনালী তরবারি,
শব্দের বারুদ। হে আকবর বাদশা, নত হও।
অযুত সালাম দাও।
শুধু জানিনা নামের মহারাজ,
একদিন সময়ের কবরে মেশাবে
দেহকোষগুলি।
২৬/২/২৪
তোমার মুখের দিকে চেয়ে
*
তোমার মুখের দিকে চেয়ে,
বরফ দেশের স্লেজ গাড়ি চলে।
নিচে তাজা মাছ নড়ে,
আমি হারপুন চালাই।
পুরুষের চোখ মাছ-রক্ত ধরে
আনবে না কি হারেমের স্মৃতিগুলো?
তাই ভাবি।
এই মুখ এক জৈব নির্দেশনা।
অন্ধকারে বাতি জ্বলছে, পালঙ্ক ধরে
বেজে চলছে মায়াবী নহবত।
খানসামাদের ছুটি আজ,
স্তব্দ কুঠিজুড়ে তোমার আমার
শুধু আদিম মুহূর্ত।
না হয় এসব বাহাদুরি নাই করলাম।
ধূসর ইজেলে লিখে দিই
মাছ শিকারের আনন্দ মুহূর্ত।
চারদিকে সূর্য ডুবছে, সমুদ্রে
গোত্তা মারছে সিলেরা!
তোমার এ মুখ যেন প্রাচীন সরাইখানা,
যেখানে বিছানা করি আমি, ক্লান্ত মুসাফির।
১৪/২/২৪
ঢাকা
জানাজা শেষে
*
ধবল পোশাক দেখে
এক শূন্য দোকানের কথা মনে এলো।
কীভাবে গোপনে তৈরি ছিলো
সেই তুলার আশ্রম!
শীতের সন্ধ্যায়– সাদা পোশাকের
ভেতর ঘুমের ছোঁয়া!
আহা, মায়ের স্তনের স্পর্শ যেন।
পানের বরজ থেকে অস্তমান
যেমন চাঁদের ছায়া,
মানুষের ক্রমশ হাঁটার দিকে
চেয়ে থাকলো–
উঠোনে শোয়া ঘুমন্ত বিড়াল।
পাপড়ি খোলার শব্দ আসে
জানালার কাচ বেয়ে।
গোলাপের গন্ধ খাটিয়া বহনকারী
মানুষের মিছিলে কি পৌঁছবে না?
দেখি– পাশের নদীর জলে
উড়াল মাছের বুদবুদ।
ঢাকা
১২/২/২৪
চেনা শহর
*
আস্তে আস্তে গ্রন্থিগুলো
ছাড়িয়ে বিছিয়ে দেয় পিচের রাস্তায়।
তারপর চুমু খায়, হৃদয় মেশায়।
অনেক দূরের ছিল হাড়
হাত, পা, বুকের গাছগুলো।
সে গন্ধ শুকলো,
ভেজা জিহবা ছড়িয়ে স্বাদ নিল।
চেনা শহর বিরহে ভুগছিল পঁচিশ বছর।
সেই ধরে শুইয়ে ধরলো, ধুলিবালি
সীসা মেশানো বাতাসে।
রক্ত, ক্লাথ মাখানো আমার
এও এক পুনঃজন্ম।
মাতৃগহ্বর, মাতৃছায়া — আমার শহরে।
ঢাকা
১৩/২/২৪
আজান
*
বহুদিন পর ঢাকায় এলে আজান হয়
ডাবগাছের পাতা বেয়ে
সময়গুলি দরজায় দাঁড়ায়।
যেন অচেনা দরবেশ, সালাম
দিয়ে আসল ঠিকানা জানায়।
দেখি– সবকিছু ছোট হয়ে আসে
মুহূর্তগুলি কুয়াশার মুখ নিয়ে
দ্রুত ভেঙে যায়।
বিদেশে আজান নাই
মসজিদের বাইরে লম্বা
সময়গুলি পাখির ডানায় ওড়ে
ব্লুগামের পাতায় গলাগলি করে।
বিদেশ এক অপর-স্টেশন
জীবন–আগন্তুক, ট্রেন হয়ে যায়।
ঢাকা
১১/২/২৪