spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
প্রচ্ছদকবিতাকবিতাগুচ্ছ : গোলাম রসুল

কবিতাগুচ্ছ : গোলাম রসুল


…………
কাঠের বাক্সের ভেতরে অরণ্যের আন্দোলনের মাথার খুলি পাওয়া যায়
…………..

আমি মৃত্যুর পুত্র

ধাবমান বিশ্ব
মহান শয়তান
তোমার চালাকির থেকে অনেক দূরে আমি রেখে যাবো আমার কবিতা

কোনো মন্তব্য করবো না ঈশ্বরের আবির্ভাব নিয়ে

আমার মুখ এক দরজা
লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষের ভ্রূণ
আমার মাথা থেকে আমি প্রসব করব লক্ষ লক্ষ মানুষ
আর ভূমিষ্ঠ হবে মহাবিশ্বের শ্রেষ্ঠ নামহীন শ্রমিকেরা

নক্ষত্রের আগুনের কেঁচো
চাঁদের বৃশ্চিক
মুঠো মুঠো সোনার পিঁপড়ে
কেউ আমাকে টলাতে পারবে না যখন আমি পান করবো ইথার

সেই মানুষদের পরিচয়ের জন্য
তাদের মুখের মধ্যে ভরে দেবো সূর্য

আর আলোর প্লাবনের ভেতর দিয়ে নৌকা নিয়ে নিজের বুক লুট করতে করতে পৌঁছে যাবো এক নরকে

নরকের আগুন
আমি তোমার মধ্যে বন্দি করব পৃথিবীর জল

বলো মানুষ
তোমার সামনে
ও কার লাশ
তুমি তার শরীরে চষে গেছো নরক
এ শহর
এ গ্রাম হলো এক মহিলা
বিষুবরেখা অনুসারে
তার একহাতে চাঁদ
আরেক হাতে মহাপৃথিবীর
এমন কি আমি মেঘের মধ্যে শামুকের মালা দেখেছি
আর পর্বতগামী শামুক গুলো তার চোখের জলের মতো উজ্জ্বল

আমার পা সন্ধ্যা
মাথা ভোর
কোমোর মধ্যরাত যেখান থেকে আগুনের চেন নেমে গেছে সমুদ্রের ভেতরে
আমি দেখছি জলের মধ্যে জবাইয়ের ছুরির মুখে শুকিয়ে যাচ্ছে সাগর
ডলফিন গুলো বেরিয়ে আসছে জলের পেরেকের শিং দিয়ে

মৃত্যুর পুত্র আমি
কালো ব্যালট বাক্সের দেশের মানুষ আমি
যে কাঠের বাক্সের ভেতরে অরণ্যের আন্দোলনের মাথার খুলি পাওয়া যায়
—————————–

………..
অক্সিজেন
………..

গনগনে আগুন থেকে হাতে করে তুলে নিয়ে আমি ঈশ্বরকে ফিরিয়ে দেবো ধর্ম
তার কারখানা থেকে ইস্পাত আর লোহালককোড়গুলো সরিয়ে লাগিয়ে দিয়ে আসবো মহান গাছ
মৃত্যুর পর আমার কবরের যথেষ্ট অক্সিজেন দরকার
খণ্ড খণ্ড রোদ কীট হয়ে ঢুকবে
মৃত্যুর সৃষ্টিতে দ্রবীভূত এক স্ফটিকের ভেতরে লণ্ঠন হয়ে উঠবে
ডানার জন্মের মতো গজিয়ে উঠে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করবে পোকাদের
তারা এবং গ্রহদের আমার সেলের মধ্যে দেখা যাবে
আর যদি বিষুবরেখা হয় আমার আত্মা
ভাঙা তারার ঢেউ আছড়ে পড়বে ভোরের কোলাহলে
_______

…………….
চাঁদনী নীতিমালা
…………….

আমি বিদ্যুৎ আর বজ্রপাতের কথক
আমি বিচারের আদিম পুত্র
আমার কাঁধে এসে বসলো এক প্রজাপতি কফিন
ওটা একটা সংখ্যালঘু লাশ
মাঝরাতে ওর হৃদয় সার্চ করা হলো
ওর যকৃত থেকে বেরিয়ে এলো আকাশহীন মানচিত্র
ও মেদবহুল দখলকার ছিলো আর ভক্ষণ করত কমলালেবুর মাংস
হত্যার সময়ে ওর দেহে কোনো জমি ছিলো না
মানুষের মতো দেখতে
রক্ত মাংস শ্বেত চামড়া সব ছিলো
কিন্তু ছিলো না এক জাদুর সাদা সুতো
তাই তার হত্যার প্রতিবাদ হয়নি
দেখেনি কোনো ইস্পাতের পা ঝরনা
মেঘের ঝালর
রিরংসাঘন শহর
সারি সারি ক্যারাভানের শেষে শেষ অপেক্ষাটির মতো প্রত্যাখ্যান আর চাঁদনী নীতিমালা
সে এসেছিলো হয় অনেক ওপর থেকে কোঁকড়ানো ঘোড়ার পায়ের মতো
নয়তো এত পাতাল থেকে ঘাটে ঘাটে ছিলো কুমিরের অবরোধ
এ দুনিয়ায়
ওর নাম সংখ্যালঘু
দরবেশের ঝোলার ভেতরে ছেঁড়া জামাকাপড়ের মতো ওর স্বদেশ
দূর ট্রেনের চলমান শতাব্দী
পৃথিবীর কামানের মধ্যে ভাত রান্না করছে ইতিহাসের রমণী
তার মুখের মধ্যে খোঁড়া হচ্ছে তার কবর
আর মাথার খুলি হয়ে উঠছে দূর ধবস্ত মিলন কাতর এক মফস্বল

       -------------------------------------

…………..
বিক্ষত বিমান
……………

অবাক হয়ে বলি
এ পৃথিবী অনুমান ছাড়া কিছু না
উদিত নক্ষত্রের সাথে আমি এসেছি
মোকাবিলা করি হাজার হাজার কালো ঘোড়া
নৌকার মহাপ্লাবন
বিক্ষত বিমান
চোখের শুরু থেকে গর্ভবতী দূর
অমিতশক্তিধর এক গ্রহের চেয়ে ভারি দৃষ্টি ছুঁড়ে দিই
অবশ ইথারে
এবং গোলাপী জলে
ধাতুর চাঁদ
বিক্ষুব্ধ গঙ্গা
বিধবা সময়
অসংখ্য মানুষ পিঁপড়ের গ্রাসে
কামানের মধ্যে শিশুদের দৌড়ানো
আমি বলছি
যুদ্ধের ধোঁয়া বাতাসের বিবাহ
আমি বলছি
এটি জীবিত গোরস্থান
এবং কাঠের পুলিশের আগুনের বুননে অবিবাহিত শহর
একটা
দুটো
তিনটি
খুনের জাঁকজমকপূর্ণ তোরণ
পালকে পাথর বাঁধা গ্রাসকারী
রৌপ্য আর সীসার দেবদারু
সবুজ ইট
বিচারের হলুদ ঋতু
জেলখানার গেটের সামনে
সড়কের লাশ
স্বাধীনতা
একটি আংটিতে পুষ্প
ডলফিনের মহাকাশ
ঈশ্বরের রক্ষক
পাঠকবিহীন কবিতা
মলাটের হোমার
এরিস্টটলের রাষ্ট্র
একটি ব্যাপক বিপ্লবের মডেল
ফেড়েফেলা বৃক্ষের শ্রেণীসংগ্রাম
তুলতুলে রবারের তুফান
ডুবে যাচ্ছে পুতুলের নৌবাহিনী
সাথে বেঁধে নিয়ে
একজন সংখ্যালঘু
একজন কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা
এক ডজন ভাড়াটে পুরুষ
বিপন্ন শামুক
ঝিনুক
যেন তারাদের নাবিকেরা সন্ধান পেয়েছে এক মাস্তুলের
ফাঁপা শব্দের হিজাব
নৈঃশব্দ্যের জন্য একটি ভুরিভোজ
আমি বিক্ষত বিমান
কয়লাগুলো ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছি
পাখিরা যেমন ডানা দিয়ে উগরে দেয় উচ্ছিষ্ট আগুন

   _____________________________

…………….
সে একা মরেনি
……………..

সে একা মরেনি
মরেছি আমরা সকলেই
দেখো একটা গণকবর ভূমিষ্ঠ হচ্ছে আমাদের মাতৃভূমির গর্ভ থেকে

এত তারা সব বিমান বন্দর ভেদ করে
ফিরেছে ঘরে
ফিরেনি সে একা

ঘরের চাবি
পাসপোর্ট
বিবর্ণ চিত্রমালা হাড়ের সাথে হয়েছে ভস্ম
সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে একটি গণকবরে

পোষা শহর
বৃহৎপুষ্প
তার মৃত্যুর মতো

ঘরের মধ্যে ছায়া পড়েছে বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের একাকিত্ব জুড়ে
————————

আরও পড়তে পারেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ