তৈমুর খান
১
হাওয়া ৪৯
বাংলা ভাষায় প্রথম অধুনান্তিক সাহিত্য পত্র ‘হাওয়া ৪৯’ অষ্টম সংখ্যা (মাঘ ১৪৩০) বহুমুখী বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী কবি মলয় রায়চৌধুরী(২৯.১০.১৯৩৯—২৬.১০.২০২৩)-কে নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। বাংলা কাব্য সাহিত্যে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করেছিলেন মলয় রায়চৌধুরী। হাংরি আন্দোলন থেকে কথাসাহিত্য, সমালোচনা, নাটক, প্রবন্ধ, অনুবাদ এমনকি স্কেচ আঁকার প্রচেষ্টাতেও তিনি অনন্য অসাধারণ। সবকিছুর মধ্যেই তাঁর পোস্টমডার্ন ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি ভাবতেন—“আধুনিকতা ভালো নৈতিক, নান্দনিক, প্রগতিশীল, উন্নত, কাম্য, কল্যাণময়, এমনতর ভাঁওতায় ভুলিয়ে রাখা হচ্ছিল বাংলা ভাষাকে।” তাই তিনি এইসব প্রচলিত ভিতকে ভেঙে দিয়ে প্রচলিত বিগ্রহকে থাপ্পড় মেরে খিল্লি করা দাঁত উফড়ে লিখতে এলেন আজীবন অর্জিত ভোগান্তি,অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা ও প্রজ্ঞাকে অস্ত্র করে। আর এই লেখা তাঁর স্বাধীন চেতনার বিকাশ, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো দাসত্ব নয়। সদাজাগ্রত কালসচেতক এই লেখকের প্রতিভার পরিচয় এই সংখ্যাটিতে রয়েছে বিভিন্ন লেখায়। লেখক তালিকায় উল্লেখযোগ্য কলমচিরা হলেন: রবীন্দ্র গুহ, সুব্রত রুদ্র, তপোধীর ভট্টাচার্য, জয়িতা ভট্টাচার্য, অলোক গোস্বামী, রফিক উল ইসলাম, সম্রাট মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব নিয়োগী, সন্দীপ প্রামাণিক, শীর্ষেন্দু দত্ত, অভিষেক ঝা, অনুপম মুখোপাধ্যায়, বাসব রায়, বহতাঅংশুমালী মুখোপাধ্যায়, সোনালী মিত্র, অজিত রায় প্রমুখ আরো অনেকেই।
যোগাযোগ:সম্পাদক মুর্শিদ এ এম, ২৪ বি নর্দান পার্ক, কলকাতা ৭০০০৭০, চলভাষ:৯৮৩০৩৩১০৯২, মূল্য ১৯০ টাকা।
২
যুবপ্রত্যাশা
২৩ বর্ষের এপ্রিল(২০২৪) সংখ্যা ‘যুবপ্রত্যাশা’ ঈদ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। যতগুলি উন্নত রুচির ঈদ সংখ্যা চোখের সামনে ঘুরে ফিরে আসে তাদের মধ্যে অন্যতম এটি। প্রতিটি লেখার মধ্যেই সাম্প্রতিক জনজীবনের নানা সমস্যা যেমন উঠে আসে, তেমনি তার যুক্তিপূর্ণ সমাধানেরও ভাবনা থাকে। বাঙালির সংস্কৃতি চর্চায় ঈদের অবদান যে কম নয় তা বোঝা যায়। ড. আহমদ আবদুল কাদের লিখেছেন ‘বাংলাভাষা ও ইসলাম চর্চা’ বিষয়ে গবেষণালব্ধ একটি প্রবন্ধ। ইসলাম ধর্মের মূল বিষয় আরবি ভাষাতেই লিপিবদ্ধ হলেও বাংলা ভাষায় তার প্রতিফলন কতখানি এবং কিভাবে তার আত্তীকরণ ঘটেছে তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। সুলতানি আমলের বাংলা সাহিত্য কেমন ছিল, কী কী তার নিদর্শন তা উঠে এসেছে ইমরান রাইহানের লেখায়। বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চা নিয়ে লিখেছেন জাকারিয়া শাহিন। গণতন্ত্র ও আজকের দক্ষিণ এশিয়া কোথায় অবস্থান করছে তার নিদর্শন তুলে এনেছেন গোলাম রাশিদ। উসমানীয় স্থাপত্য মিমার সিনানের ইতিহাস অন্বেষণ করেছেন সাইফুল ইসলাম। ইবনে খালদুনের প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে ড.ইব্রাহিম কালিনের লেখার অনুবাদ করেছেন মুর্তাজা মুহাম্মাদ। সাম্প্রতিককালের রাজনীতি,বিভেদ নীতি, দেশভাগের ইতিহাস, মুসলিম জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা ইত্যাদি বহু বিষয়ও প্রবন্ধগুলিতে উঠে এসেছে। এই সংখ্যায় গল্প লিখেছেন: অমর মিত্র, রাশিদুল বিশ্বাস, মুসা আলি, মৱহা. মইদুল ইসলাম, হেদায়েতুল্লাহ, অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, আবু ইউসুফ সুমন ও দীপক সাহা। বেশ কিছু কবির কবিতাও রয়েছে। যোগাযোগ:মুহাম্মদ সাফিউল্লাহ মোল্লা, ১৪ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট(দ্বিতল), কলকাতা৭০০০১৬, মূল্য-৫০ টাকা।
৩
কারুকৃতি
ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কারুকৃতি’(মার্চ ২০২৪)-এর বর্তমান সংখ্যাটি মূলত ‘বইকথা’ সমালোচনা-আলোচনা সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন কবি-লেখকের সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে আলোকপাত। এদিক থেকে সংখ্যাটি বেশ আকর্ষণীয়।এত লেখক-কবির বই একসঙ্গে পড়া যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি সংগ্রহ করাও যায় না। কিন্তু এই আলোচনাগুলি থেকে তাঁদের সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করা সম্ভব। সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে—বইয়ের পাঠক নেই, ক্রেতা নেই, প্রকাশক নেই ইত্যাদি যা প্রচলিত ধারণা,এই সংখ্যাটিই তার মোক্ষম জবাব। প্রতিবছর বইমেলায় কত কত বই বিক্রি হয়, কত বইয়ের সংস্করণ হয় সবমিলিয়েই একটা আশাবাদী উত্তরণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চেয়েছে ‘কারুকৃতি’। বই নিয়ে আলোচনা করেছেন: শ্রায়ন্তী ঘোষ, তৃষ্ণা বসাক, শ্যামশ্রী রায়কর্মকার, দীপঙ্কর সেন, দীপশেখর চক্রবর্তী, কানুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ মিত্র, বেবী সাউ, সোমা রায়চৌধুরী,সুমনা সাহা, রক্তিম ভট্টাচার্য, মানস সরকার, অগ্নি রায়, তনময় ভট্টাচার্য, সুবিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, মধুকৃষ্ণা চক্রবর্তী, শাশ্বতী চট্টোপাধ্যায়, সমর্পিতা ঘটক, গৌতম কুমার গুপ্ত, শুভজিৎ সরকার, বিদিশা সরকার, মানসী মণ্ডল, পল্লব গঙ্গোপাধ্যায়, নিমাই জানা, রত্না বসু, নিলয় নন্দী প্রমুখ বহু লেখক। প্রতিটি লেখার মধ্যেই ঝকঝকে ধার আছে।এই সময়ের উল্লেখযোগ্য স্রষ্টাকে চিনিয়ে দিয়েছে। এছাড়া এই সংখ্যায় ব্যক্তিগত গদ্য, ছোটগল্প এবং একগুচ্ছ কবিতা রয়েছে। সব মিলিয়েই সংখ্যাটি খুব আকর্ষণীয়। যোগাযোগ:দিলীপ দত্ত, সায়ন্তন কনসালট্যান্টস লিমিটেড, ৩৩ এ জওহরলাল নেহেরু রোড, কলকাতা-৭০০০৭১, মূল্য- ১৫০ টাকা।
৪
শতানীক
সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক নবম বর্ষের প্রথম সংখ্যা ‘শতাানীক’(বৈশাখ ১৪৩১) প্রতিবারের মতো এবারও সংখ্যাটি বেশ আকর্ষণীয়। কবিতা, প্রবন্ধ, বিশেষ রচনা, ধারাবাহিক রচনা, সাক্ষাৎকার, ছোটগল্প,অণুগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনি ও পুস্তক আলোচনা নিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য লেখক-লেখিকারা প্রায় সকলেই এই পত্রিকায় লিখেছেন। ধারাবাহিক রচনা লিখছেন প্রবীর রায়চৌধুরী। এই সংখ্যায় সাহিত্যিক জয়ন্ত দে-র সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানস সরকার। প্রায় আশি-র অধিক কবিতা রয়েছে। দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীকৃষ্ণ গুহ, বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়, রমা ঘোষ, শ্যামলকান্তি দাশ, শংকর চক্রবর্তী, দীপক রায়, সৈয়দ কওসর জামাল, অরণি বসু, দীপকরঞ্জন ভট্টাচার্য, রামকিশোর ভট্টাচার্য, সমরেশ মণ্ডল, হাননান আহসান প্রমুখ আরো বহু নামকরা কবিও। গল্পে আছেন: গৌর বৈরাগী, সিদ্ধার্থ সিংহ, আইভি চট্টোপাধ্যায়, তপন রায়চৌধুরী, শুভেন্দু মজুমদার, অর্ঘ্য ঘোষ, ঋষি গৌতম।, অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলক চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার রুজ,পারমিতা মণ্ডল, মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি প্রমুখ আরো বহু লেখক। উপন্যাস লিখেছেন স্বপন মজুমদার । এত সমৃদ্ধ রুচিপূর্ণ পত্রিকার প্রতিটি পৃষ্ঠায় সম্পাদকের নিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায়। যোগাযোগ: সম্পাদক: নিত্যরঞ্জন দেবনাথ, ১ নং ফার্ম সাইড রোড, ডাকঘর: চুঁচুড়া আর.এস, জেলা হুগলী-৭১২১০২, চলভাষ: ৯৪৩২৮৪৭৬২৪.
মূল্য-১৫০ টাকা।