spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যআমার শিক্ষক সফিউদ্দিন আহমেদ

লিখেছেন : রফি হক

আমার শিক্ষক সফিউদ্দিন আহমেদ

রফি হক

আমার শিক্ষক সফিউদ্দিন আহমেদ । শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ । বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক, শিল্পগুরু । আজকের চারুকলা ইন্সটিটিউট যাঁদের হাতে গড়া তিনি তাঁদের অন্যতম । তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্যারের অন্যতম বন্ধু, সহকর্মী ও সাথী ছিলেন । তিনি শিল্পী কামরুল হাসানেরও শিক্ষক ছিলেন কলকাতা আর্ট কলেজে ! ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী ও ভাস্কর সোমনাথ হোর -ও ছিলেন তাঁর ছাত্র ।

আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে যে, বাংলাদেশের শিল্পকলা জগতের পুরোধা দুই প্রবীণ শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ এবং এদেশের বিমূর্তবাদী চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ মোহাম্মদ কিবরিয়াকে আমি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি । তাঁদের কাছ থেকে দেখছি এবং সান্নিধ্য পাচ্ছি ।

আজ সফিউদ্দিন স্যার আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললেন, ক্লাসরুমে । আমি আমার স্কেচবুকে আঁকা স্মল-ফর্মের কাজগুলো দেখালাম ওনাকে । কাজগুলো দেখে তিনি আমাকে অনেক সাহস দিলেন । আমাকে একটা এচিং-প্রেস কেনবার কথাও বললেন । আমার মনে হয় তিনি আমাকে বেশ স্নেহ করেন, ভালোবাসেন । 

এর-আগে মানে, মাস্টার্সে ভর্তির প্রথম দিকে স্যার আমাকে ঠিক পছন্দ করতেন না । আমিও স্যারকে এড়িয়ে চলতাম । ব্যাপারটা এমন যে, স্যার ক্লাসরুমে ঢুকলে আমি চুপি চুপি ক্লাসরুম থেকে পালিয়ে যেতাম । যতক্ষণ স্যার ক্লাসরুমে থাকতেন, আমি ততক্ষণই বাইরে, মোল্লার ক্যান্টিনে চা-সিগারেট খেয়ে আড্ডা দিয়ে সময় পার করতাম । 

এভাবেই চলছিল । …

কথায় আছে চোরের দশ দিন, গৃহস্থের একদিন । একদিন মুখোমুখি পড়েই গেলাম । মুখোমুখি মানে, স্যার লম্বায় ছ’ফুট ছাড়িয়ে, খর্বকায় আমি করিডোরে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি, দেয়ালের সঙ্গে গা লেগে লেগে… । উনি ঠিক ই খেয়াল করলেন । 

: কি নাম তোমার ?

: রফি হক ।

: কোন্ ইয়ারে পড়ছ ?

: এমএফএ ফাস্ট পার্ট ! 

: তা হলে তো তুমি আমার ছাত্র ! তুমি ক্লাস কর ?

: জ্বী স্যার, করি ।

: তোমাকে ত ক্লাসে দেখি না !

আমি নিশ্চুপ । মাথা নিচু করে থাকি ।

: তুমি কাজ কর ? ছবি আঁকো ?

: জ্বী স্যার, করি । আঁকি । 

: কি কাজ করছ ?

: পেপার লিথো, এচিং, ড্রইং

স্যার এমন করে তাকালেন যে, আমার কথা থেমে গেল ।… মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের হলো না । স্যার চলে গেলেন । ভেবেছিলাম স্যার কাজগুলো দেখতে চাইবেন । সে-সবের ধারে কাছে গেলেন না । কারণ,  আমি দিন রাত প্রচুর কাজ করি । কাউকে দেখাই না ! লজ্জা পাই— এসব-কিছু হচ্ছে না । কী দেখাব ? 

এরপর আরেকদিনের কথা । স্যার দরজার মুখে ধরলেন— ‘কী ব্যাপার ? কাজ কোথায় ? ক্লাসও কর না !!’ …এবার আমি একটু সাহস নিয়ে বলেই ফেললাম, ‘স্যার আপনাকে ভয় পাই । আমি সারাক্ষণ ক্লাস করি । শুধু, আপনার ক্লাস করি না । আমি ইন্‌সটিটিউট ছুটি হলেও কাজ করি । রাত অবধি’ ।…

স্যার ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন । আমার কথা শুনে কৌতুহলী হলেন । চশমার ভেতর দিয়ে আমার দিকে যেন অন্তর্ভেদী এক দৃষ্টিতে তাকালেন । বললেন, ‘দেখি, কী করেছো’ ?

আমি যেন এই সুযোগই খুঁজছিলাম । আমি পাঁচটি পোর্টফোলিও বের করে স্যারের পাশের টেবিলে রাখলাম । প্রতিটি পোর্ট ফোলিওতে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ-চল্লিশটি কাজ ! মোট দুই শয়ের মতো কাজ । সবই পেপার-ওয়ার্ক। (আপনারা বিশ্বাস করবেন না শুনে যে, এক বছরের সেশনে কাজ সাবমিট করতে হয় মোট বারো টি, আমি করেছি এ্যাসাইমেন্টের বারোটি বাদেও আরো দু’শো !) হ্যাঁ, আমি এই পরিমাণ কাজ করতাম ঐ সময়ে । সকাল আট টায় যেতাম ইন্সটিটিউটে, ঘরে ফিরতাম রাত ন’টা দশটায় ! নিজেকে ফাঁকি দিইনি , একদম । আচ্ছন্ন হয়ে নেশার মতো কাজ করতাম । 

স্যার অবাক হলেন ! যেন আমি নিজেকে মেলে ধরলাম স্যারের সামনে । এত কাজ দেখা যায় না এক দুই ঘন্টায় । স্যার নিজেই কয়েকটি কাজ পোর্টফোলিও থেকে বেছে নিলেন । খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন । ঐসব কাজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা অংশগুলো  আলোচনা করলেন । আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, স্যার আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছেন । তাঁর গলায় বাষ্প জমেছে, তিনি অত্যন্ত স্নেহমাখা কণ্ঠে কথা বলছেন আমার সঙ্গে । শুধু তাই নয়, তিনি আমার কয়েকটি কাজ নিয়ে এত উচ্ছ্বসিত মন্তব্য করলেন, প্রশংসা করলেন যে, আমার দুচোখ বেয়ে টপ্ টপ্ করে জল পড়তে শুরু করল ।…

আমার সহপাঠি আন্যান্য যারা ছিল, তারা নিয়মিত ক্লাস করত না । আবার এ্যাসাইনমেন্টের বারোটি কাজও করত না । স্যার অভিযোগ করলেন—

‘আমি সকাল ন’টা থেকে বসে থাকি । ক্লাসে একটি ছাত্রও দেখি না । আমি হয়তো আগামী নভেম্বরে পুরোপুরি অবসরে যাবো । আমি তোমাদের কিছু দিতে এসেছিলাম । তোমরা যতটুকু পারো আমার থেকে গ্রহণ করো । এই সময় আর পাবে না । দেখবে, জীবনে একটা সময় আসবে, নানা পারিবারিক এবং সাংসারিক ব্যস্ততায় আর নিজেকে এগিয়ে নিতে নাও পারো । ব্যস্ত হয়ে পড়বে অন্য দিকে । এখনই সময় নিজেকে গড়ে তোলবার । আমার অনুরোধ, এই সময়টা নষ্ট করো না ।…’

স্যারের নির্লিপ্ত, অথচ শান্ত গলায় অভিযোগ শুনে নির্বাক হয়ে গেলাম । খুব লজ্জিত হলাম । ভাবলাম, স্যারকে কেন ভয় পেয়েছি এতদিন ? কেনই বা আমি পালিয়ে বেড়াতাম ! খুব অপরাধী লাগল । কিন্তু নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিলাম যে, আমি অত্যন্ত ফাঁকি দিইনি ।

এরপর থেকে সফি স্যারের ক্লাস আমি খুব উপভোগ করতাম । বেশিরভাগ সময় ক্লাসে আমি আর দুই এক জন সহপাঠি থাকতাম, সবাই থাকত না। স্যার ক্লাস শেষে আমাকে নিয়ে বসতেন । কত কি যে শেখাতে চেষ্টা করতেন । তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতেন এমন করে যেন আমি ছাত্র হিসেবে তাঁর থেকে অনুপ্রণিত হতে পারি ।  

তিনি এদেশের সবচেয়ে বড়ো শিল্পী, সবচে’ খ্যাতিমান ও শ্রদ্ধেয় শিল্পী হয়েও আমার সঙ্গে কথা বলতে খুব ভালোবাসতেন । আমি মুখচোরা স্বভাবের ছিলাম,  খুব একটা কথা বলতাম না, বলা যায়ও না। আমি মন দিয়ে শুনতাম তাঁর কথা। 

তিনি বলতেন, তাঁর ছাত্রজীবনের কথা, তাঁর বন্ধুসম শিক্ষক, ফিলোজফার বিখ্যাত শিল্পী রমেন চক্রবর্তীর কথা, তাঁর অন্যন্য বন্ধুদের কথা, কলকাতা আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ অতুল বোসের কথা কথা, যিনি তাঁকে ঊনিশ শ ছেচল্লিশে কলকাতা আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন । তাঁর ভাল রেজাল্টের কথা, লন্ডনের কথা, রয়েল একাডেমি অফ আর্টসের কথা, বিলেতে তাঁর মাস্টারমশাই মেরলিন ইভান্সের কথা যিনি কি না জগদ্বিখ্যাত প্রিন্টমেকার স্ট্যান্‌লি হেটারের ছাত্র ছিলেন । জগতখ্যাত শিল্পী লিসিনিস্কির সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল… এসব  বলতে বলতে হারিয়ে যেতেন যেন সেই অপূর্ব পাহাড় ও বৃক্ষশোভিত বিহারের সাঁওতাল এলাকা মধুপুরে । চলে যেতেন জেসিডি, গিরিডি, চাইবাসা, দুমকার বনে । যে-সবের নৈসর্গিক দৃশ্য এঁকে বিখ্যাত হয়েছিলেন । কথা বলতে বলতে এমন করে আচ্ছন্ন হতেন যে, তখন তাঁকে শিশুর মতো মনে হতো ।

একদিন বললেন, ‘ আমরা যখন ছবি আঁকতাম । তখন সমাজে ছবি আঁকা ছিল মহাঅপরাধ । আমাদের আত্মীয় স্বজনদের ও পরিবারের সকলের ধারণা ছিল বখে যাওয়া ছেলেরা বোধহয় আর্টের ওপর পড়ালেখা করে । যখন তাঁরা শুনল যে আমি আর্টের ওপর পড়ব, তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিলেন । আমার আত্মীয় স্বজন বেশিরভাগই কলকাতাতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন । কেউ আমার পরিচয় দিতেন না । হয়তো সংকোচ পেতেন । কিন্তু যখন ছবি এঁকে বেশ নাম ডাক হলো, প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডাল পেলাম সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায়— তখন অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, সবাই আমার প্রশংসা করছে, আমার পরিচয় দিচ্ছে ।…

আজ স্যারের কথা শুনে খুব অনুপ্রাণিত হচ্ছিলাম। 

পৃথিবীটিই এমন যে, দুঃখ দিনের অংশীদার কেউ হতে চায় না, সবাই সুখের ভাগীদার হতে চান ।…

#

.

❦ পুনশ্চ :

৩০ জুন, ১৯৯৩, রাত ১১ টা)— আমার নোট বইতে এইটুকুন লেখা ছিল । সাতাশ / আঠাশ বছর আগের লেখা । স্যার পরবর্তীতে অনেক কথা শেয়ার করতেন । সংগীত খুব পছন্দের বিষয় ছিল তাঁর । পছন্দও করতেন । বিশেষ করে ক্লাসিক্যাল মিউজিক । আমার মনে আছে আমাকে নিয়ে গিয়ে তিনি জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তনে চৌরাসিয়ার বাঁশী শুনেছেন, শাহিদ পারভেজের সেতার, রশীদ খাঁ জি ‘র কম্পোজিশন । জাকির হোসেনের তবলা আর পন্ডিত রবিশঙ্করের সেতার শুনেছিলাম বোধহয় শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে । এসব নব্বই দশকের প্রথমভাগের কথা । 

পেইন্টিংয়ের সঙ্গে মিউজিকের আলিঙ্গনের কথা বলতেন । তাঁর নিজের পেইন্টিং দেখিয়ে মিউজিক ও পেইন্টিং এর পরস্পরের সম্পর্কের কথা ব্যাখ্যা  করতেন, বুঝাতেন । এককবার আমি প্রিন্টমেকিংয়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলাম । উনি, কিবরিয়া স্যার, রফিকুন্ নবী স্যার, বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর স্যার, মুর্তজা বশীর স্যার বিচারক ছিলেন । সেইদিনই আমার কাছে মনে হয়েছিল, বাংলাদেশে এরচে’ শ্রেষ্ঠ জুরিবোর্ড আর হয় না ! এই জুরিদের হাতে পুরস্কার পাওয়া বিরাট কিছু… এবং সত্যি এরপর থেকে আমি আর কখনও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত কোনো প্রদর্শনীতে প্রতিযোগিতার জন্যে ছবি দিইনি, আজ পর্যন্ত সেটাই মানি । সফিউদ্দিন স্যার ছিলেন সাধক ধরণের মহৎ শিল্পী । যথার্থই তিনি আমাদের শিল্পগুরু ।

তিনি আমাকে এতটা ভালোবাসতেন যে, আমার স্ত্রীকে বলতেন, “ওকে দেখে রেখো কিন্তু— আমি ওর কাজ খুব পছন্দ করি, ও খুব বড়ো শিল্পী হবে ।…” আমি শুনে খুব লজ্জা পেতাম ! প্রকৃত শিল্পী হওয়া সত্যি বোধহয় ভয়ংকর রকমের কঠিন, সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র— শিল্পীদের অনুকূলে থাকে না কখনওই  । 

স্বামীবাগে স্যারের পুরোনো বাড়িতে যেতাম কোনো কোনো দিন । ফেরার সময় তিনি আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন অনেক সময় । আমি অবাক হতাম তিনি ফোন করে খোঁজ করতেন যে, আমি বাড়ি ফিরেছি কী-না নিরাপদে !! দৈনিক সংবাদ সাময়িকীতে আমার কোনো লেখা ছাপা হলে— লেখাটি পড়ে স্যার ফোন করে আমাকে অভিনন্দিত করতেন । এখনও আমার কাছে এসব স্বপ্নের মতো মনে হয় ! 

স্যারের ছোট ছেলে বিশিষ্ট শিল্পী আহমেদ নাজির খোকন আমার অগ্রজজন । আমি তাঁর বন্ধুসম অনুজ ছিলাম। অনেকসময় খোকন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে স্বামীবাগের বাড়িতে যেতাম । তখনও স্যারের সঙ্গে দেখা হয়ে যেত । আহমেদ নাজির এদেশের বিরল প্রিন্টমেকার ও শিল্পীদের একজন । আমরা তাঁর অনুপ্রেরণা ও নেতৃত্বে এককসময় ‘ঢাকা প্রিন্ট মেকার্স’ নামে একটি ছাপচিত্রীদের দল গঠন করে একটি প্রিন্টমেকিং আন্দোলন করেছি। সেই দলে ছিলেন, রোকেয়া সুলতানা লাভলী, আহমেদ নাজির, রশীদ আমিন, রফি হক, মোস্তাফা জামান, বিপুল শাহ । ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চারুকলার প্রিন্টমেকিং ডিপার্টমেন্টে আহমেদ নজিরের মতো প্রিন্টমেকারের উপস্থিতি বড়ো প্রয়োজন ছিল। এতে ডিপার্টমেন্টই লাভবান হতো । শিক্ষকদের এমন হীনমণ্যধরণের ছোটোলোকী রাজনীতি না করা উচিত যাতে করে ক্ষুদ্র স্বার্থের কাছে বৃহত্তর স্বার্থ কুলষিত না হয়! 

দেখুন আমি কোনো রাজনীতি করি না । কাউকে দুঃখ বা ছোটো করবার জন্যেও কথাগুলো বলছি না । আমরা যতটুকু দেখি, ঠিক ততটুকুই দেখি । কিন্তু একটি বিন্দুর পাশে আরও অনেকগুলি পরিপার্শ্ব দেখতে না পেলে তিনি আর শিল্পী বা শিক্ষক হবেন কী করে ? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বা অগ্রজ শিল্পীদের কর্তব্য হলো মেধাবী ছাত্র বা অনুজ বা নবীন শিল্পীদের গোপন আচ্ছাদনটুকু ভেঙ্গে অন্তস্থল পর্যন্ত পৌঁছানো । যেমন আমার ভেতরে পৌঁছেছিলেন সফিউদ্দিন স্যার, কিবরিয়া স্যার ।…. 

কথা বলতে বলতে পরম্পরায় অন্য জায়গায় চলে গেছি, যা আমার বেলায় নিত্যই ঘটে থাকে । এতো কথা হয়তো আজকে লিখতাম না । কিন্তু সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, আলোকচিত্রী মোহাম্মদ আসাদ আমাকে একটি ছবি পাঠিয়ে হতবাক করে দিয়েছেন । মূল্যবান ছবিটির জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই । আসাদ ভাই  আমাকে সফিউদ্দিন স্যারের নব্বই তম জন্মদিনের ছবি পাঠিয়েছেন । সেবার বেঙ্গল গ্যালারির আয়োজনে যেখানে স্যারকে আমি শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম তাঁর ধানমন্ডির বাসায় । ওখানে ফরিদা আপা ছিলেন । ফরিদা পারভীন । তিনি স্যারের ও তাঁর প্রিয় কিছু লালনের গান শোনালেন । ফরিদা আপা কুষ্টিয়াতে আমার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন । ওনার হাজব্যান্ড নামকরা গীতিকার অধ্যাপক আবু জাফর আমার শিক্ষক ছিলেন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের । আসাদ ভাইয়ের তোলা এই ছবিটিতে স্যার সহ আছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, সুবীর চৌধুরী, লেখক, কবি সম্পাদক আবুল হাসনাত । তারা সবাই অনন্তে যাত্রা করেছেন । ছবিটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার স্ত্রী এ্যাঞ্জেলা বলল, জানো ঐদিন অনেক শিল্পী সাহিত্যিক কবি, শিল্প-সংগ্রাহক স্যারকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হয়েছিল । স্যার নির্বাকই ছিলেন, কুশনে ঠেস দিয়ে শুয়েছিলেন । কিন্তু যেই তুমি স্যারের সামনে গেছো— স্যার অমনি খুশিতে ঝলমল করে ওঠে বসতে চেষ্টা করলেন, কাইয়ুম স্যার তাড়াতাড়ি ধরে ওনাকে ওঠালেন । সফিউদ্দিন স্যার তোমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন চেয়েছিলেন, তাঁর সবটুকু অভিব্যক্তি দিয়ে । দেখো, ছবিটিও সেই কথা বলে ।

… আমি অপলক সেই  ছবিটিই দেখছি ।

.

বৃহ:বার, ঢাকা : ২৩ আষাঢ় ১৪২৮

৯ জুলাই, ২০২১ 

রফি হক : শিল্পী, ছাপচিত্রী, শিল্পলেখক, সম্পাদক। ভিজিটিং আর্টিস্ট এন্ড লেকচারার, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো। 

ছবি : মোহাম্মদ আসাদ

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ