মউতের কাছে
……
মৃত্যুর খুব কাছে থেকে ঘুরে এসেছি সোমবার,
সঙ্গে ছিলো জাফি আর আবরার
ছিলো মৃত রেসি রায়ের বাজার কবরখানায়!
রোদে ভরপুর দিন, অমলিন!
মালিকুল মউত বললেন তোমার হয়নি সময় আজ,
তোমার বন্ধুরা যাচ্ছে একে একে,
তুমিও যাবে সুনির্ধারিত সেই মটামরফসিসে একদিন
কেউ রুখতে পারবে না,
কোনো মেঘনা যমুনা কিংবা কীর্তিনাশার জলোচ্ছ্বসও কিংবা সুনামির যজ্ঞও—-
যে ঝিনাইদহ
তোমার শৈশব কৈশোরকাল ছেনে-ছুঁয়ে নিখাদ বানিয়েছে
তোমার যৌবন, এবং
এখন যে তোমার শুভ্র কেশ
কালিঝুলিমাখা নিবিড় শিশুকাল,
বাবা-মায়ের সস্নেহ ভালোবাসা,
শবরি, ডালিম আর বেলে তেঁতুলের জিভে জল-আনা ডাক
তুমি আজ আর শুনতে পাবে না,
কেন না তোমার চৈতন্যের ঝাজরিগুলো বিকল
তোমার তো প্যানক্রিয়াস অকেজো
ইনসুলিন সে বানাতে পার না আর, তবে
ফলফলারির যত্ন ছাড়া সে সক্রিয় হবে না আর,
পেপের মিঠাই তোমার বহমান রক্তপ্রবাহে
চিনির সমুদ্র গড়ে তোলে,
তার ঢেউয়ে ঢেউয়ে তুমি তলিয়ে যাবে একদিন
মহাসাগরের তলদেশে,
যেন সেই টাইটানিক তুমি প্রেম শয্যার ঘোরে মজ্জমান।
তুমি তোমার হ জ ব র ল জীবনের রশি টেনে বেঁধে নাও!
এবং উধাও হলেন তিনি।
অনেক ঘানি টেনে আজ এখানে আমি।
অনেক হেঁটেছি পথ জীবনানন্দের ঘের ভেঙে
শ্বাশত স্বপ্নের বাঁকে বাঁকে,
কবিতার পঙক্তির ভোজে গেছি নানা দেশে
এমন কি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে
বলেছি আমিও তোমাদের দলে আছি আজীবন!
আমি যে বাংলার এক বাউলপুরুষ,
সব মুগ্ধতার ডালপালা ভেঙে
আমি গেছি মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্যে
শহীদ হইনি বটে, তবে গাজীর তকমা
কারা যে চুরি করে নিয়ে গেছে শ্বাশতীর ফসকা গেরো খুলে, কে তার সন্ধান দেবে?
এখনো হয়নি সময় আমার মউতের, তাই
যুৎ করে বসে খেয়ে নিই যা আমার রসনার দাবি।
০১/২০/২৪
…….
শীতের বাহার
…….
ফিরে এসেছে শীতকাল বহু বছর পর
হাড়ে বিঁধে যাচ্ছে কনকনে ঠান্ডার ধাত!
সকাল হয়নি আজো আমাদের,অতপর
একুশের ভোরে খালি পায়ে গিয়ে বাজিমাত
করার বয়স নেই। তবু যাবো সে-মিছিলে,
খালি পায়ে যাবো, বহুবার গেছি হাতে ফুল,
এইবার যাবো ধানের সুগন্ধি নিয়ে, গিলে
করা নারীদের নেবো তাহাদের কানে দুল
নেচে যাবে উস-ভেজা পথে সেই সব গান
প্রাণের চেয়েও দামি একুশের ইতিহাস
ধানের সোনালি রূপে পাই তাকে, অভিমান
আজ শিশির মাখানো লোকজ অভ্যাস !
নেবো চেখে খাড়ুর বাজনা, অপরূপ চাকা
কাঁধে তুলে নেবো রক্ত-ঝরা ভাষার পতাকা।
০১/২০/২৪
…….
আমাদের স্বাধীনতা
…….
সমুদ্র আর ধবল জ্যোৎস্নায় ভাসছিলো আমার স্বপ্ন
আকাশ হাসতে হাসতে বদহাওয়ার ঘূর্ণি বল ছুঁড়লো
আমি বোল্ড হয়ে আছড়ে পড়লাম
নুনা সাগরের ভেজা ঠান্ডা তীরে; মাথা ঘুরলো চৌদিক!
আমার স্বপ্ন ছিলো স্বাধীনতার
পতাকার মতো উড়তে গিয়ে আমি ইকারুস আজ!
হায় প্রভু!
তোমার এই সবুজ বেহেস্তখানা
কোন দস্যুর পোদের নিচে রেখে
আমাদের অন্তরে স্বপ্ন বোনো! কে প্রার্থনায়
চেয়েছে এমন দুঃস্বপ্নের ছাদ।
আজ কি বৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীতে?
বনশ্রীতে বেশ কিছু ফোটা টপাটপ পড়লো যেন জুঁই,
কিংবা এমন হতে পারে যে
আমাদের গর্ভে নতুন টাইরান্ট উত্পাদনের জন্য
বৃষ্টি তো অলীক নয়।তোমার ফসল!
আমি বহুদিন
শস্যদের গর্ভবতী হতে দেখেছি বৃষ্টির পানিতে, কিন্তু
এখন কেবল কুচক্রীদের নুনুর উৎসব চলছে সর্বত্র!
সেই ধর্ষণে যা উৎপন্ন হবে
তাকে কি আমরা জাওরা বলবো?
শুদ্ধ ভাষায় তারা জারজ হলেও সভ্যতায় তারা অবৈধ,
শব্দটি সৃষ্টি করেছে এক ধলা নক্ষত্র,
যারা নিজরাই ছিলো
দখলদার, অবৈধ হানাদার, শোষক ও নির্যাতনকারী
আমাদের সব কিছু লুটে নিয়ে গেছে সেই বর্গি দস্যুদল,
অমল-ধবল স্বাধীনতা,
আমাদের কৃষ্টি কালচারের গর্ভে রুয়েছে পরান্নয়ন
তাঁদেরই জ্ঞাতি প্রতিবেশি আজ আকাটা নুনুর ঠাপে
প্রভু দেখো দেখো
কেমন সমুদ্র ফেনা উঠেছে তীরবর্তী জনপদে, এবং
আমাদের স্বধীনতার পোদ মেরে রক্তাক্ত করে দিচ্ছি।
তুমি দেখতে পাচ্ছো তো?
০৩/১৯/২৪
…….
একটি রাজনৈতিক ইতিহাস
…….
আমার কানের গুহায় ফিসফিসে আওয়াজ
এতোটাই পলকা যে বুঝতে পারছিলাম না
কে কথা বলে আর কী বলে?
ছ্যাত করে উঠায় মনে সার্ত্রের কড়া মুখ ভেসে উঠলো
চোখের পর্দায়।
কিন্তু তাকে দেখা গেলো না।
সেই স্যাতস্যাতে ফিসফিসানি যেন
উঠে আসছে আমারই পায়ের ওপর থেকে।
লিলিপুট
এক জনাথন
বসিয়ে দিয়েছে খিলখিল সকালের আলোয়!
নাস্তার টেবিল ওই দূর থেকে বাঁকা চোখে টিটকারি দিচ্ছে!
ওইটুকুন মানুষ!
লোকগল্পের ছায়ার মতো ন্যাগবেগে
আর ছায়ার কষে ট্যান করা সার্ত্র!
আমি মাথা নিচু করতেই তিনি আমার ঘাড়ে
যেন ব্রিটিশ তরিকায় বোনা! তিনি শাসক শোষক
আমি তো কৃষক এক
নাড়া-কাদায় ডোবা মানুষ, হৈমন্তিক সকাল উড়ে চলে—-
মনে হলো টাইম মেশিনে চড়ে
চলেছি সুদূর অতীতের মালমশলার দরোজায়—-
রন্ধনশালাটি
প্রাচ্যের ছাঁচে গড়া হলেও
সেখানে অবিরল প্রস্তুত হচ্ছে প্রতীচ্যের তর্কের সমুদ্র!
ক্ষুদ্র মানুষটি আমার কাঁধে চেপে বসে
বর্ণনা করছে অলৌকিক সব কথা!
মাত্র দো-আঙুলে মানুষ।
তিড়িং করে লাফিয়ে নামলো কোলে !
আর ভোজবাজির মতো
আমি ছোটো হতে হতে লিলিপুট
আর তিনি পৃথিবীর সমান বয়সী!
মাত্র এক মিনিট পর পৃথিবী ধ্বংস হবে!!
বললেন তিনি, এবং
তার মিনিটের সাইজ ৫শ কোটি আলোকবর্ষ!
১১/০৭/২১
……
তুমি কী দেখতে পাও?
……
শোল মাছের ঝোল রাঁধছিলেন মা আমার
তরতরে ঝোল
ঝলমলে ঝোল বিহানের আলো জ্বলা—
শুকনা মরিচে রান্না করা সেই ঝোলের ভেতর থেকে
স্মৃতির টুকরোগুলো
সসারের বেগে ফ্লাই করছে আমার মনে,
আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি সেই উড়ন্ত
অবিশ্বাস্য স্মৃতির শৈশব,
জ্বলজ্বলে কৈশোরের দিন, অমলিন নিসর্গের রূপ
আমার সিজদার ভেতর থেকে আমি উড়ে যাচ্ছি
পরমাণু খাসলত নিয়ে বেকসুর
সুচতুর মার্কিনী বিমান যেন,
পলকের চেয়েও পলকা সেই পলায়ন
নামাজের ভোরের সংসার থেকে,
ঘোরের ধূসর জগতের ঘুমে—
তুমি কী দেখতে পাও এই পলায়ন,
এই পরিযায়ন আমার?
০৫/১৮/২০২১
ঢাকা
……
বিতাড়িত শয়তান
…….
বিতাড়িত শয়তানের গালে চুমুক দিয়ে
কে যেন ছুঁড়লো শেল
ঝলকে উঠলো ফিলিস্তিনের ধুলোমলিন আকাশ,
শিশুরা ভাবলো হাউইবাজি
বড় মানুষেরা আতঙ্কের ফাঁসে পড়ে ছুটলো নিরাপদ হাসপাতালে, জেনেভা আর হেগের নীতি আদর্শগুলো
মোহের জাল ছিঁড়ে রাঘব বোয়ালের মতো
ঘাই মারছে পদ্মা- মেঘনার দ্বিধার মোহনায়!
শয়তানের দাঁত হেসে উঠলো বাঁকা চাঁদের ওপর
পরমাণু রোদের ঝলক! কী সেই মৃত্যুর শেল?
শিশুরা রক্তাক্ত হলো, মৃত্যুর কোলে মাথা রেখে
মানবতা ঢলে পড়লো পাথুরে বালির গহনে!
রক্তাক্ত শিশুটি আকাশের নীলিমায় বললো
রাহমানির রাহিম তুমি কী দেখছো না?
আর উড্ডীন সময়ের টিকটিক ধ্বনির সঙ্গে
ছুঁড়ে মারলো সে তার প্রতিবাদ—
“আমি আল্লাহকে বলে দেবো “
তোমরা বিতাড়িত শয়তানের বংশধর , নিঃশ্বাস নেবার আগে তোমাদের উচিত ছিলো পৃথিবীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, তোমরা তো জানো হযরত মুসা তোদের ছেড়ে গেছেন।
তিনি তুরের শিরে সিজদায় আনত।
তোমরা নাদান মানবাত্মা,
ক্ষমার অযোগ্য,
পরিত্যক্ত স্বর্ণ গাভীর পূজক।
আমি মুসাকেও বলবো মহাকাশের দরোজায় দাঁড়িয়ে
জায়ানিষ্টরা তাওরাতের বাণী বিশ্বাস করে না।
তারা দখলদার, আর কে না জানে দখলদার হয়
লুটেরা ভং ধরা মানবিক!
তারা হত্যাকারীও, কেন না এ-তাদের নেশা!
তারা শিশুর নিহত মুখ দেখে না, তারা মানুষের মুখ দেখে না, তারা কেবল রক্তের পিপাসায় কাতর! তারা তো সদোমের সহোদর,
যদি মুসার সঙ্গে সত্য সত্যই দেখা হয়ে যায় মহাকাশের কোনো কোণে, তাঁকে বলবো তোমার নামে যারা ফিলিস্তিনিতে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে,
এই দেখো আমার বুকে ইসরাইলের বুলেটের ঘাই,
তুমি কী এদের নেতা!
তুমি তো ইবলিশের হাত থেকে বাঁচাতে মিশর ছেড়েছিলে! সেই তারাই তোমার দেখানো পথ পরিত্যাগ করে গেলো,
লোভের সাগরে ঝাপাতে ঝাপাতে বিত্তের গহ্বরে
সেঁধিয়ে গেলো। হায় মুসা,
তোমার তাওরাত খারিজিদের মানুষ করতে পারেনি।
আমার বুকে বুলেটের গুহা,
লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনির বুকে রক্তের নদী দজলা-ফুরাতেই মতোই বইছে, ভিজিয়ে দিচ্ছে লুক্কায়িত স্বর্ণ খনি;
এই যুদ্ধে জো বাইডেনের নগ্ন সমর্থন
শিখন্ডিকে রক্তের হোলিতে উদ্বাহু নৃত্যে মাতিয়েছে।
বেলফোর চার্টার তো চাপিয়ে দেয়া এক ক্ষতের সর্বনাম।
রক্ত পূঁজে ভরপুর তেলআবিব!
তুমি কি জবাব দেবে?
প্রভু, আমার ইঁটের বদলে পাটকেল , নাকের বদলে নরুন,
শেলের বদলে শেল, তারপর প্রভু
পারমানবিক খেলা কী মহাকাশ ছুঁবে,
তোমার আরশ!?
১০/২২/২৩