মুহম্মদ আবদুল বাতেন
১.
এই সময়ের চিন্তা কোন স্তর অতিক্রম করছে, সেটা অনুধাবনের জন্য বিদ্যমান ধারণাগুলোর শীর্ষ অবস্থান বিবেচনায় আনতে হবে। আমরা কী জানি, কতটুকু জানি এবং আমরা কী জানি না এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। এই জিজ্ঞাসার জবাব পেতে আমরা বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন, মানব সভ্যতার বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কে সমন্বিত বিবেচনা জরুরি। আমরা যে চলমান বিশ্বকে দেখছি, এর নেপথ্যে ক্রিয়শীল পূর্বাপর ইঙ্গিত গুলোর মধ্যে নিকট এবং দূর ভবিষ্যতের একটা আভাস জারি আছে। মানুষ কোথায় যেতে চায়, মানব সভ্যতার পরিণতির সূচকগুলো থেকে আমরা আমদের মনস্তাত্ত্বিক রূপান্তরের নজিরগুলো আমরা নিজেদের মধ্যে উপলব্ধি করতে পারি। সময়ের এই বাস্তব বোধের মধ্যে আমাদের চিন্তাধারা প্রবাহিত হয়। যা আমাদের জীবনধারা, রাষ্ট্র চিন্তা, দার্শনিক ভাবুকতা, ধর্মচিন্তা, বিজ্ঞানের রহস্য, শিল্পবোধ ও সৃষ্টিশীলতা ধারণ করে। আমরা নিজের অজান্তেই একটা ইউফিফিশনের দিকে হাঁটছি, হয়তো তা খুব কম সংখ্যক লোকেই বোধগম্য হতে পারে, আমাদের চিন্তার স্তর যদিও পুরানো ধারণাকে নিয়ে আবর্তিত হয়, আমরা বর্তমানে যা নিয়ে ভাবি সেটা এখনো সেই স্তরের যা এখনো বর্তমানের গতিরেখার উঠে আসেনি। আমাদের তর্ক, বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই তার উৎস পূর্ববর্তী ইতিহাসের ধারাক্রম। আমরা শুধু রাজনৈতিক বিতর্কের জায়গাটিকে যদি বিবেচনায় আনি তাহলে আমরা এতে বর্তমানকে দেখতে পাইনা। আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজ এগুলোকে তাদের একমাত্র জ্ঞানগত উৎস মনে করে এবং বর্তমানকে আড়াল করে রাখে। আমরা বিজ্ঞানের সব অবদান ভোগ করি, কিন্তু বিজ্ঞানকে জ্ঞানতাত্তি¡ক ডিসকোর্স থেকে সরিয়ে রাখি, ধর্মতাত্তি¡ক সংবেদনা, ন্যরেটিভকে আমাদের অনুসন্ধিৎসার মধ্যে রাখি না। আমাদের জ্ঞান ও আলাদা আলাদা খাতে বিভক্ত হয়ে আছে। যা আমাদের ইউনিক কোন জ্ঞান কাঠামোয় ঢুকতে দেয় না, আমরা মূল প্রশ্ন এড়িয়ে অভ্যাসগত বিতর্ক ও বিভেদের চর্চা করি। পৃথিবী একটি গ্রহমাত্র, এখানে চেতনাসম্পন্ন মানুষের বসতি। এক পৃথিবীর এক মানব জাতি, কিন্তু বহুদেশ, বহুজাতিকে বিভক্তির মাধ্যমে আমরাই যুদ্ধ, সংঘাত ও নৃশংসতায় পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি। আপনি কোন বোধের মধ্যে বিকশিত হয়ে, কী ধরণের জ্ঞান চর্চা করছেন, আপনার শিল্প চেতনা পৃথিবীর কোন ভিত্তিভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে, তার ওপর নির্ভর করে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। বিজ্ঞানের দৃষ্টিপথে আপনি কতদূর দেখতে পারেন, মানুষের ধর্মবোধের চৈতন্যে কী আলো দেখা যায়, তার একটা ইউনিক ধারণা ও অবচেতনা থেকে উৎসারিত বীক্ষণ যদি ধরা না দেয়, তাহলে তার কোন গ্রাহ্যতা সময়ের বিচারে স্থিতি পায় না। এই জ্ঞানতাত্তি¡ক আলাপ ও শিল্পকাজ তাৎক্ষণিক মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। আপনার অর্জন রাতারাতি পুরাণো আসবাবপত্রের মতো বাতিল হতে থাকে। প্রতিটা দশকের অর্জন পরবর্তী দশকে মুছে যায়। এই একুশ শতকে মানুষ কোন দিকে যাচ্ছে সেটিই হওয়া উচিত আমাদের ফোকাসবিন্দু।
ইউনিফিকেশন এবং সমন্বয় আমাদের আগামী দিনগুলোতে অস্তিত্বের প্রয়োজনে অপরিহার্য হয়ে উঠবে, মানুষ নিজের অস্তিত্বের জন্য বিভিন্ন জ্ঞানমার্গ থেকে একটা পথ খুঁজে বেড়াবে। বিজ্ঞান আমাদের সামনে আরো বিস্ময় হাজির করবে, তবুও কোন যুক্তিজ্ঞান চূড়ান্তভাবে সত্যকে ভেদ করতে পারবে না। তবুও মানুষ জগতের একটা ইউনিক, অভিন্ন রূপ খুঁজে বেড়াবে। বিজ্ঞানী রবার্ট লানজা জগতের একটা ইউনিফায়েড ধারণা নিয়ে কাজ করেন। তিনি মানুষ ও জগতের অভিন্ন সম্পর্ক দেখতে পেয়েছেন। এই জগতের সব কিছুই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এর নাম দিয়েছেন বায়োসেন্ট্রিজম। তার ‘বায়োসেন্ট্রিজম: হাউ লাইফ অ্যান্ড কনসাসনেস আর দ্য কীস টু আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য নেচার অফ ইউনিভার্স’ শিরোনামের বইটি নিয়ে গোটা দুনিয়ায় আলোচনা চলছে কারণ এতে নিউরো সায়েন্টিস্ট লানজা একটি ধারণা ব্যক্ত করেছেন যে, মানুষের দেহ মারা গেলে জীবন শেষ হয় না এবং এটি চিরকাল স্থায়ী হতে পারে। বিজ্ঞানী ড. রবার্ট লানজা এই সময়ে বিশ্বের একজন সেরা বিজ্ঞানী। লানজা সময় এবং স্থান অতিক্রম করে যাওয়া পুনরুৎপাদনকারী ওষুধের একজন বিশেষজ্ঞ এবং অ্যাডভান্সড সেল টেকনোলজি কোম্পানির বৈজ্ঞানিক পরিচালক। স্টেম সেল নিয়ে তার বিস্তৃত গবেষণার জন্য পরিচিত হওয়র আগে, তিনি বিপন্ন প্রাণী প্রজাতির ক্লোনিং নিয়ে বেশ কয়েকটি সফল পরীক্ষার জন্যও বিখ্যাত ছিলেন। একই সাথে তিনি পদার্থবিদ্যা, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন। এই বিস্ফোরক মিশ্রণটি বায়োসেন্ট্রিজমের নতুন তত্তে¡র জন্ম দিয়েছে, যেটি অধ্যাপক তখন থেকেই প্রচার করে আসছেন। জীবকেন্দ্রিকতা শেখায় যে জীবন এবং চেতনা মহাবিশ্বের মৌলিক। এটি চেতনা যা বস্তুগত মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে, অন্যভাবে নয়। ল্যানজা মহাবিশ্বের গঠনের দিকে ইঙ্গিত করেন এবং মহাবিশ্বের নিয়ম, শক্তি এবং ধ্রুবকগুলি জীবনের জন্য সূক্ষ্ম-সুসংবদ্ধ বলে মনে করেন, যা বোঝায় বুদ্ধিমত্তা পদার্থের আগে বিদ্যমান ছিল। তিনি আরও দাবি করেন যে স্থান এবং সময় বস্তু বা জিনিস নয়, বরং আমাদের প্রাণী বোঝার সরঞ্জাম। লানজা বলেছেন যে আমরা স্থান এবং সময়কে আমাদের সাথে নিয়ে যাই ‘খোলের সাথে কচ্ছপের মতো।’ মানে যখন শেল বন্ধ হয়ে আসে (স্থান এবং সময়) আমরা তখনও বিদ্যমান। তত্ত¡টি বোঝায় যে চেতনার মৃত্যু কেবল বিদ্যমান নয়। এটি শুধুমাত্র একটি চিন্তা হিসাবে বিদ্যমান কারণ মানুষ তাদের শরীরের সাথে নিজেদেরকে চিহ্নিত করে। তারা বিশ্বাস করে যে দেহটি ধ্বংস হতে চলেছে, শীঘ্রই বা পরে, চিন্তা করে তাদের চেতনাও অদৃশ্য হয়ে যাবে। শরীর যদি চেতনা সৃষ্টি করে, তবে দেহের মৃত্যু হলে চেতনা মরে যায়। কিন্তু যদি একটি তারের বাক্স স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহণ করার মতো শরীরের চেতনা গ্রহণ করে, তবে অবশ্যই শারীরিক মৃত্যুতে চেতনা শেষ হয় না। প্রকৃতপক্ষে, চেতনা সময় এবং স্থানের সীমাবদ্ধতার বাইরে বিদ্যমান। এটি যে কোনও জায়গায় থাকতে পারে: মানুষের দেহে এবং এর বাইরে। অন্য কথায়, এটি একই অর্থে অ-স্থানীয় যেমন কোয়ান্টাম বস্তুগুলি অ-স্থানীয়। লানজা আরও বিশ্বাস করেন যে একাধিক মহাবিশ্ব একই সাথে বিদ্যমান থাকতে পারে। এক মহাবিশ্বে, দেহ মৃত হতে পারে। এবং অন্যটিতে এটি বিদ্যমান রয়েছে, চেতনাকে শোষণ করে যা এই মহাবিশ্বে স্থানান্তরিত হয়েছে। এর মানে হল যে একই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করার সময় একজন মৃত ব্যক্তি স্মরণ করতে পারে পৃথিবীতে তিনি একবার বাস করেছিলেন, কিন্তু এইবার তিনি জীবিত এবং তাই সেই জগত অসীম।
২.
একাধিক বিশ্ব লানজার এই আশা জাগায়, কিন্তু অত্যন্ত বিতর্কিত এই তত্তে¡র অনেক আগেই মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস রয়েছে যে, মৃত্যু রূপান্তর মাত্র। মানুষের পরকালীন এক অনন্ত জীবন রয়েছে। ধর্ম বিশ্বাসীই নয় অনেক বিজ্ঞানীও এই ধারণার সমর্থন করেন। এরা হলেন পদার্থবিদ এবং জ্যোতিপদার্থবিদ যারা সমান্তরাল বিশ্বের অস্তিত্বের সাথে একমত হন এবং যারা একাধিক মহাবিশ্বের সম্ভাবনার পরামর্শ দেন। মাল্টিভার্স (মাল্টি-ইউনিভার্স) একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা, যা তারা রক্ষা করে। তারা বিশ্বাস করে যে এমন কোন ভৌত আইন নেই যা সমান্তরাল জগতের অস্তিত্বকে বাতিল করবে। প্রথমটি একজন বিজ্ঞান কথাসাহিত্যিক এইচজি ওয়েলস যিনি ১৮৯৫ সালে তার গল্প ‘দ্য ডোর ইন দ্য ওয়াল’ এ ঘোষণা করেছিলেন। এবং ৬২ বছর পর, এই ধারণাটি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে তার স্নাতক থিসিসে ড. হিউ এভারেট দ্বারা বিকশিত হয়েছিল। এটি মূলত বিশ্বাস করে যে, যে কোনো মুহূর্তে মহাবিশ্ব অসংখ্য অনুরূপ বিশ্বে বিভক্ত হয়। এবং পরের মুহুর্তে, এই ‘নবজাতক’ মহাবিশ্বগুলো একইভাবে বিভক্ত হয়। এই জগতের কিছুতে আপনি উপস্থিত থাকতে পারেন। ১৯৮০-এর দশকে, লেবেডেভস ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্সের বিজ্ঞানী আন্দ্রেই লিন্ডে একাধিক মহাবিশ্বের তত্ত¡ তৈরি করেছিলেন। তিনি এখন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। লিন্ডে ব্যাখ্যা করেছেন: মহাকাশ অনেক স্ফীত গোলক নিয়ে গঠিত, যা একই রকম গোলকের জন্ম দেয় এবং ফলস্বরূপ, আরও বেশি সংখ্যায় গোলক তৈরি করে, এবং তাই অনন্ত পর্যন্ত। মহাবিশ্বে, তারা আলাদা আলাদা। তারা একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন নয়। কিন্তু তারা একই ভৌত মহাবিশ্বের অংশ প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের মহাবিশ্ব যে একা নয় তা প্লাঙ্ক স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য দ্বারা সমর্থিত। ডেটা ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডের সবচেয়ে সঠিক মানচিত্র তৈরি করেছেন, এই মহাজাগতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন আমাদের মহাবিশ্বের সূচনা থেকে রয়ে গেছে। তারা আরও দেখেছে যে মহাবিশ্বে অনেকগুলি অন্ধকার ভয়েড রয়েছে। নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির তাত্তি¡ক পদার্থবিদ লরা মেরসিনি-হটন তার সহকর্মীদের সাথে যুক্তি দেন: মাইক্রোওয়েভ পটভূমির অসঙ্গতির কথা বলেন,যাতে অন্য ইউনিভার্সের ইন্টারফেয়ারেন্স থাকতে পারে। এই ভয়েড নিকটবর্তী মহাবিশ্বের প্রভাবে হয়েছে।
নিও-বায়োসেন্ট্রিজম তত্ত্ব অনুসারে, এমন স্থান বা অন্যান্য মহাবিশ্বের প্রাচুর্য রয়েছে যেখানে আমাদের আত্মা মৃত্যুর পরে স্থানান্তর করতে পারে। কিন্তু আত্মার কি অস্তিত্ব আছে? চেতনার কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে যা এই ধরনের দাবিকে মিটমাট করতে পারে? ড. স্টুয়ার্ট হ্যামেরফের মতে, একটি কাছাকাছি মৃত্যুর অভিজ্ঞতা ঘটে যখন স্নায়ুতন্ত্রে বিদ্যমান কোয়ান্টাম তথ্য শরীর ছেড়ে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। চেতনার বস্তুগত বিবরণের বিপরীতে, ড. হ্যামেরফ চেতনার একটি বিকল্প ব্যাখ্যা প্রধান করেন যা সম্ভবত যুক্তিবাদী বৈজ্ঞানিক মন এবং ব্যক্তিগত অন্তর্দৃষ্টি উভয়কেই আবেদন করতে পারে। স্টুয়ার্ট এবং ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী স্যার রজার পেনরোজের মতে, মস্তিষ্কের কোষের মাইক্রোটিউবুলে, যা কোয়ান্টাম প্রক্রিয়াকরণের প্রাথমিক স্থান। মৃত্যুর পরে, এই তথ্যটি আপনার শরীর থেকে মুক্তি পায়, যার অর্থ আপনার চেতনা এটির সাথে যায়। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে আমাদের চেতনার অভিজ্ঞতা এই মাইক্রোটিউবুলে কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবের ফলাফল, একটি তত্ত¡ যাকে তারা অর্কেস্ট্রেটেড অবজেক্টিভ রিডাকশন বলে। চেতনা, বা অন্ততপক্ষে প্রোটো-চেতনাকে মহাবিশ্বের একটি মৌলিক সম্পত্তি হিসাবে তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, এমনকি মহাবিস্ফোরণের সময় মহাবিশ্বের প্রথম মুহুর্তেও উপস্থিত ছিল। ‘এই ধরনের একটি প্রকল্পে প্রোটো-সচেতন অভিজ্ঞতা হল শারীরিক বাস্তবতার একটি মৌলিক সম্পত্তি যা মস্তিষ্কের কার্যকলাপের সাথে যুক্ত একটি কোয়ান্টাম প্রক্রিয়াতে অ্যাক্সেসযোগ্য।’ বিজ্ঞানীদের ধারণা আমাদের আত্মা আসলে মহাবিশ্বের ফ্যাব্রিক থেকে নির্মিত — এবং সময়ের শুরু থেকে অস্তিত্ব ধারণ করে থাকতে পারে। আমাদের মস্তিষ্ক হল প্রোটো-চেতনার জন্য রিসিভার এবং পরিবর্ধক যা স্থান-কালের ফ্যাব্রিকের অন্তর্নিহিত। তাহলে কি সত্যিই আপনার চেতনার এমন একটি অংশ আছে যা অ-বস্তুগত এবং আপনার শারীরিক মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকবে? হ্যামেরফ সায়েন্স চ্যানেলের থ্রু দ্য ওয়ার্মহোল ডকুমেন্টারিকে বলেছেন, ‘যখন হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, মাইক্রোটিউবিউলগুলি তাদের কোয়ান্টাম অবস্থা হারায়। মাইক্রোটিউবুলসের মধ্যে থাকা কোয়ান্টাম তথ্য ধ্বংস হয় না, এটি ধ্বংস করা যায় না, এটি কেবল মহাবিশ্বে বিতরণ করে এবং ছড়িয়ে দেয়।’ রবার্ট লানজা এখানে যোগ করবেন যে এটি কেবল মহাবিশ্বে বিদ্যমান নয়, এটি সম্ভবত অন্য মহাবিশ্বে বিদ্যমান। যদি মৃতদেহ পুনরুজ্জীবিত করা হয়, এই কোয়ান্টাম তথ্য মাইক্রোটিউবুলে ফিরে আসতে পারে এবং সে বলতে পারে ‘আমার কাছাকাছি মৃত্যুর অভিজ্ঞতা হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘যদি মৃত ব্যক্তি পুনরুজ্জীবিত না হয় এবং মারা যায়, তাহলে এটি সম্ভব যে এই কোয়ান্টাম তথ্য শরীরের বাইরে থাকতে পারে, সম্ভবত অনির্দিষ্টকালের তার আত্মা বিরাজমান থাকতে পারে।’ মৃত্যু হলো দেহের কিন্তু আত্মার নয়। মৃত্যুই সব কিছুর শেষ তা নয়, এটি বস্তুগত জীবনের অবসান মাত্র। এই মৃত্যু মানুষকে পরবর্তী এক জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং সেখানে জীবনের কোন মৃত্যু নেই। রবার্ট লানজা এই বায়োসেন্ট্রিক তত্ত¡ ধর্মে পরকালের বিশ্বাসের হয়তো কাছাকাছি এবং সকলেরই সেটি বোধগম্য হবে। তবু আমি এখানে শুধু বিজ্ঞানের ধারণা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বিজ্ঞান আরো গভীরে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে, চিন্তা ও পথের নানা ভিন্নমাত্রা হাজির হবে। মানুষের অনুসন্ধিৎসু মনকে স্বাগত জানাবো, যাতে আমরা সত্যের আরো নিকটবর্তী হতে পারি। ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিরোধ নয়, আলাদা পথকে সমান্তরালে রেখে জগতকে দেখা ও বোঝার পথ সহজতর করতে পারি, আমরা যে অভিন্ন এক পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছি সেই সত্য উপলব্ধি করার মাধ্যমে আমরা জগতের ইউনিক ধারণা পাবো, এই সময় থেকে পরবর্তী সময়ের দিকে এই জ্ঞানতাত্তি¡ক অনুধাবন জগতের ঐক্য ও সংহতি আরো স্পষ্ট করবে। সব কিছু একটা উৎসের দিকে ধাবমান এবং এই জীবন এক রূপান্তরের পর্ব মাত্র।
১২/১০/২২