যুদ্ধ
সেলিম মণ্ডল
১
যুদ্ধ বেঁধেছে।
শুনতে পাও?
বোমা, গুলি, বারুদ… আরও কতকিছুর শব্দ!
পালিয়ে যাও৷ পালিয়ে যাও।
আমি চাই—
যেকোনো বিস্ফোরণে তুমি নিরাপদ থাকো।
২
একটা কার্গিল হতে পারত
একটা ইউক্রেন-রাশিয়া হতে পারত
একটা ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন হতে পারত
হয়নি। কিছুই হয়নি
শুধু যুদ্ধ হয়েছে আপনার মতো।
আর যুদ্ধশেষে আমরা যে যার মতো নিয়ে গেছি মান-অভিমান।
৩
তুমি জিততে চাওনি
অথচ, কাপ তোমার।
এ কেমন যুদ্ধজয়ের খেলা—
সেনাবাহিনীতে যোগ না দিয়েও কাপ নিয়ে ফেরো?
তুমি কি বর্ডারে হাত রেখে শপথ করেছিলে—
যে দেশই জিতুক, তুমি তার নাগরিক?
৪
অনেক যুদ্ধের ইতিহাস লেখা হয় না।
কতজন মরে, কতকিছু ধ্বংস হয়!
যুদ্ধও হয় নীরবে!
বোমা পড়ুক, গুলি চলুক—
যে খুশি যেখানে পড়ে থাক মরে…
এমনই দেশ, এমনই রাষ্ট্র, এমনই সমাজ
কী করবে তুমি, বোতলে গ্লুকোজ গুলে?
৫
যুদ্ধ বাঁধলে রাষ্ট্রের লাভ।
একটা অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হবে।
আরও নানারকম সমীকরণের হিসেব-নিকেশ হবে।
তুমি রাষ্টনেতা নও, তবু যুদ্ধ বাঁধলে তোমার কপালে কেন
চাঁদ ওঠে?
৬
যুদ্ধ শুরু হয় সকালের সূর্যের মতো।
আর শেষ হয় ক্লান্ত দিনের মতো।
একটা নতুন সকাল ও একটা ক্লান্ত দিনের মধ্যে কতটা তফাৎ
যারা যুদ্ধে নেমেছে কেবল তারাই জানে
এই দীর্ঘসময়ে প্রতিটা সৈনিক হারিয়ে ফেলে তার শক্ত বুট
৭
ভালোবাসায় যুদ্ধ নামে।
হারিয়ে যায় জুতো, টুপি
কেউ জেতে, কেউ জেতে না…
জিতব আর জিতেই মরব,
এটুকুই ভালোবাসার সুখ-অসুখ!
৮
প্রতিটা যুদ্ধের পর আমরা সেই জয়ী সৈনিক
যাদের ক্লান্তি ধুয়ে গেছে ভালোবাসায়…
৯
যেদিন পৃথিবীর সব যুদ্ধ শেষ হবে
সেদিন পৃথিবীতে শান্তি বলে কিছু থাকবে না।
আমাদের সমস্তরকম অস্থিরতার ভিতর যুদ্ধ আছে, শান্তি আছে।
যুদ্ধ থাক, শান্তি থাক, মন থাক, প্রেম থাক
শুধু ধূলিসাৎ হোক— গোলা-বারুদ-গুলি।
১০
যেখানে আলো পড়ে সেখানেই লাগে যুদ্ধ।
সেলিম মণ্ডল থাকেন নদিয়ার চাপড়াতে। কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও গল্প লেখেন। পছন্দের বিষয় লোকসংস্কৃতি। সম্পাদিত পত্রিকা ‘তবুও প্রয়াস’ ও ‘ফারেনহাইট‘।
তাঁর প্রকাশিত বই চারটি— ‘মায়াজন্ম’, ‘লবণ খেতের জোনাকি’, ‘কাঁচা মাংসের বাড়ি’ ও ‘এই পথ পরিকল্পিত’। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ছাদ পেটানোর গান’।