আবু সাঈদের বুক
এনামূল হক পলাশ
……………..
আবু সাঈদ,
ভাই আমার,
পুত্র আমার,
বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো
এক বিশাল বুক নিয়ে
জন্মেছিলে অভাগা এই দেশে।
পুলিশ ঝাঁঝরা করে দিলো তোমার বুক,
পুলিশ ঝাঁঝরা করে দিলো মানচিত্র।
আমি কীভাবে ভুলে যাব ভাই হারানোর বেদনা?
আমি কীভাবে ভুলে যাব পুত্র হারানোর বেদনা?
আমি কীভাবে বয়ে বেড়াবো এই ঝাঁঝরা মানচিত্র?
তুমি বুক পেতে নিরস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিলে
গাঢ় নীল অথবা হালকা জলপাই কালারের
সসস্ত্র কুকুরগুলোর মুখোমুখি।
ইয়াবা ব্যবসায়ী কুকুরের দল মানচিত্রটি
সদম্ভে নিজেদের পকেটে ভরে
গুলি করে দিলো তোমার নিরস্ত্র বুকে।
তুমি হাঁটু গেড়ে চেটে খাওনি শুয়োরের পা,
বাংলাদেশকে ফেলে রেখে দেখাওনি পিঠ,
বেজন্মার মতো চেপে ধরোনি মায়ের টুটি,
কেননা একদিন তুমি জন্মেছিলে মাতৃগর্ভে।
আবু সাঈদ, তোমার বুক ঝাঁঝরা করে দিলো
আমার গাঢ় নীল জারজ ভাইয়ের দল।
হয়তোবা কোন মায়ের পেটে তাদের জন্মই হয় নাই,
হয়তো কোনো মা গোপনে জরায়ুতে ধারণ করেছিল
অসংখ্য অসভ্য ইতরের বীর্য আর
হয়তোবা আমিই এইসব কুকুরের পিতা।
আমি ঘরে বসে আছি তাই
আমাকে হত্যা করো।
আবু সাঈদ, তুমি আমার ভাই
আবু সাঈদ, তুমি আমার পুত্র
আবু সাঈদ, তুমিই আমার শিকার।
আবু সাঈদ, আমি এক শিকারী ভাই
তোমার জানাজায় যেতে পারি নাই,
আমি এক শিকারী পিতা
যার রূহানী আত্মায় তুমি জন্মেছিলে বৃথা।
এমন এক সময়ে এসে গেছি আমরা-
ভাইয়ের মুখোমুখি ভাই থাকেনা নিরাপদ
আর
পিতার মুখোমুখি নিরাপদ থাকে না সন্তান।
মুখোমুখি দাঁড়িয়েছো!
কি চাও? অধিকার?
মুখোমুখি আছো তাই
তুমি আমার সহজ শিকার।
আমি পুলিশের ভাই
আমি পুলিশের পিতা
আমার সামনে অথবা পেছনে কেউ নাই।
আমি অসংলগ্ন অপ্রকৃতস্থ হয়ে আছি
আবু সাঈদ,
ইয়াবা ব্যবসায়ী কুকুরদের পিঠই আমার পিঠ।
আবু সাঈদ,
তোমার চিতিয়ে রাখা বুকই আমার বুক।
ক্ষমা করে দিও ভাই আমার
ক্ষমা করে দিও পুত্র আমার
তোমার কবরে আমি সহযাত্রী হতে পারিনি।
(২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনরত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিরস্ত্র আবু সাঈদকে সামনে থেকে বুকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করে। তার প্রতিবাদে ১৭ জুলাই ২০২৪ এই কবিতাটি লিখা হয়।)
…………….
লাল দিয়েই লিখো মহাকাল
রাজা আবুল কালাম আজাদ
…………….
লাল !
আমার পছন্দ,
আমার প্রিয়, আমার প্রেম,
আমার কথা, কবিতা, ছন্দ!
মুগ্ধ হলেম,
আমি প্রেমে পড়লেম_
অগ্নিরং, রক্তরং,
মৃত্যুসং, নৃত্যঢং_
কঙ্কালের।
লাল সুমুখে,
লাল চুমুকে,
হাসলাম বরং
অট্টহাসি,
বড্ড বেশি
অহঙ্কারের।
ফাগুন এলো, আগুন এলো;
শিমুল গাছের ফুল,
লাল প্রেয়সীর চিঠি দিলো;
করলেম সে প্রেম কবুল:
লালকুমারীর মনের ভাষা, চোখের আশা,
ঠোঁটের দিঠি, কণ্ঠের মিঠি, মাত্রার চিঠি_
জাগিয়ে দিলো ভালোবাসা!
লালের নেশায় নিলাম ছুটি,
আমরা ক’ভাই পিঠাপিঠি!
(সে প্রেমে) লালের আগুন জ্বলল দ্বিগুণ,
দেখলাম যখন নিজের ভাইয়ের লাল;
নিজকে করলাম খুন;
দ্রোহ হলো দ্বিগুণ,
শ্রাবণে জাগলো ফাগুন;
রক্তসাগরে ডুবল শকুন ,
লালের জন্য দিলেম লাল,
লাল দিয়েই লিখ মহাকাল!
লাল আমার বাংলা ভাষা,
লাল আমার বাংলাদেশ,
লাল আমার পতাকা, পরিচয়, ভালোবাসা;
লাল আমার মা, আমার মায়ের আদেশ!
বাংলার জন্য হলেম লাল,
বাংলায়ই লিখ মহাকাল!
………….
একজন কেউ ছিল
আকিব শিকদার
…………..
ক্ষীণ দুর্বল কণ্ঠ; শুধায় না কেউ- ‘ক্লান্তি লাগল নাকি?’
রক্তবর্ণ চক্ষু; বলে না কেউ- ‘অসুখ বাধল কি গো!’
ফ্যাকাশে মুখ; চায় না জানতে কেউ- ‘পকেট বুঝি খালি?’
হারিয়ে গেল, ছায়ার মতো যে জন ছিল সাথে
মিছিল শেষে ঘরে ফেরা অজুত জনতার স্রোতে।
কাঠ চৌচির জ্বর; আসে না কেউ জল ন্যাকড়া হাতে
মাথাব্যথায় মরি; বলে না কেউ- ‘কপাল চাপড়ে দেবো?’
কঠিন পীড়ায় প্রলাপ বকি; বসে না কেউ শয্যাকোণে
হারিয়ে গেল, ছায়ার মতো যে জন ছিল পাশে
দূর আকাশের রামধনু আকাশেই গেল মিশে।
নিঝুম রাতে নিঘুর্ম; দেয় না তো কেউ হাত বুলিয়ে চুলে
আঙুল কাটে যদি; ছেঁড়ে না কেউ নিজের অঁাচলখানি
পিছু ডাকি যবে; তাকায় না কেউ ভালোবাসার চোখে
হারিয়ে গেল, ছায়ার মতো যে জন ছিল নিভুর্ল
ধুলার ধসে ধূসর হলো রঙিন রঙ্গা সব ফুল।
Mughdha and Abu Sayed,
Two blossoms on a single branch,
In recent times, these flowers became revolutionaries,
Igniting a spark that reduced an entire empire
To ashes.
And with boundless enchantment ,
They merged into the soil of Bengal.
Nurul
কবিতাগুলো উজ্জ্বল, হৃদয়সংবেদী।