spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাসাম্প্রতিক কবিতা : তৈমুর খান

সাম্প্রতিক কবিতা : তৈমুর খান


একটিই নিবেদন শুধু

একটিই নিবেদন শুধু আজন্ম হেঁটে যায়

একটিই পথ, সমস্ত পথের শেষে
একটিই গভীর বিশ্রাম

যদিও সংকেত শুধু ক্ষত আর চিৎকারে ঢাকা
যদিও গর্জন তার অভিমানের গূঢ় বৃষ্টিপাত

কে কাকে অন্ধকারে রাখে
কে কাকে হাঁটায় এমন
বিষাদ চিরে চিরে দেখি আনন্দের রেখা


শৈশব

কত জল, হেলেঞ্চা ফুলের গান
গ্রামের পুকুর পাড়ে শৈশব খুঁজে পাই
টুকরো টুকরো আকাশ নেমে আসে
শরতের শুভ্র হাসি, বিহঙ্গের নতুন উড়ান

মায়ের আঁচল ধরে থাকি
অনন্ত সময়ের তীরে মায়ের নিখুঁত মুখচ্ছবি বহুঢেউ,
বহু রজনীর ঘুমভাঙা চোখ—
সকাল হয়
সকালে সকালে নামে আলোর কপোত

সোনালি মার্বেলগুলি গড়িয়ে যেতে থাকে পুজোমণ্ডপের দিকে
জলরঙের ছবি হয় স্মৃতির উঠোনে…


প্রাচীন কুমির এক

শীতের সকালে রোদ পোহাচ্ছি
চোখ বুজে আসছে, রোঁয়া ওঠা শোয়েটার
ঝুলে পড়েছে শরীরে

প্রাচীন কুমির এক
রুক্ষ হাত-পায়ে খড়ির দাগ
চামড়া খসখসে

সংসারটি প্রাচীন সমুদ্র
এখন ঢেউ নেই
স্তব্ধতায় ঝরে পড়ছে সবুজ কুয়াশা
মাছগুলি গভীর জলের তলায় কিছুটা উষ্ণতা ভিক্ষা করে

আমার শিকার কাহিনি আর কাহিনির চিৎকার
কত যুগ বয়ে চলেছে
আর ভয়ংকর হয়ে উঠেছি কেবলি
নিজের সামনে নিজেই দাঁড়িয়ে কেঁপেছি আদিম শ্যাওলা আর জলজ আকাঙ্ক্ষার উপজীবীগুলি
কীরকম আন্তরণ ফেলেছে সারা পিঠে চোয়ালে ধূসর সংকেত মূর্ছনায় কাঁপে, কুয়াশার পোস্টম্যান হাহাকার চিঠি দিয়ে যায়


আমার ইচ্ছা

ও জানালা দিয়ে ছুঁড়ে দেয় ডিমের খোসা
পচা আম, কাঁঠালের ভূতি…
আমি ওর মুখের দিকে চাইতে পারি না

ছাদের ওপর উঠে ও চাঁদ ও নক্ষত্রদের ডাকে
অন্যগ্রহের মানুষদের ডাকে
আমি ওর মোবাইল নাম্বার চাইতে পারি না

আলো নিভিয়ে চুপচাপ বসে থাকি
অন্ধকারে ওর মুখ হেসে ওঠে
ওর মুখের হাসি লিখে রাখি

আমার সাইকেল ওর রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ায় আমার চপ্পল নিঃশব্দে ওর জানালা পেরোয় আমার ইচ্ছা লুকিয়ে থাকে

লুকিয়ে লুকিয়ে পাখি হয়
শরৎঋতুর মেঘ হয়
সোনালি ধানের রোদ হয়
পদাবলির ঢেউ ইয়


ভাবনার বাড়ি

তবুও জলের কাছে আসি
কথা কই, ইইজগতের কথাগুলি

পিপাসার অভিমান কতদিন চুপচাপ থাকে? কতদিন নির্বাসনে একা একা ডাকে?
জল শুধু চেয়ে থাকে জলে
আমি ছলছল চোখ
ভাষা খুঁজি, পার্থিবের অন্ধভাষাগুলি

এখানেও পদ্মিনীর মুখ
অবিরল ফুটে ওঠে
উজ্জ্বল রক্তিম পাপড়িগুলি
সুরভেজা আনত বিশ্বাসে
ঢেউ হয়ে ফিরে আসে
সে-ই ছিল কাঙ্ক্ষিত শূন্যের পারে
সংকেতে ঢাকা ভাবনার বাড়ি

থইথই জলঘুমে শব্দনৌকা হাসে
আমি রোজ ঘুম ভাঙাই জলের কাছে এসে


বাবার প্রস্থান

একটি রাতের কান্না পৃথিবীর সমস্ত রাতের কান্না হয়ে যায়
অন্ধকার
দুর্যোগভর্তি, বিদ্যুতের গর্জন
সেই রাতে রুদ্ধ হয়ে যায় পিতার শ্বাস
নিশ্চিদ্র জানালায় দূর ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে থাকি
ধ্বংস হয়ে যায় পৃথিবীর সব হাসপাতাল
সমস্ত বাক্ হরণ করে বাকরুদ্ধ সময়

সারারাত অনুভূতি জেগে বসে থাকে
একাকী রাতের নদীর কাছে যায়
পাখির কম্পনে সেও কেঁপে ওঠে
আর একটি ভোর ও সূর্যের প্রতীক্ষায়

আগামিকালের আকাশ কি শূন্য করতল? পৃথিবী পেরিয়ে বাবা হেঁটে চলে যাচ্ছে একা দুইহাতে নক্ষত্র তার, দুর্যোগের পালতোলা নৌকায়

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ