ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজায় খান ইউনুস শহরের নিজ বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় শহীদ হন ফিলিস্তিনী স্বাধীনতাকামী তরুণী কথাশিল্পী ও কবি হিবা আবু নাদা।
তার ফেসবুক ওয়াল থেকে অনুবাদ :
১.
মহান প্রভু আল্লাহ আর শহীদদের মাঝখানে
এই গাজা নগরীতে আমরা আজ দাঁড়িয়ে আছি,
(এই গাজার) মুক্তি আন্দোলনের সাক্ষী আমরা,
কোথায় থাকবো আমরা? আজ সেই অপেক্ষায়,
হে আল্লাহ! আমরা সবাই তোমার সত্য
প্রতিশ্রুতির প্রতীক্ষায় আছি।
[২০অক্টোবর, ২০২৩ মৃত্যুর পূর্বে লেখা]
২.
আমরা যখন মরে যাবো, জেনে রেখো–
আমরা (মহান রবের প্রতি) সন্তুষ্টচিত্ত ছিলাম,
আমরা ছিলাম (ন্যায়ের পক্ষে) অবিচল।
আর আমাদের পক্ষ থেকে তোমরা প্রচার করো-
আমরা ছিলাম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে (সৈনিক)।
[১৯অক্টোবর, ২০২৩ এ লেখা]
৩.
আমার বন্ধু তালিকা ছোট হয়ে আসছে ক্রমেই,
ছোট্ট ছোট্ট কফিনে সংকুচিত হচ্ছে একেকটি মুখ,
মিসাইলের আঘাতে উড়ে যাওয়া বন্ধুদের
আমরা না পারছি ছুঁইতে,
না পারছি নতুন করে ফিরিয়ে আনতে,
না পারছি আর সইতে!
(পোড়া) নয়ন যুগলে অশ্রুও আসে না আর,
বুঝতেও পারি না–কী করব এখন?
দিনকে দিন আরও ছোট হয়ে আসছে সেই তালিকা!
না, তারা তো শুধু নাম নয়,
ভিন্ন ভিন্ন চেহারা আর নামে তারা আমাদেরই মুখ।
হে আমাদের রব! তুমিই বলে দাও–কী করব এখন?
হে প্রভু! তুমি বলে দাও–কী করব এখন
আমরা এই মৃত্যু-উপত্যকায়?
[১৯অক্টোবর, ২০২৩ এ লেখা]
৪.
আল্লাহ জানেন – আমরা যেন অর্ধ জীবিত,
হয়তো তার চেয়েও কমই বেঁচে আছি,
যারা আমাদের জন্য জীবন দিয়েছেন,
যারা গাজার মাটিকে মুক্ত করতে বাড়িয়েছন হাত,
তাদের নাম আমরা মুছে যেতে দেব না কোনদিন,
আমরা তাদের নাম লিখে রেখেছি
কেবল স্মৃতিতে নয়, কফিনে নয়, অনন্তকালের হৃদয়ে।
তাদের কফিন আমরা বয়ে বেড়াব–
যতদিন না মিথ্যা পরাজিত হয়,
আর সত্য হয় বিজয়ী।
(১৮ অক্টোবর, ২০২৩)
৫.
দ্বিতীয় আরেকটি নতুন শহর গড়তে চলেছি আমরা এখন,
যে শহরে কোন আহত রোগী থাকবে না,
থাকবে না কোন রক্তের দাগ,
এমনকি কোন ডাক্তারও থাকবে না সেখানে,
ছাত্রদের আর্ত চিৎকারে ভীড় করবেন না শিক্ষকমন্ডলী।
দুঃখ ও কষ্টহীন নতুন পরিবার পাবো আমরা সেখানে,
সেখানে থাকবে কিছু সাংবাদিক–
যারা কেবল সুখময় জান্নাতের ছবিই তুলবে
(কোন আহত, নিহত কিংবা ধ্বংসের ছবি নয়),
সেখানে কিছু কবি থাকবে যারা কেবল কবিতা লিখবে–
অনন্ত মানব প্রেমের কবিতা।
গাজার সকলেই থাকবে সেই স্বর্গোদ্যানে।
জান্নাতের ভেতরে আমাদের এক নতুন গাজা হবে,
আমাদের সেই নতুন শহরে থাকবে না কোন অবরোধ।
(১৫অক্টোবর, ২০২৩)
৬.
অবর্ণনীয় করুণ অবস্থার মধ্যে বেঁচে আছি আমরা এখন,
এর মাঝেই যেন অনুভব করছি শান্তির সুবাতাস।
জানি – টিকে থাকলে এই ধ্বংসের মাঝেই একদিন গড়ে ওঠে নতুন শহর।
বেদনার কান্না এখানে ধ্বনিত হয় বাতাসে,
মিশে যায় ডাক্তারদের রক্তস্নাত পোশাকের সাথে,
শত অনুরাগেও শিক্ষকগণ (পরম আদরে) বুকে জড়িয়ে নেন ছোট ছোট ছাত্রদের,
শত বিপদের মাঝেও পরিবারগুলো প্রদর্শন করে চলেছে দ্বিধাহীন অবিচল শক্তির পরাকাষ্ঠা।
৭.
হাউইবাজির ঝলকানি ছাড়া গাজার রাত্রি
হয়ে যায় পুরো তমসাচ্ছন্ন,
বোমার আওয়াজ ছাড়া নিস্তব্ধ এই নগরী,
প্রার্থনার শান্তি ছাড়া বড় ভয়ঙ্কর এই সময়,
শহীদদের আলো ছাড়া বড় কৃষ্ণকায়।
শুভ রাত্রি, আমার গাজা! শুভ রাত্রি!
(৮অক্টোবর, ২০২৩)
[ হিবা আবু নাদা (হিবা কামাল সালেহ আবু নাদা) ফিলিস্তিনি কবি ও কথাশিল্পী। ১৯৯১ সালের ২৪জুন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন মক্কায় এবং পৃথিবীর বিষফোড়া সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজার খান ইউনুস শহরের নিজ বাড়িতে নিহত হন ২১ অক্টোবর ২০২৩। হিবা ছিলেন ফিলিস্তিনের একজন স্বাধীনতাকামী জনপ্রিয় তরুণী ঔপন্যাসিক, কবি, শিক্ষাবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী । ২০১৭ সালে সৃজনশীলতার জন্য তার উপন্যাস ‘অক্সিজেন ইজ নট ফর দ্য ডেড’ “শারজাহ পুরস্কার” লাভ করে।
হিবা গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
গাজার উপর ইসরায়েলী অবৈধ দখল উৎখাত, এতিমদের জীবনের মানোন্নয়ন, মানবাধিকার এবং ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন।