প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম

গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম

১.আনন্দরা হেঁটে যায়…

আনন্দরা হেঁটে যায় দিয়াবাড়ি রোডে
যুগলে যুগল মিলে কাশবন ছোঁয়
আনন্দরা রমনা পার্কে ঘোরে
রাজু ভাস্কর্য সিঁড়ির কাছে
কফি কাপে তুলে তারা ধোঁয়ার তুফান

আনন্দরা সিঁদেল চোরের মতো
ব্যস্ততার ফাঁক গলে আলগোছে ছুটে যায় সমুদ্র সিনানে ।

জীবন বৈচিত্র্যময়
কারো ভোর সন্ধ্যা হয় বিমর্ষ রেলিং ধরে।
এক টুকরো সময় বুকপকেটে ভরে কেউ পাখির উড়াল মারে কাপ্তাই লেকে।

মনের বৈভবে পূর্ণ যে লোক
ঈগল ডানার দিকে চেয়ে থাকে না সে

ঘাসফুল, ফড়িঙের পাখা, দোয়েলের গান, সোনালী ধানের শীষ তারা ভালোবাসে।

আনন্দরা কৃত্রিম ফোয়ারা ছেড়ে–
সানন্দে যাপন করে শাদা শাদা বৃষ্টির ফোঁটা….

মূলত তখন ব্যাকরণ অচল
গোমড়া মুখে সিগারেট ফুঁকে জনৈক প্রফেসর
কবির কলম তখনও তুমুল সচল।

আনন্দরা ডিগবাজি খায় লাল নীল ফড়িঙ ডানায়….

২. টুপিবৃন্দ

টুপিরা তখন তুমুল তর্কে লিপ্ত।

কালো টুপি–
সেতো বিভ্রান্ত মতের মাথার উপর বসা!
লাল টুপি–
আমাদের বিশ্বাসের ধারে কাছেও নাই।

গোল টুপি–
সে কেবল লেবাস লেবাস!

কিস্তি টুপি–
ধুর! তাকে টুপি বলাই অপরাধ।

হলুদ টুপি–
কোন রেওয়াতই বরাদ্দ নাই তার জন্য।

বন্দুক,পিস্তল,রাইফেলেরা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
নিশানা তাক করে বসে আছে পৃথিবীর মানচিত্রের রেখায় রেখায়।
টুপি দেখলেই নিশানা সই করে নেমে পড়বে আদিম উল্লাসে।

টুপিরা দলে উপদলে বিভক্ত
সমানে খারিজ করছে একে অপরকে।

লম্বা টুপি–
আসহাফে শয়তান

পাঁচকল্লি–
তার নাম মুখে নেওয়া গোনাহ

ধুসর যে টুপি–
তারতো সমস্তই নেফাক!

একটা টুপি– শিকারীর ফাঁদে আটকে গেছে।

রক্তাক্ত দোয়েলের মতো কাতরায় অন্য একটি টুপি।

আগুনের পুত্ররা ঝাঁঝরা করেছে একটি টুপি।
একটি টুপি হৃদয়ের সমস্ত রক্ত ঢেলে আহত শাদা কবুতরের মতো তড়পায়।

স্টুপিড টুপিদের থামেনি তখনও স্টুপিডিটি।

এন্টি টুপিরা দারুণভাবে ঐক্যবদ্ধ।
নিশানা সই হলে মাস্তি মওজে
বারুদখানাকে করে উল্লাসের বাইজিবাড়ি।

৩. সারে গামা বা পা দা নি সা

কুয়াশার মাঙ্কিক্যাপ পড়ে
সামনে এসে দাঁড়ায় দিন
রাজনীতির রহস্য পুরুষের মতো
বিভ্রান্ত আচরণ তার।

রাতের শেষ প্রহর বলে মনে হয়
তখন সকাল বা দুপুরকেও।

শীত হল একটা ক্ষমতাসীন ঋতু
কৌশলে খল রাজনীতিবিদকে ডেকে এনে তার পাশে
তারা শীত কাতুরে মানুষদের
ঈশ্বর বনে যায়।

শীত ও কুয়াশার পরকিয়া হলে
কেন্দ্রে যাওয়ার পথেই বিভ্রান্ত হয় ভোটার।
কুয়াশার পর্দা ছিঁড়ে গিয়ে তারা
যে বাটনেই চাপ দেয়
শুনতে পায় এক নাম কীর্তন
সারে গামা বা পা দা নি সা।

পৌষ মাসে সর্বনাশ হওয়ার
এক আজব মেশিন।
বর্ণিল বাটন, সব বাটনে সুর তোলা
সারে গামা বা পা দা নি সা।

৪. তার নাম তুমি আর আমি

যুবতী স্তনের মতো সুখ দুঃখ
পাশাপাশি ঠাসাঠাসি খাড়া থাকে
জীবনের দেহে আজীবন।
তারপর জীবনের ঝর্না বেয়ে নেমে আসে নদী।
নদীর নাম জয়
নদীর নাম পরাজয়।
নদী বাঁক নেয়।
নাম নেয় সফলতা।
নাম নেয় ব্যর্থতা।
তারপর একদিন সব নদী
মৃত্যুর পথ ধরে গোরস্থানের মোহনায় এসে মিলিত হয় চির নীরবতায়।
তার নাম জীবন
তার নাম তুমি আর আমি।

৫. চিহ্নহীন নিশ্চিহ্ন বৃক্ষের ইতিহাস

এইখানে এক বৃক্ষ ছিল
বিশাল বিস্তার ছিল শাখা প্রশাখায়।
পড়শির আশকারা পেয়ে মেলে
দিয়েছিল সে তার অহংকারী ডানা।

তার পাশেই চুপচাপ সয়েছিল সবকিছু নিরীহ উঠোন।
বৃক্ষ অবিরাম খুন করে উঠোনের তরতাজা রোদ।
ধৈর্য্যে ধৈর্য্যে তার বুকে শেওলারা বড় হতে থাকে।
খুনি বৃক্ষ অনুশোচনাহীন!
একদিন করাতের সাথে দ্বন্দ্ব লাগার পর
ইতিহাসের বাঁক ঘুরে যায়।
জালিম বৃক্ষ বরণ করে নির্মম পরিণতি।

এইখানে এখন উঠোন আছে
বৃক্ষের কোন অস্তিত্বই নাই।
এখন কেউ তার নিশানাও পায় না খুঁজে।
চিহ্ন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মাটি খুঁড়ে জানতে পারে
এইখানে একদা এক রোদখুনি বৃক্ষ ছিল।
এখন তার কোন চিহ্নও নাই।
অথচ উঠোনে নাচে আলতা রাঙা পায়ের নুপুর
পায়ে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে সোনালী ধানের দেহ
জৈষ্ঠ রোদে শুকোতে তারা চিত হয়ে শোয়।

সূর্য হাসতে হাসতে উঠোনের বুকের উপর দিয়ে পশ্চিমে যায়।
উঠোনে ভেসে বেড়ায়

শিশুতোষ গান আর রমণী গলায় গায় বিয়ে গীত
“সেইনা আগিনায় নাচিতে নাচিতে
শাড়ি গেইল্ মোর ছিড়িয়া রে রসিয়া” …….

আরও পড়তে পারেন

6 COMMENTS

  1. দারুণ লেগেছে কবি তাজ ভাইয়ের লেখা। অভিনন্দন!

  2. কবিতা গুলোর আবেদন ও ভাষা ভিন্ন স্বাদের। খুব ভালো লাগল পড়ে। অভিনন্দন কবি ও সম্পাদক কে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা