spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাসাম্প্রতিক কবিতা : তাজিমুর রহমান

সাম্প্রতিক কবিতা : তাজিমুর রহমান

ভোর

সোনালী আলোর রেখায় ভোর এলো,একটা নীরব
অঙ্গীকার নিয়ে ফিরে যাচ্ছে আঁধারের কণাগুলো

দূয়ারে দাঁড়িয়ে মা,শুকনো মুখ!নীল আলোর নিচে
কিশলয় স্বপ্নেরাও দিশাহীন
যেটুকু তন্ত্র-মন্ত্র এ জীবন ধন্য করে তোলায় ব্রতী
তার ভেতরে শুকিয়ে ওঠা অশ্রুবিষাদ

নিভৃতে কাঁদে পাখিদের গান ও গগন।মেদুর আলোয়
তবু খেলা করে জলজ মাছেরা আর
অতল গহবর ছুঁয়ে এক অন্তহীন অপেক্ষা

যদি আগুনের মতো জেগে ওঠে আর একটা ভোর

কাঁকন

রাত্রি মেলে দিল ডানা,সমুহ আবেশ নিয়ে
তার ভেতর ঢুকে গেল একটা গোটা চাঁদ

নড়ে উঠল অনাঘ্রাতা পৃথিবীর পথ ও পাথার
মাটির রুক্ষতা ঘিরে জন্ম নিল
ফেনিল সফেন

তারপর…

আশ্চর্য এক ভ্রমণ শেষে দিগন্ত ছুঁলো
কলাবতীর কাঁকন

গান ও গহরজান

দু’হাতে জড়িয়ে ধরি মেঘভরা আকাশের প্রতিবিম্ব
কোন দিকবদল নেই
ছেঁড়া এ্যালবাম,স্থবিরতায় ভরা মৌসম বাতাস
শীর্ণ চাঁদের মতো ঘিরে রেখেছে অক্ষরেখা!
তবে কী নীরবতা পালন করে যাওয়া এখন দস্তুর?

অথচ অন্তরালে যে ঢেউ খেলে যায় মায়াবী আলোয়
তার ভেতরে সীমাহীন আনন্দপরাগ,
আদল ভাঙছে যে কবি তাকে কী রঙে জাগাবো!
পরশ বুলিয়ে দিই শুধু অক্ষর আদরে
পাতার মর্মরে বেজে ওঠে হেমন্তের গান ও গহরজান

আর অসূয়া আবহে দরজায় কড়া নাড়ে একাকি লালন সাঁই

সমুদ্রপুরুষ

আমরা কী আর একটু আলোকিত হবো তোমার কাছে এসে
প্রিয় সুন্দরবন!
মাতলা ছাড়িয়ে যে প্রবাহ ওষ্ঠের মতো তোমাকে ছুঁয়েছে
তার ভেতরে শব্দহীন জোছনা চন্দ্রমুখীর গান গেয়ে যায়
আর ম্যানগ্রোভের নিবিড় ছোঁয়ায় বেজে ওঠে
পাখিদের অনলস পর্যটন

এরপরও নিকারাগুয়ার শীতল আবেশের মতো একা!
বিনিদ্র মেঠো পথ।পথে পথে অনন্ত শুভেচ্ছা।
দিগন্ত ছোঁয়া নীল শূন্যতা আর অরণ্যের আদিমতা নিয়ে
কে তুমি বসে থাকো একাকি মায়াবিনী?

এ সব দৃশ্যে ভেসে যাই অকপট।বোধের ওপারে জেগে ওঠে
বেতস অক্ষরগুলো আর
একটা তন্ময় আকুলতা শিশ্নদেশ ছুঁয়ে সুগন্ধি হলে
মৎসকন্যার আলস্য ঘিরে জন্ম নেয় সমুদ্রপুরুষ

মাল্যদান পর্ব

একটা বিপন্নতা ঝুঁকে রয়েছে দরজায়,সদরে!
চৌকাঠ ছাড়ালে মেঘেদের কলরব,শিবির বদলের ছৌ-গাথা
অথচ সীমান্ত এলে সব পারাবার নিধুবাবুর টপ্পা

শুধু কার্তিকে সকলে ঘরে ফিরে এলে
ধানের শিষের উপর আজো
জীবনানন্দ রোদ বুনে দেয় মুনিয়ার দল;
তবু বাসি অক্ষর থেকে খুঁটে খুঁটে সাজিয়ে রাখি
গোধূলির নিভৃত হেমন্তশোক

নিঁখুত বিপন্নতাও তখন আর এক বিপন্ন বোধ থেকে
শুরু করে দেয় অগস্ত্যযাত্রা
ছন্দহীন পড়ে থাকে পৌরমানব আর মাল্যদান পর্ব

ব্রহ্মজাতক

বিপন্ন ভূখণ্ড জুড়ে কে কথা বলে ওঠে?
দেবী! মাতা!

অন্নহীন স্বজন।প্রাকৃত আদল। তবু নতজানু এ বিশ্ব
তোমার কাছে, শুভ্রদায়িনী

অনন্ত এক আকুলতা নিবিড় উচ্চারণে মেখে নেয়
লহরীর মেদুর পরাগ, বিনম্র আগুন

বর্ণহীন,গোত্রহীন এক আশ্লেষ থেকে শুরু হয়ে যায়
ফাগুনের পরশপবন

অশনি সংকেতগুলো তবে কি শার্সির সমান্তরালে এসে
বর্ণময় এক একটি ব্রহ্মজাতক হয়ে গেল

দাহপর্বঃ১

শব্দহীন এই জনপ্রবাহে কোন শোক নেই।
ভেতরে মৃদুস্বরে
একা একা কথা বলে ওঠে জ্বলন্ত চিতার কাঠ

অন্তহীন পথ
পড়ে থাকে স্বজনহীন;ক্রমে শুকিয়ে যায় মাধবীলতা
আঁতুড়ঘরের স্বরলিপি জুড়ে মাতৃবিলাপ

শাদা পাতায় শুধু নীরবে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হয়
ঈশ্বর-সন্তানের নাম

পান্ডুলিপি

থম মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে!যেন এক্ষুনি ফেটে
চৌচির হয়ে যাবে;উপরে অভিমানাতুর শ্রাবনী আকাশ

অদূরে একটি পাখি প্রতিদিনের নিয়মে কথা বলে যায়,
রঙিন ফড়িংটিও কেমন আনমনা,মেদুর

কলরবহীন ধীরে ধীরে শাদা পাতা জুড়ে জেগে ওঠে
পান্ডুলিপি

ভ্রম

মাঝে মাঝে মাথাটুকু সরিয়ে রেখে শরীরের
অপর অংশ ছড়িয়ে দিই ধুলোমাখা সময়ের উপর
একটা নিস্তব্ধতা চৌচির হয়ে ফেটে পড়ে দক্ষিণে।
দক্ষিণ যে আমার পিতৃপুরুষের অহংকার
তাকে কিভাবে আকাশ করে তুলি বলো
আসমানী

এখন ভাঙা চৌকাঠ আর দাঁত বের করা দেওয়াল
পড়তে পড়তে হেঁটে চলে যায় প্রজন্ম,আর
চৌধুরীবাড়ির আঙুলচোষা শিশুটিও কেমন
তরতরিয়ে বড় হয়ে সহজে ঠিকানা বদল করে নিলো,
শুধু টের পাওয়া গেল না কখন বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেছে
আমাদের তথাকথিত সুশীল শহর

অথচ,সন্ধ্যা নেমে এলে আজ আর বুঝতে পারি না
দক্ষিণ উত্তর,না উত্তরই দক্ষিণ…

ইমনকল্যান

মানচিত্রে আগুন দিলে বুঝি ছিঁড়ে দেওয়া যায় দেশ!
দেশ মানে তো শুধু ভূখণ্ড বা কটা রংচটা চরিত্র নয়
সুতরাং তাকে নিয়ে ভাবা এত সহজ নয় বলেই
ফিরে ফিরে যেতে হয় আমাদের
বোধিখেত ছাড়িয়ে দোবরুপান্নার সমাধিবলয়ে

অথচ সুবর্ণরেখার জলে প্রতিদিন যে অক্ষরপ্রতিমা
ভেসে যায় অসংলগ্ন,অক্লেশে
তার ভেতরে লেখা রয়েছে সাঁওতাল রমণীর জ্বর
অদূরে ডুবে যাওয়া চাঁদ এসব ইতিবৃত্ত জানে বলে
তথাগত উন্মোচিত হয় পায়েসান্ন থেকে অনন্তগমনে

তখন পুড়ে যাওয়া মানচিত্র থেকে প্রশ্নাতীত
একে একে মুছে যায় ক্ষত,অসিদ্ধ কথোপকথন,
চার্বাক থেকে উড়ে আসে ঋত,অনলস পরিকথা
ভানুমতী,যুগলপ্রসাদ আলোময় হয়ে ওঠে অবেলায়
চকিত জন্মান্তর ঘটে যায় লবটুলের,
আর অনাবৃত স্তনের মত জ্যোৎস্নার আঁচলে আঁচলে
বেজে ওঠে ইমনকল্যান…

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা