জাকির আবু জাফর
আসাদ চৌধুরী। একজন খ্যাতিমান কবি। বরেণ্য এবং জনপ্রিয় কবি। তিনি শিশু সাহিত্যিক। তিনি অনুবাদক। তিনি আবৃত্তিশিল্পী। এবং তিনি দর্শকনন্দিত একজন টিভি উপস্থাপক। সজ্জন হিসেবে তিনি গ্রহণযোগ্য। সবার কাছে উদার মানুষ হিসেবে পরিচিত।
কবিরা কবিতা লেখেন। পাঠ করেন। শোনেন শ্রোতাবৃন্দ। কিন্তু সবার পাঠ কি মধুর?
না সকল কবির কবিতা পাঠ মধুর নয়। হয় না। সবার কথাও শুদ্ধ নয়। সুন্দরও নয়। গুছিয়ে বলতেও পারেন না।
আসাদ চৌধুরী এক্ষেত্রে একদমই আলাদা। তার কবিতা পাঠ ছিলো অসাধারণ। পাঠ করতেন দরাজ কণ্ঠে। উচ্চারণ ছিলো চমৎকার। তিনি শুধু ভালো পাঠ নয়, আবৃত্তি করতেন। আবৃত্তিকার হিসেবে তিনি প্রথম শ্রেণির।
কথা বলার একটি আলাদা ভংগী ছিলো তার। শুদ্ধ ভাষায় বলতেন। একদম শুদ্ধতায় বলতেন। উচ্চারণ ছিলো যথার্থ। প্রতিটি শব্দ স্বচ্ছ এবং পরিস্কার করে উচ্চারণ করতেন।
শ্রোতা বেশ মনোযোগ রাখতেন তাঁর কথায়। বক্তৃতাও ছিলো আকর্ষণীয়।
বৈঠকী আলোচনায় তিনি সরব ছিলেন। বিশেষ কোনো বই কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো লেখা নিয়ে কথা বলতেন।
উপস্থিত কেউ কথা বলতে চাইলে শুনতেন। শুনতেন মনোযোগের সাথে।
সবার সাথে মিলেমিশে চলার এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তাঁর। ডানের সাথে মিশতেন। বামের সাথেও। ধর্ম বর্ণ বলে কথা নয়। সবাই মানুষ, এটিই ছিলো তাঁর উক্তি। কালো ধলো বলে কথা নেই। হিন্দু বৌদ্ধ বলেও নেই। খৃষ্টান মুসলমানও ভেদাভেদ করতেন না। প্রথমত সবাই মানুষ এটিই বিশ্বাস করতেন তিনি। কিন্তু দুষ্টু লোকদের অপছন্দ করতেন। এড়িয়ে চলতেন তাদের। খারাপ লোকের সঙ্গ না নিতেই বলতেন কাছের লোকদের। নিজেও খারাপদের থেকে দূরত্ব রাখতেন।
বড়দের সাথে তো মিশতেনই। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরাও তাঁর আড্ডায় জমা হতো। আরও মজার বিষয় হলো – একেবারে তরুণ তরুণীও তাঁর সঙ্গে বেশ আন্তরিক হতো। তিনি একদম তরুণ বয়সীদেরও বন্ধুর মতো গ্রহণ করতেন। তরুণদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতেন।
না কারো সমালোচনায় খুব একটা যোগ দিতেন না। তাঁর আড্ডার বিষয় ছিলো কবি লেখকদের জীবনের গল্প। কে কেমন লিখেছেন তার ফিরিস্তি। কোন তরুণ কেমন রচনা করেছেন জানতেন তিনি। খোঁজ রাখতেন নবীন লেখকদেরও। উঠতি কবিদের কবিতার বেশ খবর ছিলো তাঁর কাছে। পড়তেন খুব। হাতের কাছে যা পেতেন, পড়তেন। ভালো লাগলে প্রশংসা করতেন। মন খুলে বলতেন মনের কথা। উৎসাহ যোগাতেন তারুণ্যকে।
রাত জাগার অভ্যাস ছিলো তার।গভীর রাত অবদী পড়তেন। লিখতেনও কোনো কোনোদিন।
একজন বিচরণশীল কবি ছিলেন তিনি। রাজধানীর আনাচকানাচে ঘুরে বেড়াতেন। যোগ দিতেন নানাবিধ অনুষ্ঠানে। কবিতার আসর তো ছিলোই। সাহিত্য সভায়ও ছিলেন সরব। সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতেন উৎসাহের সাথে। শিল্প প্রদর্শনী কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিলো তাঁর অদম্য উপস্থিতি। আবৃত্তির শিক্ষক ছিলেন তিনি। টিএসসি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন আবৃত্তি কর্মশালায় শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। কবিতার কর্মশালায় শিক্ষা দিতেন নবীন কবিদের।
পান খেতে পছন্দ করতেন খুব। যেই সেই পান নয়। মশলাদার পান। সুগন্ধী যুক্ত পান। যেখানে ছুটতেন সঙ্গে থাকতো একটি ঝোলানো ব্যাগ। কিছু বইপত্র, দু’ একটি ম্যাগাজিন থাকতো ব্যাগে। থাকতো একটি ডায়রি। ডায়রিতে কবিতা লিখতেন। লিখতেন কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়। নোট নিতেন কখনও কখনও। আর থাকতো পানের আয়োজন। একটি বাক্সে অনেক ঘর থাকতো। একটিতে পান। একটিতে সুপারি। আরও কটিতে বিভিন্ন স্বাদের মশলা। যেমন লবঙ্গ, এলাচ,দারুচিনি, আদাসহ পানের বিভিন্ন মশলা। সারাটি দিন একটির পর একটি পান বানিয়ে পুরে দিতেন মুখে। চিবানো শুরু তো ঘ্রাণও শুরু। মশলার সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়তো। মাঝে মাঝে উপস্থিত কেউ কেউ লোভ করতো পানের। খাওয়ার ইচ্ছে করতেন। চাইলে না করতেন না। বানিয়ে দিতেন মশলাদার পান।
পানের এ আয়োজন তাঁর কবিতাকেও পেয়ে বসেছিলো। কবিতার প্রথম বইয়ের নাম – “তবক দেওয়া পান।” অদ্ভুত মনে হয়! হলেও সত্যি তো এটিই- তবক দেওয়া পানের কবি হিসেবেই তিনি পরিচিত।
কবি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি তার। সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন। কিন্তু প্রধান পরিচয় তিনি কবি।
তাঁর কবিতা লিরিক্যাল। ছোট ছোট কবিতা। ছোট ছোট বাক্য। ছন্দের আনন্দে সাজানো বাক্যগুলো আসাদ চৌধুরীর নিজস্ব ঢংয়ে রূপ পেয়েছে। গদ্য কবিতা নেহায়াতই কম লিখেছেন। ছন্দেই লিখেছেন বেশি।
তিনি সমাজ সচেতন কবি তো। ভীষণ ভাবে রাজনৈতিক সচেতনও। সমাজের অসংগতির কথা তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে বিবৃত হয়েছে। রাজনীতির অন্ধকার দিক নিয়ে তাঁর কবিতা সোচ্চার। সমাজের অসুন্দর নিয়ে উচ্চকণ্ঠ তার কবিতা! অমানুষের তীব্র সমালোচনা আছে তাঁর কবিতায়। স্যাটায়ার আছে তীব্র ভাবে।
তিনি সুস্থতা চেয়েছেন রাজনীতির। শান্তি চেয়েছেন সমাজের। পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ির অসুন্দর অপছন্দ করতেন। একজন লেখককে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচার করার সমালোচনা করতেন তিনি। কবিতায় রাজনীতি কিংবা রাজনীতির কবিতা দুটোকেই অসুন্দর বলতেন।
তিনি একজন বিশ্বাসী কবি। তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ছিলো বিশ্বাসের অনুকূল। কিশোরকালে প্রথমে মক্তব এবং মাদ্রাসায় পড়েছেন। পরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা সাহিত্যে অনার্স মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
হতে চেয়েছেন আদর্শ শিক্ষক। যোগও দিয়েছিলেন শিক্ষকতায়। ব্রহ্মণ বাড়িয়ার একটি কলেজে। শিক্ষক হিসেবে সুনামও কুড়িয়েছিলেন বেশ। এখানেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের সঙ্গে তার দেখা। আল মাহমুদের বাড়ি ব্রাহ্মণ বাড়িয়ায়। আল মাহমুদ পঞ্চাশের কবি। আসাদ চৌধুরী ষাটের। পিঠাপিঠি দশকের কবি বলে বয়সের ব্যবধানও খুব বেশি নয়। ১৯৩৬ এ আল মাহমুদের জন্ম। আসাদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৩ এ।আট নয় বছরের বড় ছোট দুজন। ফলে অন্তরঙ্গে দাড়িয়ে যায় দুজনের সম্পর্ক। গড়ে ওঠে কাব্যিক বন্ধুত্ব। দিনে দিনে দৃঢ হতে থাকে বন্ধুত্বের বন্ধন। সময় গড়াতে থাকে। আল মাহমুদ দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন। আসাদ চৌধুরী যোগ দেন বাংলা একাডেমিতে। দুজনের সম্পর্ক আরও গাঢ হতে থাকে। আল মাহমুদ এর পক্ষে কণ্ঠ দৃঢ তার। সুযোগ পেলেই প্রশংসায় মধুমুখ হতেন।
না তিনি রাজনৈতিক বিভাজনের খেলায় যোগ দেননি। দেননি বলেই অপছন্দের হয়ে গেলেন অনেকের। তিনিও অপছন্দ করতেন এসব। এসব অপছন্দের জায়গা থেকেই হয়তো দেশ ছেড়েছেন তিনি। চলে গেলেন কানাডায়। সেখানে মেয়ের সঙ্গে থাকতেন। অবশ্য তাঁর পরিবারও সেখানেই ছিলেন। আছেন। সেখানেই তিনি ত্যাগ করেছেন শেষ নিঃশ্বাস।
কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
টরন্টোর আসোয়া লেকরিচ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। স্থানীয় সময় বুধবার রাত তিনটায় তিনি মারা যান। বাংলাদেশ সময় ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টা।
কবি আসাদ চৌধুরীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা সবাই এখন টরন্টোয় আছেন। তাঁর স্ত্রীও সেখানেই।
কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, জীবনী, অনুবাদগ্রন্থ, শিশু-কিশোর গল্প, রূপকথা সব মিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি।
১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে পান একুশে পদক। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার।
১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল, তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার মেহেন্দিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের অন্যতম। তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী তাকে নিজস্বতায় উঁচু করে তুলেছে। টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্যও অনেকের চেয়ে আলাদা তিনি ।
তার ভরাট কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি মানুষের মনে দাগ কেটেছে। জয় করেছেন শিল্পপ্রেমী মানুষের মন।
কবির পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া। মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম।
আসাদ চৌধুরীর প্রিয় কবিদের একজন মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমি। বাংলাদেশ রূমি সোসাইটির সাথে তিনি ছিলেন ওতোপ্রোতো।
উর্দু কবিতার প্রতিও ছিলো তার গভীর ভালোবাসা। উর্দু সোসাইটির সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন আন্তরিক ভাবে।
রেডিও, বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার। একসময় রেডিওতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান প্রচারিত হতো। কী অদ্ভুত ছিলো সেই আজানের সুর। সেই সুরের কারিগর ছিলেন ক্বারী ওবায়দুল্লাহ্। আজান শেষে আজানের দোয়া পাঠ হতো। তারপর প্রচার হতো সেই দোয়ার বাংলা অর্থ । উচ্চারিত সেই বাংলা অর্থের দরাজ কণ্ঠটি ছিলো কবি আসাদ চৌধুরীর।
তার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার কথা যদ্দুর মনে পড়ে, বছর পঁছিশেক তো হবেই। স্থানটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। কোনো একটি অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানের কোনো একটি মুহূর্তে পরিচয়। পরিচয়ের সেই যে মুহূর্ত মন থেকে মোছেনি আমার। নাম বলতেই বললেন – আরে তুমি জাকির আবু জাফর! গেলো সপ্তাহে জনকণ্ঠে তোমার কবিতা পড়েছি। ও হ্যা বাংলার বাণীতেও কবিতা ছিলো। খানিকটা অবাক হলাম। তরুণদের কবিতা পড়েন তো পড়েন। নামও মুখস্থ রাখেন। পরে বুঝতে পেরেছি তিনি তারুণ্যের লেখার খোঁজ খবর ঠিকই রাখেন।
সেই থেকেই অবিরাম চলা। তারপর বিভিন্ন কবিতার জলসায় আসরে উৎসবে কাটিয়েছি অন্তরঙ্গ সময়। ঢাকায় তো বটেই, ঢাকার বাইরেও অনেক আয়োজনে একসাথে ভ্রমণ হয়েছে আমাদের। কত কথা কত স্বপ্নের উড়ানি ছিলো আমাদের। কত মত বিনিময়। কত কত পরামর্শ।
কিছু কথা ছিলো সাহিত্যের। কিছু কবিতার। কিছু কবিতাঙ্গনের। কিছু কথা ছিলো তাঁর একান্ত নিজের। আমারও ছিলো তেমন কিছু কথা। আর কিছু ছিলো তাঁর ও আমার। এভাবে নানা সময় নানান বিষয় আলোচনায় ভাষা পেতো আমাদের। অকপটে কথা হতো। এসব ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আন্তরিক।
তাঁর কল্যানপুরের বাসায় কেটেছে অনেক সন্ধ্যা। অনেক বিকেল। অনেক বিষয়ে পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত।
২০০৪ এ প্রকাশ হলো আমাদের এই নয়া দিগন্ত। ভীষণ রমরমা আয়োজনে পাঠকের সামনে উপস্থিত হলো নয়া দিগন্ত। অল্প সময়ে এত পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে এমন পত্রিকা বাংলাদেশে কমই। পত্রিকার যাত্রা শুরুর কিছু দিনের মাথায় গঠিত হলো নয় দিগন্ত পাঠক পোরাম। নাম দেয়া হলো- “প্রিয়জন।” তো প্রিয়জনের একজন সভাপতি দরকার। এমন একজন দরকার যিনি খ্যাতিমান এবং সম্মানিত। সেই সঙ্গে সর্ব মহলে গ্রহণযোগ্য। কে আছেন এমন? খুঁজতে খুঁজতে যে নামটি উঠে এলো তিনি আসাদ চৌধুরী। একবাক্যে গ্রহণ করলেন নয়া দিগন্ত পরিবার। আসাদ চৌধুরীকে প্রস্তাবও দেয়া হলো। কিন্তু তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজি নন।
আমাদের সম্মানীয় সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন। তিনি আমাকে বললেন – দেখুন তো কবি কি করা যায়! কবি আসাদকে রাজি করানো যায় কিনা। সম্পাদক কবি আসাদ বলেই ডাকতেন তাকে।
আসাদ ভাইয়ের সাথে সম্পর্কের গভীরতায় বেশ আত্মবিশ্বাস ছিলো আমার। কিন্তু সম্পাদকের কথায় রাজি হননি! আমার কথায় কি আর হবেন!
যাই হোক বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলানী তুলে দেখা করলাম প্রিয় কবি আসাদ চৌধুরীর সাথে। অনুরোধ করলাম বিষয়টি। বললেন – জাকির, তুমি বিপদে ফেললে আমাকে। ভালোবাসার কাছে আমি বড়ই দুর্বল। তোমার কথা ফেলতে পারি না আমি। কি আর করা, ঠিক আছে তোমরা যা চাও তাই হবে।
তারপরের ইতিহাস বিশাল। তিনি প্রিয়জনের সাথে এমন করে মিশলেন, সারাদেশের তরুণ তরুণীদের বিশাল গোষ্ঠী তাঁকে ভালোবাসলো। যেখানে যখন যে অনুষ্ঠান নেয়া হয়েছে প্রিয়জনের, উপচে পড়া উপস্থিতি ছিলো সব জায়গায়। এসমস্ত আসরের মধ্যেমণি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। তিনি তাঁর বক্তব্যে তরুণ তরুণীদের সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। ভালো মানুষ হতে বলেছেন। বলেছেন সুনাগরিক হতে।
সত্যিই তিনি আমার কথা ফেলেননি কখনও। যখন যা বলেছি তা-ই গ্রহণ করেছেন। যা লিখতে বলেছি তা-ই লিখেছেন। কত ধরনের লেখা লিখেছেন আমার আহবানে। লিখেছেন নয়া দিগন্তের সাহিত্য পাতায়। বিশেষ সংখ্যায়, বর্ষপূর্তি এবং ঈদ ম্যাগাজিনে। অসংখ্য লেখা লিখেছেন। মজার বিষয় ছিলো এতসংখ্যক লেখা লিখে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। কিন্তু পাঠাতেন শিরোনামহীন। কোনো লেখারই শিরোনাম দিতেন না তিনি। বলতেন – শিরোনাম তুমিই দিয়ে দিও।
নয়া দিগন্ত প্রকাশ পেয়েছে উনিশ বছর। এ উনিশ বছর ধরেই লিখেছেন তিনি। তাঁর এত লেখার শিরোনাম সিংহভাগই আমি দিয়েছি। ভাবতে ভালো লাগছে বেশ। অবাকও লাগছে। কি বিশ্বাস রাখতেন আমার ওপর। কি অদ্ভুত আস্থায় রেখেছেন আমাকে।
আজ তিনি নেই। চলে গেছেন পৃথিবীর আলো বাতাস থেকে। চলে গেছেন চিরদিনের দিকে। যেখানে যায় পৃথিবীর সকল মানুষ। এবং সকল মানুষই যাবে সেখানেই।
তিনি চলে গেছেন। পৃথিবীতে থেকে গেছে তাঁর সৃষ্টি। তাঁর সাহিত্য। তাঁর কবিতা। তাঁর সৃষ্টিই এখন কথা বলবে তাঁর হয়ে। তিনি যা রচনা করেছেন তা-ই তার সম্পদ। আজ এবং আগামীর মানুষদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলেই উচ্চারিত হবে তার নাম। সময়ের কাছে থেকে যাবে তার নামের স্বাক্ষর।
মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন সহজ সরল। ছিলেন জটিলতা মুক্ত। খুবই সহজ ছিলো তার কাছে পৌছানো। মনের কথা সহজে বলার উপায় ছিলো। ছোট বড় ভেদাভেদ করতেন না। গুরুত্বপূর্ণ হলে গ্রহণ করতেন অকপটে।
তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন এ উচ্চারণ ফুটতে থাকবে মানুষের মুখে। একজন চরিত্রবান মানুষ, এ উচ্চারণও ভাসতে থাকবে পৃথিবীর বাতাসে বাতাসে।