আমার ঈদ
যখন কেটে গিয়ে রাতের অন্ধকার ঘোর,
নেমে আসে জগতের জমিনে নরম ভোর,
লাউয়ের কচি কচি লাজুক লতাগুলো
উঠে ঘরের চালায় কিংবা মাচায়
শিশুর মতো অপার বিস্ময়ে
এদিক-সেদিক তাকায়–
আলোর সাথে আলিঙ্গনের আশায় ;
বিশ্বাস করো, তখন এই মন আমার–
ফড়িংয়ের মতো নেচে উঠে বার বার ;
চোরের মতো যায় পালিয়ে নিদ,
আর তাতেই হয়ে যায় আমার ঈদ।
যখন দেখি বৃষ্টির রিমঝিম ছন্দে,
বৃক্ষের কচি সবুজ পাতারা
নেচে উঠে আনন্দে,
হাঁসগুলো নেমে উঠোনে–
চালায় ঠোঁটের লাঙল
খাদ্যের সন্ধানে ;
পুকুরের কৈ শিং আর মাগুরেরা
কেমন উতলা হয়ে যায়,
উজানে উঠার উম্মাদনায় ;
বিশ্বাস করো,
আমার আবেগগুলো যতো
উতরানো দুধের মতো
উপচে পড়তে চায়,
আর তখনই আমার ঈদ হয়ে যায়।
মনে পড়ে মায়ের কথা,
বেশ পড়ে মনে–
কত যে সুখের স্মৃতি তাঁর সনে ;
ছিলো ব্যাংক যেনো আঁচল তাঁর,
কিংবা মায়াবী রুমাল যেন–
মুখের মেঘ মুছবার।
যখনই করতাম আবদার তাঁকে,
না করে বিলম্ব দিতেন বের করে
আঁচলের গিট থেকে–
চকচকে সিকি বা আধুলি,
তখন কে পায় আমার ধূলি!
কিনে কাইমওয়ালা লাল লেবেনচুষ,
পারবোনা বোঝাতে, হতাম কত যে খুশ!
কিংবা দুধের মালাই আইসক্রিম কিনে,
খেতাম কতই না মজা করে আনমনে ;
এমন মজার স্মৃতি আছে আরো কতো,
ঠোঁটও আমার রঙিন হয়ে যেতো
আনন্দের মতো।
সেই মায়াবী আঁচল দিয়েই মা আমার
মুছে দিতেন মলিন মুখ, চোখের জল ;
তাঁর ভালোবাসা ছিলো এতই অতল।
সেসব স্মৃতি যখন প্রীতি হয়ে
হয় হাজির সম্মুখে আমার,
যায় নেমে বুক থেকে বেদনার ভার ;
আমার আবেগ ও অনুভূতিগুলো তখোন,
খেলা করে এ্যকুরিয়ামের মাছের মতোন,
এবং একইসাথে হয়ে যায় ঈদে রূপান্তর–
যা কেবল স্মৃতিই নয়, প্রীতিরও প্রহর।
মুরব্বিদের মুখে শুনেছি অসংখ্যবার–
যেদিন প্রথম আমি
দেখেছিলাম পৃথিবীর মুখ,
পরিবারে সে কি আনন্দ, সে কি সুখ!
আব্বা, আম্মা, বড় দাদু, ছোট দাদু…
সবাই করেছিলেন এতই খুশি উদযাপন-
পরিবারে গিয়েছিলো বয়ে খুশির প্লাবন।
কারণ, আমি ছিলাম পরিবারের
প্রথম প্রতিনিধি – তৃতীয় প্রজন্মের।
নামটি রেখেছিলেন বড় দাদু হযরত,
বর্ষিত হোক তাঁর রুহের ওপর
আল্লাহর অশেষ রহমত।
যদি তাঁর সম্পর্কে কিছু বলি-
ছিলেন তিনি তাঁর নামের মতোই ওলী
এবং কলবের কবি।
কবিতার মতো ছিলো জীবনযাপন তাঁর,
কিংবা ছিলেন উপমা – উজ্জ্বল কবিতার।
কবিতার সাথে তিনি
গিয়েছিলেন এতই মিশে যে,
শেষ পর্যন্ত বুঝতেই মুশকিল হয়ে পড়ে–
তিনি কি কবিতার মাঝে গিয়েছিলেন হারিয়ে,
নাকি কবিতা হারিয়ে গিয়েছিলো তাঁর মাঝে!
সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য এ জীবনে আমার–
বড় দাদু যে আয়োজনটা করেছিলেন
আমার আকিকার,
তাতে এসেছিলেন মর্যাদাবান দুই মেহমান ;
আওলাদে রাসূল (সা.) হিসেবে
করতো তাঁদেরকে সবাই সম্মান।
সৈয়দ আবদুল করিম হাফিয আল মাদানি (র.),
আর তাঁরই সুযোগ্য জামাতা সৈয়দ হুসনী (র.)।
মহান রবের রহমত বর্ষিত হোক ঝরঝর,
সদা তাঁদের ওপর।
তাঁদের কোলে দিলে তুলে
নবজাতক আমাকে,
উভয়েই তাঁরা করেছিলেন ধন্য
করে দোয়া এই নগন্যকে।
আর আকিকার মূল দোয়াটি করেছিলেন
সৈয়দ আবদুল করিম মাদানি–
পেশ ঈমাম ও খতিব ছিলেন যিনি,
জেলা চাটগাঁর,
শাহী জামে মসজিদ আন্দরকিল্লার।
যখন স্মৃতিসমূহ ভেসে ওঠে একে একে,
কতই না সৌভাগ্যবান মনে হয় নিজেকে।
সেজন্য শোকরিয়া মহান মওলার,
যখনই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে আমার–
হয়ে যায় আমার জন্য
সেরা ঈদ-উপহার।
আর, জে কিবরিয়া’র আপন ঠিকানা
কিংবা লস্ট এন্ড ফাউন্ড-এর কথা
যদি না বলি, হবেনা বলাটা পূর্ণ ;
ক’জনই বা পারে করতে–
কাজ এমন পুণ্য!
যখন দেখি, দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার বেদনার পর
হারিয়ে যাওয়া ধন মানিক রতন পেয়ে,
আপনজনদের চোখ থেকে
অশ্রু পড়ে বেয়ে,
তখন সেই অশ্রু, থাকেনা অশ্রু আর ;
কি যে ভালো লাগে আমার–
করতে পারবোনা ভাষায় প্রকাশ
কিছু তার,
হয়ে যায় সাথে সাথে ঈদের বাজার।
বড়দের সাথে আজকাল আর,
হয়না তেমন বনিবনা আমার।
কারণ তার বড়ই সর্বনাশী!
তাদের মধ্যে মুখ কম-
মুখোশই বেশি।
তাই চার বছরের নাতনি তিবাহ্-ই এখন,
আমার যত সুখের কারণ ও বন্ধু-স্বজন।
যখনই আসে সে বেড়াতে বাড়িতে আমার ;
মনে হয়, সৃষ্টিকর্তার সেরা উপহার!
আমার পিঠে উঠে হেলে দুলে,
যখন সে ঘোড়া ঘোড়া খেলে,
খুলে যায় বুঝি স্বর্গের সবকটি দুয়ার,
হয়ে যায় একইসাথে বড় ঈদ আমার।
যখন দেখি বিভেদ-বিদ্বেষ গিয়ে ভুলে,
প্রাণ খুলে সকলে–
রোদের মতো হাসছে,
একে অপরকে ভালোবাসছে,
তখন বলো, হয় কি তুলনা তার সাথে কিছু আর!
এভাবেই জীবনের জলছবি দেখে দেখে
হয়ে যায় অপূর্ব ঈদ আমার।
২৪/০৩/২০২৪