প্রগতি সরণি
ধানের দেশে, যেখানে চাঁদ সূর্যের খবর নিয়ে আসে
অল্প পানিতে, ধান গাছের ভিতর দিয়ে
জোড়ায়-জোড়ায় মাছ ভাসে
জোড়াশালিক দেখে যাত্রা শুরু করে সে
চলে যায় তার মনপাখি সম্পত্তিসংক্রান্ত বংশগতির হিসাবে
জোড়াশালিকের এই বেদনা—
কেন তাদের দুনিয়ায় আর কেউ নাই–
যারা যারা তাদের দেখে নিয়েছে এই বোধ
একা-একা কেন হারাল তারা
জোড়াশালিক দেখে যাত্রা শুরু করেছিল যারা
একা-একা, একা-একা
তারা একা-একা শালিকজোড়া-ছাড়া
নৌকা ভেঙে পথের যাত্রা শুরু
তার পরে সমুদ্রে ভাসা— জাহাজ ধরা
তারা একা-একা শালিক জোড়া-ছাড়া ।
বোরকা পইরা
কালো-কালো রক্তের ছোপ-ছোপ দাগ পার হ’য়ে
দুইটা লাশের পাশ দিয়ে
বোরকা পইরা আগায়া যাই আমি
দিনের বেলার রোদ্রতে রাত নেমে আসে
রোদ্রগলা আকাশের নীচে গ’লে-গ’লে যায় ত্বক্
রাতের ভিতরে কিচকিচ শব্দ তোলে রাত্রিপোকা
জুনিপোকা জ্বলে আর নেভে রে বাংলামোটরে
বোরকা গায়ে দিয়ে রাইস-মিলের পাশে
প্রমত্তা নদীখানা বয়ে বয়ে গেল
ভেঙে-ভেঙে দিয়ে মাটির মায়া রে
অবশেষে
মালনি রোডে মিস্তরি খুঁজতে গেছিলাম
দেশে কেন এখন মিস্তরির এত সংকট!
একজনরেও পাইলাম না তাই,
তাই আমি নিজেই হাতুড়ি লোহা নিয়া
কাঠগুলাকে পিটাইতে লাগলাম
হাতুড়ির শব্দে শব্দে দোলাইতে লাগলাম মাথা
নাকমুখ লাল হ’য়ে গেল, ঘামায়া গেলাম প্রচুর
লোহার সাথে লোহার ঘষায় ছিটকে উঠল স্ফুলিঙ্গ
আর কাঠে আগুন লাইগা যাবে কিনা ভাবতে-ভাবতে,
ভাবতে-ভাবতেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে,
আমি বড় হইয়া একদিন কাঠমিস্তরিই হব
ও আমি কাঠ পেটাব
শক্ত শক্ত হাতে
শক্ত শক্ত ভাবে
কাঠগুলাকে জোড়া লাগায়া দেব
অসীম
ভালবাসতে-বাসতে তোমাকে আমি শূন্য ক’রে দিব
শূন্যে-শূন্যে কোটি-কোটি শূন্যের জন্মদানে
একটিমাত্র এক বামপাশে বসিয়ে দিব
কিন্তু তখন কি আমি আর থাকব—
কোনো ভগ্নাংশের কোনো শূন্যে অথবা এক-এ?
নারিকেল জিঞ্জিরা
আমি যদি বেরিয়ে পড়ি পথে-প্রান্তরে
ছড়াইয়া যাই যদি পাহাড়ে পাহাড়ে
যদি আমি অটল ঊর্দ্ধভেদি
যদি আমি বুকের রক্ত ঢালি
মিয়ানমারের পাহাড়ের ওপাশের
রোহিঙ্গা-রক্ত লাল আকাশে
শরীরে নাফ নদীর হাওয়ার অযুতে
সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে
আদায় করি যদি মাগরিবের নামাজ।
সর্বোচ্চ চূড়া থেকে একবার নেমে
পৃথিবীর নির্লিপ্ত কেন্দ্রবিন্দু থেকে একবার ভূমিতে এসে
তুমি কি কবুল করবা সেই প্রার্থনা?
একবারও কি বুঝবা তুমি এই ছড়াইয়া যাওয়ার বেদনা?
টান
কে তুমি হে মুক্তাবাদী ঝিনুক
সমুদ্রতটে শ্যাওলা-সবুজ কচ্ছপ
বিরান মরুতে জলজ উদ্ভিদ-ঘ্রাণ!
মুক্তির ট্রেনে চেপে অচেনা স্টেশন।
কে তুমি নাভিতে লাগানো নল
আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো সংসারী রশি?
ঘুমন্ত তুমিই যে সত্য তুমি,
দেহের ভিতর মনের ঘরে আত্মার আলোতে,
অদৃশ্য কালিতে—
স্বপ্নে লিখিত অসুরের মৃত্যু পরোয়ানা।
তোমার ভিতরে যতখানি আছি—
ততখানিই, বাকি সব কল্পনা
রওশন আরা মুক্তার কবিতাগুলেঅ পড়লাম। তার কাব্যবোধ গভীর। ভাষার ওপর দখল আছে। কবিতাগুলো সুন্দর। তার কবিতা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে সামনের দিনগুলোতে, এমনটাই আমার বিশ্বাস।