প্রচ্ছদকবিতাগুচ্ছ কবিতা : মাহবুব হাসান

গুচ্ছ কবিতা : মাহবুব হাসান

মাহবুব হাসান

পৃথিবীর ঈশ্বর

তোমার বিস্ফারিত চোখের তারার মতো ভোর

আমাকে বসালো নয়নতারায়!

ভোর শেষ হলে দিগন্ত উন্মোচন করো তুমি

তুমি কে হে?

কখনো দেখিনি। 

রোদের দরোজা খুলে যে আসে নিপুন কারিগর!

তোমার শস্যময় সময়

আমাকে উগড়ে দেয় রাজনৈতিক বিস্ফোরণে

তুমি কি সেই লেলিহান শিখায় বসে আছো?

তুমি বসে আছো অবিনশ্বর ঢঙে

রঙে-চঙে পৃথিবীর অধিশ্বর!

আমি নীল নয়ন জ্বেলে নশ্বর পৃথিবীর তারা খুঁজে নেবো।

রাষ্ট্র 

রাষ্ট্র একটি ভূঁইফোড় যন্ত্রাংশ

তার কোনো হৃদযন্ত্র নেই,

প্রকৃতিগতভাবে সে হৃদয়হীন বদ্ধ মাতাল

এবং চাতাল ছাড়া দেবোত্তর ভূমির মতো,

সবাই মালিক তার,    

বোকা জনগণ!! 

সবাই ভাবেন মধ্যরাতের নাগর তারা;

আমপারা পড়া মৌ-লোভীরা তা দেয় গোঁফে,

তার চিন্তার মহৌষধ ক্ষমতার দড়িদড়া,

নিপাট-নিরাভরণ;

এই কমপোনেন্টটি অর্জন করেছে সে হৃদয়হীন রাত থেকে,

রাত হচ্ছে ছিলান-স্বভাব ষড়যন্ত্রকারী

লক্ষ্মৌর বাইজির ঘুঙুর,

সঙ্গীতের জোৎস্নায় শুয়ে থাকা অবুঝ হার্ট,

ধুকপোক ধুকধুক শব্দের আঁধার থেকে

সরবরাহ করে ক্ষমতার মসনদের স্বপ্ন।

তবে সে নদী নয় বহমান, 

বেদেনির সুডৌল পাছার নর্তন-কুর্দনজাত

লাস্যের নিরাকৃতির ঢেউ—-

খেলোয়াড়!

রোজ সকালে জাতির চেতনায় তাই বিক্রি করে

রাষ্ট্র!

খেদোক্তি

ইতিহাসের পাতাগুলো বড্ডবেশি খর্খরে,

বাংলা কখনো এমন আর্দ্রতাহীন ছিলো না, 

ঘূর্ণি ছিলো না লো- হাওয়ার,

রোদে পোড়া ছিলো না জনজীবন!

আশ্চর্য হওয়ার মতন কোনো মানবিক চেতনার বৃক্ষ

জন্মায়নি এ-দেশের লোকজ সত্তায়——

কেবল অভিনব চিন্তার কিছু সবুজ পত্রশোভিত গাছ

আমরা দেখে আসছি সুপ্রাচীনকাল থেকে। 

এর বাইরে আমাদের কোনো খেদোক্তি নেই।

নোট

মৃত্যু এক রাজনৈতিক সমন

আমরা

তার

ভয়ে

ক্লান্ত!

প্রভু হে আমার

দোজখের আগুনের ঠান্ডা হওয়ায় কেন

ভাসাও তোমার জান্নাতি সৌরভ!

মানুষ সে

সৌরভের

অন্তর

নির্মাণ

করে

তোমার গুণ গাইছে!

রায়

হৃদয় গুড়িয়ে দেবার মতো ভাবনাগুলো

রোদ পিঠে নিয়ে বাতাসের কার্পেটে চড়ে তক্কে তক্কে ঘুরছে,

তুমি দেখতে পাও না তাকে,

সে থাকে তোমার কোমল হৃদয়ে,

যেন সে করোনা ভাইরাস!

আমি দেখতে পাই, 

কারণ আমার রেটিনার ছাদে কল্পনার বাস!

খুবই নাজুক তার ভালোবাসা

তবে তুমি যদি বিশ্বাস করো

তোমার জলজ শ্যাওলায় ছাওয়া হৃদপিন্ড আমি ভেঙেছি

তাহলে সুপ্রিম কোর্টের আশ্রয় নিতে পারো।

আমার কোনো ভাবনা নেই আর!

হৃদয় গুড়িয়ে দেবার জন্যই আইনি খামগুলো নির্মিত হয়

যুগে যুগে;

রায় তোমার পক্ষে গেলেও

ভাঙা হৃদয় কখনো জোড়া লাগে না যে!

সফেদার ভোর

সফেদার মতো হালকা সুগন্ধী ভোর

আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো 

কূলকিনারাহীন মহাকাশে অচেনা নীলের  সাগরে

তুমি সেখানে আছো হে রাহমান?

তোমার নির্ভার দিগন্তের কোণাকানছি থেকে

ভেসে আসছে আজান, লাবন্যে মাখা ধ্বনিগুচ্ছ

আহ্বানের এমন সুর হতে পারে, তা কি জানতাম আমি?

আমি জায়নামাজের মখমলে দাঁড়িয়ে সুস্থির—-

বললাম তুমি শ্রেষ্ঠ !

আমার আর কোনো প্রভু নেই।

তখনও ভোর তার আলোর দিগন্তে মেলে দেয়নি 

মানুষের কোলাহলময় সকাল।

কাজে যাবার জন্য যারা চৌকি থেকে উঠে গেছে 

উঠোনের ভেজা সোঁদা গন্ধে ডোবা সকাল আমাকে যেন

চাদরের মতো মেলে দিয়েছে সপ্তম আকাশের আকশিতে,

আমি হতবাক এক বর্ণাক্ষরের শ্রমজীবী 

চেতনার নালা-নর্দমা সাফ করে

আজ কী ক্লান্ত? কে জান?

কোরবান

নিজেকেই কোরবান করে দিতে মন চায়

কিন্তু কোথায় সেই তৃষ্ণার্ত মরুভূমি?

ছায়া নিয়ে ঘুরি মনের গহনে চমকায়

সুতানলী সাপের মতো নিঃশব্দে তুমি

এসে দাঁড়াও প্রভু হে

এপ্রিল কি জুনের মধ্যাহ্ণ ব্যুহে

কোরবানির ষাঁড়ের মতো তরতাজা 

গরমিদিন হেসেখেলে যায়!

আমি অধীর সময় ধরে রোজ একবার ভাবি

কোরবানির গরুর চামড়ার মতো প্রায় মূল্যহীন আমি, 

তোমারই সাম্রাজ্যে প্রভু!

এ কি মানায় তোমাকে? যাকে সেজদায় ডাকি 

পারতপক্ষে দিই না ফাঁকি 

ভুল-চুকে ভরা আমাদের এই পুষ্পময় ধরা 

সাজানো গোছানো, সেই ইতিহাস কি আমাকে ফাঁকি 

দিয়ে নিয়ে গেছে! লজ্জাহীন হয়ে পড়েছি স্বয়ংম্ভরা

এই পৃথিবীর আনায়-কানায়, সঙ্গীতের অন্তরা

এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে বাংলা প্রান্তরে?

কোরবানী হতে মন চায়।

এইবার ঈদে মনকে কোরবান দিয়ে 

ফিরে আসতে পারবো কি ঘরে? আমার মনের প্রান্তরে?

মৃত্যুর পর

স্বজনেরা

শোকাতুর স্বজনেরা আমাকে একটি আয়তক্ষেত্র কবরে

নামিয়ে রেখে আল্লাহর নাম জপ করতে করতে ফিরে গেছে।

তারা ফিরেছে বাড়িতে 

আর আমি অনন্ত অসীম নির্জনতার ভেতরে

সুনীল অন্ধকারে জলপাই সুগন্ধিতে ভাসতে থাকলাম 

এক টুকরো খড়ের মতো পলকা বাতাসে;

সেখানে বাতাস ছিলো 

কিংবা বর্ণহীন কোনো কিছু আমার ইচ্ছার রঙে রাঙানো;

সুনীল আকাশ আমাকে টানছে

যেন সুপারসনিক কোনো পাওয়ার; 

হতে পারে ব্লাকহোল,

আমি কারো সুরত দেখিনি, বিন্দু পরিমান আলোও,

তবুও জলপাইয়ের গন্ধে ভরে ছিলো সেই নির্জন মহাকাল।

আমার অন্তরে আহ্বান পাচ্ছি অদৃশ্য থেকে, 

কিন্তু কোনো শব্দ নেই; 

নামাজিদের পদশব্দ পাচ্ছি না, হাতের গন্ধও—-

এমন এক জগতে এসে পৌঁছেছি যে 

কোনো মানুষ নেই সেখানে।

আমার ধারণা ছিলো যে কবরের

অন্ধকার আমাকে গ্রাস করবার আগেই

আমি আলোর দিগন্তের 

দুয়ার খুলে দিতে পারবো।

তার জন্য কিছু আমল জারি রেখেছিলাম! 

আগে থেকে,

আল্লাহর পবিত্রতম নামসমূহ আর বরকতময় ঐশ্বর্যের,

কিন্তু তার কোনো রূপ চোখ ধাঁধালো না,

এমন কি কবরের আজাবের ভয়ে আল্লাহর গুণকীর্তন 

করাই ছিলো আমার ইহলোকের অন্যতম কাজ!

তারও কোনো ছায়া তো দেখতে পাচ্ছি না আমি কোথাও!

আকাশে কোনো বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে না, কোনো মেঘ নেই

বৃষ্টি ফোটারও ধ্বনি আমার বধির কানের তালা খুলে দিয়ে

আল্লারাখা খাঁর তবলার ধ্বনি উঠছে না,

হিমালয়ের কোনো গম্বুজ নেই মেঘের সাম্রাজ্যে

দস্যুর বেশে তেড়ে আসা বর্ষার শমশমে আওয়াজও 

চমকালো না আমার দেহ,

আহা! কি মধুর প্রণোদনা ছিলো সেই দেহে, 

ভরা বর্ষার মতো ধেয়ে আসা লোভ,

তার কিছুই তো নেই এই কায়াহীন দিগন্তে!

এখন ভরা বর্ষার কাল

নাও চলছে নদনদী খালবিল আর

হাওরের কোনাকানছিতে। পুবালী

বাতাসের শো শো শব্দ নেই;

ধানের গন্ধ-ঘেষা রোদের দেখা নেই,

গেরস্থ বউয়ের খাডুর শব্দ নেই কেন 

উঠোনে শুকুতে দেয়া ধান নাড়ার?

তাহলে কি সত্যই আমি 

লালসাময় পৃথিবীর কষা থেকে এক টুকরো

অলৌকিক প্রাণ

পারলৌকিক জীবনের বিস্ময়কর

মন্ত্রণার সঙ্গী হয়ে গেছি!

কিছু মৃত কবি

একটি মিছিল ঝলসে উঠছে শান্তিনগরের

অশান্ত মোড়ে, ঝিলিক মারা রোদে

দেখা গেলো প্ল্যাকার্ডে তাদের উৎপাদিত ফসলের রুশনাই!

কালো কাকের ছায়ার মতো কর্কশ কিছু পঙক্তির 

রূপালি কণ্ঠস্বর আওয়াজ তুললো।

আর সঙ্গে সঙ্গে  লোকনৃত্যের ব্যজ্ঞনা বানালো 

রানওয়ের নিখিল।

তারপর উড়ে গেলো তারা উত্তর বাংলায়!

নাগরিক মানুষ বিস্মিত হলো! দেখে

এআই যুগে এই জাদুবাস্তব শিল্পের কাজ

যেন প্রথম আকাশের দরোজা খুলে 

দিলেন নিরাকার আমার!

কতিপয় বাচাল কৈতরের পাখনার ফইড় দিয়ে

কানের খৈল খুঁড়ে বানালো ওয়াকথু’র পাহাড়, 

জমে গেলচৌদিক!  স্থবির রাজপথ  একা——

গাড়ির বহরে ডিগবাজি খাচ্ছে যানজটের ঢেউ

নাকাল মহানগর, 

ঢাকার যানগুলো গর্জাতে গর্জাতে চৌদ্দগুষ্টি 

উদ্ধার করতে  থাকলো নগর নায়কের,

সরকার খিড়কি খুলে দেখলে কালো মেঘের ঢেউয়ের

 মাথায় মানুষ হাপাচ্ছে!

বাতাস হাসালো প্রাণখুলে যেন তাদের মৌতাতে

ভরে গেছে চারদিক।

তারা নেমে পড়লো স্বপ্ন থেকে কিশোরীর থুকনা-খাওয়া

অভিমানের সাগর জলে—-

এদিকে চরাপড়া নদীর তলদেশে

 তিরতিরে পানির ধারা গান ধরেছে শ্যামল বাংলার।

বালি আর পানির সেই মজে যাওয়া

প্রকৃতির মতোই মৃতদের মিছিল,

শব্দের বাজিকর তা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসের কানে কানে

তাদের শস্যময় ভবিষ্যতের পতাকা

 নিয়ে যাচ্ছে কে বা কারা

এক অচেনা অপরূপ মহালে।

তার নিচে আমাদের বাউলজানি খালের বিশাল দ।

মৃত্যুগন্ধ

ঘুম নামে অবিরল

নুয়ে পড়া বৃদ্ধের দুচোখে, যেন এক কালঘুম! 

ভোরের নামাজে মৃত্যুগন্ধা আতরের সুবাস

কে যে মেখে এসেছে শেষরাতে মসজিদে

কে জানে! কেবল 

আমার নাসারন্ধ্র পায় সেই ঘ্রাণ 

অতর্কিত চিতার মতো ঝাপায় আমার অন্তরে—

তুমি কী পাও হে টের আমার নামাজি প্রতিবেশী?

আদরের সুগন্ধে ভরপুর সুবে সাদিক

অথচ একটি আতরমাখা সুগন্ধী জীবন কি

আমাকেই টার্গেট করেছে?

কে জানে! কে জানে!

এই জিজ্ঞাসা নিয়ে বেরিয়ে আসি

ধূসর জ্যোৎস্নার মতো জনপদে;

যেন ঘনঘোর স্বপ্নের ভেতরে এ-জীবন।

আমি অন্ধ কালা

নিবিড়-বন্য আর জানোয়ার-ঠাসা অন্ধ-কালা আমি 

হতে চাই বর্বর ইসরাইলির  মোসাহেব

এই চাওয়ায় কোনো খাদ নেই—- জানেন অন্তর্যামী!

কে কাকে সন্ত্রাসী বলে আজ—-

খুনী বলে কে কাকে ? বলে জানোয়ার, সংসদে সংসদে

চাঁদের রূপক হেসে ওঠে মৌন জ্যোৎস্নার তলে ,

যেন তারায় মোহনার জলাধার বধে মানবতা!

কে কাকে সাজায় অপরাধী আজ

সমাজ সংসারে? কেন শেখ সাদী 

প্রতিবাদী পোশাকের আড়ালে ঢেকে নিয়ে গিয়েছিলো

তাঁর শানিত বিবেক! 

তাই কি রেফ, নোক্তা আর জজমের সুগন্ধী শুকে

বিবেক বধির আজ? 

কালা তাঁর কর্ণগুহা

আর নিঃসঙ্গতাই তাঁর পরম প্রিয় পরিধান! 

কেন না তিনি  খুব সস্তায় বিক্রি হয়ে গেছেন ক্রোধ আর

এরিনিজ প্রতাপের কাছে!

 তিনি খুব সস্তা-ঘোলা জলে নেমেছেন 

ক্ষমতার গান্ধা নর্দমায়!

ধাবমান জনতার আস্তিনের ভাঁজে তো আমিও 

ছিলাম হে সময়, তুমি দেখোনি?

কেন সাউন্ড গ্রেনেডের টুকরো টুকরো ধ্বনির বুলেট 

প্রতিরোধে ফেটে পড়লো না আমার কর্ণগুহায়,

তাহলে তো  আমার কানের পর্দা 

প্রতিবাদ প্রতিরোধের শব্দপুজ্ঞ

আকণ্ঠ শুনতে পেতো সব হিংস্র অপরাধ!

ছড়িয়ে দিতে পারতো লোকালয়ে, ঘরের আনায়-কানায়!

আমার মনের ভাষাও ছড়িয়ে পড়তে পারতো 

হাজার দুয়ারী নির্জনতাকে চৌচির করে!

নির্বিরোধীরাও  আজ যোগ দিয়েছে প্রতিবাদের মিছিলে, 

শিশিরসিক্ত ধানী জমির পাকা ধান রেখে

অগণন কৃষক এসেছে মিছিলে, মিছিলে

ছয়লাব ঢাকার রাজপথ

তাদের টিনের থালায় কেন

মহামূল্যবান কাচাঁমরিচ, পেঁয়াজ!  খেই হারা তারা

তাই কি আশ্চর্য  হয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর গল্প

তাদের স্মৃতির পর্দা ফাটিয়ে দিয়ে রক্তের প্লাবন  পাঠায়!

এই ন্যারেটিভের টিকি ধরে কারা যেন ধেয়ে আসছে!

আমরা ভদ্দরনোক! তাই

 আওয়াজ শুনতে পাই না সুনামি না বিপ্লব!

গনগনে আগুনের মতো হুংকার ভরা মিছিলের আওয়াজ,

জলোচ্ছাস যেন বা,

বাতাসের সিংহাসনে বসে থাকা আশার আওয়াজ!

আমি শুনতে পাই আজ গনগনে মানুষের কণ্ঠস্বর 

এমন কি বাতাসের শিসেও ভেসে ওঠে 

সেই সব দুর্বিনীত ধ্বনিপুজ্ঞ

না, আমি শুনতে পাই না কোনো বিরোধাভাস

পুলিশের গুলি ছাড়া স্বাধীন আকাশ!

আমি কালা!

এ দেশ থেকে কী রাজনীতির শ্লোগান উবে গেছে!

কোটি কোটি চোখ  মনে মনে আমাকেই ঘিরে ঘিরে নাচে!

আমি অন্ধ টিরেনসিয়াস 

পথ দেখি না আমি, 

তবুও পথে পথে ঘুরি!

আমি অর্জুন, কাপড়ের পেট্টি-বাধা চোখ আমার!

আমি ব্যর্থ তীরন্দাজ 

এ-মহাকালের স্বপ্নদ্রষ্টা!!!

উত্তরআধুনিকতা

উত্তর গোলার্ধে আমি জ্বলেছি আলোক মালা

নিশিরাতে 

দিগন্তের ছাদে তা ছুঁয়ে যায় 

                     আমার হৃদয়,

আর তুমি মার্কিনী নৈশব্দ্যের ডামাডোলে চড়ে

ঘুরে বেড়াও দুনিয়া, 

আর যারা দক্ষিণের অধিবাসী,গরিব-গোবরো

মানুষেরা ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করে বাঁচে, 

লড়াই করতে করতে মরে প্রতিদিন, 

সংগ্রাম তার ডাক নাম,

বাতাসের শক্তিতে বাঁচে তারা আবহমানকাল,

তাদের বুকের হাড় দিয়ে পশ্চিমারা বানায়

পুরুষালি কোলন

মেয়েলি পারফিউম,

তুমি স্টোনিহার্টের দিগন্ত আলো করা ফোয়ারা

দেখোনি?

গোলার্ধের কচকচে হৃদপিন্ড 

শুষমা মাখাই চোখে শুর্মা আর শিশিরসিক্ত

কাজল

উল্টেপাল্টে দেখি সুগন্ধি বাজারের শিশি-বোতল,

ভোরের বাশনা-ভরা তসতরিতে খেলা করি

দক্ষ ক্রেতার পারসিয়ান ছায়ার মতো

নিবিড় নয়নে। 

এই তো দুনিয়াদারি আমার।

কল্পনার মতো ছায়াবাজ

আর সুগন্ধির মতো ছায়া মানুষ——

চাপা পড়ে থাকে প্রাকৃত মানুষ।

সন্দেহ কী জাগে ?

যেন সে ফজরের নামাজের মতো বিশ্বাসে

ভরপুর,

আজানের মতো সুনির্দিষ্ট , 

তুমি কী দেখতে পাও? 

তুমি কী চেনো এই

মানবকুসুম, হে আমার রব?

আমার চিন্তার ঝিলিক, বিদ্যুতের লহমা—-

তোমার চোখের পর্দার পেছনে কারা বাস করে?

এই যে রাজনৈতিক বিন্যাস তোমার

আমাদের লোকজ বিশ্বাস আর স্বাধীনতা তুমি

মেঘবৃষ্টির ফোটায় ভরে দাও আমাদের

খাবারদাবার

আমাদের সংসারে অতিথি তুমি নিত্য-সহচর

ফিসফিস ধ্বনির আঘাতে জাগাও তুমি—-পরাবাস্তবকাল!

তুমিই তো আমাদের উত্তরাধুনিকতার শেকড় বাকড়

লোকমানসের নিখিল দাওয়াই প্রভু,

মুক্ত করো সিক্ত করো আমাদের,

তোমার সাম্রাজ্য থেকে 

পারলৌকিক দুয়ারে পাচার করো মানুষ

অগণন বৃক্ষছায়ার ভেতরে তেলাওয়াত হচ্ছে 

লা হাওলা ওয়া লা কুআতা ইল্লাবিল্লা

আধুনিকতার উত্তর জনহীন পদে উষ্ণস্নান করি

ভাবনার সরোবরে

শীতমাখা তীরে, 

আমাদের নতুন ঠিকানা!

আরও পড়তে পারেন

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য সমূহ

সৈয়দ আহমদ শামীম on বাংলা বসন্ত : তাজ ইসলাম
Jhuma chatterjee ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি on গোলাপ গোলাপ
তাজ ইসলাম on রক্তাক্ত স্বদেশ
আবু বকর সিদ্দিক on আত্মজীবনীর চেয়ে বেশি কিছু
ঝুমা চট্টোপাধ্যায়। নিউ দিল্লি। on জন্মদিনের কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
দিশারী মুখোপাধ্যায় on গুচ্ছ কবিতা : গোলাম রসুল
দিশারী মুখোপাধ্যায় on নির্বাচিত ১০ কবিতা : কামরুজ্জামান
তাজ ইসলাম on Menifesto of the Inevitable Revolution
কাজী জহিরুল ইসলাম on দীর্ঘ কবিতা : তাজ ইসলাম
দীপশিখা পোদ্দার on গুচ্ছ কবিতা : কাজল সেন
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on গুচ্ছ কবিতা : তাজ ইসলাম
নয়ন আহমেদ on রবীন্দ্রনাথ
নয়ন আহমেদ on কিবরিয়া স্যার
বায়েজিদ চাষা on গুচ্ছ কবিতা : অরুণ পাঠক
আবু আফজাল সালেহ on দীর্ঘ কবিতা : অভিবাসীর গান
কাজী জহিরুল ইসলাম on রবীন্দ্রনাথ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on গুচ্ছ কবিতা : হাফিজ রশিদ খান
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on অক্ষয় কীর্তি
নয়ন আহমেদ on আমার সময়
মোঃবজলুর রহমান বিশ্বাস on গুচ্ছ কবিতা : দিলরুবা নীলা
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
তৈমুর খান on অক্ষয় কীর্তি
কাজী জহিরুল ইসলাম on অক্ষয় কীর্তি
Quazi Islam on শুরুর কথা
আবু হেনা আবদুল আউয়াল, কবি ও লেখক। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, নওগাঁ সরকারি কলেজ নওগাঁ। on আমিনুল ইসলামের কবিতায় বৈশ্বিক ভাবনা
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
নয়ন আহমেদ on ফেলে আসা ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on ঈদের কবিতা
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
পথিক মোস্তফা on ঈদ স্মৃতি
Sarida khatun on ঈদ স্মৃতি
নয়ন আহমেদ on ঈদ স্মৃতি
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on দীর্ঘ কবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
পথিক মোস্তফা on শৈশবের ঈদ : একটি স্মৃতি
পথিক মোস্তফা on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on স্মৃতির ঈদ
নয়ন আহমেদ on আমার ঈদ
নয়ন আহমেদ on ঈদের আনন্দ
শাদমান শাহিদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
নয়ন আহমেদ on শৈশবের ঈদ উৎসব
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on সাম্প্রতিক কবিতা : নয়ন আহমেদ
মুস্তফা জুয়েল on আমি আর আমার গাযালি
কাজী জহিরুল ইসলাম on গুচ্ছ কবিতা : মুর্শিদ-উল-আলম
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on অপদার্থবিদ্যা
সৈয়দ সাইফুল্লাহ শিহাব on দেশপ্রেমের ১০ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
কাজী জহিরুল ইসলাম on বিশ্ববিচরণশীল কবিমানুষ
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ on নির্বাচিত ২৫ কবিতা : সাজ্জাদ বিপ্লব
মোহাম্মদ মাহিনুর আলম (মাহিন আলম) on প্রিয়াংকা
প্রত্যয় হামিদ on শাহীন খন্দকার এর কবিতা
মহিবুর রহিম on প্রেম ও প্যারিস
খসরু পারভেজ on কাব্যজীবনকথা
মোঃ শামসুল হক (এস,এইচ,নীর) on সুমন সৈকত এর কবিতা
এম. আবু বকর সিদ্দিক on রেদওয়ানুল হক এর কবিতা