spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদপ্রবন্ধসাহিত্যের বিষয়-আশয়

লিখেছেন : সায়ীদ আবুবকর

সাহিত্যের বিষয়-আশয়

সায়ীদ আবুবকর

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব সাহিত্যই আদর্শআশ্রিত কারণ সাহিত্য মানুষেরই জন্য। দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব, সভ্যতার সংকট, আত্মার মুক্তি, স্বাধীনতা, সাম্য প্রভৃতি স্বাভাবিকভাবেই দখল করে নেয় সাহিত্যের বিস্তীর্ণ জমিন। প্রত্যেক লেখক তাঁর সাহিত্য সৃজন করে চলেন তাঁর বিশ্বাসের জায়গা থেকেই। কোনো উপন্যাস কিংবা মহাকাব্যে লেখকের উপস্থিতি টের পাওয়া না গেলেও—কারণ সেখানে তিনি অবস্থান করেন স্রেফ বর্ণনাকারী হিসেবে—তাঁর বর্ণনার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে বুঝে নেওয়া যায় তিনি কোন দলের কিংবা কোন মতাদর্শের। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ যখন তাঁর লালসালু-তে এরকম করে বলেন—’শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের চেয়ে আগাছা বেশি’, তখন ধর্ম-ব্যবসায়ী মজিদকে যেমন চেনা হয়ে যায় তেমনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকেও চেনা হয়ে যায়। ইলিয়াড মহাকাব্যে হোমারকে অবশ্য অত সহজে চিহ্নিত করা যায় না কারণ প্রতিটা চরিত্রের মধ্যে তিনি নিজেকে এমনভাবে বিলীন করে দিয়েছেন যে, হোমারকে কখনো ট্রোজানপন্থী, আবার কখনো গ্রিকপন্থী বলে মনে হয়। হোমারের তুলনা তাই হোমার নিজেই।

মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়ই সাহিত্যের বিষয় হতে পারে। বিশ্বের যেসব সাহিত্য চিরায়ত সাহিত্য হয়ে উঠেছে, তাদের দিকে তাকালেই বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। পৃথিবীর প্রাচীনতম সাহিত্যের একটি রামায়ন। বাল্মীকি তাঁর হৃদয়ের রঙ লাগিয়ে রামের যে-জীবনকাহিনী রচনা করে গেছেন কবিতার ছন্দে, তা ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে জাতিবিশেষের কাছে পূজনীয় হলেও তার সামগ্রিক আবেদন কিন্তু সাহিত্যিক; যে-কোনো ধর্মের, দেশের ও ভাষার মানুষের জন্যে এটা এক আনন্দদায়ক সাহিত্যসম্পদ। হোমারের ইলিয়াড কেবল রোমাঞ্চকর প্রেমকাহিনীই নয়, এটা যুদ্ধ, ধর্ম, দেশপ্রেম ও ন্যায়-অন্যায়বোধের এক আশ্চর্য পুরাণ, যা আমাদেরকে কাঁদায়, ভাবায় ও মানবিক করে। সফোক্লিসের দ্য ইডিপাস রেক্স রাষ্ট্রনীতি, কুসংস্কার, অদৃষ্টবাদ প্রভৃতি বিষয়কে ধারণ করে আড়াই হাজার বছর ধরে বিনোদন প্রদান করে চলেছে বিশ্ববাসীকে। এডমান্ড স্পেন্সারের দ্য ফেয়ারি কুইন মূলত ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথকে নিয়ে রচিত প্রশংসাগাথা। এটি একটি ধর্মীয় রূপককাহিনীও। খ্রিস্টানধর্মের নানা গুণাবলিকে নানা চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে স্পেন্সার এখানে মহিমান্বিত করেছেন রানী এলিজাবেথকে। বড়ু চণ্ডীদাশের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ধর্মীয় ভক্তি, প্রেম ও রতির এক আশ্চর্য শিল্পকর্ম। মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য যুদ্ধ ও দেশপ্রেমের এক অনিন্দ বীরত্বগাথা। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালি গ্রাম্য দীনহীন খেটে খাওয়া মানুষের এক করুণ জীবনকাহিনী। সোল বোলের সিজ দ্য ডে আত্মকেন্দ্রিক নগরসভ্যতার প্রেমহীন জীবনের এক আধুনিক ট্রাজেডি, যেখানে ধনকুবের পিতা সামান্য আর্থিক সাহায্য নিয়েও এগিয়ে আসতে অস্বীকার করে  হতাশা ও দারিদ্র্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত পুত্রের দুর্দিনে। অতএব দেখা যাচ্ছে, যে-কোনো বিষয় নিয়েই সাহিত্য হতে পারে; উপরতলার মানুষকে নিয়ে যেমন হয়, নিচতলার মানুষকে নিয়েও তেমনি হয়। তৌফিক আল হাকিম হজরত মহম্মদ (স)কে নিয়ে যেমন সফল নাটক মহম্মদ দ্য প্রফেট রচনা করে গিয়েছেন, তেমনি নিকোলাই অস্ত্রভস্কি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে নিয়ে রচনা করে গিয়েছেন অমর সাহিত্য ইস্পাত। ফলে দেখা যাচ্ছে, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যেমন সুসাহিত্য হয়, তেমনি সমাজতন্ত্র নিয়েও মহৎ সাহিত্য হয়। আসলে বাঁশি ভালো বাদকের হাতে পড়লেই তা সুন্দর সুর তুলতে থাকে, সে মাওলানা জালালুদ্দীন রুমির হাতে পড়লেও যা, জর্জ বার্নাড শ-র হাতে পড়লেও তাই।

কিন্তু এ বাঁশি যখন বঙ্কিমের হাতে পড়ে কিংবা সালমান রুশদির হাতে পড়ে, বাঁশি তখন বিষিয়ে ওঠে, তার সুরে তখন বিষাক্ত হয়ে পড়ে বিশ্বের বাতাস। ভাসিলি ইয়ানের এগারো বছরের অকৃত্রিম সাধনার ফসল অমর ঐতিহাসিক উপন্যাস চেঙ্গিজ খান, যেখানে সত্যের সাথে একটুও বিশ্বাসঘাতকতা করেননি তিনি, খরেজমশাহ ও চেঙ্গিজ খানের ইতিহাসের প্রতি সমান বিশ্বস্ত থেকে রচনা করে গেছেন মানবসভ্যতার নিষ্ঠুরতম বীরের কাহিনী। কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে জন্ম দিয়ে গেছেন কাল্পনিক ঐতিহাসিক উপন্যাস, যেখানে খলচরিত্রকে বানানো হয়েছে নায়ক, নায়ককে খলচরিত্র এবং এর পরতে পরতে বোনা হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বীজ। সালমান রুশদি পাশ্চাত্যের মৌলবাদী শক্তির অর্থায়নে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিশ্বের একটি মহান ধর্মকে আক্রমণ করে রচনা করেছেন যে স্যাটানিক ভার্সেস, যা দিয়ে রূপকার্থে বুঝাতে চেয়েছেন প্রফেট মহম্মদ (স)-এর উপর অবতীণ পবিত্র কোরানকে, সেটি আসলে নিজেই ’শয়তানের পদাবলি’ হয়ে রুশদিকেই বানিয়েছে শয়তান এবং এভাবে তিনি খারিজ হয়ে গেছেন সাহিত্যের জগৎ থেকে। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ও মানবিক আবেদন সৃষ্টি করে রচিত না হলে সে-সাহিত্য কখনো সাহিত্যের মর্যাদা পায় না, জঞ্জাল হিসেবে তা জায়গা করে নেয় ঘৃণার ডাস্টবিনে। বঙ্কিম ও রুশদির সাহিত্যের পরিণতিও হয়েছে শেষপর্যন্ত তাই।

আধুনিককালে আরেকটি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে, তা হলো অশ্লীলতা। সাহিত্যের নামে এক ধরনের পর্নোগ্রাফিই রচিত হতে দেখা যাচ্ছে সারা পৃথিবীতে, যেখানে মানবিক হৃদয়বৃত্তির চেয়ে শারীরিক আবেদনই সক্রিয় বেশি, যা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের উপযোগী তো নয়ই, রুচিশীল মানুষের পাঠ্যতালিকায়ও যা ঠাঁই পাওয়ার অধিকার রাখে না। এ ধরনের সাহিত্যের জনক লর্ড বায়রন, নাকি ডি এইচ লরেন্স, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। কবিতার ক্ষেত্রে ধরলে বায়রন, কথাসাহিত্যে লরেন্স। বায়রনের ডন জুয়ান প্রাকরণিক দিক দিয়ে একটি সফল মক-এপিক; যেমন এর ভাষা, তেমন এর ছন্দ, তেমনি অন্ত্যমিল; এককথায়, শিল্প হিসেবে অসাধারণ। কিন্ত যদি ওঠে বিষয়ের কথা, তাহলে বলতেই হয়, এটি মোটেও মহৎ ও সভ্য বিষয়কে ধারণ করে না। শ্রেণিকক্ষে কোনো শিক্ষকই এটা পাঠদানকালে স্বস্তি বোধ করেন না। এর ঘটনা ও বিষয়বস্তু পাঠক ও  শ্রোতা উভয়কেই বিব্রত করে তোলে। আমাকে যখন কোনো বুদ্ধিমান মেধাবী ছাত্র প্রশ্ন করে বসে, ‘ডন জুয়ান তাহলে আমরা কেন পাঠ করবো?’ তখন আমার কেবল এটুকুই বলার থাকে যে, এর ভাষাশৈলী দ্যাখো, ছন্দ-অন্ত্যমিল ও অলঙ্কারের কারুকাজ দ্যাখো। একজন মানুষ কতটুকু দেখতে চায়, তা লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি তাঁর ‘মোনালিসা’ অঙ্কন করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। মোনালিসাকে যদি লিওনার্দো বিকৃত রুচির শিল্পীদের মতো দিগম্বর করে অঙ্কন করতেন, তাহলে কি এটা আরো আকর্ষণীয় হতো, মানুষের ড্রুয়িংরুমের দেয়ালে দেয়ালে আরো বেশি শোভা বর্ধন করতো এটি? মনে হয় না। বহু সাধনা করে যে-পোশাক আবিষ্কার করে শরীর ঢেকেছে মানুষ এবং শরীর আবৃত করে হয়েছে আরো সুন্দর, তা খুলে ফেলে পশুর মতো কুৎসিত হওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

ডি এইচ লরেন্স তাঁর দ্য রেইনবো কিংবা লেডি চ্যাটারলিস লাভার উপন্যাসে যৌনতার যে-রগরগে বর্ননা দিয়ে উত্তেজিত করেছেন পাঠকদেরকে, তার সাহিত্যমূল্য কতটুকু, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে। একই ধারা অনুসৃত হতে দেখি আমরা আধুনিককালের নোবেলবিজয়ী ঔপন্যাসিক গ্যাব্রিয়েল মার্কুয়েজের মধ্যে। মার্কুয়েজ বোধহয় ভালো মতো অনুধাবন করতে পেরেছিলেন আধুনিক সাহিত্যপাঠকদের মন-মানসিকতা, ফলে তিনি মনের মাধুরি মিশিয়ে জাদুবাস্তবতার নামে পরিপূর্ণ করে তোলেন তাঁর গল্প ও উপন্যাস প্রেম, যৌনতা ও এক প্রকারের কাল্পনিক রোমাঞ্চকর লোকজ ইতিহাসের মাল-মসলা দিয়ে। মার্কুয়েজের সাহিত্যের এক ধরনের তীব্র সম্মোহনী শক্তি আছে, যেরকম সম্মোহনী শক্তি থাকে একজন কামপীড়িত সুন্দরী রমণীর একজন শক্তিমান পুরষের উপর। আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করে, মার্কুয়েজের শত বছরের নিরবতা-র বিশেষত্ব কী? আমি বলবো, এর ভিতরকার অযাচার যৌনতা, এর শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী ও লেখকের আশ্চর্য বর্ণনাশৈলী; কিন্তু এতে কোনো মহৎ মানবিক আবেদন নেই; ইনচেস্টের মতো নিষিদ্ধ যৌনতাকে এখানে প্রাধান্য দেওয়ায় এটি শাশ্বত সাহিত্যের মর্যাদা হারিয়েছে। এটাকে বড়জোর সফল এডাল্ট-সাহিত্য বলা যেতে পারে, যদি আদৌ সাহিত্যকে এডাল্ট আন-এডাল্ট এভাবে চিহ্নিত করা যায়।

চিরায়ত সাহিত্যের মধ্যে প্রাচীন গ্রিকসাহিতে ট্যাবু-সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। ইডিপাস রেক্স নাটকে অন্ধ সুথসেইয়ার টাইরেসিয়াস প্রমাণ করে দেখান যে, অদৃষ্টই ইডিপাসকে প্রতারিত করেছে এবং যে-রানীর গর্ভে তার চার-চারটি সন্তানের জন্ম, সে আসলে তারই জন্মদাত্রী। কাহিনীটা অস্বাভাবিক হলেও নাটকের কোথাও যৌনতার লেশমাত্র নেই। ফলে পাঠক কিংবা দর্শক এক মুহূর্তের জন্যেও অস্বস্তি বোধ করেন না, বরং ইডিপাসের ভাগ্যবিড়ম্বনায় তারই প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে ওঠেন। সেনেকা তাঁর ফেড্রা নাটকে আরেকটি অস্বাভাবিক সম্পর্ক তুলে ধরেছেন, যা সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। রাজা থেসিউসের রানী ফেড্রা প্রণয়াসক্ত হয়ে পড়েন তারই স্টেপ-সন হিপোলিটার প্রতি, যা করুণ পরিণতি ডেকে আনে রানী ফেড্রা ও নিরপরাধ হিপোলিটার জীবনে। এই নাটকে সেনেকা দেখিয়েছেন যে, রাজা থেসিউসের অনুপস্থিতিতে রানী ফেড্রা সুকৌশলে প্রণয় নিবেদন করছেন হিপোলিটাকে, অনেকটা ইউসুফের প্রতি জুলেখার আসক্ত হয়ে পড়ার মতো ব্যাপার। কিন্তু নাটকের মধ্যে আমরা সেনেকার প্রেম-কাতরতা দেখতে পাই, কাম-কাতরতা নয় মোটেও, যেজন্যে দর্শক অথবা পাঠক—কারো মধ্যে অস্বস্তির উদ্রেক হয় না। ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম সফল ঔপন্যাসিক হেনরি ফিল্ডিং তাঁর টম জনস উপন্যাসে টমের বহুগামিতার বর্ণনা দিয়েছেন। যে জেনি জনস নিজেকে স্কয়ার অল-অরদির বেডে খুঁজে পাওয়া শিশু-টমের মা বলে পরিচয় দিয়েছিল এবং যে-কারণে অল-অরদি তাকে বিতাড়িত করেছিল তার গ্রাম থেকে, সেই জেনি জনস পরবর্তীতে নাম ধারণ করে মিসেস ওয়াটার্স। টম জনস যখন নায়িকা সোফিয়ার সন্ধানে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল, পথিমধ্যে সে মিসেস ওয়াটার্সকে উদ্ধার করে ডাকাতদের হাত থেকে; অতঃপর একটি সরাইখানাতে তারা একত্রে রাত্রিযাপন করে এবং রতিক্রিয়া সম্পন্ন করে। পরে যখন জানাজানি হয়ে যায় যে, এই মিসেস ওয়াটার্সই হলো জেনি জনস, তখন টমের বিরুদ্ধে ইনচেস্টিয়াস সিনের অভিযোগ ওঠে। জেনি জনস তখন তার আসল পরিচয় প্রকাশ করে দেয় এবং জানায় যে, টমের প্রকৃত মা স্কয়ার অল-অরদির আপন বোন মিস ব্রিজেট। এভাবে সে টমকে উদ্ধার করে কলঙ্কের হাত থেকে। হেনরি ফিল্ডিং এ ধরনের অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের কাহিনী তাঁর উপন্যাসে আনার কারণ হলো, তিনি তৎকালীন সমাজজীবনকে পুরোপুরি চিত্রিত করতে চেয়েছেন এবং জীবনের সামগ্রিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। এই যে পাপের বীজ বপন করে গেলেন ফিল্ডিং তাঁর টম জনস-এ, তা মহীরূহ ধারণ করে ছায়া বিস্তার করে পরবর্তীকালের পাশ্চাত্যসাহিত্যে। সাহিত্য তো জীবনের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু জীবনের সব ছবিই কি সবাইকে খুলে খুলে দেখানো যায়? এর নিশ্চয়ই একটা সীমানা আছে, যার বাইরে গেলে সভ্যতা-ভব্যতা খুইয়ে ফেলতে হয়। সাহিত্য যেমন জীবনকে দেখতে শেখায়, জীবনকে নিয়ে তেমনি ভাবতেও শেখায়; সে-ভাবনা যদি মহৎ লক্ষ্যের দিকে ধাবিত না হয়, অনর্থক হয়ে গেল তা। আর অনর্থক জিনিস সৃষ্টি করে কখনো মহৎ লেখক হওয়া যায় না।

মানুষের সাথে, জীবনের সাথে যার সম্পর্ক আছে, তা-ই হলো সাহিত্য। মানবজীবনের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার গান যে-মাধ্যমে পুষ্পের মতো প্রস্ফুটিত হয়, তা-ই সাহিত্য। তবে সাহিত্যে শরীরের কথা থাকবে,নাকি হৃদয়ের কথা থাকবে, নাকি শরীর ও হৃদয় অঙ্গাঙ্গিভূত হয়ে বিকশিত হবে, সেটা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। শরীরের সৌন্দর্য আছে, হৃদয়ের সৌন্দর্য আরো অধিক। শরীর ক্ষয়িষ্ণু ও নশ্বর; হৃদয় অবিনশ্বর। শারীরিক চেতনার সাহিত্য মানুষকে রতিক্রিয়ার মতো সাময়িক আনন্দ দেয়; কিন্তু হৃদয়বৃত্তিক সাহিত্যের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। শারীরিক হোক আর মননশীল হোক, যদি তা স্বতঃস্ফুর্তভাবে মানবিক আবেদন থেকে সৃজিত হয়, তাহলে তা হয়ে ওঠে সার্বজনীন। সাহিত্যে যদি ফিজিক্যাল, ইনটেলেকচুয়াল ও স্পিরিচুয়াল–তিনটি বিষয়ই একসাথে স্বতঃস্ফুর্তভাবে বিকশিত হয়, তাহলে তা সভ্যতার স্থায়ী সম্পদরূপে সংরক্ষিত হবে। 

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

পথিক মোস্তফা on সাক্ষাৎকার : নয়ন আহমেদ
সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা