চিনি রোগীর দেশ
চিনি-রোগে আক্রান্ত হয়েছে দেশ
আবেশে মুগ্ধ তাই ব্যবসা বাজারের ননীখোর
এখানে বাতাস খুব ঘন
ধুলিবালি আর ধোয়াশায়
নিঃশ্বাস নেবার জন্য অপেক্ষাতুর নেবুলাইজার ভোর
তবু খাবি খায়
উপুর আকাশ,
আমাদের চিনি রোগাক্রান্ত দেশ
কাচামরিচের মতোই ঝালে মাতাল, কেন না
আমরা আমদানির নেশায় মেতে
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাই,
পেঁয়াজ রসুন নুন আনি বিদেশ থেকে,
ঋণ করে ঘি তো খাচ্ছি, সেই ধারা
উন্নয়নের শিরে চকচক করে,
১০০ বিলিয়ন ডলারের উজ্জ্বল ক্ষণক্লাবে ঢুকে
দিয়েছি কলার উঁচিয়ে,
যেন ঋণাত্মক বিজয়ী আমরা,
জনপ্রতি ৬৯ হাজার ডলারের গর্বিত ক্ষণী তারা
গো-হারা পাবলিক।
ঢাকা মহানগরের গাছের পাতারা
ঢেকে আছে একপ্রস্ত ধুলার সাগরে,
তারা শ্বাস নিতে ভুলে গেছে,
অক্সিজেনের ফ্যাক্টরিগুলো হাসফাঁস করে বাঁচে, আর
যারা শীততাপ গাড়িতে চলাফেরা করে
জানে না তারা আজ মরে গেছে বহুদিন আগে!
০৩/২৬/২৪
দোআঁশ রমণী
দোআঁশ মাটির একটি ভাঁজ খুলে ঢুকে যাই,
রসা ভেজা অন্ধকার, পিচ্ছিল জমিন ডাকে,
আমাকে মিহিন কাঁচা গন্ধ কেবলই শুষতে থাকে,
আমি আলগোছে! ঢুকে যাই ঋণে!
তুমি শিশিরসিক্ত ভোর দেখেছো জানি
টের পেয়ে গেছি তাই সেই ধূসর শস্যের কাম কোলাহল,
দোআঁশের একটি মুখ খুব চেনা মনে হয়,
যেন কতোকাল সে মাটি মেখে আমার সংসারে বাস করে!
জ্যোৎস্নার মতো খতরনাক রাত আমার মজেছে
লোকজ সংসারে—
তুমি যেন শিশির-স্নানের পর পরিশুদ্ধ গ্রামের সরিষা ক্ষেত,
আমার অন্তর সাজিয়ে তুলেছো প্রেমের পরাগে,
আঁশহীন তুমি তো পৃথিবী আমার, নিত্যানন্দের ভোর
দোআঁশ মাটির তুমি নারী
সবুজ পাতায় পরেছো তোমার দশহাতি শাড়ি
দক্ষিণের বাতাসে জিনপরীরা ভাসতে ভাসতে এসে
তোমার শরীরে লীন হয়, আর করে অভিনয়!
আর আমি হে আমার চেতনাচেতনের দড়িদড়া
আমাকে এমন করে বাঁধো যে সরিষা ফুলের মধুও
টের পায় না কখনো।
আমি তো দোআঁশ-রমণপ্রিয় কৃষক
লজ্জাবতীর পাতায় পাতায় মিশে থাকি
নিপীড়িত মানুষের মতো প্রতিবাদহীন,
শোষণকেও আমার প্রীতিভাজন মনে হয়, তাই
দাঁড়াতে পারিনি প্রাচীন ওই দস্যুর লুটেপাটে।
আমার শস্য গেছে, বীজ গেছে, চাষের সরজ্ঞাম
তাই কী বীজ বোনার ক্ষেত তুমি প্রিয় রমণী আমার?
ধানের হিনজার মতো ছড়িয়ে দাও তোমার কাম।
কলার থোরের মতন সেঁধিয়ে যাবো
এসো দোআঁশ পল্লী আমার
পৃথিবীর রমণী
সিক্ত করো কৃষক জীবন।
০২/০২/২৪
আমাদের স্বাধীনতা
সমুদ্র আর ধবল জ্যোৎস্নায় ভাসছিলো আমার স্বপ্ন
আকাশ হাসতে হাসতে বদহাওয়ার ঘূর্ণি বল ছুঁড়লো
আমি বোল্ড হয়ে আছড়ে পড়লাম
নুনা সাগরের ভেজা ঠান্ডা তীরে; মাথা ঘুরলো চৌদিক!
আমার স্বপ্ন ছিলো স্বাধীনতার
পতাকার মতো উড়তে গিয়ে আমি ইকারুস আজ!
হায় প্রভু!
তোমার এই সবুজ বেহেস্তখানা
কোন দস্যুর পোদের নিচে রেখে
আমাদের অন্তরে স্বপ্ন বোনো! কে প্রার্থনায়
চেয়েছে এমন দুঃস্বপ্নের ছাদ।
আজ কি বৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীতে?
বনশ্রীতে বেশ কিছু ফোটা টপাটপ পড়লো যেন জুঁই,
কিংবা এমন হতে পারে যে
আমাদের গর্ভে নতুন টাইরান্ট উত্পাদনের জন্য
বৃষ্টি তো অলীক নয়।তোমার ফসল!
আমি বহুদিন
শস্যদের গর্ভবতী হতে দেখেছি বৃষ্টির পানিতে, কিন্তু
এখন কেবল কুচক্রীদের নুনুর উৎসব চলছে সর্বত্র!
সেই ধর্ষণে যা উৎপন্ন হবে
তাকে কি আমরা জাওরা বলবো?
শুদ্ধ ভাষায় তারা জারজ হলেও সভ্যতায় তারা অবৈধ,
শব্দটি সৃষ্টি করেছে এক ধলা নক্ষত্র,
যারা নিজরাই ছিলো
দখলদার, অবৈধ হানাদার, শোষক ও নির্যাতনকারী
আমাদের সব কিছু লুটে নিয়ে গেছে সেই বর্গি দস্যুদল,
অমল-ধবল স্বাধীনতা,
আমাদের কৃষ্টি কালচারের গর্ভে রুয়েছে পরান্নয়ন
তাঁদেরই জ্ঞাতি প্রতিবেশি আজ আকাটা নুনুর ঠাপে
প্রভু দেখো দেখো
কেমন সমুদ্র ফেনা উঠেছে তীরবর্তী জনপদে, এবং
আমাদের স্বধীনতার পোদ মেরে রক্তাক্ত করে দিচ্ছি।
তুমি দেখতে পাচ্ছো তো?
০৩/১৯/২৪
মহিমাগুলো
মহিমাকে নিয়ে একমাস সাধনার পর
পুলসিরাত এসে টোকা দেয়—- অতো সহজ নয়,
আমি জানি
সিয়াম শেষে চিকন বাঁকা চাঁদ দেখা দেয়,
ভাবি , এই তো আঙুলে শরতের ছেঁড়া মেঘ পাড়ি দিয়ে
আমি পৌছে গেলাম খোলা বাজারে।
ঐশ্বর্যের ডামাডোল বন্ধ করার কোনো পথ নেই জানা
মানা নেই পাশ কেটে যাওয়ার
তবে, পাওয়ার প্লে-তে ক্ষুধার্ত হায়েনাকে বসালে
লোভ তার লাল কার্ড বের করে।
আমরা শাদা চাঁদের মহিমা বুঝি না,
তবে বিক্রি করি মহামূল্য দামে।
ঘামে জবজবে দিনগুলো আমাদের
নিকষ কালো রাতগুলো আমাদের
চাঁদের আলোক তোমাদের
আর ক্ষুধা আমাদের সহোদর হয়ে বেঁচে আছে।
০৩/১৪/২৪
ইনস্যুয়িং গুগলির পর
একটি ইনস্যুয়িং তর্ক ছুঁড়েছি আমি
আমার কবিতার নতুন পীচে
ঝকঝকে রোদে তেতে-উঠা দিন
আমার কবজির দিকে এমন রহস্যময় চোখে তাকায়,যেন
আমি ড্যামকেয়ার করি নিজেকে
সাজাই ঘর্মাক্ত মুখে উদ্বেগবিহীন
আমি তো বাংলারই সন্তান এবং
আমার হৃদয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অবব্রেক লেগব্রেক পেসারের ফুলটসে ভরা শিং আর জিতল মাছের ঘড়া ,
কচু-ঘেচুর মতো দিগন্ত তো আমাদের পালানোর তলপেটে
অবহেলায় পরিত্যক্তপ্রায় উপাদান নয় যদিও আজ;
আমি তো তাঁদেরই সহোদর, বেড়ে উঠেছি নিত্যানন্দে ফুরফুরে বিহানের মতো,
বেড়ে উঠেছি কদমের মতো ফুটে আলোর বাগানে,
তাহলে কেন আমি হানবো না
আমার অব্যর্থ ইনস্যুয়িং ডেলিভারীর
নয়া প্রকল্পের প্রাণহরা চিত্রকল্পের গোলা?
আমি গোলা সৃষ্টি করি প্রতিদিন
সরবরাহ করি বামহাতি পেসার শরিফুলের কবজিতে,
ফিজের দিগন্তে ঝলসে-ওঠা আউটস্যুয়িং
বাহাতিদের চমকে দেয়—
এবং তিন দশক ধরেই আমি কমবেশি
সৃষ্টি করে চলেছি বোলিং গতির ইনস্যুয়িং অভিযাত্রা কবিতায় কোয়ার্টজ টান, আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেই শোষক, লোকবাংলার ঝিঁঝিঁ পোকার মতো ঘাস কামড়ে পড়ে থাকি, কেউ চিনেছে কেউবা ঠোঁট উল্টে অবজ্ঞার নাকচ দিয়েছে উপহার,
আমি মর্মবিদরে রক্তাক্ত হলেও সেই সবুজ সংসার ছেড়ে
ঘাটতি গুগলির মাঠে, আমার মুক্তচিন্তার পাখা
আর বাতাসের মিহিন সংর্ঘষে
গোত্তা খেতে খেতে
ব্যাটারের চোখের মনিতে ঢুকে যায়,
আর স্ট্যাম্প উল্টে পড়ে গ্রাসরুটের মাথায়।
ইনস্যুয়িং, গুগলি, আউটস্যুয়িং আর কটবিহাইন্ড চলছিলো চিল শকুনের ছোঁ মারায়,
কিন্তু আমি তো চাই আরো কিছু,
রাজনৈতিক মিথ্যাচারের মতোই নির্লজ্জ বেহায়ার ছোবল
আমাকে তাই ফিরে যেতে হলো সেই
দানকানা জীবনের গোল্লাছুট আর দাইড়াবান্দার কাদাময় উন্মত্ত জীবনে;
বিকেলের সোনালু রোদের স্পর্শে
জীবন হেসে উঠলে
আমি গুগলির ঘেরে ডুবে যেতে যেতে
বলি বিদায় হে প্রভু
আমাদের অবিশ্বাস-ভরা কেয়ামতের ময়দানে
তখন ইনস্যুয়িং না গুগলি নাকি আউটস্যুয়িং—-
কিসে জয় পাবো!!
০৩/০৮/২৪
ঢাকা
মিডিয়ার কল্যাণে মাহবুব ভাইয়ের কবিতা পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। গত দুতিন বছরে তাঁর অনেক কবিতা পড়েছি। প্রতিটি কবিতাই সুচিন্তিত মস্তিষ্ক থেকে উৎসারিত। যেমন ভাব তেমন ভাষা ও আঙ্গিক। আমার মনে হচ্ছে প্রতিনিয়তই তিনি নিজেকে ভাঙছেন, সে-সাথে উত্তরসূরীদেরকেও পথ দেখাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস এই কবিতাগুলো আমাদেরকে পথ দেখাবে আর আমরাও সে পথ ধরে চলতে থাকব।
কবি মাহবুব হাসানের কবিতার অনন্য আস্বাদ পেলাম।