প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : টোকন ঠাকুর

গুচ্ছ কবিতা : টোকন ঠাকুর

বসন্তের কবিতা

হাওয়া ধার্মিক, তার কর্তব্য ধাওয়া।
লক্ষণীয়, সম্পর্ক এসে সম্পর্কের চলে যাওয়া
পথের শেষে সূর্যাস্ত একটি ছবি, একটা ফ্রেম
একটু একটু করে জড়িয়ে যাওয়া লোভনীয় প্রবলেম
আমাদের অভিনিবেশ দাবি করে, দেখি খা খা
একটা মাঠের মধ্যে রোদমাখা ঢিলিমিলি আঁকা
এক জ্যান্ত দুপুর, জ্যান্ত ঘূর্ণি, এক জ্যান্ত স্বপ্ন, তখন
টবেই ফুলের বাগান, ছাদে, শ্রী শ্রী ছাদই শ্রী বৃন্দাবন

ধেনু বিনে নদীহীনে, বসন্তের এ দিনে রাধারানীরা
কোথায় গো সব, দ্যাখো আমি কবিতা লিখছি, কবিতাগুলো
রাত্রিবেলার বুকের নিচে বালিশ চাপা তুলো মানে শিমুল ফুলও
তার জীবনের গল্প নিয়ে গল্প হয়ে ওঠার আশায়
আমার কাছে আসে কিন্তু প্রকাশিত হয় কবির ভাষায়

এটাই ব্যর্থতা। আর ব্যর্থকে ভালোবাসারা ভালোবাসা দিতে
পারে না বলেই ছেলেটি থাকে উত্তরায়, মেয়েটি শ্যামলীতে।

অস্থি-করোটি

পরবর্তী কাঠ অথবা কবিতা
উৎপাদনে রেখে যাচ্ছি
আমার শরীর
মন তো পাখির মতো
কবে, কোথায় উড়ে গেছে
কি আর যায় আসে পৃথিবীর

পরবর্তী ছন্দ অথবা স্বপ্নে
ব্যবহৃত হবার আকাঙ্খায়
এই মুহূর্তে প্রজ্জ্বলিত
আমার অস্থি
করোটি

হাহাকার আকার পাচ্ছে

আমি তো দাঁড়িয়ে আছি

দাঁড়িয়ে আছে দুপুর

দুপুর দাপট দেখাচ্ছে

মুহূর্ত মাথা ঘামাচ্ছে

একটা পাখি ‘মিস ইউ মিস ইউ’ সুরে
লোকগান গাচ্ছে

কথারা কেবল বুকের মধ্যে কুঁকড়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে

কবিতার নাম হাহাকার আকার পাচ্ছে

সম্পর্কের ঘ্রাণ

কোথাও রান্না হচ্ছে, হাওয়ায়
ঘ্রাণ আমাকে বলে দিচ্ছে
মুরগি, না ইলিশ মাছ ভাজি হচ্ছে এখন?

আমি জানি না, কে এখন রাঁধুনি সেই হেঁসেলে?
চুলার আগুনে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিক চিক করছে কীনা!

কিছুই জানি না, চিনি না তাকে
শুধু কেউ ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছে হাওয়ায়
হাওয়া আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছে আগেই

সম্পর্কটা, আরেকটি রান্না, আরেকটি ঘ্রাণ
চোখের সামনে না থাকলেও
ঘ্রাণ পাওয়া যায়

টের পাচ্ছি
ইলিশ, না কেউ মন ভাজি করছে এখন!

মেঘ গুড়গুড়

আয় বৃষ্টি আয়
আয় বৃষ্টি আয়
আয় বৃষ্টি ও বৃষ্টি
তুই তো আমার ভাই
উঠোন জুড়ে এত রক্ত
উঠোন ধুয়ে যা

উঠোন ধুয়ে যা
তুই আসন ধুয়ে যা
রক্ত লেগে আছে বৃষ্টি
তুই রক্ত ধুয়ে যা

মেঘ গুঞ্জরণ
এদেশ ধর্ষিতা যখন
আয় বৃষ্টি ও বৃষ্টি
তুই তো আমার বোন
বৃষ্টি তুই মা অথবা বোন
তুই আমাদের
কালিমা ধুয়ে যা

নানান কোম্পানির দাস
আমাদের খুব খারাপ অভ্যাস
মানুষের অভ্যাসই স্বভাব
আমাদের স্বভাবই খারাপ
আমাদের শরীর ভরা পাপ

আয় বৃষ্টি ভাই বৃষ্টি
বোন বৃষ্টি মা বৃষ্টি
বৃষ্টি তুই দয়া করে
আমাদের মন-পাপ ধুয়ে যা

আরও পড়তে পারেন

4 COMMENTS

  1. কবিতা, গান প্রভৃতির সার্থকতার প্রথম শর্ত ভালো লাগার মতো কিছু থাকা সেসবের মধ্যে। টোকন ঠাকুরের কবিতা বরাবরই ভালো লাগার ঐশ্বর্যে সচ্ছল। আরেকটি বিষয় হচ্ছে: কবিতা লেখার সময় তিনি একখানা বেপরোয়া মন নিয়ে লেখেন। তার সেই মনটি সর্বভৌম শিল্পীর মন। তার কাব্যভাবনা তাই স্বাধীন ও সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। এখানে তার ৫টি কবিতা আছে। পড়লাম। আমার ভালো লাগলো। উল্লিখিত ইতিবাচক কারণগুলো আমার ভালো লাগার পেছনে কাজ করেছে।

  2. সব কবিতার মধ্যেই কবির অভিজ্ঞতা আর কথন ভঙ্গির একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সময় সমাজ মানুষ এবং ব্যক্তিক চেতনার একটা পর্যায় থেকেই কবির পর্যবেক্ষণ। তবু বাস্তব ক্ষেত্রে এগুলির প্রয়োগ ও ভাবনা পাঠককেও ভাবাবে। কবি যখন লেখেন:
    “এটাই ব্যর্থতা। আর ব্যর্থকে ভালোবাসারা ভালোবাসা দিতে
    পারে না বলেই ছেলেটি থাকে উত্তরায়, মেয়েটি শ্যামলীতে।”
    তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা নিজেদের ছবি দেখতে পাই।

  3. কবিতা প্রাঙ্গনে পরিচিত নাম ঠোকন ঠাকুর।তার কবিতা পাঠক মন জয় করার ক্ষমতা রাখে।কবিতার বক্তব্য, শব্দের গাঁথুনি সাবলীল।বাংলা রিভিউতে প্রচারিত সবগুলো কবিতাই ভালো লেগেছে।কবির জন্য শুভকামনা। সম্পাদককেও ধন্যবাদ।

  4. টোকন ভালো লেখে কবিতা। এটা আমরা তার সমসাময়িক, তারা জানেন। কিন্তু ভালো বলতে আমি কী বোঝাই? আমার মনে ভালো বলে শব্দটি গাঁথা আছে, সেই আলো দিয়েই তো তাকে ভালো বলি। স্বাধীনতাউত্তর কালে আমরা এসেছি কবিতার রক্তাক্ত জনপদে। টোকনরা দুই ধাপ পরে এসেছে। কিন্তু সময়ের যে স্রোত তা তা একটিই। সেই সময়ের ধারাস্রোতই বইছে আজো। টোকন সেই বহমান রক্তস্নানে সয়লাব হওয়া জীবনের উপাদানেই কবিতার পঙক্তিগুলো লিখেছে। আর সেই পঙক্তির ভেতরে প্রাকৃতিক জল, বৃষ্টির সঙ্গে নিজেকে ভাই বোন, মা ও মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি করে নিয়েছে। তার কথনভাব ও ভঙ্গি আকর্ষক। প্রচলিত শব্দই সে ব্যবহার করেছে, কিন্তু তার ব্যবহার গুণে বলা উচিত ভঙ্গিতে তার দশকের অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। এই ভিন্নতাই তো কবিতার স্বাদ তৈরি করে। কবিতাগুলো সামুদ্রিক ইলিশের নাকি পদ্মার ইলিশের, সে বিচার তো পাঠকের। পাঠককেও প্রস্তুতি নিয়েই কবিতার সাম্রাজ্যে ঢুকতে হয়, না হলে সে সবই নিরেট ও বিস্বাদই মনে হতে পারে। টোকনের কবিতা স্বাদু কারণ তা মিষ্টি পানির স্বাদু কবিতা। নুন ও ঝাল সেখানে আছে, তবে তা অনেকটাই অ্যালিগরিক্যাল, রূপকার্থে আমরা নিতে পারি সমকালীন রাজনীতির সঙ্গে মেলাতে পারি, মেলাতে পারি সাংস্কৃতিক ব্যভিচারের সঙ্গে বিপদাপন্ন অবস্থা সৃজন করে চলেছে। টোকন সেই সব রক্ত ও আর রক্তের হোলি মুছে দিতে বৃষ্টিকে ডাকছে। কারণ বৃষ্টিই কেবল প্রাকৃতিক শুশ্রুষা আর আমাদের নোংরা মুছে দেবার এক অনন্য সম্পদ। বৃষ্টিকে আমি মনে করি, জমিনের বন্ধু, তার প্রাকৃতিক প্রণয়েই সৃষ্টি হয় ফসল আর জমির উর্বরতার পুরুষ সে, আমাদের খাদ্যের উদ্গাতা।
    টোকনের কবিতাগুলো ভালো রেগেছে। আর তাঁকে সে বলাতে অনেকে আমাকে গালমন্দ করতে পারেন, অনুজকে এভাবেই ডাকতে শিখেছি আমরা। সে দায় সংস্কৃতির।
    কবিতা লেখা আর বোঝার কবির দারুণ খরাকাল এখন, এই খরা কাটাতে হলে আমাদের এমন মোড়ে দাঁড়াতে হবে যা কবির চিন্তার ভাবনার কপাট উন্মুক্ত করে দেবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা