spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদগদ্যআল্লাহর সেপাই তিনি দুঃখীদের রাজা

লিখেছেন : আবু রাইহান

আল্লাহর সেপাই তিনি দুঃখীদের রাজা


আবু রাইহান

‘বাইরে তার ঘোড়া অস্থির,বাতাসে কেশর কাঁপছে।/আর সময়ের গতির উপর লাফিয়ে উঠেছে সে।/…শোনো বখতিয়ারের ঘোড়া আসছে।/আসছে আমাদের সতেরো সোয়ারি।/ হাতে নাঙ্গা তলোয়ার।/…মায়ের ছড়া গানে কৌতুহলী কান পাতে বালিশে/ নিজের দিলের শব্দ বালিশের সিনার ভিতর।/ সে ভাবে সে শুনতে পাচ্ছে ঘোড়দৌড়।/ বলে, কে মা বখতিয়ার?/ আমি বখতিয়ারের ঘোড়া দেখবো….’ –আল মাহমুদ

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি,বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠাতা।তাঁর সমাধিসৌধ এখনো টিকে আছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর মহকুমার পীরপালে।মুসলিম শাসনামলের বহু স্থাপনার মতোই অযত্নে-অবহেলায় ধ্বংসের মুখে বখতিয়ার খিলজির সমাধিসৌধও। সমাধিস্থলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে বারো দুয়ারি ও দীঘির ঘাট এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ধ্বসে গেছে সমাধিসৌধের দেয়ালের একাংশ। ধারণা করা হয়, বারো দুয়ারি নামে চিহ্নিত স্থাপনাটি মূলত একটি মসজিদ ছিল। মসজিদের মুসল্লি ও কবর জিয়ারতকারীদের অজুর জন্য পাথর বাঁধানো ঘাট তৈরি করা হয়েছিল। সমাধি ও বারো দুয়ারি পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। তবে ব্রিটিশ সার্ভেয়ার স্যার ফ্রান্সিস বুকানন হামিল্টন, যিনি ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গ ও বিহারের জরিপকাজে নিযুক্ত হন। তিনি বখতিয়ার খিলজির সমাধির বিবরণ দেওয়ার সময় বারো দুয়ারির ভেতরে একটি কবর আছে বলে উল্লেখ করেছেন। স্যার হামিল্টনের ধারণা বারো দুয়ারির কবরটিই বখতিয়ার খিলজির এবং এখনো টিকে থাকা কবরটি বখতিয়ারের সহচর পীর বাহাউদ্দিনের। অবশ্য সমাধিসৌধের সামনে টাঙানো বতর্মান নামফলকে স্যার হামিল্টনের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং টিকে থাকা সৌধটিকেই বখতিয়ারের বলে দাবি করা হয়েছে।বখতিয়ার খিলজির সমাধিস্থলটি পীরপাল দরগা নামে পরিচিত।

পীরপাল দরগা: ‘কথিত আছে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী ছিলেন দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা কুতুব উদ্দিন আইবকের বিশ্বস্ত সেনাপতি। এই তুর্কি সেনাপতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হলো বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ১২০৬ সালে তিব্বত আক্রমণের জন্য ইখতিয়ার উদ্দিন মোহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী দেবকোট শহর ত্যাগ করেন। তিব্বত অভিযানের সময় খিলজি বাহিনী একটি বিধ্বংসী পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিল এবং প্রায় একশত জীবিত সৈন্যসহ দেব কোটে ফিরে এসেছিলেন । ইখতিয়ার উদ্দিন মোহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী ভারতে ফিরে আসার সময় যখন তিনি দেব কোটে অসুস্থ হয়েছিলেন সেই সময় আলী মর্দান কর্তৃক তিনি নিহত হন এবং দেব কোট অধুনা পীরপাল নামক স্থানের তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। সেই সময় থেকেই এই সমাধিস্থল অত্যন্ত পবিত্র ও উল্লেখযোগ্য।’

বাংলা ও বিহার অঞ্চলে প্রথম মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন তুর্কি সেনাপতি ও বীর যোদ্ধা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি। তিনি ছিলেন তুর্কি জাতিভুক্ত খিলজি বংশের সন্তান। বখতিয়ার খিলজির পূর্বপুরুষ আফগানিস্তানের গরমশির অঞ্চলে বাস করতেন। অল্প বয়সে তিনি ভাগ্যান্বেষণে বের হন।দিল্লির শাসক কুতুবুদ্দিন আইবেকের সুদৃষ্টি লাভ করার পরই তাঁর জীবনধারা বদলে যায় এবং নিজেকে একজন যোগ্য সেনাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান।বিহার বিজয়ের পর বখতিয়ার খিলজি ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা লক্ষ্মণ সেনের শাসনাধীন বাংলার নদীয়া জয় করেন। আকস্মিক আক্রমণে রাজা লক্ষ্মণ সেন প্রধান রাজধানী বিক্রমপুর পালিয়ে যান। এভাবেই বাংলার মাটিতে মুসলিম শাসনের সূচনা হয়।এরপর তিনি ধীরে ধীরে লক্ষ্মণাবতী, গৌড়সহ সমগ্র উত্তরবঙ্গ বিজয় করেন।লক্ষ্মণাবতীর নাম পরিবর্তন করে লখনৌতি করে তাকে রাজধানী ঘোষণা করেন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খিলজি তিব্বত অভিযানে বের হন। কিন্তু উপজাতিদের বিশ্বাসঘাতকতা ও কূটকৌশলের কাছে পরাস্ত হন। এতে তাঁর সেনাদলের বৃহদাংশ ধ্বংস হয়ে যায়। তিব্বত বিপর্যয়ের পর ব্যর্থতার গ্লানি ও শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দেবকোটে (বর্তমান দক্ষিণ দিনাজপুর) ফিরে আসেন।এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে কেউ কেউ বলেন মীর মর্দানের হাতে নিহত হন।বখতিয়ার খিলজির বাঙলায় অবস্থান ছিল খুবই সীমিত। ১২০৪ সালের শেষে দিকে অথবা ১২০৫ সালের প্রথম দিকে নদীয়া অভিযানের পর লখনৌতিতে তিনি রাজধানী স্থাপন করেন। এক বছর পরই তিব্বত অভিযানে রওয়ানা হন। তিব্বত যাওয়ার পথে আসামে গিয়ে বাধাগ্রস্থ হয়ে, সাঁতার না জানার কারণে তাঁর পুরো বাহিনীই নদীতে তলিয়ে যায়। মাত্র শ’খানেক সৈন্য নিয়ে তিনি দেবকোটে ফিরতে পেরেছিলেন।সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।পীরপাল গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে পীর হিসেবে আজও স্মরণ করে এবং তাঁর সম্মানার্থে মাটিতে ঘুমায়।দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর মহকুমার পীরপাল গ্রাম। হাজার তিনেক মানুষের বাস এই গ্রামে। আছে একটি প্রাথমিক স্কুল, গঙ্গারামপুরের সঙ্গে সংযোগকারী পাকা রাস্তাও। আর আছে বখতিয়ার খিলজির সমাধি। যুগ যুগ ধরে নানা লোকগাথা সূত্রে যাকে গ্রামবাসীরা মানেন একজন পীর বলে।তাদের সহজ বিশ্বাস, আজও গ্রামের পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ান পীরসাহেব। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সেই বিশ্বাসই আঁকড়ে রয়েছেন পীরপালের বাসিন্দারা।গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর ও কৃষিজীবী। হিন্দু-মুসলিম উভয়েই এই সমাধির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রাচীনকাল থেকেই বখতিয়ারের ওই সমাধি নিয়ে নানা লোকাচার পালিত হয়ে আসছে। যেহেতু তাদের ‘বুড়াপীর’ এখানে মাটির নিচেশুয়ে আছেন সে কারণে এখানকার লোকজনের খাটে শোয়া নিষেধ। বর্তমানে এ নিয়ম পাল্টে গেলেও সাবেকি মানুষেরা এ প্রথা আজো মেনে চলেন।
বঙ্গবিজয়ী তুর্কি বীর বখতিয়ার খিলজি অষ্টাদশ অশ্বারোহী নিয়ে লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে নওদা বা নদীয়া বিজয়ের পর জয় করেন লক্ষ্মণাবতী। প্রথমে এখানে রাজধানী থাকলেও পরে তা প্রাচীন নগরী দেবকোটে স্থানান্তর করেন। যা বর্তমানে গঙ্গারামপুর নামে পরিচিত। তিব্বত অভিযান ব্যর্থ হলে বখতিয়ার খিলজি মুষ্টিমেয় সৈন্য ও সহযোগী নিয়ে তৎকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র তথা রাজধানী দেবকোটে ফিরে আসেন। বখতিয়ার খিলজি ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান, সে বিষয়ে একমত অধিকাংশ গবেষক। তবে স্বাভাবিক মৃত্যু, না তাকে হত্যা করা হয়েছিল, এ নিয়ে খুব জোরালো না হলেও একটা বিতর্ক আছেই।বখতিয়ারের মৃত্যু দেবকোটে ঘটে– ইতিহাসে এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। তবে ইতিহাস লেখকরা একমত যে, বখতিয়ার খিলজির কবর বা সমাধি পীরপাল গ্রামে অবস্থিত।শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অবহেলিত এই সমচতুষ্কোণ সমাধি বেদিটির দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ ছিল ১০ ফুট।একটি প্রায় আয়তাকার ঘরের মধ্যে কবরখানা।সমাধির পাশেই বিশাল দীঘি। দীঘির বিশাল শানঘাটের ভগ্নস্তূপ। সমাধির উত্তর পার্শ্বে নিকটবর্তী স্থানে রয়েছে একটি ভগ্নস্তূপ, এতে সুপ্রাচীন গৃহের চিহ্ন বিদ্যমান পাথরের পিলারসমেত। সম্ভবত এটি ছিল বখতিয়ার খিলজির শেষ আবাসস্থল। সমাধি ও আবাসের এ স্থানটির অবস্থান প্রাচীন দেবকোটের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি।পুনর্ভবা নদী থেকে দেড় কিলোমিটার এবং বানগড় দুর্গ থেকে ২.৫ কিলোমিটার আগে শুকদেবপুর বাজারের অদূরে অত্যন্ত সাদামাটা পরিবেশে সমাধিটির অবস্থান।
১১৯৩ সালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের জন্যে বখতিয়ার খিলজিকে দায়ী করা হয়।বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক রাম পুনিয়ানি লিখেছেন– ‘বিশ্ববিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম ভারতের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ২০০৬ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রিমিয়ার গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন।বিহার বিধানসভা এবং কেন্দ্রের ড. মনমোহন সিংহ পরিচালিত ইউপিএ সরকার এটির অনুমোদন দিয়েছিল। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশগুলিতে সম্রাট অশোকের প্রেরিত প্রচারকদের দ্বারা বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই মায়ানমার,শ্রীলঙ্কা,ভিয়েতনাম,জাপান, কোরিয়ার মত দেশের রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতিতে পূণ:র্গঠিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বার’শ শতকে বিদেশি হানাদাররা পুড়িয়ে দিয়েছিল।মাহমুদ ঘোরীর দরবারী বখতিয়ার খিলজি যে এটি পুড়িয়ে দিয়েছিলেন, এই ধারণাটি প্রধানমন্ত্রী প্রচার করতে চেয়েছেন নিজের দলের রাজনৈতিক স্বার্থে।এক্ষেত্রে তিনি ব্রিটিশদের রচিত সম্প্রদায়িক ইতিহাসকে হাতিয়ার করে বলতে চেয়েছেন–মুসলিম আক্রমণকারীরা হিন্দু মন্দিরগুলি ধ্বংস করে এবং বলপ্রয়োগে ইসলাম প্রচার করে।নালন্দার একটি গৌরবময় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, যা রাজগীর বিহারের একটি বিশাল এলাকায় বিস্তৃত ছিল, যা ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত রাজাদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণে দেখা যায় এটি একটি বৌদ্ধকেন্দ্র ছিল। এখানে বৌদ্ধ দর্শনের অধ্যয়ন ছাড়াও ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র, গণিত, যুক্তিবিদ্যা এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানও শেখানো হত।পরে পাল ও সেন রাজবংশের আগমনের সাথে সাথে এর পৃষ্ঠপোষকতা হ্রাস করা হয় এবং প্রত্যাহার করা হয়।এটিই ছিল নালন্দার পতনের সূচনা।লাখ লাখ বই, পাণ্ডুলিপি ও দুর্লভ সংগ্রহশালায় কে আগুন দিয়েছে? যদিও এর জন্যে খিলজিকে দায়ী করা হচ্ছে, বিশেষ করে ব্রিটিশদের আগমনের পর।কিন্তু এটি প্রমান করার মতো কোনো একক প্রাথমিক উৎস নেই।সেই সময়ের ইতিহাস সম্পর্কিত বেশিরভাগ প্রাথমিক সূত্রে নালন্দায় খিলজির আসার উল্লেখ নেই। মিনহাজ-ই-সিরাজের লেখা তবাকাত-এ-নাসিরি-তেও এর কোনো উল্লেখ নেই। দুই তিব্বতী পণ্ডিত ধর্মস্বামীন এবং সুম্পা তাঁদের বইতেও খিলজি নালন্দায় এসেছিলেন বা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন এমন কিছুর উল্লেখ নেই। তিব্বতের আরেকজন সুপরিচিত বৌদ্ধ পণ্ডিত তারানাথও এমন কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।ভারতীয় ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার এবং আরসি মজুমদারও খিলজির দ্বারা নালন্দাকে ধ্বংস করাকে সমর্থন করেন না।তিব্বতি সন্ন্যাসী তারানাথ দ্বারা রচিত ‘ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস’ গ্রন্থ এবং ডিআর পাটিল রচিত ‘ভারতীয় যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় নালন্দা ধ্বংসের কারণ বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ধর্মীয় অসন্তোষ।সমস্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র ব্রাহ্মণদের প্রতিশোধ হিসাবে নালন্দা গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে নির্দেশ করে। বখতিয়ার খিলজিকে আনা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাধারণ ইসলামোফোবিক প্রচারের সাথে খাপ খায় এবং একই সাথে সেই সময়কালে বৌদ্ধ ধর্মের নিপীড়নের সত্য ঘটনাকে আড়াল করে।’

‘আল্লাহর সেপাই তিনি দুঃখীদের রাজা।/…খিলজিদের সাদা ঘোড়ার সোয়ারি।/ দ্যাখো দ্যাখো জালিম পালায় খিড়কি দিয়ে দ্যাখো, দ্যাখো।/ মায়ের কেচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ে বালক/ তুলোর ভেতর অশ্বখুরের শব্দে স্বপ্ন তার নিশেন ওড়ায়।’

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ